শ্রীরাম ও রামলালা
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
রাম, রামবিগ্রহ, রামমন্দির নিয়ে গতকাল সারাদেশ এক বিপুল উন্মাদনায় মেতে উঠেছিল । আমরা এতকাল শ্রীরামের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম 'রামচন্দ্র', 'রাঘব', 'রঘুপতি', 'সীতাপতি' ইত্যাদি বহু নামে । কিন্তু এবারে পেলাম নতুন শব্দ 'রামলালা' । আমরা বাঙালিরা এই শব্দটির সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নই । কিন্তু কাল এই শব্দটাই মুখে মুখে ঘুরেছে । কিন্তু খুব কম জনই জানতে চেয়েছি এই 'লালা' শব্দের উৎস ও অর্থ । কাল সারাদিন অনেকেই অযোধ্যার পথে হেঁটে রামলালার জন্যে যতটা লালায়িত হয়েছেন, রাম কেন লালা তার খোঁজ মোটেও করেননি। এই অবসরে আমি একটু ভাষাতত্ত্বের আশ্রয়ে গিয়ে খোঁজার চেষ্টা করেছি তার উৎস ও অর্থ । জনিনা কতটা সার্থক বা কতটা সফল আমি ।
মহাকবি তুলসীদাস ( ১৪৯৭ ) ১৫৭৫ সালের চৈত্র মাসের শুক্লা নবমী বা রামনবমী তিথিতে 'রামচরিত মানস' লেখা শুরু করে ১৫৭৭ সালের অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লা পঞ্চমীতে তাঁর রচনা শেষ করেন । গ্রন্থটি তিনি অবধি বা আওয়াবী ভাষায় লিখেছিলেন । অবধি বা আওয়াধি উত্তরপ্রদেশের অবধ অঞ্চলের এবং নেপালের তরাই অঞ্চলের একটি ইন্দো আর্য ভাষা । একে অনেকে হিন্দি উপভাষাও বলেন । অনেকে বলেন পূর্বে হিন্দি । রামের জন্মভূমি অযোধ্যা অবধ ভাষার কেন্দ্রভূমি । হিন্দির আরেকটি উপভাষা হল ব্রজভাষা । এটি পশ্চিম হিন্দি উপভাষা । এই উপভাষাটি শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান প্রাচীন ব্রজভূমির ভাষা । মথুরা এই ব্রজভাষা অঞ্চলের কেন্দ্রভূমি । এই দুই উপভাষাই এসেছে সৌরশেনী প্রাকৃত থেকে ।
সেকালে অবধ ভাষায় রচিত আরো সাহিত্যের নিদর্শন রয়েছে । মালিক মোহাম্মদ জাইসির 'পদুমাবৎ' বা পদ্মাবতী ( ১৫৪০ ) কাব্যও এই অবধি ভাষায় রচিত । তুলসীদাস রামায়ণ সংস্কৃত ভাষায় রচনা না করে অবধি ভাষায় রচনা করেছিলেন, যাতে সাধারণ মানুষ তা পড়তে ও বুঝতে পারে ।
এই অবধ ও ব্রজভাষায় পুত্রসন্তানকে 'লালা' বলা হয় মূলত শব্দটি এসেছে 'লল্লা' থেকে । যার অর্থ আদুরে শিশু ।
যেমন ব্রজ ভাষায় দেখি শ্রীকৃষ্ণ নন্দের শিশুপুত্র অর্থে 'নন্দলালা' । তেমনি অবধ ভাষায় ভক্তরা শ্রীরামকে তাদের শিশুপুত্র হিসাবে মনে করে নাম দিয়েছেন লালা ( স্নেহের শিশু ) । তাছাড়া অযোধ্যার গর্ভগৃহে যে রামে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তা বালক রাম । পঞ্চমবর্ষীয় নাবালক রাম । তাই তিনি রামলালা । এটুকুই আমার সন্ধান । ভুল হলে শুধরে দেবেন প্রাজ্ঞজন ।
No comments:
Post a Comment