Sankha Sengupta আগে আগামতর্পন:
আগে একটা পরিচিত চুটকি মনে করিয়ে দিই ৷ একযুবক একটা সেলুনে ঢুকেছে দাড়ি কাটানোর জন্যে ৷ ক্ষৌরকার তার একগাল কামিয়ে দিয়ে যুবকের গায়ে দেওয়া এ্যাপ্রনটা খুলে ফেলল ৷ যুবক বলল, কী ব্যাপার? আমার আর একগাল? ক্ষৌরকার উল্টোদিকের আর একটা সেলুন দেখিয়ে দিল ৷ ওটা ওই দোকানে হবে ৷ কেন? এখানে নয় কেন? তরুণ ক্ষৌরকর্মী উত্তর দিল, আমি যে বছর এই কোর্সটা করি সেবছরের পরীক্ষায় ডান গালটা কমন ছিল ৷
গতসন্ধ্যায় আমার শহর সাব্রুমের বাজারে একটা ঘোষণা হয় ৷ তার সংক্ষিপ্ত বয়ানটা তুলে ধরছি ৷ 'বিগত কিছুদিন আগে সাব্রুম বাজারের ব্যবসায়ী.......... প্রয়াত হয়েছেন ৷ তাঁর আত্মার সদ্গতি কামনার্থে আগামীকাল সন্ধ্যায় এক শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে ৷ উক্ত সভায় বাজারের সমস্ত ব্যবসায়ীদের উপস্থিত
থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে ৷ ধন্যবাদান্তে সাব্রুম বাজার ব্যবসায়ী কমিটি ৷
এর কিছুক্ষণ পরে আমি যখন সান্ধ্য আড্ডার উদ্দেশ্যে বাজারে আসি তখন আমার কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্র ও পরিচিত যুবক আমাকে বিনয়ে প্রশ্ন করল, স্যার এনাউন্সটা কি ঠিক হয়েছে? আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে? তখনও ঘোষণাটা চলছিল ৷ একজন বলল, ওই যে বলছে, 'বিগত কিছুদিন আগে' আর 'ধন্যবাদান্তে' ৷ 'কিছুদিন আগে' বলল, আবার 'বিগত'ও বলল ৷ আর শোকসভার জন্যে কী ধন্যবাদ জানিয়ে আমন্ত্রণ করা ঠিক হল? আমিও মজা করে বললাম, তোমাদের যখন পড়াই তখন কী এরকম কিছু সিলেবাসে ছিল? ওরা সন্তুষ্ট হলনা আমার কথায় ৷ না স্যর ৷ মজা করবেননা ৷ সিরিয়াসলি বলছি ৷ কেউ যাতে মনে কষ্ট না নেয় তারজন্যে একটু মোলায়েম করেই আমাকে ব্যাখ্যা করতে হল যে, মৃতের প্রতি শ্রদ্ধাবশত আহ্বানটা ধন্যবাদান্তে না হয়ে শোকাহত বা শোকসন্তপ্ত হওয়াই কাম্য ৷ এরকম নিতান্ত নগণ্য সহবতগুলো আমাদের বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচী থেকে শিখতে হয়না ৷ অন্তরের শিক্ষকই শিখিয়ে দেন ৷ সেই মুর্শিদের নূর না পেলেই যতই বিদ্যার বড়াই করি না কেন জীবিত মানুষটিরও অমরত্ব কামনা করে ধ্বনি দেব আমরা ৷ আর পরিবেশিত বিষয়কে পোক্ত করার জন্যেই পাশাপাশি সমার্থক শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায় ৷
নামবিকৃতিপ্রসঙ্গ: এই যে প্রসঙ্গটা উঠল আমি এটাকে বিকৃতি বলবনা ৷ এই পরিবর্তন যেমন পূর্ববঙ্গীয় বাংলা উচ্চারণে রয়েছে তেমনি পশ্চিমবঙ্গীয় বাংলায়ও রয়েছে ৷ আমরা যেমন দুলাইল্লা/ দুলাইল্যা তেমনি পশ্চমবঙ্গেও দুলালে ৷ মনে করোনা শ্রীরামকৃষ্ণের সেই বিখ্যাত সংলাপ— রাখালে, গিরীশ আমাকে দেড়খানা নুচি খাইয়ে এমন গালাগাল দিলে রা ! রাখাল এখানে 'রাখালে' ৷ আমরা পূর্ববঙ্গীয়রা বলতাম 'রাখাইল্লা' বা 'রাখাইল্যা' ৷ সবটাই কিন্তু ব্যাকরণের নিয়ম মেনে হচ্ছে ৷ বেশি লম্বাচওড়া রাস্তায় না গিয়ে সংক্ষেপে বলি ৷ মূল নামপদ রাখাল থেকে পরিবর্তিত দুটো রূপ পেলাম ৷ রাখাল>রাখালে>রাখাইল্লা/রাখাইল্যা ৷ প্ৰথম পরিবর্তনটাকে বলা হয় অভিশ্রুতি ৷ আর দ্বিতীয় রূপটি হল অপনিহিতি ৷ এরকম পরিবর্তন ক্রিয়াপদেও লক্ষ করা যায় ৷ অভিশ্রুতির উদাহরণ রাঢ়ী অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গীয় বাংলায় পাই ৷ এবং অপিনিহিতির লক্ষণ বঙ্গালী অর্থাৎ পূর্ববঙ্গীয় বাংলায় পাই ৷ এইধরনের লক্ষণ চাকমা ভাষায়ও আছে ৷ যেমন বিমইল্লা কিংবা বরপেদা ইত্যাদি ৷ নামের সঙ্গে এই বাংলা প্রত্যয়ের যোগ করে উচ্চারণে দুটো মানসিক প্রভাব পড়তে পারে ৷ এক-আন্তরিকতা বা সম্পর্কের নৈকট্য ৷ দুই- বিরোধ বা অশ্রদ্ধা ৷ তবে ব্যবহার ব্যাকরণসম্মত ৷
* দীর্ঘ লেখাটায় একটাও বানান ভুল থাকলে মার্জনা চাই ৷ বিস্তৃত না লেখায় ব্যাখ্যা অস্পষ্ট থাকতে পারে ৷ সাক্ষাতে পরিশ্রুত হব ৷
Sunday, September 22, 2019
শব্দব্যবহার
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment