আমাদের এখানে তিনি আফতাবুল কাদের বা সংক্ষেপ 'কাদিরা' নামে পরিচিত ছিলেন ৷ অসমসাহসী মিশুকে ক্রীড়াপ্রেমী সেসময়ে সাধারণ্যে পরিচিত তরুণ ৷ গ্রামের সাহসী ছেলেকে 'কাদিরা' নাম ফেলে দেওয়া হয়েছিল ৷ কদিন আগে বার্ধক্যে মারা গেছেন আমাদের গ্রামসম্পর্কে এক ভগ্নীপতি চিত্তরঞ্জন চক্রবর্তী আজীবন 'তাহেইরগা' নামে পরিচিত ছিলেন ৷ এভাবে বহু বীর যোদ্ধা তাঁদের দেশপ্রেম ও সাহসিকতার জন্যে সেসময়ে জনমনে স্থান করে নিয়েছিলেন ৷ প্রথমদিকের লড়াইয়ে এই অঞ্চলে তথা এক নম্বর সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান ৷ অনেকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল ৷ মাখন দের হোটেলে দুবেলা ভাত খেতেন ৷ 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী মফিজুল বারী তো সাব্রুমেই ছিলেন পুরোটা লড়াইয়ের সময়ে ৷ এসব ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশই ৷
Friday, April 26, 2019
Tuesday, April 23, 2019
Tuesday, April 16, 2019
কিছুক্ষণ আগে বাড়িতে বসে শুনছিলাম ওপাড়ে বাংলাদেশের রামগড়ে অনুষ্ঠিত সভার মাইকযোগে সম্প্রচার ৷ বক্তারা সতেরো এপ্রিল উনিশশো একাত্তরে কুষ্ঠিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় ( বর্তমান মুজিবনগর) গঠিত স্বাধীন বাংলা সরকার গঠনের স্মৃতিচারণ করছিলেন ৷ প্রসঙ্গক্রমে আমার জন্মভূমি ভারতের অবদানের কথাও উল্লেখ করছিলেন তাঁরা ৷ এ়কটা দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে আমার দেশের নাম জড়িয়ে থাকায় গর্ববোধ করছি ৷
Saturday, April 13, 2019
আ ত্ম প রি চ য়
বৃক্ষের নামে নাম মোর আছে এক কানন
জনমদুখিনী সীতার ক্ষণেক নির্বাসন
পিতৃদত্ত পরিচয়ে এহি নাম ধরি
হেঁয়ালিতে সংক্ষেপে কহিবারে পারি
আনন্দ তাহার সহিত করিয়া যোজন
পার করিতে চাই এ মরজীবন
Sunday, April 7, 2019
ভ বি ষ্য তে র ভূ ত
আমার বয়স পঁয়ষট্টি ৷ কিন্তু তেমন চাপ অনুভব করিনা ৷ আমার সমবয়সী অনেক বন্ধুবান্ধব ইতোমধ্যে এজগৎ পেরিয়ে গেছে ৷ কিন্তু আমি যেতে পারছিনা ৷ চাইলেই কী আর যাওয়া যায় ৷ নরম মনের মানুষেরা বলেন সবই ওপরওয়ালার ইচ্ছে ৷ আমার তো মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়, কবে আমিও পেরিয়ে যাব দিগন্তরেখা ৷ আমার শরীরে মনে তেমন কোনো লক্ষণও দেখা যায়নি ৷ আজ অব্দি ৷ না, জ্বরজারিও হয়না আমার ৷ রোজ সকালে দিব্যি সাত-আট কিলোমিটার ঘুরে আসি প্রাতঃভ্রমণ করে ৷ খুব ভোরেই উঠি ৷ সবাই বারণ করে এতো ভোরে বেরুতে ৷ এসময় নাকি অশরীরীরা বিচরণ করেন ৷ তাঁদের খপ্পরে পড়লে প্রাণটা খোয়াতে হতে পারে ৷ এঁদেরই নাকি ভূত বলা হয় ৷ সবাই সমীহ করেই কথাগুলো বলেন ৷ আমি পাত্তা দিই না ৷ বলি, ধরে নাও আমি ভবিষ্যতের ভূত ৷ আমি কী করি বলা যায়না ৷ বরং তোমরা সাবধানে থেকো ৷
