স্বাতী ইন্দুর 'নিষ্ঠুরের কারুকার্যময় ক্ষত'
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
কবি স্বাতী ইন্দু বিগত শতাব্দীর আটের দশকের শেষদিকে বাংলা কবিতায় আত্মপ্রকাশ করার পর নব্বই সালেই প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'বিপদসংকুল মুগ্ধতা' । তারপর কিছু সময়ের ব্যবধানে পরপর প্রকাশিত হয় তার কাব্যগ্রন্থ মেডুসার মাথা(২০০৯), জীবনীকাঠ(২০১৫) এবং ইন্দুরহাট(২০১৯)। তার কাব্যকৃতির জন্য ২০০৭ সালে বিশ্ববঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, উত্তরপূর্ব আঞ্চলিক অধিবেশন শিলচরে তাঁকে সম্মাননা জ্ঞাপন করে। কবির প্রথমদিকের রচনা থেকে শুরু করে পরবর্তী পর্যায়ে তাঁকে ক্রমশ পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায়। জগৎ জীবনের উপলব্ধিসঞ্জাত 'বিপদসংকুল মুগ্ধতা'য় যাপন করতে করতে কবি ঐতিহ্যের অনুসন্ধানী হয়ে পূর্বজদের উৎসবিন্দু ' ইন্দুরহাট ' এসে পৌঁছান। এ যেন উৎপাদকের খেত থেকে সংগৃহীত পণ্যের হাট থেকে হাটে হাতবদলের ঘটনাকে বিপরীতক্রমে উৎসসন্ধানের প্রয়াস। প্রকৃত কবি সর্বদাই নিজেকে খনন করে চলেন। তাঁর খননক্ষেত্রের সৃজনলভ্য উপকরণের সমাহার হল কবিতা। কবি স্বাতী ইন্দুও সেই প্রয়াসী শিল্পী।
কবিতায় পৌরাণিক প্রসঙ্গের ব্যবহার এক বিশেষ আঙ্গিক।পাশ্চাত্যের কবিদের মত বাংলাকবিতায়ও পুরাণ প্রসঙ্গের ব্যবহার করে আসছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত থেকে শুরু করে উত্তরকালের অনেক কবি।পুরাণপ্রবণতার একটা নিদর্শন , বিভিন্ন পৌরাণিক উপাখ্যান কিংবা পৌরাণিক চরিত্রকে কবিতার মূল কেন্দ্র নিয়ে আসা হয়। প্রকাশ্যে কিংবা অন্তঃসলিলা হয়ে তা কাব্যের শরীরে রক্তস্রোতের মতো চলাচল করে নতুন অর্থময়তা নিয়ে আবির্ভূত হয়। কবি স্বাতী ইন্দুর কাব্যগ্রন্থ 'মেডুসার মাথা' নাম চরিত্রটি গ্রিক লোকপুরাণ থেকে আহৃত। গ্রিক পুরাণে মেডুসা দেবী এথেনার সেবিকা। স্বর্ণকেশী এই সুন্দরী দেবীর মন্দিরে ধর্মযাজিকা হিসেবে নিয়োজিত। একদিন মেডুসা দেবী আ্যথেনার কাছে সূর্য দর্শনের অনুমতি প্রার্থনা করেন। কিন্তু দেবী এই আর্জি শোনামাত্রই নাকচ করে দেন। ফলে মেডুসার ভীষণ রাগ হয়। সে দেবীকে বলে, এতদিন শ্রদ্ধা ভক্তি সহকারে দেবীর পূজা করার পরও তিনি অনুমতি দেননি। সম্ভবত তিনি ঈর্ষাবশত এই কাজটি করেছেন। এতে দেবী প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে মেডুসাকে অভিশাপ দেন। যার ফলে মেডুসার রূপ হারিয়ে যায়। দেহ হয়ে যায় সবুজ রঙের। চামড়া হয়ে যায় আঁশটে। মাথার ঘন সোনালি চুল পরিণত হয় হাজার হাজার বিষাক্ত সাপে। চোখ দুটো হয়ে স্থির। মেডুসা যার দিকে তাকায় সেই পাথর হয়ে যায়।
