Thursday, April 30, 2020

কো য়া রে ন্টা ই নে র ক বি তা



এখন আমরা প্রত্যেকে মহান হয়ে উঠছি,
এখন আমরা প্রত্যেকে মানব হয়ে উঠছি,
সমূহ যন্ত্রণার ভেতর আমাদের বিশুদ্ধ পর্যটন ৷
ঘরের ভেতর বন্দী থেকেও আমরা আন্তর্জাতিক যেন—
পৃথিবীর আর সব প্রান্তের বেদনা আমাদের
ঘরের ভেতরেও শোকপরিবেশ গড়েছে ৷
আমরা প্রতিবেশীর মুখ দেখিনি অনেকদিন
অথচ আজ মুখোমুখি জানলায় চেয়ে থাকি ৷
আমাদের সদর দরজা বন্ধ থাকত ভিখিরির ভয়ে
আজ ছুটছি আমরা ত্রাণ নিয়ে বস্তির গলিতে ৷
দেশের বাড়ির কথা বারবার মনে পড়ে ৷ ফেলে আসা গ্রাম, উঠোনের সিঁদুরে আম
ছেলেবেলার সাথী খোঁড়া ভজন আর তার বাঁশির সুর ৷
কেমন আছে সুভদ্রা ধাইমা
মা চলে যাবার পর যে অঝোরে কেঁদেছিল আমাদের উঠোনে ৷

আবার ওড়াতে ইচ্ছে করে ভোমরা ঘুড়ি পাড়ার আকাশে,
বেলাশেষে কদবেলগাছটার ভেসে ওঠা শেকড়ে বেঁধে রাখলে
সারারাত অন্ধকারে অদ্ভুত গুঞ্জন তুললে
বাদুড়েরা পালিয়ে যেত ঘোষেদের আমবাগান থেকে ৷

এখন প্রতিদিন মনে হয় আগামী দিন ভোর হবে কিনা,
আজকের রাতটাও শেষ হবে কিনা তাও জানা নেই বলে
বেশি বেশি করে বন্ধুদের সুপ্রভাত আর শুভরাত্রি
জানাবার কথা একবারও ভুল করিনা ৷
সময় ভালো হলে এসে বেড়িয়ে যাবার দাওয়াত দিয়ে রাখি—
বন্ধুরাও আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখে ৷
এখন সবাই মনের কথা উজাড় করে লেখে, 
এক একটা শাস্ত্রবাক্য হয়ে ওঠে আমাদের প্রতিটি পংক্তি ৷ আমরা এখন পূর্বজর লেখার গভীরে গিয়ে মুগ্ধ হই ৷
এতোদিন পাতে তুলিনি সতীর্থের যে সৃষ্টিকে
আজ যেন মহার্ঘ মনে হয় ৷ ছড়িয়ে দিই স্বকণ্ঠে ৷
যে অনুজের দিয়ে যাওয়া সংকলনগ্রন্থ এতদিন
পড়েছিল অনাদরে, আজ ধুলো ঝেড়ে খুলে দেখি পরম মমতায় ৷

আজ ঘরবন্দী জীবনে বারান্দায় চাটাই পেতে
 হাতে নিচ্ছি দেশজ পুরাণ  আর মঙ্গলকাব্য ৷
সেইসব সৃজনের মূল্য যেন নতুন করে জীবনকেই
মেলে ধরে পৌরাণিক সহজিয়ায় ৷
হারানো দিনের চিরায়ত পদাবলি উঠে আসে কন্ঠে ৷
বাউল, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়ায়
শান্ত ও সরল জীবনের ঘরোয়া বিন্যাস
মুর্শিদের কাছে আকুল প্রার্থনার মদত করে ৷
আর হৃদয়ে ডোবানো অশ্রু নিবেদিত হয় মানুষের অসুখ সারাবার জন্যে ৷

এই বৈরী সময়ে, এই ত্রস্তকালে আমাদের ভেতর জেগে উঠেছে পশু ও প্রকৃতিপ্রেম ৷
আকাশের অগণিত নক্ষত্রকে,চাঁদ ও সূর্যকে আপন আত্মীয় মনে হয়
বনভূমি আর পাহাড়ের মাঝে খুঁজে পাই পরম প্রতিবেশীকে
নদী ও ঝরনা কিংবা বৃষ্টিপতনের শব্দ
বুকের ভেতরের কোনো অলৌকিক দেহতত্ত্ব আজ ৷
বনের যত নিরীহ স্বাধীন পশু ও পক্ষীকূল
কেবল নিঃস্বার্থ ভালোবেসে যেতে ইচ্ছে হয় তাদের
কাছে টেনে নিতে মন চায় ভীষণ ৷
আর আমরা কেবল পরস্পরের থেকে সাড়ে তিনহাত দূরে
সরে যাচ্ছি ক্রমাগত ৷
 
আমরা আজ কাতর, আমাদের অন্তঃস্তলে চাপা পড়া সমস্ত মহত্ব ও মমতা আজ দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছে ৷
দানে ও পুনর্বাসনে আমাদের নতুন নতুন পরিকল্পনা
আমরা চাইছি আমাদের সন্ততির সাথে
প্রতিবেশীর ঘরেও উনুন জ্বলুক
যে যার সাধ্যমতো বাড়িয়ে দিচ্ছি ইন্ধন ৷
আমাদের সমস্ত কৃতকর্মের জন্যে মার্জনার বিনিময়ে
দারুণ দারুণভাবে বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছে আমাদের ৷
সমস্ত উৎসবের জৌলুষ এবং অর্থের অহংকারের
দীপাবলি বর্জন করে ডাকের সাজ নিয়েই আমরা পার্বনে মেতে উঠতে চাই ৷

তার জন্যে সমস্ত অনৈতিক ও অশালীন অঙ্গবস্ত্র পরিত্যাগ করে
ক্রমাগত আমরা মানুষই হয়ে  উঠছি আর একবার ৷ মানুষ হয়ে উঠছি যেন ৷

Saturday, April 25, 2020

ডিটান

Dibyendu Nath  এমন কিছু বাক্যাংশ বাশব্দগুচ্ছ যা বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয় ৷ অর্থাৎ যিনি কথা বলছেন তাঁর কথার প্রতি শ্রোতার নজর কাড়ার জন্যে, কথাটার গুরুত্ব বোঝাবার জন্যে এই বিশেষ বাক্যাংশ বা শব্দগুচ্ছ কথার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় ৷ সেই অনুযায়ী 'দৃষ্টিআনয়ন' শব্দ থেকে 'দিঠি আনা',  দৃষ্টির 'দিঠি' রূপটি পদাবলি সাহিত্যে আছে 'এক  দিঠ করি ময়ূর ময়ূরী কন্ঠ করয়ে নিরীক্ষণ' ৷ তা 'দিটান'>ডিটান শব্দটি রূপান্তরিত হয়েছে ৷ 'ডিট' শব্দটি যে সিলেটিতে দৃষ্টি বোঝায় তার উদাহরণ হল, সংস্কারবশত আমরা বলি,'অবায় চাইছনা ৷ 'ডিট' লাগবো ৷ এই 'ডিট লাগা' মানে নজর লাগা ৷