Showing posts with label অশোকানন্দ রায়বর্ধন book review. Show all posts
Showing posts with label অশোকানন্দ রায়বর্ধন book review. Show all posts

Monday, February 6, 2017

ধীরে বহে বেত্রবতী

সন্মাত্রানন্দ আমার প্রিয় কথাকার৷ তাঁর কথাভুবন আমাকে প্রবল আকর্ষণ করে ৷ তাঁর জ্ঞানের গভীরতা যে কোন অনুসন্ধিৎসুর ঈর্ষা জাগাায় ৷ তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যেও থাকে জ্ঞান ও মননের ছাপ ৷ কদিন আগে তরুণ প্রকাশক তীর্থংকর দাশ আমাকে পড়ার জন্যে দিয়েছেন সন্মাত্রানন্দের ' ধীরে বহে বেত্রবতী ' গল্প সংকলন গ্রন্থটি ৷ এই গ্রন্থের প্রতিটি গল্পেই তিনি রেখেছেন তাঁর প্রজ্ঞার স্বাক্ষর ৷এই গ্রন্থের গল্পগুলোতে যেমন রয়েছে রহস্যময় বয়ন শৈলী, তেমনি গভীর জীবনভাবনা ও দর্শনবীক্ষণ ৷মানবিকতার জন্যেও উচ্চকিত গল্পকার ৷
প্রথমটায় একটু রহস্যগন্ধী বয়ন শুরু করলেও গল্পের আঁচল ছাড়িয়ে যখন মননভূমির দিকে এগিয়েছেন, এক মায়াবি লোকঘ্রাণময় ভাষাশৈলী যেন ছড়িয়ে রয়েছে প্রথম গল্প 'উত্তরা বোষ্টমির কড়চা'তে ৷ প্রেমের টানে ঘরছাড়া উত্তরার কুসুমাকরের সঙ্গে নিবিড় প্রণয়সম্পর্ক,সমাজপ্রতিক্রিয়া ও চরিত্রকে মেলে ধরে এক ধ্রুপদী প্রেমের আখ্যান হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷
'নিঝুমঘর' নামের মধ্যেই লুকিয়ে যেন এক অশরীরী রহস্যময়তা ৷গল্পের বুননের মুন্সিয়ানায় পাঠক পৌঁছে যান অধিজাগতিক এক পরিবেশের মধ্যে ৷ ছোট্ট দুটি উপকরণ মশা তাড়ানোর ধূপ আর টিপয়ের উপর সাপের নকশা গল্প কথকের জীবনের দুই ঘটনাকে জুড়ে ভৌতিক জাল সৃষ্টি করে গল্পে ৷
একটা সম্পর্কের টানাপোড়োনোর গল্প 'জে' ৷ দাম্পত্যজীবন থেকে বঞ্চিত দুজন ৷ ভাসুর ও ভাদ্রবৌ ৷ দিগন্ত আর অনমিতা ৷ সমাজের শ্যেনদৃষ্টি আর তীর্যক সন্দেহপ্রবণতা একটা বাধা হয়ে তাদের মনের অভ্যন্তরের কোন নিভৃত অভীপ্সাকে রূপ দিতে ৷ দিগন্ত সিদ্ধান্ত নেয় স্থায়ীভাবে পন্ডিচেরি চলে যাবার৷ এই অনভিপ্রেত সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানায় বাবাই ৷ 'জে'কে যেতে দিতে চায় না সে ৷ আর এখান থেকেই শুরু হয় গল্পের নতুন অভিমুখ ৷মানবসম্পর্কের অনন্য উন্মোচন ৷ কমপিউটার গেমসের অনুষঙ্গ এনে বাবাইর মানসঝড়ে বিস্ফোরণের এক নন্দন এনেছেন গল্পকার এখানে ৷ সব পারিপার্শ্বিক নেতিকে জয় করার অর্জনে প্রাণিত হয়েছে সে ৷
অপরাধবোধ থেকে সৃষ্ট মানসপ্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ' মাঝরাতের সেই ফোনকল' গল্পটি ৷ আইন পেশায় যাঁর পশার জমিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত তাঁদের বেআইনি জ্ঞানার্জনের বৃত্তান্তকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরেছেন 'সরগরম পেশা' গল্পে ৷ প্রচলিত উচ্চশিক্ষার প্রতি শ্লেষাত্মক ইঙ্গিত ৷' ভ্রষ্টাচারী ইঁদুর' গল্পে ইঁদুরের প্রতীকে ভ্রষ্ট মানবচরিত্রেরই উদ্ঘাটন করেছেন রম্য বর্ণনায় ৷ 'পাঁচজন মানুষ' গল্পে সমাজেরই পাঁচজন মানুষকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন, যাঁদের জীবনধারা থেকে উন্মোচন করেছেন সহজিয়া যাপনকথার ৷
'মৃৎপাত্রজাতক' এক গভীর দর্শনের কথা বলে ৷ 'একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর' কিংবা 'মাটির এই পিঞ্জিরার মাঝে বন্দী হইয়া রই' অথবা 'মানব দেহ মাটির ভান্ড' ইত্যাদি অনুষঙ্গের মধ্য দিয়ে মানবশরীর ও মানবজীবনের যে নশ্বর উপমা তুলে ধরেন লোককবিরা তার ভেতর সৃষ্টি ও লয়ের যো বার্তা রয়ে গেছে সেটাকে মৃৎপাত্রের আত্মকথনে তুলে ধরেছেন গল্পকার ৷ সিদ্ধার্থের প্রসঙ্গ এনে আসলে দেহভান্ড মাটিতে মিশে যাওয়ার সহজিয়া সাধনকথাকেই তুলে ধরেছেন ৷
'ধীরে বহে বেত্রবতী' ভারতপুরাণকথার বিনির্মান ৷ শুধু বিনির্মানই নয় ৷ গল্পের মাধ্যমে লোকচরিত্র উদ্ঘাটনের প্রয়াসও শিল্পিত হয়েছে ৷ বিষ দুক্ষেত্রেই ক্রিয়াশীল ৷ দানের অহংকারে সৃষ্টি হয় আত্মবিষ বা অস্মিতা ৷ আর খললোকের বিষও বিমোচিত হয় না সাধুসান্নিধ্যেও ৷ প্রভু কিংবা সখার ক্ষতিসাধনে এ বিষ সর্বনাশা শুধু নির্মোহ প্রেমানুভবই পারে সব বিষ নিংড়ে জীবনের গতি সচল রাখতে ৷ অসাধারণ প্রতীকী নির্মান এ গল্প ৷ জীবনের জন্যে জাগেন সন্মাত্রানন্দ ৷
............................................
ধীরে বহে বেত্রবতী/সন্মাত্রানন্দ
মূল্য: ১৪০ টাকা
প্রচ্ছদ: Charu Pintu
নীহারিকা পাবলিশার্স

