Showing posts with label মতামত. Show all posts
Showing posts with label মতামত. Show all posts

Monday, October 2, 2023

রমাপ্রসাদ গবেষণাগার

রমাপ্রসাদ গবেষণাগার

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

আটের দশকে আমি নিয়মিত যেতাম রমাপ্রসাদ গবেষণাগারে । পল্টুদার সঙ্গে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাতাম তাঁর গবেষণাগার ঘেঁটে, বই পড়ে । আমি, পল্লব ভট্টাচার্য, হরিসূদন বসাক, পল্টুদা ক্যারাম খেলতাম সামনের খোলা জায়গাটায় । তিন আমাকে গবেষণাগারের সদস্যও করেছিলেন । যক্ষের মতো আগলে রাখতেন তাঁর ধন । কোনো কিছু জেরক্স করার দরকার হলে হাতছাড়া করতেন না । সঙ্গে বিশ্বস্ত লোক দিয়ে পাঠিয়ে জেরক্সের পর আবার তাঁর হেফাজতে নিয়ে নিতেন । সেদিন যেসব দুষ্প্রাপ্য দলিলপত্র দেখেছিলাম তিনি সুশৃঙ্খলভাবে ফাইলবন্দী করে রেখেছেন তার পুরোটাই গায়েব হয়ে গেছে । তাঁর নিজস্ব রচনাগুলোরও ফাইল ছিল দেখেছি । ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট দিতে পারত সেদিন । এখন অনেক লুটেরাই ডক্টরেট হবে তাঁর সম্পদ গিলে ।

Tuesday, November 1, 2022

সব পথ শেষে......

সব পথ শেষে.....

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

দীর্ঘদিন শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম । চাকুরির শেষের কদিন আধিকারিক পদেও ছিলাম । ফলে অনেক ছাত্রের সান্নিধ্যে এসেছি তেমনি বহু গুণী শিক্ষকের সান্নিধ্যেও এসেছি ।আর তেমনি এসেছি  শিক্ষাবিভাগীয় কিছু আপদ ঊর্ধতন কর্মকর্তাদেরও । যারা দলগুণে ওই পদগুলোতে বসে সাধারণ শিক্ষকদের সঙ্গে অবিরাম অভব‍্য ব‍্যবহার করতেই অভ‍্যস্ত । কোনোরকম সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেই আনন্দিত । চাকরিজীবনের শেষদিন পর্যন্ত প্রাপ্ত সেইসব লাঞ্ছনাগুলো ভুলে থেকেছি শুধু এই মহান ঈশ্বর পেশায় শিক্ষক হতে আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন বলে । আর অগণিত ছাত্র-শিক্ষকের,অভিভাবকদের ও সমাজের দেওয়া সম্মানকে মাথায় রেখেছি বলে । নইলে নাম করে বলে দিতে পারি, কোন আপদের কাছ থেকে কখন কি ব‍্যবহার পেয়েছিলাম এই আমি । বেশ কবছর হল, এই মহান পেশা থেকে অবসরে চলে এসেছি । এখনও শিক্ষক বলে সম্মান পাই । ছাত্রের কাছ থেকে । ছাত্রের বন্ধুজনের কাছ থেকেও শিক্ষকের মর্যাদা পাই । পূর্বপেশার পরিচয় পেয়েও অনেকে শিক্ষকের মর্যাদা দেন । এই প্রাপ্তিই আমার শেষ পারানির কড়ি । এ নিয়েই ওপারের ডাক এলেই পেরিয়ে যাব বুক ফুলিয়ে ।

