তোমারে করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা ।
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
রবীন্দ্রসৃষ্টির পরতে পরতে রয়েছে মনন ও চৈতন্য নির্মাণের গথিকশিল্প । ভারতবাসীর স্বদেশভাবনার মৌলিকতা । স্বাধীনতা লাভের পথ নির্দেশিকা । তিনিই সেদিন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, রাখিবন্ধন, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে স্বদেশপ্রেমের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরেছিলেন দেশবাসীর কাছে । কিন্তু আজ এই মহামানবের মহান কীর্তিকে ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে অসুস্থ রাজনীতির মাধ্যমে । আজ এই সংকটাবর্তিত অন্ধকারে রবীন্দ্রালোকবর্তিকার একান্ত প্রয়োজন । আজ সোচ্চারকন্ঠে আওয়াজ তুলতে ইচ্ছে হচ্ছে–'মুক্ত করো ভয় ।'
আজ 'আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস' । ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ । এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । ১৯১২ সালের ৩০ শে জুন ইংল্যান্ডের বিদ্বজ্জনের সামনে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকৃত গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদের কয়েকটি পড়েছিলেন আইরিস কবি ইয়েটস । রবীন্দ্রনাথও সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন । ইংল্যান্ডের বিদ্যোৎসাহীদের মধ্যে তিনি সেদিন নিজের আসন পাকা করে নিয়েছিলেন । ১৯১২ সালের ১লা নভেম্বর, ইংরেজি গীতাঞ্জলির সীমিত সংস্করণ প্রকাশ করে লন্ডনের ইন্ডিয়া সোসাইটি । ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১লা মার্চ, ম্যাকমিলন প্রকাশ করে ইংরেজি গীতাঞ্জলির সুলভ সংস্করণ ।
১৯৮৫ সালের পয়লা জানুয়ারি কলকাতার 'টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট' এর উদ্যোগে সোমেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখগণ কবি ইয়েটস কর্তৃক রবীন্দ্রকবিতাপাঠের এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ৩০ জুন আন্তর্জাতিকভাবে রবীন্দ্রকবিতাপাঠের আবেদন করেন কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিবছর ৩০ জুন দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস' হিসাবে পালন করে আসছে ।
আজকের এই হিংসাদীর্ণ পৃথিবীতে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক । তাঁর কবিতাসহ সমস্ত জীবনস্পর্শী সৃষ্টিশীলতার মধ্যেই রয়েছে মানবিকতার জাগরণের সতীব্র কাঙ্ক্ষা । শুভবোধ ও মানবকল্যাণের অমিয়বাণীতে মুখর তাঁর কবিতা । কাল থেকে মহাকালে উত্তরণের পথ নির্দেশ তাঁর কাব্য ।
আসুন, এই দুঃসময়ে মানবিকতার জাগরণের লক্ষ্যে ও মানবকল্যাণের উপায় সন্ধানের জন্য রবীন্দ্রকাব্য হাতে তুলে নিই । ত্রিপুরার সমস্ত শুভবোধোদীপ্ত কবিদের কাছে আবেদন রাখছি, আজ অন্তত একবার অনন্ত মঙ্গলালোকে রবীন্দ্র কবিতা পাঠ করুন ।
No comments:
Post a Comment