আমার একটা লালরঙের বাইক আছে ৷ এটা নিয়েই আমি এখনও বহু দূরদূরান্তে পাড়ি দিই ৷ বাইক-রাইডিং আমার শখ ৷ নেশাও বলা যেতে পারে ৷ আগে আমার প্রান্তিক শহরটা থেকে রাজধানী চলে যেতাম ৷ পরম হিতৈষী শুভংকরদা ধমকানোর পর থেকে সেটা বন্ধ করেছি ৷ তবুও এখনও জেলাশহর পর্যন্ত যাই ৷
তা কদিন আগে ফিরছিলাম জেলাশহর থেকেই ৷ সন্ধ্যের একটু আগে রওনা দিয়েছি ৷ আগেরদিন পূর্ণিমা গেছে ৷ জোছনা একটু দেরিতে উঠেছে ৷ পিলাকপাথর পৌঁছুতেই সারামাঠ জুড়ে ঢালাও বিছানার মতো ফরসা জোছনা পাতা ৷ এমনিতে জায়গাটা প্রত্নক্ষেত্র ৷ পুরোণো মূর্তি, অট্টালিকার অবশেষ রয়েছে ৷ জায়গাটা নিয়ে অনেক গল্প ৷ অনেক মিথ রয়েছে ৷ জায়গাটা নির্জনও ৷ একটা বাঁক পেরিয়ে এসেছি ৷ খোলা মাঠের মাঝখান দিয়ে গেছে রাস্তাটা ৷ কিছুদূর গিয়ে জাতীয় সড়কে পড়বে ৷ আমাকেও জাতীয় সড়কে এসে ডানদিকে যেতে হবে ৷ খোলামেলা হওয়ায় অনেকদূর দেখা যায় স্পষ্ট ৷ বাইকও চালাচ্ছি ষাট-পঁয়ষট্টি বেগে ৷ বাইকে উঠলে গতি সম্বন্ধে আমার হুঁশ থাকেনা ৷ এজন্যে প্রিয়জনদের কাছে বহুবার ধমক খেয়েছি ৷ বাইকের চাবিও বাজেয়াপ্ত করেছে বন্ধুরা কয়েকবার ৷
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ডানদিকের জমির আল ধরে একজন ছুটতে ছুটতে রাস্তার দিকে আসছে আর চিৎকার করে কিছু বলছে ৷ বাইকের গতির কারণে আমি ওকে পেরিয়ে যাচ্ছিলাম প্রায় ৷ বিশ্বাস করবেননা ৷ লোকটা যেন তিনলাফে মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় আমার বাইকের সামনে এসে পড়ল ৷ খুব জোরে ডিস্কব্রেকসহ চেপে বাইক থামালাম ৷ ধমক লাগালাম ওকে, আর একটু হলেই তো চাপা পড়তেন ৷ লোকটা আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কাতরকন্ঠে বলে উঠল, মহাশয়, দয়া করিয়া আপনি যদি আমাকে আপনার যানে উঠাইয়া লন তবে বিশেষ উপকৃত হইব ৷ বড় সড়কে পৌঁছাইলেই চলিবে ৷ তথা হইতে আমি অন্য যান পাইয়া যাইব ৷
কোথায় যাবেন আপনি?
মহাত্মন, আমি শাকবাড়ি যাইব ৷ সেখানে উপজাতি পল্লীতে আমার নিবাস ৷
এ দেখছি সবকথা সাধুভাষায় বলছে ৷ শাকবাড়ির কথা বলায় আমি একটু ভাবছি ৷ জায়গাটা আমার যাত্রাপথেই পড়ে ৷ ওকে বড়ো রাস্তায় না নামিয়ে আমার সঙ্গেই নিতে পারি ৷ তবে জায়গাটা সম্বন্ধে দুর্নাম আছে ৷ একটু রাত হলে পথচারীর উপর আক্রমণ হয় ৷ টাকা পয়সা ছিনতাই হয় ৷ মার্ডার হয়েছে কয়েকটা ৷ ভেবেছিলাম জায়গাটা দ্রুত পেরিয়ে যাব ৷ ভালোই হল একজন সঙ্গী পাওয়া গেল ৷ কথাবার্তা বলতে বলতে যাওয়া যাবে ৷ আমি বললাম, আমি তো শাকবাড়ির ওপর দিয়েই যাব ৷ চলুন একসঙ্গে কথা বলতে বলতে যাওয়া যাবে ৷ তাহা হইলে তো অতি উত্তম হয় ৷ লোকটা বলল ৷
বাইক গতিতেই চালাচ্ছি ৷ কথাও বলছি ৷ তা আপনি খেতের মাঝখান দিয়ে কোথা থেকে আসছিলেন?
