Saturday, February 6, 2021
আত্ম অনুভব
মাঝে মাঝে কিছু উইশ আসে' স্যার, আমি আপনার ছাত্র/ছাত্রী ৷ কেমন আছেন ৷অনেকদিন দেখি না ৷ অনেক দূরে আছি স্যার ৷বাড়ি যাওয়া হয় না ৷ ভালো থাকবেন স্যা র৷' এ ধরনের আরো কুশল বাক্য ৷ কারো চেহারাও মনে করতে পারি না ৷ তবু মনে হয় এসবই যেন আমার সন্ততির কন্ঠস্বর ৷ নস্টালজিক বার্তা ৷ ভারি হয়ে আসে নিঃশ্বাস ৷ আমারই যদি এমন হয়, কেমন অনুভব করেন তাদের আত্মজনেরা ৷ ফেলে আসা পেশাটায় যেমন তৃপ্তি আছে, স্বীকৃতি আছে তেমনি একটা অন্তর্দ্বন্দ্বও রয়েছে ৷রয়েছে বিরহকাতরতা বহুজনের সাথে ভাগ করে নেবার ৷ আর এই অনুভব আমার সৃষ্টিতেও আসে ৷
Tuesday, January 12, 2021
সং। ক্রা। ন্তি
সংক্রান্তি
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
তোমার হাত কী মোহনীয় হয়ে উঠবে এই সংক্রান্তির সন্ধ্যায়
নিকোনো উঠোন আলপনায় রাঙানো হয়ে গেলে ক্লান্ত হাত
পড়শির পরশ চাইবে নিভৃতে অন্তত প্রশংসামুখর দুচোখ
যেমন মাহেন্দ্রসূর্য কুসুমশোভন হাসিতে স্বচ্ছ উঠোনে বুলোবে চোখ
পিটুলিগোলার রঙ ভেসে উঠতেই
তোমাকেও মনে হয় সেজে উঠেছ
মাঘসকালের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে
বুড়ির ঘরের সামনে যেন আগুন আর
উত্তাপের একমাত্র পরিষেবাপুষ্ট
রক্তিম আঁচের স্নেহময় আভায় একমাত্র
তুমি যেন সুন্দরী হয়ে ওঠো কুয়াশাভোরে
পৌষের শেষ সকাল এভাবেই প্রাতঃভ্রমণ সারে তোমাকে নিয়ে ৷
Sunday, January 10, 2021
জন্মদিনে
জন্মদিনে কী আর আমি........
' কিবা বার্তা কি আশ্চর্য পথ বলি কারে
কোন্ জন সুখী হয় এই চরাচরে' ৷
মহাভারতের একটি কাহিনিতে আছে বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে কটি প্রশ্ন করেছিলেন ৷ বার্তা কী, আশ্চর্য কী, পথ কাকে বলে আর এ সংসারে কে সুখী? যুধিষ্ঠির সব কটি হেঁয়ালিমূলক প্রশ্নের দুর্দান্ত দার্শনিক উত্তর দিয়েছিলেন ৷ কী আশ্চর্য বলতে যুধিষ্ঠিরের জবাব ছিল-প্রতিদিন প্রতিনিয়ত এত প্রাণীকুল মারা যাচ্ছে এবং এটাই হল নিয়তি, চিরন্তন পরিণতি ৷ মানুষ সর্বক্ষণ এই চিরন্তন ধারাকে দেখে আসছে ৷ তথাপি মানুষ বেঁচে থাকার জন্যে কী আকুল ৷ এটাই হল আশ্চর্য ৷
আমাদের এক একটা জন্মদিন আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায় ইতিদিনের দিকে ৷ আমরাও জানি তার পরিণতি ৷ পরিণতও হই আমরা ৷ আমরা জন্মদিনকে পালন করি ঘটা করে ৷ শুভেচ্ছা,ভালোবাসা, আশীর্বাদে ভরে যায় জন্মদিনের পরিমন্ডল দীর্ঘায়ুর চিরপথ ৷ আমরা চাই প্রতিটি মানুষ চিরজীবিত হোক ৷ নির্মল আমাদের বাসনা ৷ 'মলিন মর্ম মুছায়ে' ৷ এক আন্তরিক রেওয়াজ আমাদের জীবন ঘিরে ৷ একের জন্মদিনে আসে অজস্র শুভকামনা ৷ প্রিয়জনের জন্মদিনেও প্রতিবিম্বিত হয় সেই শুভায়ুর বাসনাসুষমা ৷
