Monday, July 1, 2019

গ র্জ ন

রাজ্য জুড়ে হাহাকার চলছে ৷ খরায় পুড়ছে সারাটা রাজ্য ৷ গত একবছরে মাঠ ঘাট শুকিয়ে ফুটিফাটা ৷ বৃষ্টি হয়নি বহুদিন ৷ খাল-বিল শুকিয়ে গেছে ৷ পুকুর জলাশয়ে জল নেই ৷ নদীর বুকে পড়ে গেছে ধু ধু বালির চর ৷ খেতে ফসলও হয়নি একবছর ৷ রাজার খাজনা দিয়ে যা কিছু ছিটে ফোঁটা সঞ্চয় ছিল তা নিয়ে আধপেটা খেয়ে কেউ কেউ শীর্ণ শরীর নিয়ে রোগে শোকে কাবু রাজ্যের মানুষ ৷ রাজার বাড়িতে খাবার চাইতে গিয়ে তোপের মুখে উড়ে গেছে বহু লোক ৷ ভয়ে মুখ না খুললেও ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে মানুষ ৷

রাজা মারা গেছে অল্প কদিন হল ৷ শ্রাদ্ধশান্তির পর যুবরাজ আবার আপন মূর্তিতে ফিরে এসেছে ৷ ইয়ার বন্ধু নিয়ে বসছে সুরা আর সাকির মৌতাত ৷ লখনৌর দশহাজারি তিজন বাঈ এসেছে ৷ কদিন ধরে বসেছে মেহফিল ৷ ঘুঙুরের শব্দে নাচমহল গমগম করছে ৷ বাইরে খরার আকাশ ফালা ফালা হয়ে যাচ্ছে গভীর রাতে ৷ উড়ছে টাকা ৷ সুরার ফোয়ারা ছুটছে ৷ মেহফিল শেষে নাচমহলেই ঘুমিয়ে পড়েছে তিজন বাঈয়ের পাশে শুয়ে পড়েছে  কুসুমকুমার ৷
    
রাজকুমারের মর্জি ৷ ভোরবেলাই আচমকা ডেকে তুলল তিজনবাঈকে ৷ তিজন ৷ তিজন ৷ ওঠো ৷ উঠে পড়ো প্রিয়ে ৷ তোমাকে নিয়ে প্রাতঃভ্রমণে বেরুব ৷ ঘোড়াশাল থেকে আমার প্রিয় সাদা ঘোড়া দমদমকে বের করে সাজাতে বলেছি ৷ তুমিও তৈরি হয়ে নাও ৷ সাদা চোলি ঘাগরা পরবে কিন্তু ৷ তিজনবাঈ চোখ কচলে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল ৷ তুমি তৈরি হয়ে নাও ৷ আমি পাশের কোঠায় আছি ৷

সাদা ঘোড়া দমদম ছুটছে সামনের দিকে ৷ পিঠে তার রাজকুমার আর অচিন রাজকুমারী ৷ রাজবাড়ির সীমানা পেরিয়েই একটা খোলা প্রান্তর ৷ সামনে বন ৷ বনের ওপারের মাথা থেকে সূর্য উঁকি দিচ্ছে তার রাঙা মুখ নিয়ে ৷
কুসুমকুমার  বনের ভেতর ঘোড়া চালিয়ে দিল ৷ পেছনে তিজনবাঈ ৷ লেপ্টে রয়েছে কুমারের গায় ৷ ঘোড়ার দুলকি চালের সাথে তিজনের নরম শরীর চাপ দিচ্ছে কুসুমকুমারের পিঠে ৷ বনের একটা বাঁকে এসে ঝরনার ধারে ঘোড়া থামাল কুসুমকুমার ৷ ঘোড় থেকে নেমে দুহাত বাড়িয়ে তিজনকে প্রায় কোলে করে নামাল ৷
এখানে কেন আনলেন আমাকে? কিজন্যে ?
রাজকুমার হাসল ৷ —তোমাকে নিয়ে এই বনের ভেতর প্রাতঃভ্রমণ করব ৷ ঝরনার ধারে বসে তোমার গান শুনব ৷ এসো প্রিয়ে ৷

রাজকুমার তন্ময় হয়ে শুনছে তিজনের গান ৷ প্রকৃতির বুকে তার গান একটা আলাদা আমেজ তৈরি করেছে ৷

হঠাৎ দেখা গেল তাদের ঘিরে ধরেছে কঙ্কালসার একদল মানুষ ৷ ওদের হাতে বুনো গাছের শক্ত ডাল ৷ কারো হাতে ঝরনার পাড়ের বড়ো বড়ো নুড়ি ৷ ওরা চারদিক থেকে এগিয়ে আসছে ৷ —কে ? কে তোমরা?  রাজকুমার হাঁক পাড়ে ৷
আমরা আপনার  ক্ষুধার্ত প্রজা ৷
কি চাও তোমরা?
—আমরা প্রতিশোধ চাই ৷ প্রজাহত্যার প্রতিশোধ ৷ সারা রাজ্যে খাদ্য পানীয়ের হাহাকার ৷ আর আপনি আনন্দ, উৎসবে মেতে আছেন ৷ রাজকোষ শূন্য করছেন ৷ এই ঝরনাতেই সামান্য জল আছে ৷ এ নিয়ে আমরা কোনোরকমে বেঁচে আপনি এখানেও এসেছেন ফুর্তি করতে?  আপনাকে আমরা কিছুতেউ ছাড়ছিনা ৷
  সংঘবদ্ধ মানুষগুলো খুব কাছে চলে এসেছে ৷ তিজনবাঈ ভয়ে রাজকুমারকে আঁকড়ে ধরে ৷ থরথর করে কাঁপছে সে ৷

   দূরে রাজবাড়ির দিক থেকে তুমুল কোলাহল ভেসে আসতে লাগল ৷ আগুনের লেলিহান শিখা উঠছে আকাশে ৷ এখানেও যেন কালো ধোঁয়ায় ঘিরে ধরেছে দুজনকে ৷ একটা বিশাল সমুদ্রের গর্জন আছড়ে পড়ছে ওদের শরীরে ৷

No comments:

Post a Comment