Tuesday, May 26, 2020

আ মা র নাম দু র্ না ম

Asoke Deb আমি তোমাকে তুই তো অপরাধী বলিনি বাক্যটা আবার পড়ার অনুরোধ রইল ৷ পাঠক তোমার অষ্টপয়েন্ট পড়ে আমাকেই এমন ভাববেন বলেছি ৷ লক্ষ করে থাকবে হয়তো তোমার পোস্টে যাঁরা কমেন্ট করেছেন তাঁদের অনেকেই আমার পোস্টেও করেছেন তো ৷
তোমাদের সন্ধ্যার সেই শান্ত উপহার সাব্রুম থেকে গিয়ে উপভোগ করেছি ৷ অবশ্যই তোমার ইনবক্সীয় নিমন্ত্রণে ৷ আর সেই সিরিজ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের একজন আমাকে ছাগদুগ্ধ পানের পরামর্শ দিয়েছিলেন ৷ গায়ে মাখিনি কোনোদিন ৷ তারপরেও নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্যে প্রতিটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছি ৷ শারীরিক অসুস্থ সেই উদ্যোক্তার কুশলসংবাদও জেনেছি ৷
   দলগোত্র নাই আমার ৷ যে কয় রাম ৷ তার লগেই যাম ৷ যদি সৃজনশীল হয় ৷
একবার একটা আলোচনাচক্রে আলোচনাকালে দর্শকাসনে উপবিষ্ট ভারি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করিনি বলে  মঞ্চ থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোক্তাদের একজন আমাকে তুলোধুনো করলেন আমার আলোচনায় নাকি তাদের কেরিয়ার নষ্ট হয়ে গেছেন ৷ কারা কারা নাকি দর্শকাসনে মুখিয়ে ছিলেন কখন তাঁদের নামটা উচ্চারণ করি ৷ অথচ আলোচনার চারদিন আগে আমি আমার স্ক্রিপ্ট জমা দিয়েছিলাম ৷
 একজন বিশিষ্ট কবির জন্ম শতবর্ষ উদযাপনে আমাকে সভাপতি করা হয় ৷ মঞ্চের পেছনে বিরাট ব্যানার ৷ কমিটির সবার নাম আছে ৷ সভাপতির নাম নেই ৷
সর্বশেষ কদিন আগে একটা প্যারোডি পোস্ট দিয়েছিলাম 'লকডাউনে অনেকেই বন্ধু বটে হয়/ সুসময়ে হায় হায় কেহ কারো নয় ৷' সেখানেও দুঃখজনক বিষয় আছে ৷ আমার দীর্ঘদিনের কবিবন্ধু ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন ৷ আহ্লাদে আঠেরো দুগুণে ছত্রিশখানা হয়ে রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে উনার কখানা কবিতা স্বকন্ঠে পাঠের ভিডিও পোস্ট করলাম ৷ অনেকেই দেখলেন, শুনলেন ৷ মন্তব্য করলেন ৷ হা, হতোস্মি ৷ সেই বন্ধু কবি আমার পোস্টের ছায়াও মাড়ালেননা ৷ 
 প্রায় সবাই নিজের যে কোনো কাজ দেখা শোনার জন্যে আমাকে ইনবক্স করেন ৷ আজও আছে ৷ আর আমার কোনোকিছুতে ' আরে ফালাইয়া থ'  ভাবে এড়িয়ে যান ৷ আর আমি সব নেমনতন্ন রক্ষা করি ৷ আর অপছন্দের কিছু বললে কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, ভাববাচ্য কিছুই বাদ যায়না ৷ 
 ভালো থাকো ৷ আনন্দে থাকো সবাইকে নিয়ে ৷  আরো একবার অনন্ত শুভেচ্ছা ৷