শিক্ষক শব্দটাকে আমি মনেপ্রাণে নামাবলির মতো জড়িয়ে নিয়েছি আমার চেতনায় । তাই শিক্ষকের অমর্যাদা, শিক্ষকের লাঞ্ছনায়, শিক্ষকের গ্লানিতে আমার প্রাণ কেঁদে ওঠে সবসময় । আজ কয়েকবছর হয়ে গেল আমাদের রাজ‍্যের এক বিরাট সংখ‍্যক শিক্ষক নিত‍্যদিন দারিদ্র‍্য, বুভুক্ষা, অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়ছেন । একটা বিশাল অংশের শিক্ষক-শিক্ষিকা হতাশায়, অনাহারে, রোগজর্জরিত হয়ে চিকিৎসার অভাবে চিরবিদায় নিয়ে গেছেন । তাদের নিয়ে শুধু দলবাজি হয়েছে । ভোটবাণিজ‍্য হয়েছে । কিছুদিন ভুল তথ‍্য দিয়ে একদল অবুঝকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে । বলা হয়েছে এরা শিক্ষকের যোগ‍্য নয় । যখন এই বঞ্চিত শিক্ষকদের মধ‍্যে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত একজন আত্মহননের পথ বেছে নেন তখনই সবার সম্বিত ফেরে । এখনও যাঁরা লড়ে যাচ্ছেন তাঁদের মধ‍্যে এমন যোগ‍্যতার অধিকারী বেশ কজন আছেন । বেশ কজন আছেন প্রশাসনের অন‍্য যোগ‍্য পদে না গিয়ে শিক্ষকতার পেশায় এসেছেন । বেশ কজন কর্পোরেট সেক্টরের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের রাজ‍্যে এসে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছেন শুধু এই মহান ব্রতটাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার জন‍্যে । আর এখানে এসে তাঁরা আজ পদে পদে লাঞ্ছিত হয়েছেন, আজও হচ্ছেন ।

 ১০৩২৩শিক্ষকদের সমস‍্যা আজ রাজ‍্যের জ্বলন্ত সমস‍্যা । চাকরি হারিয়ে আজ তাঁরা পরিবার পরিজন নিয়ে দিশাহারা । আমার চাকুরিকালীন সময়েই তাঁরা কাজে যোগ দিয়েছিলেন । কাজেই তাঁদের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে কর্মচ‍্যুতি সবটা সম্বন্ধেই আমার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে । চাকুরির সুবাদে এই শিক্ষকদের একটা বড়ো অংশের সঙ্গে আমার প্রত‍্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচয় রয়েছে । এঁদের অনেকে আমার ছাত্র, আমার একসময়ের সহকর্মী, অনেককে শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মশালা, প্রোগ্রামে পেয়েছি, অনেককে ডি এল এড-এ পড়িয়েছি । কাজেই তাদের যোগ‍্যতা, মেধা ও মনন সম্বন্ধে আমার সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে । সেকারণেই তাদের দুঃখে ও লাঞ্ছনায় আমার কলম আমাকে তাড়িত করে তাদের জন‍্যে লিখতে । আমার আর কি এমন যোগ‍্যতা রয়েছে । আমাদের রাজ‍্যে তো কত শিক্ষকই তো জাতীয় স্তরে, রাজ‍্যস্তরে সম্মানিত হয়েছেন । রাষ্ট্রপতির হাত থেকে রাজ‍্যপালের হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেছেন । অনেকেই শিক্ষাবিভাগীয় অনেক পদ সামলেছেন । তাঁরা সম্মানের সব সর ননী খেয়ে মোহন্ত হয়ে বসে আছেন । এই অবহেলিত শিক্ষকদের জন‍্যে একটা কাশিও দেননা তাঁরা । এই শিক্ষকরা যখন রুটি রুজি ফিরে পাওয়ার জন‍্যে রাজপথে নেমে রাষ্ট্রশক্তির দ্বারা নির্যাতিত হন তখনই আমার প্রাণ কেঁদে ওঠে কিছু লেখার জন‍্যে । আমার সেইসব লেখা সোস‍্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ায় । লিখে যে শুধু বাহবা পাই তা না । আমার কোনো বক্তব‍্য যদি  একাধিক গ্রুপে বিভক্ত এই শিক্ষকদের কোনো গ্রুপের সামান‍্য মনঃপূতও না হয় তাহলে আমার চোদ্দোপুরুষ তুলে গালাগাল করতে ছাড়েন না । তুই-তোকারি থেকে শুরু করে ভাষাব‍্যবহারে তাঁরা যে শিক্ষক সেই চিহ্নটুকুও মুছে ফেলেন । আমি নীরবে হজম করি । প্রথমত ভাবি, তাদের বিষয়ে নাক গলানোর তো আমার অধিকার নেই । দ্বিতীয়ত, তাদের মতো অবস্থায় থাকলে আমারও হয়তো হিতাহিত জ্ঞান থাকত না । তাঁদের অস্তিত্বের সংকটই তাঁদের ক্ষুব্ধ করে তোলে । কমেন্টগুলোর স্ক্রিনশট রেখে মাঝে মাঝে দেখি আর চোখের জলে ভাসি । তবুও কেন জানি বেহায়ার মতো লিখে ফেলি ।

