' কিবা বার্তা কি আশ্চর্য পথ বলি কারে
কোন্ জন সুখী হয় এই চরাচরে' ৷
মহাভারতের একটি কাহিনিতে আছে বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে কটি প্রশ্ন করেছিলেন ৷ বার্তা কী, আশ্চর্য কী, পথ কাকে বলে আর এ সংসারে কে সুখী? যুধিষ্ঠির সব কটি হেঁয়ালিমূলক প্রশ্নের দুর্দান্ত দার্শনিক উত্তর দিয়েছিলেন ৷ কী আশ্চর্য বলতে যুধিষ্ঠিরের জবাব ছিল-প্রতিদিন প্রতিনিয়ত এত প্রাণীকুল মারা যাচ্ছে এবং এটাই হল নিয়তি, চিরন্তন পরিণতি ৷ মানুষ সর্বক্ষণ এই চিরন্তন ধারাকে দেখে আসছে ৷ তথাপি মানুষ বেঁচে থাকার জন্যে কী আকুল ৷ এটাই হল আশ্চর্য ৷
আমাদের এক একটা জন্মদিন আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায় ইতিদিনের দিকে ৷ আমরাও জানি তার পরিণতি ৷ পরিণতও হই আমরা ৷ আমরা জন্মদিনকে পালন করি ঘটা করে ৷ শুভেচ্ছা,ভালোবাসা, আশীর্বাদে ভরে যায় জন্মদিনের পরিমন্ডল দীর্ঘায়ুর চিরপথ ৷ আমরা চাই প্রতিটি মানুষ চিরজীবিত হোক ৷ নির্মল আমাদের বাসনা ৷ 'মলিন মর্ম মুছায়ে' ৷ এক আন্তরিক রেওয়াজ আমাদের জীবন ঘিরে ৷ একের জন্মদিনে আসে অজস্র শুভকামনা ৷ প্রিয়জনের জন্মদিনেও প্রতিবিম্বিত হয় সেই শুভায়ুর বাসনাসুষমা ৷
বর্ষপঞ্জীনির্ধারিত ক্ষণ অনুযায়ী আজ আমার জন্মদিন ৷ সারাদিনব্যাপী অজস্র ফোন, মুখোমুখি শুভেচ্ছা, সামাজিক মাধ্যমে শুভতোষ বার্তার বন্যা বয়ে গেছে ৷ আমি ভেসে গেছি সেই বানে ৷ আরও আরও বহুকাল বেঁচে থাকার, আরও আরও বেশি করে জীবনকে ছুঁয়েছেনে দেখার সুতীব্র কাঙ্ক্ষা জাগছে ৷ চিরসুন্দর জীবন কতো সুন্দর ৷
তবে আনুষ্ঠানিক জন্মদিন পালন আমার কোনোদিন হয়নি ৷ আমার সন্তানদেরও জন্মদিন আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করিনি কোনদিন ৷ কিন্তু আমার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে এক অভিনব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম আমি আজ সন্ধ্যায় ৷ আজ সকালের ট্রেনে রওনা হয়ে কুমারঘাট হয়ে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছেছি কাঞ্চনপুর 'অণুভাবনায় সাহিত্য উৎসব' এ যোগ দিতে ৷ বনতটের সম্পাদক হারাধন বৈরাগি,রসমালাইর অমলকান্তি চন্দ এবং দোপাতার দিব্যেন্দু নাগের যৌথ উদ্যোগে আগামীকাল কাঞ্চনপুর ডাকবাংলোর কনফারেন্স হলে আয়োজন করা হয়েছে সেই অনুষ্ঠানের ৷ সন্ধ্যায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের একঝাঁক গুণী লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও গল্পকারদের মধ্যে দেবব্রত দেবরায়, সস্ত্রীক শ্যামলবৈদ্য ও পার্থ ঘোষ, বিমল চক্রবর্তী, অপাংশু দেবনাথ, জহর দেবনাথ, নিশীথরঞ্জন পাল, অভিককুমার দে, জয় দেবনাথ, বিজন বসু, সাচিরাম মানিক, চন্দনকুমার পাল, বাংলাদেশ থেকে আগত জাকির আহমদ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত সন্দীপ সাহু ও সুশান্ত নন্দীসহ আরো বেশ কয়েকজন সৃজনকর্মী এই কনফারেন্স হলে রীতিমতো কেক কেটেই পালন করলেন আমার জন্মদিন ৷ এই সন্ধ্যায় যেন আমাদের অতীতের বঙ্গভূমির প্রতিনিধিরাই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন আন্তরিক আলিঙ্গনে ৷ আজকের অজস্র আশীর্বাদ, শুভেচ্ছা, শুভকামনায় আমি আপ্লুত, আমি অভিভূত ৷ আমি সিক্ত হলাম ৷ আমি স্নাত হলাম এক স্বর্গীয় অবগাহনে ৷ সবাইকে আমার অন্তরের গভীর শুভকামনা জানাই ৷ আপনাদের / তোমাদের শুভবার্তাকে কুর্নিশ করি ৷ আমিও চাই সবাই ভালো থাকুন ৷ সুখে থাকুন ৷ শান্তিতে থাকুন ৷ প্রত্যেকের জন্মদিন আরো আরো জন্মদিন বয়ে আনুক প্রত্যেকের জীবনে ৷ ইচ্ছে হয় জীবনকে ডেকে বলি, হে জীবন, আমাদের জন্যে আরও কিছু সময় বরাদ্দ করো ৷ আরো কিছু মহার্ঘ মুহূর্ত দাও আমাদের সবার জন্যে ৷ হে জীবন! জীবন হে!
No comments:
Post a Comment