Showing posts with label ফিচার. Show all posts
Showing posts with label ফিচার. Show all posts

Monday, February 26, 2024

ব ইয়ের ফাঁদ পাতা ভুবনে ভুবনে

বইয়ের ফাঁদ পাতা ভুবনে ভুবনে

কবিতা ছাপানো আর কবিতা পাঠের সুযোগ দেওয়ার নামে টাকা কামানোর ধান্দা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে । মফস্বলের, ভিনরাজ্যের এমন লিখতে আসা বহু তরুণ-তরুণী এদের পাল্লায় পড়ে লাগাতর ঠকে যাচ্ছেন । আপনি সময়োপযোগী এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন । তরুণ লিখিয়েরা এত কিছু জানে না বোঝে না । শুধু নিজের নামটা ছাপার অক্ষরে দেখার জন্যে এদের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হয় । এই প্রতারকরা আবার নানা সাহিত্যসংগঠন করে অর্থের বিনিময়ে প্রতিদিন অনলাইন কবিতা প্রতিযোগিতা ও শংসাপত্র প্রদান করে । গাঁটের কড়ি খসিয়ে কবিতাভ্রমণে নিয়ে যায় । সাহিত্যাঙ্গনে নানা কায়দায় এরা প্রতারণার ফাঁদ পেতে রেখেছে ।

কবিতাফাঁদ

 কবিতাফাঁদ

কবিতা ছাপানো আর কবিতা পাঠের সুযোগ দেওয়ার নামে টাকা কামানোর ধান্দা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে । মফস্বলের, ভিনরাজ্যের এমন লিখতে আসা বহু তরুণ-তরুণী এদের পাল্লায় পড়ে লাগাতর ঠকে যাচ্ছেন । আপনি সময়োপযোগী এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন । তরুণ লিখিয়েরা এত কিছু জানে না বোঝে না । শুধু নিজের নামটা ছাপার অক্ষরে দেখার জন্যে এদের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হয় । এই প্রতারকরা আবার নানা সাহিত্যসংগঠন করে অর্থের বিনিময়ে প্রতিদিন অনলাইন কবিতা প্রতিযোগিতা ও শংসাপত্র প্রদান করে । গাঁটের কড়ি খসিয়ে কবিতাভ্রমণে নিয়ে যায় । সাহিত্যাঙ্গনে নানা কায়দায় এরা প্রতারণার ফাঁদ পেতে রেখেছে ।

Sunday, February 25, 2024

বই নিয়ে আশার আকাশপ্রদীপ

বই নিয়ে আশার আকাশপ্রদীপ

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

আগরতলা বইমেলা দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আজ একটি সম্মানজনক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে । বিশ্বের অন্যান্য বড়ো বড়ো বইমেলার সঙ্গে আগরতলার বইমেলার নাম আজ একসঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে । হাঁটি হাঁটি পা পা করে রবীন্দ্রভবনের প্রাঙ্গনে শুরু হওয়া বইমেলা আজ হাঁপানিয়া প্রাঙ্গণের বিশাল পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে । সৌন্দর্যের আন্তরিকতায় এই মেলা আজ পবিত্র ভূমি হয়ে দাঁড়িয়েছে । আগরতলা বইমেলার সুবাদে বইমেলার সঙ্গে জড়িত প্রকাশনা শিল্পের সৌজন্যে ত্রিপুরার সাহিত্য আজ বহির্ত্রিপুরা ও বিশ্বের গুণীজন সমাজের কাছে সুপরিচিত । ত্রিপুরার লেখালেখি আজ সসম্মানে সর্বত্র সমাদৃত । ত্রিপুরার কবি সাহিত্যিকদের নাম আজ মূলধারার সঙ্গে সমানভাবে উচ্চারিত হয় । 