মধ্যপিলাক হইতে ৷ তথায় একটি চারু ও কারুশিল্প শিক্ষাকেন্দ্র রহিয়াছে ৷ আমি তথায় অধ্যাপনা করি ৷
আমি বললাম, ও আপনি শিল্পী ৷ আমিও একটু আধটু শিল্পচর্চা করি ৷ আমি ছবি আঁকি ৷
বুঝলাম একারণেই তিনি বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলছেন ৷
তিনি নিজে নিজেই বলছেন, আমার জীবন সংশয়াপন্ন ৷ আমাকে আত্মগোপন করিতে হইবে ৷ তাই রাত্রিবেলা বাহির হইয়া পড়িয়াছি ৷ গ্রামে আমার স্ত্রী ও শিশুপুত্র রহিয়াছে ৷ তাহাদের দর্শন করিয়াই পুনরায় অনির্দেশের পথে পাড়ি দিব ৷
ভাবলাম কোনো রাজনৈতিক কারণ কিনা ৷ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বিরোধী শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের উপর আক্রমণ শুরু হয়েছে ৷ কিন্তু শিল্পী বলছেন আজব কথা ৷ রাজা তাঁর নামে হুলিয়া জারি করেছেন ৷ মাথার দাম ঘোষণা করেছেন দশহাজার সুবর্ণমুদ্রা ৷ কী পাগলের পাল্লায় পড়লাম৷
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজা কোথায়? নাকি শিল্পী মানুষ ৷ হেঁয়ালিতে কথা বলছেন ৷
কথা শুনতে শুনতে বাইক চালাচ্ছি ৷ হঠাৎ সামনের চাকাটা একটা গর্তে পড়ে ঝাঁকুনি খেয়ে উঠল ৷ লোকটা লাফিয়ে উঠে আমার পিঠের উপর পড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল ৷ যেন আস্ত একটা সিমেন্টের বস্তা আমার পিঠে চেপে বসল ৷ শিল্পীর হাতদুটো এতো ঠান্ডা ৷ বরফের মতো ৷ মানুষের হাত এতো শীতল হয়না ৷ হাতদুটো আস্তে আস্তে আমার গলা পেঁচিয়ে চেপে বসতে লাগল ৷ আমি বাইকের গতি বাড়িয়ে দিলাম ৷ আরো জোরে বাইকের গতি ৷ আরো জোরে চেপে বসছে হাত ৷ শিল্পী বলছে, সম্মুখের বাঁক অতিক্রম করিলেই আমাকে অবতরণ করিতে হইবে ৷ রাজার সৈনিকগণ আমাকে এইস্থানেই ৷
কে কে আপনি? বলুনতো সত্যি করে ৷ আপনি কী আসলেই শিল্পী? অতি কষ্টে গলা দিয়ে স্বর বের করে বললাম ৷
হ্যাঁ, আমি শিল্পী ৷ তবে আজি আর নহি ৷ অদ্য আমি অশরীরী ৷ ভূত ৷ রাজার সৈন্যগণ আমাকে এইখানে হত্যা করিয়া পুঁতিয়া ফেলিয়াছিল ৷
আমার সারা শরীর দরদর করে ঘামছে ৷ অশরীরীর হাতের চাপে দমবন্ধ হয়ে আসছে ৷
আপনি হয়তো জানেননা ৷ সেই সৈন্যদলে আপনিও একজন সৈনিক ছিলেন ৷ আপনার পূর্বজন্মের কথা বিস্মরণ হইয়াছে ৷ অদ্য আমি আপনার উপর প্রতিশোধ লইব ৷ আপনি হইবেন ভবিষ্যতের ভূত ৷
বাইকটা বিকট শব্দ করে রাস্তার পাশে একটা গাছে গিয়ে লাগল ৷ আমিআর কিছু বলতে পারবনা ৷
Monday, March 18, 2019
টা ন
আমার সমস্ত টান জমাট হয়ে উঠলে
ভিটে মাটি সব তোমার পায়ে এনে ফেলব
তোমাকে ভালোবাসব তুমুল তোড়ে
তোমার বুকে ব্যথা হলে আমি দশ আঙুলে
হারমোনিয়ামের রিডের এধার ওধার করব
আমি রাস্তার ধারে এক ঝুপড়ি বানাব
ঝাঁপ খোলা থাকবে সকাল বিকাল
আমার সমস্ত কবিতার চিরকুট বিছিয়ে দেব
তোমার বিছানার চাদরের ওপর
আমার সবকিছুর বিনিময়ে চুমু খাব
তোমার কপাল বরাবর ৷