কাব্য গ্রন্থের প্রথম কবিতাটিতে কবি সেই পুরাণকথাই বর্ণনা করেছেন- 'লকলকে জিভ, ক্ষুধার্ত ওরা- শিশুফনা/ একদিন ফিরে এল মাথাজুড়ে স্বভাবের/ক্ষুব্ধ অসহায়। উড়াল শাদাটে রাত্রি/ কয়েক ফণার মিল্কিওয়ে- এনার্জি বাথটাব।/সক্ষম ধুলোর উড়ে যাওয়া চোখসহ।/ পেগ্যাসাস লক্ষ্যে কোনো গ্যালপিং ট্রেন/ পাথরের অভিশাপ- শিকারি আয়না/তরঙ্গদৈর্ঘ্য সহ নিরন্তর পাথর হবে সে।(মেডুসার মাথা)। জীবনে জয়-পরাজয়, আকাঙ্ক্ষা প্রাপ্তি সব সময় যে মেলেনা, প্রবল আনুগত্যের পরও, নিরন্তর নিষ্ঠ নিয়োজিত থাকার পরও কাঙ্খিত ফল আসেনা। অভাবনীয় প্রতিফলন আসে । বরং তারই প্রতীক এই মেডুসা। মেডুসার মাথাটি এখানে মেধা ও মননের প্রতীক। সেই মেধাকে ব্যবহার করে সৃজনের চর্চায় কবি প্রতীকী ভাষার ব্যবহার করে বলেন - 'একগুচ্ছ কবিতার মধ্যে শিরা উপশিরা/ ধমনী এবং মাইক্রোস্কোপ থাকবে। আপনি/ কি মেয়ে? তো বয়স, লুকস এবং পরোক্ষ/ ধূমপানের অভ্যাস থাকা ভালো। সংকীর্ণ মনের/ কানাগলি ছেড়ে বেরোতে পারলে /রাত্রি থেকে এক আঁচড় ইয়ার্কিতে খ্যাতি বাড়বে।/ বাড়াটা অবশ্য কিছু রিস্কি ব্যাপার, ইউ নো- নো রিক্স, নো গেন(শর্ত)। ঝুঁকি ছাড়া কোনো সম্ভাবনারই পূর্ণতা আসে না। কবির এটাই মোক্ষম বাক্য।
দেবীর শ্রীরূপের অন্তরালে যেমন থাকে ঈর্ষার কদর্য কর্দম। তেমনি সমকালের প্রভুদের চরিত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনা। কবি খুলে ধরেন তাদের গোপন অভিপ্সার চিত্র - 'ভোটের শহরে ঘেমে উঠেছে ব্যস্ততম মুখ। /আর ধরো সরব প্রচার শেষ তবুও কম্বল, ফল /চিরন্তন দানের মহিমা প্রায় কিছুতেই সারেনা /এসব রোগের দগদগে - চোখের মনিতে কাঁপে /ব্যথা করে- খুব শাদা এত রোদ সইতে পারেনা প্রভু কালো। (আতুরাশ্রম-দুই)
মানুষকে বোকা বানানোর আ্যথেনীয় কৌশল আজও সমান বর্তমান।
সময়ের সংকটজাত চিত্র তাঁর বাকপ্রতিমায় ধরা পড়ে বারবার। সময়ের ঘটনাবহকে দেশের সীমানা পেরিয়ে দেশান্তর কালে হাজির করার লক্ষ্যে কবি গ্রিক পুরাণের মেডুসার আশ্রয় করেছেন যার মাধ্যমে জীবনের বিশ্বজনীন মাত্রায় প্রবেশ সম্ভব হয়। মানুষের জীবন সত্তার সংকট কবির কবিতায় ফিরে ফিরে আসে -