এই বইমেলার শুরুর দিনে যাঁরা ছিলেন তরুণ । আজ তাঁরা অনেকেই বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছেন । অনেকে জীবন-মৃত্যুর সীমানা পেরিয়ে গেছেন দূরের ঠিকানায় । প্রয়াতজন ও প্রবীনদের লেখায় সমৃদ্ধ হয়েছে রাজ্যের সাহিত্যভবন । আর এখন তো বইমেলা জুড়ে তারুণ্যের প্রবাহ । এই সময়ে সপ্তশ্রী কর্মকার, প্রিয়াঙ্কা দেবনাথ, সঞ্জয় দত্ত, নয়ন দে, সঙ্গীতা দাস, সুধীর দাস, জগন্নাথ বণিক, শহিদুল ইসলাম, সংহিতা চৌধুরী, মন্দিরা লস্কর, আব্দুল হালিম, বিদ্যুৎ হোসেন, বিধর্ণা মজুমদার এর মত তরুণ তরুণীরা এগিয়ে এসেছেন সাহিত্যের অঙ্গনে । এঁরা অনেক বেশি প্রাণবন্ত অনেক বেশি সংগঠিত । আর সময়ের কারণে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে তাঁদের লেখা অতি দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের সামনে সামাজিক মাধ্যমের সৌজন্যে । মুহূর্তে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে তরুণ প্রজন্মের সৃজন । তাঁদের সৃষ্টির গুণমান সম্বন্ধেও অতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন তাঁরা । ফলে তাঁদের দ্রুতগতিতে পরিশীলিত হওয়ার সুযোগ থাকছে । হতেও হচ্ছে । তাঁদেরই মধ্যে একদল নিজেদের নিয়োজিত রাখছেন নিবিড় পাঠের মধ্যে । বিশ্বের নানাভাষার ও বাংলাভাষার ধ্রুপদী সৃষ্টিসম্ভারকে তাঁরা অন্তরে আহরণ করে চলেছেন । এরাই আগামী দিনে রাজ্যের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করবেন ।

 আর একদল আছেন যাঁরা সাহিত্যচর্চার নামে রাজ্যের সাহিত্যের অঙ্গনে আবর্জনা স্তূপ তৈরি করে চলেছেন । যাঁরা শুধু লেখেন । পড়েন না । সমকালের সাহিত্যের সঙ্গে যাঁদের কোনো যোগাযোগ নেই তাঁদের মধ্যে কবিরাই সংখ্যায় বেশি । এঁরা এখনো শব্দচয়নে, ভাষা ব্যবহারে গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক অতিক্রম করতে পারেননি । তাঁরা বাংলা কবিতার অগ্রজ কবিদের কবিতার সঙ্গে পরিচিত নন । সমকালে বাংলা কবিতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তাও জানেন না । এই সময়ের সমগ্র বাংলাকবিতা তো দূর অস্ত,  আমাদের রাজ্যের কাব্য ও কথাসাহিত্যের গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে তাঁরা অন্ধকারে । তাঁরা পড়েননি আমাদের রূপন মজুমদার, শান্তনু মজুমদার, পঙ্কজ কান্তি মালাকার, রাহুল শীল, সংগীত শীল, রুবেল হোসেন, পান্থ দাস, গোপাল দে, গোপাল বনিক, দেবব্রত চক্রবর্তী প্রমুখদের কবিতা । এঁরা তরুণতম কবি ভবানী বিশ্বাসের সাড়া জাগানো 'দিদার সুরলা গান'-র খবর রাখেন না । এরা বইমেলায় যান । লিটল ম্যাগাজিন স্টলে প্রবেশ করেন না । এঁরা অনলাইনে প্রতিদিন পুরস্কৃত হন । আর তার ছবি পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায় । এঁরা সাহিত্যের কাগজও করেন যা মোটেই লিটল ম্যাগাজিন পদবাচ্য নয় । অথচ এঁরা জানেন না ঘাটের পয়সা খরচা করে কি অসাধারণ সব লিটল ম্যাগাজিন করে চলেছেন জয় দেবনাথ, চয়ন সাহা, দীপেন নাথশর্মা, মিঠু মল্লিক বৈদ্য, অনামিকা লস্কর, সৈকত মজুমদার, দীপ্সি দে, উর্মি সাহাড. ঝর্ণা বনিক, গীতশ্রী ভৌমিক, শাশ্বতী দাস প্রমুখরা । এঁরা দেশ-বিদেশে সাহিত্যের চড়ুইভাতিতে যান । ত্রিপুরার প্রতিনিধিত্ব করেন । দীর্ঘবছরের বইমেলাতেও এঁদের কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি ।