 এই শিক্ষকরা বড়ো বেশি আবেগপ্রবণ ।  তাই তাঁদেরকে সবাই খেলার পুতুল ভাবে । রাজনীতির দাবার বোড়ে করে । সর্প হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়ফুঁক করে । ওদের উপদলে ভাগ করে আন্দোলনকে দুর্বল করে । ওরাও একদল অবস্থান করলে আর একদল যায় না । একদল লাঠিপেটা জলকামানে বিধ্বস্ত হলে আর একদল টুঁ শব্দটি করে না । ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে গেলে একদল আর একদলকে লুকিয়ে যায় । একদল ক-এর ছত্রচ্ছায়ায় থাকে তো আর একদল ব-এর তোষামোদে কার্যোদ্ধারের স্বপ্ন দেখে । তারপরেও একসময় মোহভঙ্গ হয় কারো কারো । যাদুকরের মায়াজাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চায় কেউ কেউ ।

এই দুখি শিক্ষকদের একাংশ সবশেষে তাদের আন্দোলনের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়েছেন সম্প্রতি । তাঁরা তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেবার দাবিতে আমরণ অনশনের পথ বেছে নিয়েছেন । এযাবত নেওয়া তাঁদের সমস্ত প্রয়াস ব‍্যর্থ হয়েছে ভেবেই তাঁরা এই দুঃখজনক পথ বেছে নিয়েছেন । না খেয়ে খেয়ে একদল মানুষ প্রকাশ‍্যে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, মৃত‍্যুর কোলে ঢলে পড়বেন একি কাম‍্য ! একজন সাধারণ নাগরিক কি এদৃশ‍্য সহ‍্য করতে পারবেন ?।আজ তাদের আন্দোলন ত্রয়োদশ দিনে পড়ল । প্রতিদিন অনশনকারীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন । যে কোনো সময় দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে । এদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন‍্যে, প্রবোধ দেওয়ার জন‍্যে কেউ কাছে ভিড়ছেন না । সমাধানের ক্ষেত্রেও অহেতুক বহু কালহরণ হয়ে গেছে । পাষন্ড শিক্ষাবিভাগীয় অফিসারদের কথা শুরুতেই বলেছি ।ওদের কাছ থেকে মানবিকতা আশা করা সোনার পাথরবাটি । যদি বোধোদয় হয় তো তা সুস্বাগত । রাজনৈতিক দলগুলো এখন জল মাপবে । কারণ সামনে নির্বাচন । এই সংকটময় সময়ে সাধারণ মানুষ তাদের পাশে এগিয়ে আসা ছাড়া আর কোনো পথ নেই । এই অসহায় শিক্ষকদের সামনে সত‍্যিই আর দ্বিতীয় পথ নেই । নেই আর ।

Friday, August 12, 2022

আজ আবার নতুন করে....

আজ আবার নতুন করে....