বর্ষপঞ্জীনির্ধারিত ক্ষণ অনুযায়ী আজ আমার জন্মদিন ৷ সারাদিনব্যাপী অজস্র ফোন, মুখোমুখি শুভেচ্ছা, সামাজিক মাধ্যমে শুভতোষ বার্তার বন্যা বয়ে গেছে ৷ আমি ভেসে গেছি সেই বানে ৷ আরও আরও বহুকাল বেঁচে থাকার, আরও আরও বেশি করে জীবনকে ছুঁয়েছেনে দেখার সুতীব্র কাঙ্ক্ষা জাগছে ৷ চিরসুন্দর জীবন কতো সুন্দর ৷
তবে আনুষ্ঠানিক জন্মদিন পালন আমার কোনোদিন হয়নি ৷ আমার সন্তানদেরও জন্মদিন আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করিনি কোনদিন ৷ কিন্তু আমার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে এক অভিনব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম আমি আজ সন্ধ্যায় ৷ আজ সকালের ট্রেনে রওনা হয়ে কুমারঘাট হয়ে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছেছি কাঞ্চনপুর 'অণুভাবনায় সাহিত্য উৎসব' এ যোগ দিতে ৷ বনতটের সম্পাদক হারাধন বৈরাগি,রসমালাইর অমলকান্তি চন্দ এবং দোপাতার দিব্যেন্দু নাগের যৌথ উদ্যোগে আগামীকাল কাঞ্চনপুর ডাকবাংলোর কনফারেন্স হলে আয়োজন করা হয়েছে সেই অনুষ্ঠানের ৷ সন্ধ্যায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের একঝাঁক গুণী লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও গল্পকারদের মধ্যে দেবব্রত দেবরায়, সস্ত্রীক শ্যামলবৈদ্য ও পার্থ ঘোষ, বিমল চক্রবর্তী, অপাংশু দেবনাথ, জহর দেবনাথ, নিশীথরঞ্জন পাল, অভিককুমার দে, জয় দেবনাথ, বিজন বসু, সাচিরাম মানিক, চন্দনকুমার পাল, বাংলাদেশ থেকে আগত জাকির আহমদ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত সন্দীপ সাহু ও সুশান্ত নন্দীসহ আরো বেশ কয়েকজন সৃজনকর্মী এই কনফারেন্স হলে রীতিমতো কেক কেটেই পালন করলেন আমার জন্মদিন ৷ এই সন্ধ্যায় যেন আমাদের অতীতের বঙ্গভূমির প্রতিনিধিরাই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন আন্তরিক আলিঙ্গনে ৷ আজকের অজস্র আশীর্বাদ, শুভেচ্ছা, শুভকামনায় আমি আপ্লুত, আমি অভিভূত ৷ আমি সিক্ত হলাম ৷ আমি স্নাত হলাম এক স্বর্গীয় অবগাহনে ৷ সবাইকে আমার অন্তরের গভীর শুভকামনা জানাই ৷ আপনাদের / তোমাদের শুভবার্তাকে কুর্নিশ করি ৷ আমিও চাই সবাই ভালো থাকুন ৷ সুখে থাকুন ৷ শান্তিতে থাকুন ৷ প্রত্যেকের জন্মদিন আরো আরো জন্মদিন বয়ে আনুক প্রত্যেকের জীবনে ৷ ইচ্ছে হয় জীবনকে ডেকে বলি, হে জীবন, আমাদের জন্যে আরও কিছু সময় বরাদ্দ করো ৷ আরো কিছু মহার্ঘ মুহূর্ত দাও আমাদের সবার জন্যে ৷ হে জীবন! জীবন হে!