বইমেলাকে অনেকেই বিনোদনের মেলা হিসেবে আজও মনে করে চলেছেন । এঁরা বইমেলায় যান । সপরিবারেই যান । সরকারি পরিবহনের সুযোগ নিয়ে বিনি পয়সায় মেলা পরিক্রমা করেন । ফুচকা খান, ফাস্টফুড খান । আচার খান । যতটা হুমড়ি খেয়ে পড়েন খাবারের দোকানে, তার দশমাংশও বইয়ের স্টল গুলোতে নয় । এঁরা খালি হাতে মেলায় ঢোকেন । খালি হাতে বেরিয়ে যান । সরকারি যান ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বাড়ি ফেরেন । ভিড় বা ট্রাফিক জ্যামের কারণে গাড়িটি তাদের বাড়ির স্টপেজ থেকে দশ হাত এগিয়ে দাঁড়ালেও বিরক্ত হন দশ কদম পেছনে হাঁটতে হবে বলে ।

আর এই প্রতিকূলতার মাঝেও থাকে আলোর স্ফুরণ । বড়ো হয় লিটিল ম্যাগাজিনের প্যাভেলিয়ান যেখানে আজও অতন্দ্র প্রহরী ৭৫ উত্তীর্ণ তরুণ নকুল রায় । আজও প্রকাশকরা যত্ন সহকারে প্রকাশ করে চলেছেন নতুন নতুন গ্রন্থ । এসে যোগ  দিচ্ছেন শিক্ষিত তরুণ প্রকাশক । ধ্রুপদী ও নান্দনিক সৃষ্টি নিয়ে । জন্ম নেয় তরুণদের নতুন প্রকাশন সংস্থা । প্রকাশনার পাশাপাশি তাঁরা আয়োজন করেন নানা সাহিত্য অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ করেন দেশের ও দেশের বাইরে গুণীজনদের । বইমেলা ঘিরে রাজ্যের সাহিত্যের কর্মকাণ্ড উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকে । এখানেই আগরতলা বইমেলার সফলতা । সার্থকতা ।

Saturday, April 1, 2023

বসন্তে মেধা ও মননের মেলা, বইমেলা

বসন্তে মেধা ও মননের মেলা, বই মেলা

 অশোকানন্দ রায় বর্ধন 

বইমেলা । আর দশটা মেলার মতো নয় এই মেলা । সংবৎসর আর সব মেলা হয় যেখানে থাকে ব্যসনের সামগ্রী । বৈভবের সমাহার । বিত্ত বাসনা নিবৃত্তির উপকরণ । মনোহারি সব সরঞ্জামের সমাবেশ । বইমেলা এসব থেকে পুরোটাই আলাদা । হ্যাঁ বইমেলারও একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে । এ টেনে নেয় গুণীজনকে । মননশীলতাকে । ঐতিহ্যের প্রতিও দৃষ্টি ফিরিয়ে আনে বইমেলা তার পারিপার্শ্বিকতায় । বইয়ের প্রতি প্রণয় আত্মার আকর্ষণ । বিশ্বকে আপন করে নেবার প্রক্রিয়ায় কালো অক্ষরের আনন্দযজ্ঞ । ইতিহাস সংস্কৃতিকে ভালোবাসা । তার টানেই বইমেলায় সামিল হওয়া । অজান্তেই মন বলে ওঠে– বইমেলা, 'এই কি তোমার প্রেম ওগো হৃদয়হরণ ?' তেমনি এক হার্দ্য বইমেলার নাম আগরতলা বইমেলা । বিশ্বের বঙ্গভাষী অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম বইমেলা । আজ ছত্রিশ বছরে পড়ল এই বইমেলা । ১৯৮১ সালের তিরিশে মার্চ মাত্র ২৪ টি স্টল নিয়ে আগরতলা রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গনে শুরু হয়েছিল এই বইমেলা । তারপর জুরি-দেও-মনু-হাওড়া-গোমতী-মুহুরী-ফেনীর বুক দিয়ে বয়ে গেছে বহু জলস্রোত  । শৈশব পেরিয়ে কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনের শ্যামল গরিমায় পৌঁছে গেছে আগরতলা বইমেলা । আজ বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ জেনে গেছে আগরতলা বইমেলার নাম মাহাত্ম্য । আজই যখন দিবসের দাবদাহ ক্রমশ শীতল হয়ে আসবে, চৈতালি হওয়ার বাসন্তী আমেজে যখন অপরাহ্ন ভরে উঠবে কোমল মায়ায়, সেখানে উদ্বোধন হবে আগরতলা বইমেলার । রাজ্যের মননের উৎসবমালার প্রধান মন্ডপের ।

