ত্রিপুরা রাজ্যে প্রধান দুটি ভাষা প্রচলিত । বাংলা ও ককবরক । রাজ্যের বৃহদংশের জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা এটি । কিন্তু এই দুই ভাষায় উচ্চশিক্ষা গ্লহণের সুযোগটি ক্ষীণ । রাজ্যের একটি উচ্মচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এম বি বি বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই শিক্ষাপ্রসারের চেয়ে পেটোয়া বিদ্যাজীবীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল । যার ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সযোগ না থাকার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত এখানে অস্বাভাবিক নয় । শিক্ষাবিস্তার নয় । কিছু বশংবদ বিদ্যাব্রতীই এখানকার আসল নির্মান । এখানে কেন্দ্রীয় স্তরে একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে । সেখানেও বাংলা ব্রাত্য । মানোপযোগী না হওয়ার ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলা স্নাতকোত্তর পড়ার ক্ষীণ সুযোগটিও আজ বন্ধ । যার ফলে, প্রতি বছর ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষা ও সাহিত্য পড়ার জন্যে প্রচন্ড ভিড় হয় । ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাবিভাগের সুনামও দেশবিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে । ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্যে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও দেশের বাইরে থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিড় করে থাকেন । ফলে সবাই সুযোগ পান না । যাঁদের মধ্যে রাজ্যের উচ্চশিক্ষার্থীরাও প্রচুর রয়েছেন । সুযোগবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা যদি প্রাগুক্ত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেতেন তবে তাঁরাও রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করার সুযোগ পেতেন ।
Showing posts with label আলোচনা ।. Show all posts
Showing posts with label আলোচনা ।. Show all posts
Wednesday, August 24, 2022
Thursday, April 21, 2022
কালবৈশাখী
কালবৈশাখী একটি স্থানীয় বৃষ্টিপাত ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ জোরালো ঝড় যা চৈত্র-বৈশাখ মাসের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা,আসাম, বিহার, ছত্রিশগড়, ঝাড়খন্ড ও বাংলাদেশে চৈত্র-বৈশাখ মাসে হয়ে থাকে । কবি মোহিতলালের কবিতায় ও পাই 'নববর্ষের পুণ্যবাসরের কালবৈশাখী আসে' এবং 'চৈত্রের চিতাভস্ম উড়ায়ে জুড়াইয়া জ্বালা পৃথ্বীর' অর্থাৎ এই দুটো মাসের কথা উল্লেখ আছে । 'কালবৈশাখী' শব্দটির মধ্যেও বৈশাখ মাসের ইঙ্গিত রয়েছে । নজরুলের গানেও আছে 'এল ওই কালবোশেখী, কাটাবি কাল বসে কি ?'
পুনশ্চ : আমাদের এ অঞ্চলের আরেকটা সময়ও একধরনের স্থানীয় ঝড় হয়ে থাকে তাকে 'আশ্বিনের ঝড়' বলে যা আশ্বিন-কার্তিক মাসে হয় । কালবৈশাখী ঝড় বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ধান, পাট, চা জাতীয় ফসলের চাষের জন্য উপযুক্ত হয় । আর অন্যদিকে আশ্বিনের ঝড়ে সুপুষ্ট ফসল মাঠে মারা যায় । হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর 'বেনের মেয়ে' উপন্যাসে আশ্বিনের ঝড়ের বর্ণনা রয়েছে ।
Thursday, March 31, 2022
হারিয়ে যাওয়ার আগে : একটি গ্রন্থপাঠের গৌরচন্দ্রিকা
'হারিয়ে যাওয়ার আগে' : একটি গ্রন্থপাঠের গৌরচন্দ্রিকা
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