১)খালাসির ঘরে আর রাত ফিরবে না। সে /মেয়ের যন্ত্রণা সামান্য প্লাস্টিক ঠোঙ্গায় উড়িয়ে নিচ্ছে। / কোনও রূপকথার মেঘ।যে মেঘ শুকায় ওই ব্লক।/অফিসের ব্লক/ অফিসে বারান্দায়; নিতান্ত ড্রপআউট।চেরা/ বাঁশে নাড়ি কেটে মুখস্থ করেনি, আদৌ/পারেনি তাই ভেজা স্পঞ্জের মতো মুছে, দিচ্ছে ব্ল্যাকবোর্ড।(লাল সাধু)২) দরিদ্রের ভাঙা কষ্ট বাবরি মসজিদ /আমি একবার পেয়েছি কষ্ট এই ভাঙা বুকের উপর /নির্বিকার দেখে চোখ জলে ভরে গেছে- উত্তেজনা/বাসও ছিল না আর দোকানপাট বন্ধের মধ্যে/ ভয়, ভয় গল্পের তাপে রান্না করেছি আর হয়েছি নরম সেদ্ধ গোল গরমজলে/ এটুকু যৌথতা মেনে - পোশাকের। (সাম্রাজ্য) এমনই ভয়ের চিত্রকল্প আরো পাওয়া যায় কবির কবিতায়–
১) শুধু কবিতার হয়ে কষ্ট বারোমাস বাংলার লাগে/ জল চুড়ি পার মৃদুভাষা - তাতে ভেঙে যাওয়ার। ভয় এত লাগে, তবু ছাড়তে পারিনা আর/ বলা যায় না কেমন, কোথাও মাঝপথে(বেনাম) ।
২)বালিকা রাত্রির মেয়ে ঠিক তার বাবার /স্বরে কথা বলে চমকে দেয় যাকে/ ঠিক তার ইকো করে গুহা - বুক কাঁপে; কত দিন পরে আজ সে ভয় পেলাম। /অদ্ভুতের নুনমাখা মাংসের টুকরোর মতো ভয়/ এখনো আমার ভাঁড়ারে, শুকনো রক্তের দাগ। (গুহা)
এই ভয়ের সঙ্গে আছে অনিশ্চয় জীবন। শুধু বদলে বদলে যাওয়া। কেউ কারও উপর ভরসা রাখতে পারছেনা। 'এই ক্যাম্প ভরা মাঠ বলে/ সমস্ত বাচনভঙ্গি আজ অবধি শরণার্থী বালক' (পূনর্বাসন)। ছন্নছাড়া। ছিন্নজীব। দলছুট । কেউ কারো আত্মীয় নয় যেন- 'আমিও আমার কে? কেউ না কেউ না/ শুধু আটা ও সরষের তেল দামে বেড়ে গেলে /একদা রাত্রির ঘুমন্ত মূল্যবোধসহ/ সফেদ ডাক্তারের এককোনে অপেক্ষার /মশা- মারা চেম্বার, শিশুটির ঘ্যানঘ্যানে বোবা।/ তুমিও আমার কে? প্রশ্ন মান সকলে জানে না/ দাঙ্গাহীন শহরের বুকে, পেট,মাথা থেকে/ তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়া টুরিস্ট - কেউ না (সম্পর্ক)
সময়ের হাতে আত্মপতনের কথা উঠে আসে তাঁর কাব্যভাষায়। 'শ্যামের মন্দিরের দিকে এক পোষা মুরগিখানা, ধাপে ধাপে আটকানো বয়স /আর হালকা রক্তের গন্ধে পাখপাখালির ঝটপটানি। /সবই না ঘটা এক পোড়াবাড়ির এক লাইনের হাতচিটা।(পরস্পর জরিমানা : চতুর্থ)
স্বাতী ইন্দুর 'মেডুসার মাথা' কাব্যগ্রন্থটির বাক্যব্যঞ্জনায় স্বকীয়তা রয়েছে। স্বাভাবিক বাক্য গঠনের সঙ্গে তা মেলেনা। মাঝে মাঝে অসম্পূর্ণ ও কূটবন্ধ বলে মনে হয়। ফলে এই কাব্যপাঠে অতিরিক্ত মনসংযোগ করতে হয়। আরো লক্ষণীয় কবি এই কাব্যগ্রন্থে বহু ইংরেজি শব্দের ব্যবহার করেছেন যা ব্যবহারিক জীবনের মিশে আছে। 'মেডুসার মাথা' কাব্যগ্রন্থের জন্য কবি পাঠক মহলে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন।