বই মানুষের সভ্যতার অপরিহার্য জীবনবীজ । মানব ইতিহাস সৃষ্টির ধারক ও বাহক । বইমেলাকে কেন্দ্র করে মানুষ পরস্পর মননের আনন্দ ভাগ করে নেন । আগরতলা বইমেলাও সেজে উঠেছে সেই নেশায় । সেই আকর্ষণে । রাত দিন খাটাখাটনির পর চলছে শেষ তুলির টান । নির্মীয়মান অস্থায়ী মঞ্চের অলংকরণ । বইমেলাকে কেন্দ্র করে আগরতলা শহর জুড়ে বইপ্রকাশের উন্মাদনা । ইতোমধ্যে হইচই বাঁধিয়ে অনুষ্ঠান করে এক ঝাঁক বই প্রকাশ করে ফেলেছেন নীহারিকা, ত্রিপুরাবাণী প্রকাশনী, ভাষা, তুলসী পাবলিশিং হাউস এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো । মফস্বল শহর কুমারঘাট থেকে এসে আগরতলা শহরে গ্রন্থপ্রকাশ উৎসব সেরে ফেলেছেন স্রোত প্রকাশনীর মত বনেদি প্রতিষ্ঠান । কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বই প্রকাশ করছেন । মেলা চলাকালীন হবে আরো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বহিঃপ্রকাশ অনুষ্ঠান । এই মননের আনন্দে বসে নেই আজকের তারুণ্যও । সরকারি কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের একঝাঁক ছাত্র-ছাত্রী । তাঁরা কদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আলপনায় আলপনায় দৃষ্টিনন্দন করে তুলছেন বইমেলার প্রবেশপথ । আমাদের চিরন্তন সাংস্কৃতি ঐতিহ্যের সঙ্গে যে 'পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি' । সময় এগিয়ে গেলেও, চারদিকে বিশ্বায়নের থাবা বিস্তৃত হলেও, মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রকট রূপ নেওয়া সত্ত্বেও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যে জাতির সংস্কৃতির গভীরে প্রবাহিত হয়, বইমেলার অভিমুখে এই পথশিল্প তারই ইঙ্গিতবাহী । আগামী কদিন আগরতলা বইমেলা জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির লালনের পীঠস্থান হয়ে উঠুক ।