Tuesday, May 19, 2020

বিলোনিয়া মহাবিদ্যালয় ও আমার সময়

বিলোনিয়া মহাবিদ্যালয় ও আমার সময়

Dibakar Debnath আপনার লেখাটি পড়ে আমি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছি ৷ আপনাদের কাল আর আমাদের কালে বোধহয় খুব বেশি ফারাক ছিলনা ৷ তাই দৃশ্যপট মিলে গেছে অনেকটা ৷ একটা তিক্তকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমি সেদিন কলেজে প্রথম প্রবেশ করেছিলাম ৷ ভর্তি হয়ে যেদিন প্রথম ক্লাস করার জন্যে দূরের চাম্পাকাম্পা হাফওয়াল ঘরটাতে ঢুকি তার কিছুক্ষণ পরেই হৈ হৈ করে আমাদের বের করে নিয়ে আসা হল প্রিন্সিপাল রুমের সামনে ৷ তাঁকে নাকি ঘেরাও করা হবে ৷ সে বছর বিলোনিয়া কলেজ সরকার অধিগ্রহণ করে ৷ অথচ পূর্ব নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে পাঠরত এবং নবীন সব ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে উন্নয়ন তহবিলের নামে কুড়ি টাকা করে নেওয়া হয়েছে ৷ এটাকা ফেরত দিতে হবে ৷ দাবি জানাতে গিয়ে একসময় ছেলেরা প্রিন্সিপাল বি এন ঘোষালকে শারীরিক নিগ্রহও ৷ ধুতি ও সাদা পাঞ্জাবি পরা লম্বা ফর্সা বীরেন্দ্রনাথ ঘোষাল মহোদয় জোড়হাত করে কেঁদে ফেলেন ৷ পরে জেনেছে তিনি যাঁকে পুত্রবৎ স্নেহ করতেন এবং বাবা বলে সম্বোধন করতেন সেই ছাত্রনেতাটিই এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় ৷ প্রিন্সিপাল স্যর ডেভেলপমেন্ট কমিটির সঙ্গে কথা বলে টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন ৷ তার পরদিন থেকে তাঁকে আর কলেজে দেখিনি ৷ শোনা যায় অপমানে তিনি চাকরি ছেড়ে চলে যান ৷ আমাদের টাকাগুলো আর কেউ ফেরত পায়নি ৷ প্রচার হয় এ টাকা উনি মেরে দিয়েছেন ৷ কেউ কেউ বলেন সে টাকা বেড়ালের পিঠে ভাগের মতো অন্য একপক্ষ গায়েব করে দিয়েছেন ৷
 মহাবিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে আমি রবাহুত হয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম ৷ সে অনুষ্ঠানের বিলোনিয়ার এক ওজনদার জনপ্রতিনিধি ভাষণ দিতে উঠে কলেজ সৃষ্টির কথা বলতে গিয়ে এই মহাবিদ্যালয়ের জনক মহেন্দ্র মুহুরীর কথা একবারও উচ্চারণ করেননি ৷ এই মহাবিদ্যালয়ে আমি ১৯৭৩—৭৬ পড়েছিলাম ৷ বহু গুণী অধ্যাপকদের মধ্যে অরূপরতন স্যরের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ নিবিড় রয়েছে ৷ দুবছর আগে গেছিও তাঁর বাড়িতে ৷ পরিতোষ স্যরেরও খবর পাই ভাষাচার্য ড. পবিত্র সরকার মারফত ৷ আর যদি আত্মশ্লাঘা না হয় ইতিহাসের প্রয়োজনে লিখি ৷ আপনি যে শান্তিনিকেতন কম্প্লেক্সটার কথা উল্লেখ করলেন সেখানে সিঁড়িতে পা দিয়ে করিডরে ঢুকলে ডানদিকে দুটো রুম ছিল আর বাঁদিকে পরপর কয়েকটা ক্লাসরুম ছিল ৷ সিঁড়িতে পা দেওয়ার আগে ডানদিকের রুমের চুনকামহীন দেওয়ালের গায়ে একদিন দুস্টুমি করতে গিয়েই চক দিয়ে লিখে  ফেলেছিলাম শান্তিনিকেতন ৷ আসলেই সেদিন গোটা মহাবিদ্যালয় চত্বর শান্তিনিকেতন ছিল ৷❤️💝

Wednesday, May 13, 2020

কো য়া রে ন্টা ই নে র ক বি তা



এখন আমরা প্রত্যেকে মহান হয়ে উঠছি,
এখন আমরা প্রত্যেকে মানব হয়ে উঠছি,
সমূহ যন্ত্রণার ভেতর আমাদের বিশুদ্ধ পর্যটন ৷
ঘরের ভেতর বন্দী থেকেও আমরা আন্তর্জাতিক যেন—
পৃথিবীর আর সব প্রান্তের বেদনা আমাদের
ঘরের ভেতরেও শোকপরিবেশ গড়েছে ৷
আমরা প্রতিবেশীর মুখ দেখিনি অনেকদিন
অথচ আজ মুখোমুখি জানলায় চেয়ে থাকি ৷
আমাদের সদর দরজা বন্ধ থাকত ভিখিরির ভয়ে
আজ ছুটছি আমরা ত্রাণ নিয়ে বস্তির গলিতে ৷
দেশের বাড়ির কথা বারবার মনে পড়ে ৷ ফেলে আসা গ্রাম, উঠোনের সিঁদুরে আম
ছেলেবেলার সাথী খোঁড়া ভজন আর তার বাঁশির সুর ৷
কেমন আছে সুভদ্রা ধাইমা
মা চলে যাবার পর যে অঝোরে কেঁদেছিল আমাদের উঠোনে ৷