১১ জানুয়ারি ২০২০
Friday, January 8, 2021
মা
*# মা #*
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
(এক)
আমাদের সংসারে
মা, প্রাচীন সাঁকো
নড়বড়ে সেতুটা
ভাঙলো বলে
আর সংসারের
শেষ বাঁধনও
(দুই)
বিছানায় সাদা থান জড়িয়ে
মৌন শয্যায় পবিত্রতা
কাত হয়ে দেখেন
চিলেকোঠার আকাশ
অলীক ক্যানভাসে ভাসে
অতীতের সন্ততিবর্গ
(তিন)
মেঘলা মনে
অনিকেত ডাকঘরের
খাম হাতড়ে ফিরছেন
আমার মা ক্রমশ
সুদূরে সরে যাচ্ছেন আমাদের নিঃস্ব করে
তাঁর স্মিতমুখে
চরাচরের আলোর আভা
Monday, January 4, 2021
নদীর কথা
নদীর অনেক কথা থাকে তার বুকের ভেতর
অথচ তার কথা বলবার সময় হয়না ।
হয়না সময় কিঞ্চিৎ দাঁড়াবারও ।
তার ঢেউয়ের তালে আমরা উৎফুল্ল হই ।
তুলনা করি নৈসর্গিক গানের সাথে
অথচ নদীর বুকের ভেতর ঢেউয়ের দোলার গর্ভে
কতো কান্না কতো কান্না
দুঃখে গড়া নদী বয়ে যায় ভাটির দেশে সমুদ্রের কাছে
সমস্ত দুঃখ বিসর্জনের আশায়
। নীরব নদী একা একাই গড়ায় ।
নীল চাঁদ
নীল চাঁদ
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
ভোরের আজানের ধ্বনির আগেই
আকাশের পশ্চিম প্রান্তের সিঁড়ি বেয়ে
নেমে যায় কোজাগরীক্লান্ত নীল চাঁদ ।
পুরোনো ধাবার পাশে বহুকাল ধরে
পড়ে থাকা মালিকবিহীন নষ্ট গাড়িটির সারা শরীরে
আগাছা আর জঞ্জালের সাম্রাজ্য ।
ক্রমশ বিলীন হয়ে যায় তার নম্বরপ্লেট,
এই অরণ্যসংকুল সময়ে পরিচয় হারিয়ে যায়,
যেমন এই নিরেট গাড়িটির জঞ্জালের আড়ালে
দুর্বল হয়ে পড়ে যেন ব্যক্তি ও স্বদেশ।
দুঃসময়ে যার নিবিড় লালনের আশায় থাকে
পরিযায়ী কিংবা প্রতারিত মানুষ।
তারাও যাজকের অদ্ভুত হাসিতে মায়াজাল ছড়ায়,
দুখি ও পেটখোলা মানুষের স্বপ্ন ভাঙে ।
বেতালা কাঁসা ঘন্টার বেয়াড়া আওয়াজে
তাতে কী আর উপোসী পেট ভরে ?
অপেক্ষমান
অপেক্ষমান
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
জেগে থাকা নদীর প্রবাহ আর
অস্থির অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় ৷
আজ যে শীতদিনের অপরাহ্ণে মেদুর চোখে
ঘোলাটে আকাশের দিগন্ত খোঁজে
বছর পঞ্চাশ আগে সে তেজি ঘোড়া
স্বপ্নরচিত ভূখন্ডের যোদ্ধাদের পাশে থেকে
সমিধ বহন করে গেছে যুদ্ধভূমি পর্যন্ত
দেখেছে ভূখন্ডের জন্ম ৷ আর পেরিয়ে গেছে সময়ের নৌকো করে
সেই হারানো বাঁধন! লড়াইয়ের মাঠ!
দেখা যদি পাই কোনোদিন মৈত্রী সেতু পেরিয়ে
চলে যাব সরাসরি নগরশেষের উদ্যানে
বুকে নেব চন্দনবনের গন্ধ ৷ আমার পূর্বজের ঘাম
কিংবা শোনিতের দাগ যেখানে গাঁথা আছে দেয়ালের গায় ৷
Subscribe to:
Posts (Atom)