স্যন্দন পত্রিকা, ২ এপ্রিল, ২০১৮

Wednesday, March 29, 2023

খোলা হাওয়ায় বইমেলা, তবুও

খোলা হাওয়ায় বইমেলা, তবুও

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

বই সভ্যতার প্রতীক । আর বইমেলা সভ্যতার অগ্রগতির প্রতীক । মেলা বহু প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীর সমস্ত জনগোষ্ঠীর লোকজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছে । ধর্মকে কেন্দ্র করে কিংবা কোন গোষ্ঠীর উৎসব-অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রাচীন মানুষেরা মেলার আয়োজন করতেন । এতে একটি বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠানের দিনে সমস্ত মানুষ এক জায়গায় মিলিত হওয়ার সুযোগ পেতেন । তার মূল উদ্দেশ্য ছিল পারস্পরিক মিলন ও কুশল বিনিময় । মেলাতে এক জায়গায় মিলিত হওয়ার পাশাপাশি ছিল একে অন্যের মধ্যে উপহার বিনিময় । এই উপহার মূলত ঘর-গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় উপকরণ । এই উপকরণসমূহ বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরের প্রয়োজন মেটানোর দিকটির প্রতি লক্ষ্য রাখতেন । একজনের কাছে যে দ্রব্যটি নেই অন্যজন তা প্রিয়জনের হাতে তুলে দিতেন । এভাবেই ক্রমে সমাজে চলে আসে বিনিময় প্রথাটি । পরে সমাজব্যবস্থায় অর্থনীতির বিষয় প্রভাব ফেললেই বিক্রয়ের পদ্ধতির প্রচলন ঘটে । মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামীন অর্থনীতি ও একসময় চাঙ্গা হয়ে উঠত । সমাজের নানা পেশার মানুষ তাঁদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে মেলায় পসরা সাজিয়ে বসতেন ।  গৃহস্থরাও তাঁদের সংবৎসরের প্রয়োজনীয় অনেক সামগ্রী মেলা থেকেই সংগ্রহ করতেন ।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বা সম্পদের অভাববোধ থেকে যেমন গ্রামীণ মেলার সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার অভাববোধ থেকে শুরু হয়েছে বইমেলা । তার মধ্যে যতটা না অর্থনীতি জড়িয়ে থাকে তার চেয়ে বেশি থাকে জ্ঞানপিপাসা । বইমেলা সেই জ্ঞানপিপাসা মেটানোর একটা মাধ্যম । আদিম সংস্কৃতির উদাহরণ হল গ্রাম্যমেলা । আর নাগরিক সংস্কৃতির উদাহরণ বইমেলা । উভয়ের উদ্দেশ্য একটাই । মিলন । গ্রামজীবনে মিলন ধর্ম ও সামাজিক উৎসবকে কেন্দ্র করে । সঙ্গে থাকে গ্রামীন অর্থনীতি । নাগরিক জীবনের মিলন মেধা, মনন ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে । জ্ঞানপিপাসুরা জ্ঞানান্বেষণে এই মেলায় মিলিত হন । মেলার মূল বৈশিষ্ট্য মিলন ব্যাপারটা এখানেও থাকে । পৃথিবীর সমস্ত দেশেই জ্ঞানচর্চা বিকাশের কেন্দ্রে রয়েছে বইমেলা । দুনিয়ার সমস্ত রাষ্ট্রেরই বড় বড় শহরে হয়ে থাকে বইমেলা । আন্তর্জাতিক মেলাসমূহের বিস্তৃতিও থাকে অনেক বেশি লক্ষ্যণীয় ।

আগরতলা বইমেলার বয়স বেশিদিনের নয় । গত শতাব্দীর একাশি সাল থেকে রবীন্দ্রভবনের প্রাঙ্গনে শুরু হয় আগরতলা বইমেলা । একসময় স্থান সংকলনের অভাব হওয়াতে পরবর্তী সময়ে তা শিশুদ্যানে সরিয়ে নেওয়া হয় । আজ ছয় বছর হলো এই মেলা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে হাপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে । প্রথম দিনের তুলনায় আজ তার পরিসর অনেক বেড়েছে । অনেক জৌলুস, আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে । স্টল সংখ্যা বেড়েছে ।  মঞ্চ ও পারিপার্শ্বিক অলংকরণে এসেছে আধুনিকতা । প্রযুক্তির ব্যবহার । এখন অনেক খোলামেলাভাবে বইমেলায় ঘোরাঘুরি করা যায় । বই বাছাই করা যায় । এ বছরে লিটল ম্যাগাজিনের প্যাভিলিয়ানটাও বেশ বড়ো করা হয়েছে । তবুও আশির দশকের বইমেলার সেই প্রাণ সেই উচ্ছলতা যেন পাইনা এখন । বয়সের জন্য কিনা জানিনা । 

