Monday, January 15, 2018

স্পর্শকাতরতা

রাত তো অনেক হল ৷ এই নির্জন লতাবিতান, এই নিঃসঙ্গ মাধবীকুঞ্জ কেমন যেন পরিহাস করে চলেছে ৷ ঘিয়ের প্রদীপের সলতেটা উসকে দিয়েই কেটেছে সারারাত ৷ যতোক্ষণ তেল ছিল আলো দিয়ে গেছে  ভালোই ৷  তেল কম আসায় আলোটাও কমে আসছে ৷ ভয়ডরহীন  ছিল ৷কেটে গেছে প্রহরগুলো কালিয়ার প্রতীক্ষায় ৷ এখন এই গোপন বনকুঞ্জ অসহ্য হয়ে উঠছে ৷ কিছুই দেখা যাচ্ছে না নিকুঞ্জপথের ৷ শুধু রাতচরা পশুগুলোর ছুটোছুটিতে মসমস করে উঠছে পথের শুকনো ঘাসপাতাগুলো ৷ কুঞ্জের বাইরে চারদিকে অবিরাম ঝিঁ ঝিঁ ডাক ৷ দুষ্টুটার নুপূরের শব্দের মতো তার কান দুটো ভরিয়ে তুলছে ৷ একাকী ফুলসেজে গড়িয়ে যাচ্ছে সে ৷ নরম শয্যা তার প্রিয় শরীর হয়ে উঠছে ৷ যেন আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে তাকে ৷ বসন্তবাতাস মোহ ধরিয়ে দিচ্ছে ৷ মাতাল হয়ে গড়াগড়ি যাচ্ছে বিছানায় ৷ কান্তর শরীরের ওম লাগছে যেন তার শরীরে ৷ আশ্লেষঘন নিঃশ্বাস পড়ে তার ৷ 'হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে / পরাণ পিরিতি লাগি থির নাহি বান্ধে ৷'
         উত্তাল ঝড় ওঠা শরীর একসময় শান্ত হয় ৷ রাগমোচনের উল্লাস তার চোখে মুখে, শরীরময় ৷ দয়িতের ছোঁয়া তাকে কী আকুলতাই না দিয়েছে ৷ কতোক্ষণ যে ঘোরের মাঝে ছিল খেয়াল নেই তার ৷ রাগমোচনের তৃপ্তিতে বুকে আঁচল জড়িয়ে বিস্রস্ত বেশবাস সামলানোর জন্যে উঠে বসতেই তার সম্বিত ফিরে এল ৷ কোথা কান্ত ! কোথা কান্ত ! কোথায় কালিয়া ? কার সঙ্গসুখে কাটাল এতোক্ষণ ? সে কী ভুল ? সে কী মিথ্যে ? সে কী স্বপ্নই কেবল ?  ডুকরে কেঁদে উঠল রাধারানি ৷তছনছ বিছানায় ৷ আজ নিশিতেও এলে না প্রিয় ৷ ছুঁয়েও দেখলে না আমাকে ৷ ফাঁকি দিলে আজও ৷ 'প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর' ৷ হে প্রিয় ! জানি না আজ কোন গোপবালার কুঞ্জে কাটল তোমার রাত ! তোমার অনঙ্গমোহন শরীর কার ছোঁয়া পেল ৷ মথিত হল সুখে ৷
   মদনমোহিনী রাই কেঁদে চলেছে একাকী ৷ গুমরে ওঠা চাপা গুঞ্জনধ্বনি বিষাদকুঞ্জের বাইরে নিভৃতে এগিয়ে চলেছে ৷ প্রত্যুষের পাখিরা বাসায় কিচিরমিচির করে ডেকে উঠল ৷ তেল শেষ হয়ে আসা প্রদীপের শিখাটা দপ করে নিভে গেল ৷

No comments:

Post a Comment