Showing posts with label জীবনকথা. Show all posts
Showing posts with label জীবনকথা. Show all posts

Friday, September 12, 2025

লোকসংসকৃতির উন্নিদ্র প্রহরী ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুমের একজন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব থেঙ্গাফ্রু মগ । তিনি ১৯৫৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সাব্রুমের মনুবাজারের দক্ষিণ কালাপানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবার নাম প্রয়াত অংগিয় মগ ও মা প্রয়াতা নিবাইফ্রু মগ । তিনি মনু এইচএস স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেন এবং এই বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন । ১৯৭৮ সালে সাব্রুম উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন । ১৯৮৩ সালে বিলোনিয়া কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে বিএ পাস করেন । ১৯৯১ সালে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন । ১৯৭৮ সালের ১৬ জুন একজন প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে তিনি ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শিক্ষাদপ্তরে চাকরিতে যোগদান করে ক্রমান্বয়ে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করে ২০০২ সালে প্রধান শিক্ষক পদে উন্নীত হন । দীর্ঘদিন সুনামের সাথে শিক্ষকতা করার পর ২০১৯ সালের ৩০ শে নভেম্বর মনু উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন । তাঁর অসাধারণ কণ্ঠসুষমার জন্য তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি সংগীতের ক্ষেত্রে ও বিশেষ সুনাম অর্জন করেন । রাজ্যের ও রাজ্যের বাইরে তিনি সংগীত পরিবেশন করে ভুয়সী প্রশংসা অর্জন করেছেন । মগ জনজাতির সংগীত, নৃত্য ও লোকসংস্কৃতির একজন বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব তিনি । তাঁর নিজের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'ফোক কালচারাল একাডেমি'র মাধ্যমে তিনি লোকনৃত্য, মনিপুরী নৃত্য ইত্যাদির চর্চা ও প্রসার ঘটিয়ে চলেছেন । ঐতিহ্যবাহী মগ লোকনৃত্যকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রেও তাঁর বিরাট ভূমিকা রয়েছে । তাঁর গুরু নীরেন্দ্রনাথ আচার্জির মতো তাঁরও অসংখ্য গুনমুগ্ধ শিক্ষার্থী রয়েছে । জীবনসায়াহ্নে এসে তিনি সংগীত ও নৃত্য চর্চার মাধ্যমেই সুকুমারচর্চা করে দিন যাপন করছেন ।

