দুর্গাপূজায় লৌকিকতা ও সামাজিকতা : অতীত ও বর্তমান
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
বাঙালি হিন্দুদের প্রধানতম উৎসব ও শ্রেষ্ঠ পূজা হল দুর্গাপূজা । পুরাণ শাস্ত্রকারদের মতে দেবী দুর্গা আদ্যাশক্তি মহামায়া, উমা, চন্ডী, ভগবতী, ভবানী, অম্বিকা, পার্বতী, শিবানী, কাত্যায়নী, মহিষাসুরমর্দিনী, অদ্রিজা প্রভৃতি বহু নামে পরিচিত ও পূজিত হন । ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কালিকাপুরাণ, দেবীপুরাণ, দেবী ভাগবত ইত্যাদি গ্রন্থে কিছু কিছু পার্থক্য থাকলেও দেবী দুর্গার কাহিনী ও লীলা বর্ণনা সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায় ।
দুর্গাপূজা বাঙালির কাছে শুধু দেবীআরাধনেই নয় । এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব । এর মধ্যে যেমন আছে পৌরাণিক বিশ্বাস, মিথ তেমনি রয়েছে শিল্প-সংস্কৃতি, লোকাচার ও সামাজিকতার গভীর মেলবন্ধন । সুদূর প্রাচীনকাল থেকে বাঙালির জীবনে উৎসব এবং শ্রেষ্ঠতম পূজা হিসেবে দুর্গাপূজার প্রচলন রয়েছে । বাংলার অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপূজা হল বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ী মন্দিরের পূজা । দেবী মৃন্ময়ী ছিলেন মল্লভূম রাজ্যের রাজরাজেশ্বরী মল্ল রাজবংশের কুলদেবী । মল্লরাজ জগৎমল্ল ৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে এই পূজার প্রবর্তন করেন । মল্লরাজবাড়ীর পূজায় দেবীপটের যে ব্যবহার দেখা যায় তা অনেকটা ভিন্ন প্রকৃতির । বাংলার সাধারণ দুর্গাপূজায় এমন পটের ব্যবহার দেখা যায় না ।
দুর্গাপূজার সূচনা কাল নিয়ে বহু মত থাকলেও বাংলায় ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট আকবরের শাসনামলে প্রথম পূজা শুরু হয় বলে অনেকে মনে করেন । ১৫৮২ সালে রাজশাহীর তাহেরপুরের জমিদার বাংলার বারো ভুঁইয়ার অন্যতম কংসনারায়ণ রায় তাঁর মনোবাসনা পূরণের লক্ষ্যে রাজসূয় ও অশ্বমেধ যজ্ঞের বিকল্প হিসেবে মার্কন্ডেয় পুরাণের দুর্গাপূজার প্রবর্তন করেন । তিনি সেসময়ে দুর্গাপূজায় ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছিলেন বলে জানা যায় । ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাজা নবকৃষ্ণ দেব রবার্ট ক্লাইভ এর সম্মানে দুর্গাপূজার মাধ্যমে বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছিলেন । সেকালে পূজা ও অনুষ্ঠানে বিপুল অর্থ ব্যয় হত বলে প্রথম দিকে মূলত রাজরাজড়া ও জমিদারদের মধ্যে দুর্গাপূজার আয়োজন সীমাবদ্ধ ছিল । ধীরে ধীরে বাঙালি জমিদারদের মধ্যে এই দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয় ।
সাম্প্রতিককালে প্রচলিত দুর্গাপূজা দুই ভাবে হয়ে থাকে । ব্যক্তিগতভাবে পারিবারিক কাঠামোতে যেখানে পূজার শাস্ত্রীয় বিধান নিয়মনিষ্ঠা অধিক পালন করা হয় । এবং বারোয়ারি বা সর্বজনীনভাবে এলাকায় ভিত্তিক দুর্গোৎসব আয়োজন করা হয়ে থাকে । ১৭৯০ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ার ১২ জন বন্ধু মিলে চাঁদা তুলে সর্বপ্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করে । ১২ ইয়ার বা ১২ বন্ধুর পূজা নামে পরিচিত এই পূজা একসময় বারোয়ারী নামে প্রতিষ্ঠা পায় । ১৮৩২ সালে কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ বারো ইয়ারের এই পূজা পদ্ধতি কলকাতা শুরু করেন । পরবর্তীতে উচ্চবর্ণীয় হিন্দু জমিদারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বারোইয়ারী পূজা । ১৯১০ সালে সনাতন ধর্মীয় উৎসাহিণী সভা, ভবানীপুর বলরাম বসু ঘাট লেনে, রামধন মিত্র লেন ও সিকদার বাগানে বারোয়ারী পূজা হয় । অনেকের মতে একদিন দুর্গোৎসবের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতাকে অস্তমিত করার উৎসব পালিত হয়েছিল । আবার স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দুর্গাপূজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখা যায় ১৯২৬ সালে অতীন্দ্রনাথ বোসের দুর্গোৎসবে । তিনি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দুর্গাপূজার উৎসবে আমন্ত্রণ জানান । স্বাধীনতা সংগ্রামে দুর্গা পূজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । কবি নজরুলের 'আনন্দময়ীর আগমনে' কবিতা এবং বঙ্কিমচন্দ্রের 'বন্দেমাতরম' সংগীত যার গুরুত্ব অপরিসীম । সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র বন্দেমাতরম গানটি দেবী দুর্গার ভাবনা থেকেই রচনা করেছিলেন যা একসময় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছিল ।
শরৎকালে যে দুর্গাপূজা হয় সেক্ষেত্রে পৌরাণিক কাহিনি বা রীতি রেওয়াজ থাকলেও বাঙালি জনজীবনে তা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ । সেকালের বাঙালিজীবনের ক্ষেত্রে দেখা যেত, এই সময়টা ফসল তোলার প্রাকমুহূর্তের অবসরকাল । মাঝে মাঝে তখন সবুজ ধানের ক্ষেতে ফসলের পুষ্টতা এসেছে । প্রকৃতি ও অপরূপ সাজে সজ্জিত । নীল আকাশে হালকা হালকা সাদা মেঘের আনাগোনা । নদীর চড়ায় বালির স্তুপে কাশফুলের দোলা । ইত্যাদি মিলে প্রকৃতি তার বর্ষণঋতু অতিক্রম করছে । এই সময় শ্রমজীবী মানুষের বিশ্রামের মধ্যে কিছুটা বিনোদনের উৎস খুঁজে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে । সেই হিসেবে শরৎঋতুর এই দুর্গোৎসব বাঙালির জীবনের অবসরের শূন্যতাকে পূরণ করে ।
দুর্গাপূজার শুরুর কাল থেকেই এই পূজার মধ্যে একটা সর্বজনীনতা ছিল । সেকালে এই পূজা উপলক্ষে সাধারণ জনগণ এবং রাজা ও জমিদারবর্গের পরিবারের সদস্যরা কাছাকাছি আসার সুযোগ পেত । দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে রাজা ও প্রজাদের মধ্যে বিরাজ করা ভীতি ও দূরত্ব তখন অপসারিত হয়ে যেত । সেকালে বাঙালি জীবনে সামাজিক সম্প্রীতির সূচনার ক্ষেত্রে দুর্গাপূজার মুখ্য ভূমিকা ছিল । অর্থনৈতিক কারণে দুর্গাপূজা বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ পর্যন্ত ধনী ও অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল ।
