অশোকানন্দ রায়বর্ধন
ছয়টা ঋতু ৷ ছয় রূপে সালংকারা প্রকৃতি ৷ মনমেজাজও তার ছয় রকমের সময়ে সময়ে ৷ আর মর্জির রকমারি প্রমান রাখে বছর জুড়ে ৷ প্রান্তর জুড়ে ৷ অরণ্য-কন্দরে ৷ লোকালয়ে ৷ ভিটেমাটিতে ৷
মাটি ঘিরে মানুষ ৷ মাটিকে সাজায় মানুষ ৷ মাটির দখলদারি মানুষই করে ৷ মাটি নিয়ে মারামারি করে ৷ মাটিকে ঘিরে সম্পদ গড়ে ৷ বিত্তবৈভব ৷ সেও একান্ত নারীজনের মতো ৷ লালনে ও রমণে ৷ জমির রমণ কর্ষণ ৷ তার লালনফল ফসলের ভার ৷ বাগবাগিচা ৷
যথাকালে বাগিচার বুলবুলি ফুলশাখায় দোল দিয়ে কবিকে জাগায় ৷ কবি বিভোর হয় ফুলের চর্চায় ৷ যেমন বিমুগ্ধ থাকে শব্দচর্চায় ৷ ঋতুকালে বাগানের গাছগাছালি কবিকে ভালোবেসে ফেলে ৷ সবুজ পত্রগুচ্ছ কবির গায়ে শরীর বুলিয়ে দেয় ৷ শিহরণ তোলে ৷ বাহারি ফুলেরা অনিমেষ চেয়ে থাকে কবির দিকে ৷ আলতো করে চুমু খায় কবির গালে ৷ কোমল অঙ্গে ৷
বর্ষার ধারাপতনের মরসুম শেষ হলে গাছেরা অধীর হয়ে ওঠে ৷ শুষ্কদিনে চায় মানুষের আশ্লেষ ৷ নিবিড় কবিতা ৷ লালন ৷ যতন ৷ প্রথম বর্ষণজলের বার্তা আবার যতদিন না আসে ততদিন গাছে-মানুষে চলে গোপন অভিসার ৷ অসম দাম্পত্য ৷
কতদিন হল বর্ষা ফিরে গেছে ৷ বসন্তের নবীন সমাগমে প্রকৃতি চঞ্চলা ৷ চটুলা ৷ দীর্ঘ শুষ্ককালে বনানী কবিকে পেয়েছে কাছে ৷ তার বৃক্ষেরা তার পত্রপল্লব তার পুষ্পসমাহার কবির ঐন্দ্রজালিক স্পর্শে মোহাবিষ্ট ৷ বসন্তের বনানী হয়ে উঠতে চায় সর্বাঙ্গসুন্দরী রমণী ৷ কবির সঙ্গে ঝাঁপ দিতে চায় ঋতুরমণে ৷
এমন আদিম ঋতুও যেন শত্রু হয় বনানীর ৷ আকাশ ছেয়ে আসে কালোমেঘ ৷ মাটিতে প্রথম জলবিন্দু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুরিয়ে আসবে কবির লালনঋতু ৷ দীর্ঘকালের জন্যে আবার বিরতি ৷ অমৃতজল এবার মাটির শুশ্রূষা করবে ৷ প্রয়োজন হবেনা কবির সিঞ্চনহাতের ৷ বেশ কিছুকালের জন্যে ৷
শিউরে ওঠে বনানী ৷ তার বুকের মধ্যে বিচ্ছেদগান বাজে ৷ হৃদয়ের তারে সুর ওঠে বিরহের ৷ বসন্তে পতিসান্নিধ্য বঞ্চিতা নায়িকার অন্তর্দহনে দগ্ধদিনের আর্তসংলাপ সঙ্গীত হয় ৷ চিরকালীন বিলাপের ৷
বসন্ত বাতাসে সইগো, বসন্ত বাতাসে ৷
No comments:
Post a Comment