Monday, February 21, 2022

হরিনারায়ণ সেনগুপ্ত ও আমি

গতকাল শান্তিরবাজারে 'দেবদীপ' সাহিত‍্যপত্রের প্রকাশ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সম্পাদক-কবি অনামিকা লস্করের আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলাম পত্রিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে । কালিবাজারের পঞ্চায়েত সাংস্কৃতিক মিলনায়তনে অত‍্যন্ত সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও নান্দনিক এই অনুষ্ঠানে এক প্রাণচঞ্চলতার স্ফুরণ ঘটেছিল । একেবারে তারূণ‍্যেরই প্রাধান‍্য লক্ষ করা গেছে পুরোটা অনূষ্ঠানে । মধ‍্যাহ্নভোজন পর্বটিও ছিল বনভোজনের পরিবেশে প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ‍্যে । আমাকে 'দেবদীপ সম্মান-২০২২ এ ভূষিত করে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন এই সাহিত‍্যপত্র পরিবার । তাঁদের মূল‍্যায়ন আমি চিরদিন মাথায় তুলে রাখব ।
 সাহিত‍্যপত্র পরিবার এদিন আমার হাত দিয়ে রাজ‍্যের বর্ষিয়ান কবি ও সাহিত‍্যসংগঠক হরিনারায়ণ সেনগুপ্ত মহোদয়কে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করলেন । আজকের প্রজন্ম হয়ত জানেনা হরিনারায়ণদা ষাটের দশক থেকে বিলোনিয়ায় সাহিত‍্যচর্চা ‌করে আসছেন । প্রচারবিমুখ অত‍্যন্ত নীরব সংগঠক দাদা সাতের দশকে নিজের সম্পাদনায় নিয়মিত 'অগ্রণী' সাহিত‍্যপত্র প্রকাশসহ বিলোনিয়ায় আরো বহু সাহিত‍্যপত্রের প্রকাশের ক্ষেত্রে উৎসাহ দিয়ে গেছেন । তাঁর প্রত‍্যক্ষ পরিচর্যায় এই কলমচিসহ বেশ কজন কবি ও গল্পকার পরবর্তীকালে রাজ‍্যের সাহিত‍্যক্ষেত্রে স্থান করে নিয়েছেন । সাতের দশকের প্রথমদিকে বিলোনিয়ার একনম্বর টিলায় সাড়া জাগানো সাহিত‍্য উৎসবের আয়োজন করাসহ বহু সৃজনশীল কাজে তিনি সেসময়ের অনেক তরুণকে উৎসাহিত করেছেন । সাহিত‍্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অনুজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো কার্পণ‍্য কোনোদিন ছিলনা । হরিনারায়ণদার প্রত‍্যক্ষ লালন না পেলে সাতের দশকের লাজুক কলেজপড়ুয়া ছেলেটা আজকের অশোকানন্দ হয়ে উঠতে পারতনা । আমার জীবনের প্রথম পুরস্কার 'অগ্রণী সাহিত‍্য পুরস্কার' সাতের দশকের মাঝামাঝি সময়ে হরিনারায়ণ দা আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন । 'দেবদীপ সাহিত‍্য পত্রিকা' সাহিত‍্যের নিভৃত অলিন্দের এই কারিগরকে সম্মান জানিয়ে যথার্থ উত্তরসূরীর দায়িত্ব পালন করলেন । আমিও আমার সাহিত‍্যকর্মের গুরুকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাওয়ায় গর্ববোধ করছি । আমি গতকাল আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম দাদাকে মঞ্চে পেয়ে । অগ্রজরা নতুন প্রজন্মের মাথায় হাত রাখলে প্রজন্ম এভাবেই এগিয়ে যায় ।

 আমাদের সবার প্রণাম নেবেন দাদা ।

Sunday, January 10, 2021

জন্মদিনে

জন্মদিনে কী আর আমি........