শিক্ষকতার পেশায় এসে শেখানোর চাইতে শিখেই গেছি দীর্ঘদিন । এখনও শিখছি । আমার চাকরি জীবন শুরু হয় সাব্রুম হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে । এই স্কুলে সেকালের ডাকসাইটে দিকপাল শিক্ষকদের সান্নিধ্যে এসে ছিলাম আমি । আমাকে প্রথম দিন স্কুলের দরজা থেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় স্যর । হাত ধরে প্রথম ক্লাসে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সুভাষ দাস, অর্থনীতির শিক্ষক । এভাবে ধীরে ধীরে গোপাল দেবনাথ, রমনীমোহন নাথ, রঞ্জিত দেবনাথ, ড.ননীগোপাল চক্রবর্তী,কমল অধিকারী, নারায়ণ রায়, ড. রঞ্জিত দে প্রমুখ বেশ কয়েকজন নামজাদা শিক্ষকের স্নেহের ছায়ায় কাটিয়েছিলাম দীর্ঘদিন । চাকুরি চলাকালীন সময়ে অনেকে নতুন এসে জয়েন করেছেন । অনেকে নতুন কর্মক্ষেত্রে বদলি হয়ে গেছেন । অনেকে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন । আমার কয়েক দিন আগে এই স্কুলে জয়েন করেছিলেন আমার অগ্রজপ্রতিম দীপক দাস । সেসময়ে আমাদের স্টাফ রুম ছিল জমজমাট । পড়াশোনা, আড্ডা, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদি নিয়ে জ্ঞানচর্চার একটা বৃহৎ পরিসরের মধ্যে আমি এগিয়ে যাচ্ছিলাম । শম্ভু চৌধুরী, শিখা ভট্টাচার্য্য, বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য, গৌরগোপাল দাস, চম্পাকলি বিশ্বাস, নেপাল সরকার, অর্জুন শর্মা, নিতাই ভৌমিক এঁরাও প্রত্যেকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে ছিলেন জ্ঞানভান্ডার । শিক্ষা ছাড়াও শিক্ষক আন্দোলনের পুরোধাপুরুষ ছিলেন বেশ কয়েকজন । লক্ষ্যণীয় হল এই শিক্ষকমন্ডলীর অধিকাংশেরই ছিল সাহিত্যে অগাধ বিচরণ । লিখতেও পারতেন হাত খুলে । যাঁদের মধ্যে আজও অনেকে রাজ্যের লেখালেখির জগতে সুনামের সঙ্গে বিচরণ করছেন । ফলে 'চন্দন গাছের সঙ্গে থেকে ভেরেন্ডা গাছ ও যেমন চন্দনের বৈশিষ্ট্য লাভ করে তেমনি আমিও এই গুণীজনদের মধ্যে মধ্যে থেকে নিজেকে সমৃদ্ধ করবার বিরল সুযোগ পেয়েছিলাম । আমাকে বিভিন্নভাবে তাঁরা সাহায্য করতেন যাতে লেখালেখিতে উৎকর্ষ আসে । তীক্ষ্ণ সমালোচনাও করতেন । এঁদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানের পরিধি প্রতিদিন আমাকে নতুন করে জাগাত ।
আমার অগ্রজপ্রতিম দীপকদা যার সঙ্গে আমি দীর্ঘ আটাশ বছর এই স্কুলে কাজ করেছি । বাংলাসাহিত্যে অবাধ বিচরণ তাঁর । ক্ষুরধার যুক্তির জাল বিস্তার করে বক্তব্য রাখতে পারেন । মুহুর্মুহু বেদ-পুরাণ-নীতিগল্প থেকে উদাহরণ টেনে বক্তব্যকে সমৃদ্ধ করতে পারেন তিনি । কবিতা আর গান ছাড়া তাঁর বক্তব্য সম্পূর্ণ হয়না । তবে কিছুটা আবেগপ্রবণ তিনি । আবেগের রাশ টানতে পারেননা । আর এই আবেগময়তার কারণেই তাঁর অনেক গুণগ্রাহী শ্রোতা রয়েছেন । আর তাঁর আর একটি গুণ হল কাউকে তিনি অবমূল্যায়ন করেননা । তাঁর স্পষ্টবাদিতারও শিল্প রয়েছে । আমার লেখার একজন মনযোগী পাঠক ও গঠনমূলক সমালোচক তিনি । দীর্ঘদিন লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন । সম্প্রতি তাঁর সেইসব লেখার বাছাই করা কিছু নিবন্ধকে দুই মলাটে বন্দী করেছেন 'হারিয়ে যাওয়ার আগে' শিরোনামে । এবারের বইমেলায় আগরতলার প্রকাশন সংস্থা 'নীহারিকা' থেকে প্রকাশিত হয়েছে এই গ্রন্থ । কথাবলার মতো ঝরঝরে ভাষায় লেখা এই লেখায় তাঁর পাঠব্যাপ্তি পাঠক প্রতি ছত্রে ছত্রে অনুভব করবেন । প্রতিটি লেখায় ঝরঝরে গদ্যশৈলী, কবিতার উদ্ধৃতি, গ্রন্থপাঠের নির্যাস পাঠককে মুগ্ধ করবে । তাঁর লেখা জুড়ে মৃত্যুচেতনা এক নিপুণ অনুষঙ্গ । যা জীবনবোধে স্নাত করে ।
গত পরশু আমাদের পূর্বতন কর্মক্ষেত্র সাব্রুম দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক দিলীপচন্দ্র দাস মহোদয় এবং শিক্ষক নিতাই ভৌমিক আমাকে ও দীপকদাকে গতকাল স্কুলে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান । গতকাল নিতাই ভৌমিকের চাকরিজীবনের অবসরগ্রহণ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্যে । প্রধানশিক্ষক দিলীপচন্দ্র দাস মহোদয় কিছুদিন আমাদের তিনজনকে একসঙ্গে পেয়েছিলেন । সেই অনুষ্ঠানে আচমকাই দীপকদা আমাকে এবং নিতাই ভৌমিককে তাঁর সদ্যপ্রকাশিত গ্রন্থ 'হারিয়ে যাওয়ার আগে' তুলে দেন ।
আসলে আমি দীপকদাদের মতো অগ্রজদের স্নেহ এবং দিলীপচন্দ্র দাস স্যর এবং নিতাই ভৌমিকদের মতো অনুজদের শুভেচ্ছায় বাঁচার রসদ পাই ।
এই ভরসাতেই ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে পাঠকের রসভঙ্গ করার সাহস পাই ।
সবার জন্যে শুভকামনা ।
Subscribe to:
Posts (Atom)