স্বাতী ইন্দুর কাব্যগ্রন্থ 'জীবনীকাঠ'(২০১৫) জীবনেরই গভীরতা নিয়ে যেন বেরিয়ে এসেছে পূর্বতন কাব্যগ্রন্থের 'এমন শহরে এক মনস্কের আয়না উপহার' - হয়ে। মেডুসার অভিশপ্ত অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে জীবনের পথে উত্তরণ ঘটেছে তার কাব্যভুবনের। এখানে তিনি বলেন -
১)কারা যেন বর্ষাকালের গায়ে/ লিখে রেখে গেলো ভালো হোক /সে বর্ষাকালের কতদিন চলে গেল /সকাল, সন্ধ্যে থেকে খসে খসে পড়ল আগুন/ বৃষ্টিজরি আর বিতর্কিত চুমকি রংচটা(শুভকামনা)
২)এখনো জন্মাই গাছের মতো বাড়ি - ঠান্ডা / সুখের ক্লান্তিতে উৎসাহহীন বাড়ি, পুরানো/ কান্ডে কাঠ ফাটিয়ে জন্মে ছিল যেমন কুঁড়িশুদ্ধ শাখা।(বাড়ি)
৩) তুচ্ছতার দেবতা যে ছিল জীবনীকাঠের ব্রক্ষ্ম/ শেষ উদ্দীপনা- আরো বাইরে বাইরে ছিল মা/ তার গর্ভ হতে বিতাড়িত হৃদয় সমীপে পেলো না /ঠিক ঠাঁই - যেন তার নিঃসঙ্গ উপচার, অন্ধ উপহার/ তুচ্ছ ব্যথার নীল আগুনে পুড়ে যেতে বোধ ফিরে /এল পোড়াকাঠে- হে কাষ্ঠল মা- দারুব্রক্ষ্ম তুচ্ছতার ছলনা( জীবনীকাঠ ৩)
জীবনীকাঠের দহনে ছড়ানো আগুনের উত্তাপ কখনো আনে সন্দেহ, কখনো আনে হতাশা । এক অশান্ত দোলাচলে পোড়ে যাপনকাল। তার মধ্যে এগোয় জীবন।১)ফিসফাস করে কাগজ পোড়ার গন্ধে /সাদা ডিম, মাটির বস্তিগুলো পুড়ে যাচ্ছে।/ কাদের লাথির বিরাট বীরত্বে তলিয়ে, থ্যাতলে-/ পিঁপড়ে কি একা? পিঁপড়েরা যদিও /প্রথমত ও সর্বতো শৃঙ্খলিত দাস।(চোয়াল ও কামড়)
২)তবুও জুম পোড়া হচ্ছে পুরোনো পাহাড়ে/ যারা আজও কোনো গ্যারান্টি স্কিমে ঢুকতে পারিনি/ বা ঢুকেও টিঁকতে পারেনি /তাদের মন পোড়ানির মতো জুম পোড়ে-(জুম পোড়া)
৩)শূন্য ঘরবাড়ি - উড়ো বালি/ দূরে দূরে নতুন নতুন বালিয়াড়ি /সাপ ও গিরগিটির কঙ্কাল। ওরকম বেঁচে থাকতে- কাঁটাঝোপ বিচ্ছিন্নতার। (দূরত্ব) । তারপরও জীবনীকাঠের ইন্ধনে কবি বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন। 'টিয়াপাখির ঠোঁটের/ সুঁচোল মরচেধরা গানে বেঁচে থাকি - /রক্তপাত, ধনুকের জ্যা- সামান্য অতি/ অতি জৈবনিক পাখির খাবার।' (কাঠের পুতুল) আর শুভকামনা থাকে এভাবে-' ঘরোয়া আগুন চুপ বানায় শীতকাল / সিজনড কাঠের যত দূরত্ব আসবাবে/ রোজকার ব্যবহারে/ হেলদোল নেই -/নেই তবু আগুনেরও সীমিত ফুলকিতে/ ভেজা শ্বাসে জ্বলে ওঠে সে কাদের শ্লোক/ ভালো হোক, ভালো হোক। (শুভকামনা)
পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ ইন্দুরহাট(২০১৯) কবি স্বাতী ইন্দুর পূর্বজদের ভদ্রাসনের স্মৃতিপুরাণ। পূর্বজদের মায়াভূমি স্মৃতিবাহিত হয়ে তাঁর অন্তর্জীবনেও প্রবাহ সৃষ্টি করেছে। এ হল আসলে শেকড়ের টান। পূর্বজদের ভদ্রাসনের ইতিহাস যা প্রজন্মান্তরে বাহিত হয়েছে। অতীতের লোকজীবনের ধারাতেই পুষ্ট আধুনিক মনন। তাই ফিরে যেতে হয় অতীতে। কবির কথায় ইন্দুরহাট– 'বিন্দু বিন্দু দুঃখ গাথা/ জমা ছিল ইন্দুরহাটে/ হৃদয় ব্যাপার করে /ছেড়ে যাওয়া যাবে মাঠে-ঘাটে । এ পারে নতুন ভদ্রাসনে তাঁরা চলে এলেও, পরের প্রজন্ম নতুন ভূখন্ডের সন্তান হলেও সেই ইন্দুরহাট 'নামে তবু রয়ে গেল /এক বিন্দু ব্যথার নিশানা/চন্দ্রদ্বীপে মোগো দেশ /ইন্দুরহাট নামে জানা । ( ইন্দুরহাট ) । সেই ভূমি 'দূরত্ব নয় কিছু অলীক কাহিনি /যোজন যোজন যাও/ আঙুলে আঙুলে মাপো/দূর তবু চিরদিনই দূরত্ববাহিনী।(দূরত্ব)
এই স্মৃতিমেদুর কাব্যকে তিনি দৃশ্যাময় করে তোলার জন্য নিয়েছেন প্রাচীন প্রচলিত ছন্দ। আটমাত্রার পর্বভিত্তিক মিশ্র কলাবৃত্ত,যা পয়ার নামেই সমধিক প্রচলিত। তার উদাহরণ হিসেবে এখানে পাই-
১)নোডের সম্মুখতলে গতি নির্ধারক/ঢিমে তেতালায় নয় দ্রুত এক ভিড়/ করের শস্যের গান ব্রিজের মোহক/কি নিয়ে বাজাতে চাও নির্জন নিবিড় ( যাত্রা)
২) ঠোঁটে ঢালা হাইওয়ের চলভাষ ক্ষণ/ যাত্রীবাহী বাস গলে গুরুত্বের জল/ আপেক্ষিক স্বপ্নময় সে ঘনীভবন/ বরফের কালশিটে পার্থিব, শীতল।(আঠা)
৩)ফুটল যদিবা কুসুম ব্যথার/ তুমি যারে কও মন নাই/ ডাকাতিয়া বাঁশি কিভাবে জানিনা/ প্রাণের শরীর মন চাই। (কুসুম তোমার মন নাই)
আবার ত্রিপদীর ঢংয়েও পাই
৪) ভুলে যাও কষ্ট নিতে এলে/ এতসব জলসত্র ফেলে/ পৃথিবী করুণাধারায়।/ বাতাসের রক্ত মাংস নেই/ নিষ্ঠুরের কারুকার্য এই/ক্ষতমধ্যে অশ্রুর অপার।( জলসত্র)
লৌকিক প্রাজ্ঞ চরিত্র 'খনা'কেও তিনি ব্যবহার করেছেন কবিতায় - শ্বাসে ঠেলা অনন্তর চৌখুপি আকার/ ডাইসের ঘন রক্ত মাঘের সুদিন/বিশ্বাসে বর্ষে না সে পুণ্যের রাজার /ম্যাডাম খনাকেও বলুন ওয়েট করুন/ আরো কিছুদিন রবি শস্য চাই/ খারিফের রাত গেছে সন্তানের ভ্রূণ /জাগা থাকে দায়বোধ কী মায়া বাড়াই।(কাজ) । এবং 'একসন্ধ্যা' ফিরে এলে আলপোকা টানে/ হয়তো বাছাই নেই ছাড় দেয়া জানে।(ছাড়)
পূর্বপুরুষের বেদনা হলেও ভদ্রাসন বিচ্যুত কবির অন্তর হৃদয়কে আহত করেছে তা উপলব্ধি হয় এই অমোঘবাক্যে- 'রাতভোর বাতি জ্বলে যাতনা কুহক/ হাতুড়ের উপচার ধারণামূলক।( উপচার) । এক হাতুড়ে উপচার হিসেবে এসেছে এই খন্ডিত স্বাধীনতা। তার প্রতিই যেন কবির তীর্যক ইঙ্গিত।
কবি স্বাতী ইন্দু তাঁর কাব্য পরিক্রমায় কখনো কখনো পরাবাস্তবের দিকে এগিয়ে গেলেও ঐতিহ্যের বিশেষ মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যই ফিরে ফিরে আসেন নিজ ভুবনে। আপন সৃষ্ট প্রতিমাপুঞ্জের শব্দকুটিরে।