আবার ওড়াতে ইচ্ছে করে ভোমরা ঘুড়ি পাড়ার আকাশে,
বেলাশেষে কদবেলগাছটার ভেসে ওঠা শেকড়ে বেঁধে রাখলে
সারারাত অন্ধকারে অদ্ভুত গুঞ্জন তুললে
বাদুড়েরা পালিয়ে যেত ঘোষেদের আমবাগান থেকে ৷

এখন প্রতিদিন মনে হয় আগামী দিন ভোর হবে কিনা,
আজকের রাতটাও শেষ হবে কিনা তাও জানা নেই বলে
বেশি বেশি করে বন্ধুদের সুপ্রভাত আর শুভরাত্রি
জানাবার কথা একবারও ভুল করিনা ৷
সময় ভালো হলে এসে বেড়িয়ে যাবার দাওয়াত দিয়ে রাখি—
বন্ধুরাও আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখে ৷
এখন সবাই মনের কথা উজাড় করে লেখে, 
এক একটা শাস্ত্রবাক্য হয়ে ওঠে আমাদের প্রতিটি পংক্তি ৷ আমরা এখন পূর্বজর লেখার গভীরে গিয়ে মুগ্ধ হই ৷
এতোদিন পাতে তুলিনি সতীর্থের যে সৃষ্টিকে
আজ যেন মহার্ঘ মনে হয় ৷ ছড়িয়ে দিই স্বকণ্ঠে ৷
যে অনুজের দিয়ে যাওয়া সংকলনগ্রন্থ এতদিন
পড়েছিল অনাদরে, আজ ধুলো ঝেড়ে খুলে দেখি পরম মমতায় ৷

আজ ঘরবন্দী জীবনে বারান্দায় চাটাই পেতে
 হাতে নিচ্ছি দেশজ পুরাণ  আর মঙ্গলকাব্য ৷
সেইসব সৃজনের মূল্য যেন নতুন করে জীবনকেই
মেলে ধরে পৌরাণিক সহজিয়ায় ৷
হারানো দিনের চিরায়ত পদাবলি উঠে আসে কন্ঠে ৷
বাউল, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়ায়
শান্ত ও সরল জীবনের ঘরোয়া বিন্যাস
মুর্শিদের কাছে আকুল প্রার্থনার মদত করে ৷
আর হৃদয়ে ডোবানো অশ্রু নিবেদিত হয় মানুষের অসুখ সারাবার জন্যে ৷

এই বৈরী সময়ে, এই ত্রস্তকালে আমাদের ভেতর জেগে উঠেছে পশু ও প্রকৃতিপ্রেম ৷
আকাশের অগণিত নক্ষত্রকে,চাঁদ ও সূর্যকে আপন আত্মীয় মনে হয়
বনভূমি আর পাহাড়ের মাঝে খুঁজে পাই পরম প্রতিবেশীকে
নদী ও ঝরনা কিংবা বৃষ্টিপতনের শব্দ
বুকের ভেতরের কোনো অলৌকিক দেহতত্ত্ব আজ ৷
বনের যত নিরীহ স্বাধীন পশু ও পক্ষীকূল
কেবল নিঃস্বার্থ ভালোবেসে যেতে ইচ্ছে হয় তাদের
কাছে টেনে নিতে মন চায় ভীষণ ৷
আর আমরা কেবল পরস্পরের থেকে সাড়ে তিনহাত দূরে
সরে যাচ্ছি ক্রমাগত ৷
 