সাধারণ মানুষের আর্থিক সংগতি না থাকলেও বিভিন্নভাবে তারা তাদের বিভিন্ন পেশার মাধ্যমে দুর্গাপূজার বিশাল কর্মকান্ডের অংশীদার হওয়ার সুযোগ ছিল । প্রতিমা নির্মাণ, মণ্ডপসজ্জা ইত্যাদিতে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে শিল্পীরা অংশগ্রহণ করতেন । সেকালের দুর্গাপূজা ছিল মূলত পরিবারের সম্প্রদায়ের ও স্থানীয় জনগণের নিজস্ব উদ্যোগে সম্মিলিত আয়োজন । গ্রামের জমিদার এবং অভিজাত সম্প্রদায় দুর্গাপূজার প্রাক্কালে তার প্রজাদের উদার আহ্বান জানাতেন এই বিরাট কর্মযজ্ঞে সহায়তা করার জন্য । ফলে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই গ্রামের জমিদার ও বর্ধিষ্ণু ব্যক্তিত্বের বাড়িতে লোকসমাগম হত । গ্রামের দুর্গাপুজায় কয়েকদিন ধরে পুজামণ্ডপে ঢোলের বাজনা, আরতি, শঙ্খ, উলুধ্বনি, ধুনুচি নাচ, সিঁদুর খেলা ইত্যাদিতে মুখরিত থাকত । এছাড়াও সেই পূজাকে কেন্দ্র করে কীর্তন, রামায়ণ গান, যাত্রাপালা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম থাকত । এইসব বিনোদনমূলক আয়োজন গ্রামীণ সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখত । দেবী দুর্গার পূজায় যেমন আছে ভক্তি ও পৌরাণিক তাৎপর্য তেমনি আছে লৌকিক আনন্দ, সামাজিক ঐক্য ও মানবিক সহমর্মিতা এবং সেবার বহুমুখী দিক । দেবী দুর্গা যেন গ্রাম বাংলারই কোন গৃহস্থ পরিবারের কন্যা যাকে দূর দেশে বিবাহ দেওয়া হয়েছে । এই ঘরের মেয়ে পূজার সময় সন্তান-সন্ততি সহ শ্বশুরঘর ছেড়ে বাপের বাড়িতে যান । দশমীতে সকলকে কাঁদিয়ে মেয়ে আবার কৈলাসে তার স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসেন । গ্রামীন সংস্কৃতিতে পূজার কয়েক দিন বিবাহিতা কন্যাকে বাপের বাড়িতে নাইওর আনার রীতি রেওয়াজ এখনও রয়েছে । প্রসঙ্গত বলে রাখা যায়, মা দুর্গার চালচিত্রের যে বর্তমান রূপ সেখানে দেবী তার চার সন্তান–লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক গণেশসহ বিরাজমান । এর মধ্য দিয়েও দেবীপ্রতিমায় এক পারিবারিক রূপের প্রকাশ ঘটে । এই পূজার আনন্দেরই অঙ্গ হিসেবে দশমীর দিন গৃহস্থ ঘরে ভালো খাবার দাবারের আয়োজন করার রীতিও রয়েছে । সংবৎসরের পরিশ্রমী কৃষিজীবী মানুষ কাজের তাড়ায় ভালো কিছু খাওয়ার সুযোগ পান না বা অর্থনৈতিক সামর্থ্য আসেনা । পুজোর এই কয়দিন আনন্দের ফাঁকে তাঁরা রসনার তৃপ্তি করে থাকেন এই উৎসবের মাধ্যমে । গ্রামের পূজোয় দেবীর পূজারমন্ডপ তৈরি, প্রতিমানির্মাণ থেকে শুরু করে বিসর্জন পর্যন্ত প্রতিটি কাজেই গ্রামের সমস্ত মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্পন্ন করে থাকেন ।
শহরের দুর্গাপূজা অনেক বেশি আধুনিক এবং ব্যয়বহুল । সেখানে দুর্গাপূজায় থিমভিত্তিক প্যান্ডেল, আলো ও প্রতিমার চমকপ্রদ উপস্থাপনা লক্ষ্য করা যায় । প্রতিমানির্মানে ও মন্ডপসজ্জায় যেমন সৃজনশীলতার ছোঁয়া থাকে তেমনি সামাজিক বার্তা ও সমসাময়িক বিষয়ও উঠে আসে । দেবী দুর্গা এখানে শুধু মহিষমর্দিনী, অসুর বিনাশিনী নন । তিনি নারীশক্তির প্রতীক । সমাজের অন্যায়, অবিচার, বাল্যবিবাহ, পণপ্রথা ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হিসেবেও উপস্থাপিত হন । পূজা-ভাবনা বা দেবীভাবনার ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন বাঙালির চিন্তাভাবনার বিবর্তনের সুকুমার দিকটাকে তুলে ধরে । আজকের দিনের দুর্গাপূজায় সঙ্গীতানুষ্ঠান, শিশুদের