বইমেলায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রামের জন্য ছনবাসের গোলঘর তৈরি করে দেওয়া হত । প্রথম দিকে তো বইমেলায় প্রকাশক বিক্রেতার পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও দশ শতাংশ ভর্তুকির ব্যবস্থা ছিল । কি জমাট আড্ডা বসত সেদিন বইমেলার মাঠে । গান, কবিতাপাঠ, কে কি বই কিনেছে তা নিয়ে আলোচনা । কোন প্রয়োজনীয় বইটা কোথায় পাওয়া যাবে, বড়দের কাছ থেকে তার সুলুক সন্ধান । মাঠের মাঝখানে ঘাসের বিছানায় ডাঁই করা মুড়ি-চানাচুর, বাদামের খোলস ছাড়িয়ে জমিয়ে আড্ডা বসত । কোথায় হারালো সেসব ! 

এখন মেলায় বই কিনুন । বাড়ি চলে যান । সেই গোলঘর নেই । আড্ডার ঠেকও নেই । এককালে পাড়ার চায়ের দোকানে যেমন বেঞ্চ পাতা থাকত ।  আড্ডা দেওয়া যেত সময় না মেপে ।  শুধুমাত্র এক কাপ চায়ের বিনিময়ে ।  পরবর্তী সময়ে সেই চায়ের দোকানেও পরিবর্তন এসে গেছে । একটা টেবিলের উপর কেটলিতে চা ফুটছে । কয়েকটা বয়ামে বিস্কুট জাতীয় খাবার আছে । চা নিন । খাবার নিন । চলে যান । বসার ব্যবস্থা নেই । বসার ব্যবস্থা নেই বলেই এখন বইমেলায় জিরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় সামনের অনুষ্ঠান মঞ্চের দর্শক আসনগুলো । মঞ্চে হয়তো কোন গুরুগম্ভীর আলোচনা বা কবিতা পাঠ চলছে । হঠাৎ তার মধ্যে বিশ্রমরত একজন কারো উদ্দেশ্যে তারস্বরে চিৎকার করে ওঠেন । মঞ্চের অনুষ্ঠানের ছন্দপতন ঘটে । দর্শকরা সব পিছনের দিকে তাকান । মঞ্চে কি চলছে তার খবর কে রাখে ! এই অবস্থাটার একটু পরিবর্তন আনা দরকার । মেলার্থীদের জন্য একটু বসার ছাউনি দরকার । গাছগাছালিহীন মেলাচত্বরে যা গরম ! মাথার ঠিক থাকার কথাও না । 

বইপত্রে অনেক নতুনত্ব থাকলেও আগের মতো ধ্রুপদী বইগুলো আর আসে না । আর যা দাম ধরলেই যেন ছ্যাঁকা লাগে । সরকার যদি আবার ভর্তুকীর বিষয়টা চালু করেন তাহলে বই পুনরায় মধ্যবিত্তের কিছুটা নাগালের মধ্যে আসবে । অন্যথায় সাধ থাকলেও সবার সাধ্যে কুলবেনা । 

আর একটা কথা বলে শেষ করছি । আগরতলা বইমেলা রাজ্যের বৃহত্তম বইমেলা । রাজ্যের ও রাজ্যের বাইরের, দেশের বাইরের বহু প্রকাশক এখানে আসেন । রাজ্যের বাইরের নামী প্রকাশকরা এরপর ফিরে যান । মফস্বলের মেলাগুলোতে খুব একটা যান না । ফলে অনেক মূল্যবান বই মফস্বলের পাঠকরা প্রকাশকের কাছ থেকে সরাসরি কিনতে পারেন না । মফস্বলের বইপ্রেমীদের আরো বেশি করে আগরতলা বইমেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে বিনি পয়সায় গাড়ির ব্যবস্থা নয় । আগরতলা থেকে অন্তত রাত আটটার দিকে রাজ্যের উত্তরে ও দক্ষিণে ফেরার জন্যে দুটো বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয় । তাহলে আগরতলা বইমেলার আরো শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে আরো উপচে পড়বে বইপ্রেমী মানুষের ভিড় ।