কোথাকার বাঙালি কোথায় দাঁড়ায়
********************************
এটা আমার বাবার পরিচয়পত্র ৷ 1948 এ কোলকাতা কেন্দ্রের ভোটার তালিকা প্রস্তুতিতে সুপারভাইজারের দায়িত্ব সামলেছিলেন ৷ গতকাল বিরাটি সংলগ্ন বিষরপাড়ার আমাদের পিসতুতো দাদা আমার ছেলের হাতে তুলে দিলেন তার ঠাকুরদাদার আইডেন্টিটি কার্ডটি ৷ অশ্রুসজল চোখে দাদা বললেন আমি আর কদিন আছি ৷ তোমাদের সম্পদ তোমরা বুঝে নাও ৷ দেশভাগ আমাদের যে কতোটা ছন্নছাড়া করেছে এই ভিটেতে পা রেখে অনুভব করলাম ৷ যিনি আমাদের ভদ্রাসনকে এতোদিন আগলে রেখেছেন, কী দৈন্যদশা এই আবাসের ? অথচ আমরা শুধু চিঠি চাপাটিতেই সম্পর্কটা জিইয়ে রেখেছি এতোদিন ৷ এসে না দেখলেই বোধহয় ভালো ছিল ৷ উনি খুবই আগ্রহের সঙ্গে বলছেন, তোমরা এসো ৷ ঘর-টর একটা করো ৷ আমিও এক কোনায় শেষ কটা দিন কাটিয়ে দিই ৷ ঝড়বৃষ্টিতে তো বহুদিন কাটালাম ৷ আমি শুনছি আর ভাবছি অন্য কথা ৷ শেষ বয়সে আমি কী আর মিলিয়ে নিতে পারব নিজেকে ৷প্রয়োজনীয় পরিচিতি আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে ৷ তার চেয়ে ত্রিপুরায় আমার একটা নিজস্ব পরিমন্ডল রয়েছে ৷ আমার কাতরতা সেদিকেই ৷ সবচেয়ে গুরুতর যে বিষয়টা লক্ষ্য করছি ৷ আমাদের দুভাইয়ের কথোপকথনে কোনো আগ্রহই নেই আমাদের উত্তর প্রজন্মের ৷ তার কাছে আমার বাবার ছবি 'কেবলই ছবি' ৷ তাদের ভদ্রাসন হয়তো রাজারহাটের এগারো তলা ফ্ল্যাটের সর্বোচ্চ কুঠুরি আর তার বনসাই বাগিচার লন ৷ নাড়ির টান এভাবেই ছিন্ন হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ৷ আমার সন্ততি, বাঙালির আগামী প্রতিনিধি কোথায় থিতু হবে কে জানে ! আমি কী বলব? দাও বর মোরে হেন, আমার সন্তান যেন, চিরদিন থাকে ..?..?..?
No comments:
Post a Comment