ম্যান্ডেলার সন্ততি

মৃণালকান্তি দেবনাথ এই সময়ের শক্তিমান কবি ৷ তুলসী পাবলিশিং হাউস থেকে সদ্য বেরুলো তাঁর প্রথম কবিতার বই ম্যান্ডেলের সন্ততি ৷ এই প্রজন্মের এই কবির কাব্যভাষায় যেমন সময়ের ছাপ রয়েছে তেমনি বাংলাকাব্যের দীর্ঘপরিক্রমণের মানচিত্রটিও উঠে এসেছে নির্মানে ৷ 'ডোমনির ঘরফেরত পুরুষ হৃদয় জানে/ললিতা-বিশাখা ছিল ৷ ষোলশত গোপিনীও সত্য/ব্যালেন্স রাখতে পারলে সংসার সমৃদ্ধ হয় '৷ ( কৃষ্ণকথা) কিংবা 'নিমাই সন্ন্যাসেতে চলে গেলে/দল বেঁধে হা-হুতাশ, কান্নাকাটি হল খুব/ ফুল ফোটার সময়ে ফুলস্টপ দিয়ে রাতি পোহাইল' (ভোরবেলার কবিতা) অথবা 'সব অঙ্কে ভাগফল শূন্য জেনেও যাপনে চেয়েছি শান্তি/আর একবার লিখে যাই এই সত্য, আমি ছিলাম গোপীচন্দ্র/ আমি মৃণালকান্তি ৷(গোপীচন্দ্রের গান) এই রূপকাত্মক ভাষ্যেই অনুভব হয় কবির চলন বাংলাকাব্যের আব্রহ্মস্তম্ভপর্যন্ত ৷ আর সমুদ্যতসত্যের কাছেও কবি স্বচ্ছ ৷তিনি মূল্যায়ন করেন তাঁর যাপনের দ্বন্দ্বও ৷'যে সব আন্দোলনে নাম লিখিয়ে/মিছিলের সামনে হেঁটে একদা/যা কিছু নিপাত যাবার জন্যে/গলার শিরা ফুলিয়ে স্লোগান দিয়েছি/ সে সব আসলে ছিল আমার নিজের বিরুদ্ধেই' ( শিরোনামহীন) ৷এতো সব ভুল গমন নয়, কবি কবিতাকে নিয়ে সংসার পাততে চান ৷ 'তুমি যদি রেখে থাকো নির্ধারিত টব/আমিকিন্তু হতে পারি মাথুর- যুবক!/ছেঁড়া জিন্স যুবকেরা অনুরাগী জানি, /তবু তোমাকে নিয়ে লিখেছি পাগলামি (বাস্তবিক) ৷ প্রচ্ছদেও সম্ভবত কবির হার্দ্য প্রতিদ্বন্দ্বী পাঙ্কযুবকের ছেঁড়া জিন্স