মধ্যে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সমাজ সচেতনতামূলক সিনেমা প্রদর্শনী ও নানারকম সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় । এর মাধ্যমে পূজায় ধর্মীয় দিকটা পালনের পাশাপাশি বিনোদনের ক্ষেত্রেও আজকের দিনে গুরুত্ব দেওয়া হয় । বর্তমান সময়ে দুর্গাপূজা প্রাঙ্গণে রক্তদান শিবির, বস্ত্র দান, দুস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষণসামগ্রী বিতরণ, স্বাস্থ্যপরীক্ষা ইত্যাদি সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্গাপূজাকে আরো বেশি করে মানবসেবার উৎসব হিসেবেও পরিগণিত করার প্রয়াস নেওয়া হয় । দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে সাহিত্যচর্চা, বইমেলা, শারদসংখ্যা প্রকাশ আজকের দিনের নিয়মিত চর্চার বিষয় । পূজার সময় বিভিন্ন পূজা কমিটি শারদোৎসব উপলক্ষে বিশেষ স্মরণিকা প্রকাশ করে থাকেন । তাতে পাড়ার খুদে লেখকলেখিকা থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকদের লেখালেখি প্রকাশ করার একটা সুযোগ থাকে । পূজাকে কেন্দ্র করে সাহিত্যসংস্কৃতিচর্চার আবহ সৃষ্টির এই দিকটিও অনেক মূল্যবান ।
দেবীপূজা বা দেবীভাবনার এই বিবর্তনকে লক্ষ্য করলে দেখি যে, দীর্ঘ পথ পেরিয়ে দুর্গোৎসব আজ এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে । দুর্গাপূজা আজ শুধু বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নয়, পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাঙালিরা আছেন সেখানেই তা যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে । ইতিহাসবিদরা মনে করেন যে প্রায় ২২ হাজার বছর পূর্বে ভারতের প্যালিওলিথিক জনগোষ্ঠীর হাতেই দেবী পূজার প্রচলন হয় হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতা তথা সিন্ধু সভ্যতায় এসে তা আরো গ্রহণযোগ্য ও বিস্তৃত হয় । মাতৃ তান্ত্রিক দ্রাবিড় সভ্যতায় বিভিন্ন মাতৃ দেবীর পূজার প্রচলন ছিল । তারই ক্রম বিবর্তন আজকের দুর্গোৎসব । অতীত ও বর্তমানের দুর্গাপূজার মধ্যে বেশ কিছু ফারাক থাকলেও তার মূল স্রোত কিন্তু একই ধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমাজের বিবর্তন দুর্গাপূজার রূপকে বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত করছে এবং নতুন ভাবে উপস্থাপন করছে । দেবীপূজার পাশাপাশি বাঙালির মননেও চিন্তা ভাবনায় নানা কল্যাণকর ভাবনা যে রূপ পাচ্ছে এবং তা নতুন নতুন ভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে সেটাই হল পূজার আধুনিকতা । দুর্গাপূজা বাঙালির কাছে এক চিরন্তন উৎসব যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাহিত হয়ে চলছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রূপ পরিগ্রহ করছে । ফলে দুর্গাপূজা শুধুমাত্র দেবী আরাধনা নয় নানাবিধ নতুন নতুন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দুর্গাপূজা মানবসেবার উৎসবে পরিণত হচ্ছে এবং প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে আলো ঝলমলে শহরে প্যান্ডেলের সর্বত্রই দুর্গাপূজা একতা ও সম্প্রীতির বাণী প্রকাশ করছে ।