Showing posts with label অশোকানন্ন রায়বর্ধন. Show all posts
Showing posts with label অশোকানন্ন রায়বর্ধন. Show all posts

Monday, August 26, 2024

ধরগো তোরা, হাতে হাতে ধরো...

ধরগো তোরা, হাতে হাতে ধরগো...

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

হড়পা বানের নাম শুনেছিলাম। এবার চাক্ষুষ করলাম আমরা । দেখলাম গোটা রাজ্য কিভাবে তছনচ হয়ে যায় তার ভয়াল তান্ডবে । প্রকৃতির এই উদ্দাম মত্ততায় আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশও উপদ্রুত । কাঁটাতারের ওপার থেকেও ভেসে এসেছে হাহাকার । আমরা জল আর পানিতে ভাগ করি । কিন্তু তার তো কোনো সীমানা নেই । খেপে গেলে সে সসাগরার দখল নিতে চায় । আমরা প্রকৃতিকে চিনি না । প্রকৃতির রুদ্ররোষের খবর জানি না । যে প্রকৃতি আমাদের সবকিছু দেন তাঁকে আমরা ধ্বংস করি । তাঁর বুক টেনে চিরে ফেলি । প্রকৃতি সহ্য করতে করতে একদিন ফুঁসে ওঠেন ক্রোধে । প্রতিশোধের হাতিয়ার নামিয়ে দেন জনপদে । 

পৃথিবীতে যখন মানবতার সংকট দেখা দেয়, যখন মানুষের লোভ গগনচুম্বী হয়ে ওঠে, মনুষ্যত্ব বিপন্ন হয় তখনই প্রকৃতি জেগে ওঠে মানুষকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দেন । মানষের ঘুমিয়ে পড়া বিবেককে জাগানোর জন্য প্রকৃতি মাঝে মাঝে তার আয়ুধ প্রয়োগ করেন । আর তাতে মানুষের বিবেক জাগ্রত হয় । প্রতিবেশিকে আপন মনে হয় । দুঃখে, দুর্দৈবে, দুর্দিনে পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ লাগাতে ইচ্ছে হয় । একে অন্যকে সাহস জাগাতে ইচ্ছা হয় । প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়াতে সাধ জাগে । আবার এসময়ে আসল বান্ধবকেও চেনায় । পরিচয় হয় সৎ প্রিয়জনের সঙ্গে । এবারের বন্যায় প্রকৃতি আমাদের সে পাঠ দিয়ে গেছেন । কিভাবে আর্ত মানুষের পাশে মানুষই দাঁড়িয়ে পড়ে তা আমরা দেখেছি । আর্ত মানুষ এবারে দেখেছেন সাংসদ না থাকুক সজ্জন, সৎ জন, প্রিয়জন তাঁদের পাশে আছেন । একটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় থেকে আমরা অন্যপ্রদেশের দুর্যোগে আমাদের সাধ্যমতো সম্বল নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি । আর আমাদের দুর্দিনে সেই প্রিয় প্রতিবেশিদের দেখলাম হিমশীতল প্রতিক্রিয়ায়, মধ্যরাতের নীরবতায় । আবার এমন প্রতিবেশীও দেখলাম যারা অকারণ অন্ধ অজ্ঞ দোষারোপ করে শুধু চিলচিৎকার করে গেছে এই দুঃসময়ে । এরা নিজেদের দুর্দিনেও ত্রাতা হবার যোগ্যতা অর্জন করেনি । একদিন বোধ হবে এদের । এরা নিজের দেশের বিপন্নদের সেবায়ও লাগেনি । শুধু কল্পিত শত্রুর বিরুদ্ধে ফাঁকা আওয়াজ করে গেছে । কারো প্রতি ক্ষোভ নেই আমাদের ।  বরং এইসময়ে আমরা নিজেরা পরস্পর কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি । নিজেরা নিজেদের চিনতে পেরেছি । শুধু একরাশ নীরব অভিমান আর ভাঙা বুকের পাঁজর দিয়ে আমরা আবার আমাদের সংসার গড়ব ।

জল কমে গেছে অনেকটা। পলিবিছানো প্রলয়ভূমির উপর নিথর হয়ে থাকা বাস্তুভূমিতে কপর্দকহীন অশ্রুসম্বল বন্যার্তরা ফিরছেন । যেন কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত বিষাদভূখন্ডে ফিরছে সর্বহারা ভূমিপুত্রকন্যারা । এবারে সংকট দেখা দেবে খাদ্য ও পানীয় জলের । ঘরে রাখা খাদ্যশস্যসহ সব ফসল মাঠে মারা গেছে । কৃষকের ঘরের আয়ের উৎস শেষ । অপেক্ষা করতে হবে নতুন ফসল আসা পর্যন্ত । 

এই আর্তসময়ে সরকারের নিকট আমার বিনীত আবেদন, আগামী ফসল ঘরে ওঠা পর্যন্ত প্রতিটি আর্ত পরিবারে বিনামূল্যে রেশনসামগ্রী বিলির ব্যবস্থা করা হোক । ধান ও অন্যান্য শস্যবীজ ও সার-ঔষধের ব্যবস্থা করা হোক বিনামূল্যে। ততদিন পর্যন্ত হাতখরচা হিসেবে নিয়মিত কিছু আর্থিক অনুদান দেওয়া হোক । শিশু, বৃদ্ধ, অসহায় ও অসুস্থদের তালিকাভুক্ত করে তাদের যথাযথ পরিষেবার আওতায় আনা হোক । একা সরকারের পক্ষে সবদিক রক্ষা করা সম্ভব নয় । হৃদয়বানগণ ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরাও আর কটাদিন পাশে থাকুন । বিশ্বাস আমরা আবার শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াবই ।

শিল্পী তাঁর কল্পনা, মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে তাঁর শিল্পকে নান্দনিক করে তোলেন । তাঁর সৃজন বিপর্যস্ত হলে ক্ষুব্ধ হন তিনি । পরিত্যক্ত শিল্পের উপর আবার বোলান তাঁর চারুতুলি । প্রকৃতিও তেমনি । তাঁর এই বিধ্বংসী তান্ডবের অন্তরালেই রয়েছে সৃজনের বীজ । যা তিনি নিয়েছেন দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেবেন আমাদের । কারণ আমরা প্রকৃতির সন্তান । তিনি শুধু শাসন নয় । সোহাগও আমাদের করবেন ।