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

আজ সারাদিন উৎকন্ঠায় ছিলাম । কি জানি কি হয় । ১০৩২৩ শিক্ষকরা আজ বিদ্যালয়ে গেছেন । এ ব্যাপারে তারা আগেই ঘোষণা দিয়েছেন । যেহেতু এই বঞ্চিত শিক্ষকগোষ্ঠীর উপর নানাভাবে দীর্ঘদিন যাবত আক্রমণ চলে আসছিল, আজ না জানি কি ঘটে । কিন্তু না সব উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে আজ শিক্ষক-শিক্ষিকারা পূর্বতন বিদ্যালয়ে গেছেন পুনরায় যোগদানের জন্য । যতটুকু জানা গেছে, দু একটা জায়গায় অতি উৎসাহী ও উটকো উজবুকদের আক্রমণ আর অতি চালাক কিছু প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিতি ছাড়া এইসব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোথাও খুব একটা বাধা পেতে হয়নি । 

মধ্যাহ্নের আকাশে নেমে আসা কালো মেঘ তুমুল বর্ষণের পর যখন সরে যায়, তখন চারদিক অনেক বেশি উজ্জ্বল হতে দেখা যায় । দীর্ঘ লড়াই-আন্দোলন করেও যখন দপ্তর বা মন্ত্রিসভাকে টলানো যাচ্ছিল না কিছুতেই, সেই সময়ে খড়কুটো ধরে অথৈ সমুদ্রে বেঁচে থাকার শেষ আশায় শিক্ষক মহাশয়দের তথ্য জানার অধিকারের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট যে উত্তর দিয়েছেন তা জগদ্দল পাথর টাকে মনে হয় কিছুটা নাড়া দিতে পেরেছে । শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পুনরায় কাজে যোগদানের ব্যাপারটায় তাদের ভূমিকা অনেকটা নমনীয় মনে হয়েছে আজ । যারা কাজে যোগ দিয়েছেন, সবাইকে যথাযথ মর্যাদায় সুযোগ করে দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধানগণ। এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পূর্বনির্দেশ অনুযায়ী অতি দ্রুত তার রিপোর্ট দপ্তরের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন । 

দীর্ঘদিন পরে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ বিদ‍্যালয়ে বিদ্যালয়ে কাজে যোগদান করার জন্য আজ মার্জিত ও বর্ণাঢ্য পোশাক পরে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন । দেখামাত্র শিক্ষার্থীরা দৌড়ে চলে এসেছে তাদের প্রিয় শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে । সর্বত্রই সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিরন্তন আবেগঘন পরিবেশ ।

 ভুক্তভোগী ছাড়া জানবে না এই কবছরে এই বিপুল পরিমাণ শিক্ষক-শিক্ষিকার অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার হাল কি হয়েছে । তার উপর গেছে কোভিড মহামারী । অভিভাবকরা শিক্ষার্থী সন্তানদের মানুষ করার জন্য কত টাকা ব্যয় করেছেন প্রাইভেট পড়ানোর জন্য । বিষয় শিক্ষকের অভাবে ও শিক্ষক স্বল্পতার কারণে সন্তানকে নিয়ে ঘুরেছেন এই স্কুল থেকে সেই স্কুল । আর এই ডামাডোলে এবং করোনাকালীন সময়ে দেদার পাশের ফলে শিক্ষার্থীরা ভালো জায়গায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগও হারিয়েছে । পাশ করা শিক্ষার্থীরা চাকরি পাচ্ছে না । 'করোনা পাশ' বলে তাদের দেগে দেওয়া হচ্ছে ।

 যাইহোক, এর মধ্যেই আজ ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের স্কুল চত্বরে দেখে শিক্ষার্থীরা আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠেছে । শিক্ষক সংকটে রাজ্যের শিক্ষার্থীদের যে কি ক্ষতি হয়েছে তা শিক্ষার্থীরা ছাড়া আর কে বেশি বুঝবে ?  'বুঝিবে সে কিসে / কভু আশীবিষে / দংশেনি যারে' ? দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে জুরি-মনু-ধলাই-হাওড়া-গোমতী-মুহুরী-ফেনীর স্রোতধারার সঙ্গে । অনেক যন্ত্রণাদগ্ধ প্রাণ চলে গেছে অনন্তের পাঠশালায় । আর দেরি নয় । দপ্তরের শুভ বোধ জাগুক । মন্ত্রিসভা সজাগ হোন । পড়ে দেখুন এইসব 'হাতে মসি, মুখে মসি, মেঘে ঢাকা শিশুশশীদের চোখ মুখের ভাষা । আর রাজনীতি নয় । এবার চাই সহানুভূতি ।