' কিবা বার্তা কি আশ্চর্য পথ বলি কারে
কোন্ জন সুখী হয় এই চরাচরে' ৷
মহাভারতের একটি কাহিনিতে আছে বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে কটি প্রশ্ন করেছিলেন ৷ বার্তা কী,  আশ্চর্য কী, পথ কাকে বলে আর এ সংসারে কে সুখী?  যুধিষ্ঠির সব কটি হেঁয়ালিমূলক প্রশ্নের দুর্দান্ত দার্শনিক উত্তর দিয়েছিলেন ৷  কী আশ্চর্য বলতে যুধিষ্ঠিরের জবাব ছিল-প্রতিদিন প্রতিনিয়ত এত প্রাণীকুল মারা যাচ্ছে এবং এটাই হল নিয়তি, চিরন্তন পরিণতি ৷ মানুষ সর্বক্ষণ এই চিরন্তন ধারাকে দেখে আসছে ৷ তথাপি মানুষ বেঁচে থাকার জন্যে কী আকুল ৷ এটাই হল আশ্চর্য ৷
     আমাদের এক একটা জন্মদিন আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায় ইতিদিনের দিকে ৷ আমরাও জানি তার পরিণতি ৷ পরিণতও হই আমরা ৷ আমরা জন্মদিনকে পালন করি ঘটা করে ৷ শুভেচ্ছা,ভালোবাসা, আশীর্বাদে ভরে যায় জন্মদিনের পরিমন্ডল  দীর্ঘায়ুর  চিরপথ ৷ আমরা চাই প্রতিটি মানুষ চিরজীবিত হোক ৷ নির্মল আমাদের বাসনা ৷ 'মলিন মর্ম মুছায়ে' ৷ এক আন্তরিক রেওয়াজ আমাদের জীবন ঘিরে ৷ একের জন্মদিনে আসে অজস্র শুভকামনা ৷ প্রিয়জনের জন্মদিনেও প্রতিবিম্বিত হয় সেই শুভায়ুর বাসনাসুষমা ৷ 
        বর্ষপঞ্জীনির্ধারিত ক্ষণ অনুযায়ী আজ আমার জন্মদিন ৷ সারাদিনব্যাপী অজস্র ফোন, মুখোমুখি শুভেচ্ছা, সামাজিক মাধ্যমে শুভতোষ বার্তার বন্যা বয়ে গেছে ৷ আমি ভেসে গেছি সেই বানে ৷ আরও আরও বহুকাল বেঁচে থাকার, আরও আরও বেশি করে জীবনকে ছুঁয়েছেনে দেখার সুতীব্র কাঙ্ক্ষা জাগছে ৷ চিরসুন্দর জীবন কতো সুন্দর ৷ 
       তবে আনুষ্ঠানিক জন্মদিন পালন আমার কোনোদিন হয়নি ৷ আমার সন্তানদেরও জন্মদিন আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করিনি কোনদিন ৷ কিন্তু আমার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে এক অভিনব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম আমি আজ সন্ধ্যায় ৷ আজ সকালের ট্রেনে রওনা হয়ে কুমারঘাট হয়ে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছেছি কাঞ্চনপুর 'অণুভাবনায় সাহিত্য উৎসব' এ যোগ দিতে ৷ বনতটের সম্পাদক হারাধন বৈরাগি,রসমালাইর অমলকান্তি চন্দ এবং দোপাতার দিব্যেন্দু নাগের যৌথ উদ্যোগে আগামীকাল কাঞ্চনপুর ডাকবাংলোর কনফারেন্স হলে আয়োজন করা হয়েছে সেই অনুষ্ঠানের ৷   সন্ধ্যায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের একঝাঁক গুণী লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও গল্পকারদের মধ্যে দেবব্রত দেবরায়, সস্ত্রীক শ্যামলবৈদ্য ও পার্থ ঘোষ, বিমল চক্রবর্তী, অপাংশু দেবনাথ,  জহর দেবনাথ, নিশীথরঞ্জন পাল, অভিককুমার দে, জয় দেবনাথ, বিজন বসু, সাচিরাম মানিক, চন্দনকুমার পাল, বাংলাদেশ থেকে আগত জাকির আহমদ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত সন্দীপ সাহু ও সুশান্ত নন্দীসহ আরো বেশ কয়েকজন সৃজনকর্মী এই কনফারেন্স হলে রীতিমতো কেক কেটেই পালন করলেন আমার জন্মদিন ৷ এই সন্ধ্যায় যেন আমাদের অতীতের বঙ্গভূমির প্রতিনিধিরাই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন আন্তরিক আলিঙ্গনে ৷ আজকের অজস্র আশীর্বাদ, শুভেচ্ছা, শুভকামনায় আমি আপ্লুত,  আমি অভিভূত ৷ আমি সিক্ত হলাম ৷ আমি স্নাত হলাম এক স্বর্গীয় অবগাহনে ৷ সবাইকে আমার অন্তরের গভীর শুভকামনা জানাই ৷ আপনাদের / তোমাদের শুভবার্তাকে কুর্নিশ করি ৷ আমিও চাই সবাই ভালো থাকুন ৷ সুখে থাকুন ৷ শান্তিতে থাকুন ৷ প্রত্যেকের জন্মদিন আরো আরো জন্মদিন বয়ে আনুক প্রত্যেকের জীবনে ৷ ইচ্ছে হয় জীবনকে ডেকে বলি, হে জীবন, আমাদের জন্যে আরও কিছু সময় বরাদ্দ করো ৷ আরো কিছু মহার্ঘ মুহূর্ত দাও আমাদের সবার জন্যে ৷ হে জীবন! জীবন হে!
১১ জানুয়ারি ২০২০