আমরা আজ কাতর, আমাদের অন্তঃস্তলে চাপা পড়া সমস্ত মহত্ব ও মমতা আজ দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছে ৷
দানে ও পুনর্বাসনে আমাদের নতুন নতুন পরিকল্পনা
আমরা চাইছি আমাদের সন্ততির সাথে
প্রতিবেশীর ঘরেও উনুন জ্বলুক
যে যার সাধ্যমতো বাড়িয়ে দিচ্ছি ইন্ধন ৷
আমাদের সমস্ত কৃতকর্মের জন্যে মার্জনার বিনিময়ে
দারুণ দারুণভাবে বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছে আমাদের ৷
সমস্ত উৎসবের জৌলুষ এবং অর্থের অহংকারের
দীপাবলি বর্জন করে ডাকের সাজ নিয়েই আমরা পার্বনে মেতে উঠতে চাই ৷

তার জন্যে সমস্ত অনৈতিক ও অশালীন অঙ্গবস্ত্র পরিত্যাগ করে
ক্রমাগত আমরা মানুষই হয়ে  উঠছি আর একবার ৷ মানুষ হয়ে উঠছি যেন ৷

ত্রিপুরার বাংলা কবিতার হাজার বছর

ত্রিপুরার বাংলা কবিতার ইতিহাস সংক্রান্ত এ পর্যন্ত যে সমস্ত মান্য কাজ হয়েছে সেগুলোতে প্রাচীনতার ক্ষেত্রে রাজমালাকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে ৷ আমাদের কবিতার ইতিহাস যে হাজার বছর অতিক্রান্ত সেই বিষয়ে আমার একটা দুর্বল প্রবন্ধ আছে ৷ রাজ্যের বিশিষ্ট কবি দিলীপ দাসের অনুরোধে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার 'বঙ্গ-সংস্কৃতি উৎসব ১৪২২র স্মারকগ্রন্থেরজন্য প্রবন্ধটি লিখেছিলাম ৷ "ত্রিপুরার বাংলা কাব্যের হাজার বছর" শিরোনামে সেটি ওই গ্রন্থে প্রকাশিতও হয়েছিল ৷ প্রবন্ধটি সেদেশে প্রশংসিত হয়েছিল ৷ আমাদের রাজ্যেও কবি দীলিপ দাসসহ অনেকেই পড়েছেন ৷ মুখে প্রশংসাও করেছেন ৷ পরবর্তীতে সেটি বর্ধিত আকারে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত কবি মধুমঙ্গল বিশ্বাসের দৌড় সাহিত্য পত্রিকার ৩৩ বর্ষ • জানুয়ারি ২০১৭ এর বিশেষ ক্রোড়পত্র  : ত্রিপুরা সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ৷ সেখানেও পাঠক ও গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রবন্ধটি ৷ একজন তো তাঁর ত্রিপুরার সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থে এক জায়গায় ছোট্ট দুটো ঊর্ধ্ব কমার মধ্যে রেখে আমার পুরো প্রবন্ধটাই ঢুকিয়ে দিয়েছেন ৷ আজকের দিনেও ত্রিপুরার কবিতার আলোচনার সময় কথাটা  ক্ষীণভাবে কেউ কেউ তোলেন ৷ কিন্তু কে প্রথম বিষয়টা তুলেছেন সেটা ভাসুরের নামের মতো ট্যাবুতে অনুচ্চারিত রয়ে গেছে ৷ আমার তোলা প্রসঙ্গটা ভুল হলে আলোচনা সমালোচনা করা হোকনা ৷ আমি সমৃদ্ধ হই ৷ এই প্রবন্ধ প্রকাশের পরে ত্রিপুরার বাংলাকবিতা বিষয়ে অত্যন্ত সুন্দর ও পরিশ্রমী একটি বিশাল গবেষণা অভিসন্দর্ভও প্রকাশিত হয়েছে ৷ বহু খোঁজখবর করে দুষ্প্রাপ্য তথ্যউপাত্ত সংযোজিত হলেও অধীনের লেখাটা আলোচনায় আসেনি ৷ এই সমস্ত দুঃখজনক কারণে আমার আর পরিশ্রম করে কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছে হয়না ৷  সমালোচনা এরাজ্যে দূর অস্ত ৷ নস্যাৎও করেননা ৷ স্রেফ এড়িয়ে যান ৷ অথবা নকল করে নিজের মহল্লায় বাহাদুরি নেন ৷ আমি যাঁর সৃষ্টির নিবিড় আলোচনা করলাম তাঁকে আমার কোনো গ্রন্থের আলোচনা করতে বললে হেসেই উড়িয়ে দেন ৷ ভাবি কী ছাই পাঁশ লিখেছি এতদিন ৷