 'আজ আবার নতুন করে / ভুলে যাওয়া নাম ধরে ডেকো না / হারানো স্বপন চোখে এঁকো না' । ১০৩২৩ নামে তাঁরা যেন আর চিহ্নিত না হন । তাঁদের দুঃস্বপ্নের রাতগুলো যেন আর ফিরে না আসে । তাঁরা যেন আবার মূলস্রোতে মিশে যেতে পারেন । 'আমাদের গেছে যে দিন / একেবারেই কি গেছে / কিছুই কি নেই বাকি' ।  না । না । আছে । 'রাতের সব তারাই আছে / দিনের আলোর গভীরে' । আসুন সবাই মিলে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে দিনের আলো খুঁজে বেড়াই । শুভস‍্য শীঘ্রম ।

১২.০৮.২০২২.

Monday, May 21, 2018

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ

ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল সাব্রুমের দ্বিতল কংগ্রেস ভবন ৷ খাস জমি থেকে দলীয় অফিস তুলে দেওয়ার সরকারি নির্দেশ অনুসারে ৷ মানলাম খাস জমি উদ্ধার হল ৷ এই জমিতে হয়ত জনকল্যাণমুখী কোন পরিকল্পনা রূপায়িত হবে ৷ কিন্তু কথাটা হল এই যে দলীয় অফিসগুলো ভাঙা হচ্ছে একের পর এক ৷ পরোক্ষভাবে এগুলো কিন্তু জনগণের টাকায় তৈরি ৷ সে সরকারী দল হোক কিংবা বিরোধী দলের ৷ আর জনগণই বিভিন্ন দলের সদস্য ৷ রাজনৈতিক কাজকর্মে অংশগ্রহণের জন্যে জনগণকে অধিকার সংবিধানই দিয়েছে ৷ আর আমার ধ্যানের ভারতের জনগণের বৃহত্তর অংশই দরিদ্র ৷ যারা নিজের বাস্তুভিটের উপর যে চালাঘরটি তোলেন তার তার শতচ্ছিন্ন অবস্থা থাকলেও দলীয় অফিসটাকে একটু সুন্দর করে গড়ে তুলতে চায় ৷ সে যে দলই হোক ৷ সরকারী খাসজমিতে হওয়ার ফলে এই দরিদ্র মানুষগুলোর জমি কেনার টাকাটা বেঁচে যায় ৷ জনকল্যাণকামী সরকার সরকারী নিয়ম মেনে সরকারী খাস জমিতে গড়ে ওঠা দলীয় অফিস করার জন্যে, রাজনৈতিক কাজকর্ম চালানোর জন্যে  বন্দোবস্ত দিয়ে দিতে পারে ৷ রাজনৈতিক দলগুলো তো দেশের শত্রু নয় ৷ তাহলে দেশের আপৎকালীন সময়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয় ? অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি আমার দেশ যখনই সংকটপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে , বহিঃশত্রুর আক্রমণের মুখে পড়েছে তখনি আমাদের সংসদে দলমত নির্বিশেষে সকল সদস্য একমত হয়ে যে সময় যে সরকার থেকেছেন তার সময়োপযোগী পদক্ষেপের পাশে দাঁড়িয়েছেন ৷ দেশের সংহতি, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে এই ঐক্যই তো ভারতের চিরন্তন আদর্শ ৷ আশৈশব তো এটাই দেখে এসেছি ৷ তেমনি প্রয়োজনে এই পার্টি অফিসগুলো আপৎকালীন সাময়িক আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায় ৷ যেমন দাঁড়ায় বন্যা কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের সময় ৷ সাব্রুমের যে দলীয় অফিসটি ভেঙে দেওয়া হল তার একতলায় কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছোটো ব্যবসায়ী ব্যবসা করে প্রতিপালন করতেন নামমাত্র ভাড়ায় ৷ রাজনৈতিক রং দেখে তো এদের ভাড়া দেওয়া হয়নি ৷ তার চেয়ে বড়ো কথা, সাবরুমের কংগ্রেস অফিসই তো ছিল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম আশ্রয়স্থল ৷ এখান থেকেই পরিচালিত হয়েছিল এক নং সেক্টরের বহু কাজকর্ম ৷ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম দলটি সেদিন সাব্রুমের কংগ্রেস অফিসে উঠেছিলেন ৷ তারপর তখনকার ব্লক কংগ্রেস সভাপতি জ্ঞানেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী, কংগ্রেস নেতৃত্ব কালিপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, যদুনন্দন সিংহ, আশুতোষ নন্দী প্রমুখ তাঁদের আগরতলায় বৃহত্তর যোগাযোগের জন্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন ৷ জিয়াউর রহমান, মাহফজুল বারি ( আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী) , রফিকুল ইসলাম বীরোত্তম, তরুণ অফিসার কাদের,  শেকান্তর মেম্বারসহ বহু মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচিহ্ন বহন করে সাব্রুমস্থিত সেসময়ের কংগ্রেস অফিস ৷ অবশ্য সেসময়ে কংগ্রেস অফিসটি ছিল একটি চালাঘর ৷ আরো আগে রাজন্য আমলে এর পাশের দক্ষিণের জায়গায় ছিল রাজার বনকর অফিস ৷ এখান থেকে ফেনি নদী দিয়ে বয়ে নিয়ে যাওয়া বাঁশ ছন প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদের ভাইট্টাল কাটতে হত ৷ ত্রিপুরা রাজ্যের ভারতভূক্তির কিছু আগে বা পরে অফিসটি উঠে যায় ৷এমন বহু ইতিহাস জড়িয়ে এই স্থানকে কেন্দ্র করে ৷ প্রতিবছর সাব্রুমে যে বৈশাখী মেলা হয় ৷ সে সময়ে বাইরে থেকে অনেক ব্যবসায়ী আসেন ৷ তাদেরও অনেকে রাত কাটাতেন এই দালানের ছাদে ৷ কতো বলব ৷ আজ সাব্রুমের যিনি জনপ্রতিনিধি,  অল্প কয়দিনের মধ্যে যিনি শান্তি সম্প্রীতি রক্ষায় এবং উন্নয়নমূলক কাজকর্মের জন্যে নিবিড় আত্মনিয়োগ করে দলমত নির্বিশেষে ইতোমধ্যে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলেছেন তাঁরও রাজনৈতিক জীবনের সুরুয়াত হয়েছে এই কংগ্রেস অফিস থেকে ৷ এই দালানবাড়িটি নির্মানে সেদিন তাঁরই মুখ্য ভূমিকা ছিল ৷ তারপর দলীয় অন্তর্কলহে তাঁকে বের হয়ে যেতে হয় এই দালান ৷ সেদিনের নেতৃত্বকে কিন্তু তার জন্যে খেসারতও দিতে হয়েছিল রাজনৈতিকভাবে ৷ জনগণ বর্তমান বিধায়ক শংকর রায়ের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন নীরবে ৷ সাব্রুমের বহু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মূক সাক্ষী আজ ধুলোয় মিশে গেল ৷ এ দালানটিকে রেখে কিছু গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করা হলে সরকারী নতুন নির্মান ব্যয়েরও সাশ্রয় হত ৷ ইতিহাসের নির্বাক সাক্ষীও বেঁচে থাকত জনগণের বুকে ঐতিহ্যদালান হিসেবে ৷