Monday, February 6, 2017

গুরু, তোমার চরণ পাবো বলে


গত 27 জানুয়ারি 2017 গিয়েছিলাম আমার স্যরের বাড়ি ৷ অধ্যাপক অরূপরতন মুখোপাধ্যায় ৷ রবীন্দ্র মনোদর্শন ও আরো অনেক ধ্রুপদী গ্রন্থের লেখক অধ্যাপক অমিয়রতন মুখোপাধ্যায়ের সুযোগ্য সন্তান ৷ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত ভাষাশিক্ষাদানের পাশাপাশি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের তাঁর গভীর মননের নির্যাসে আমাকে সমৃদ্ধ করেছিলেন প্রতিনিয়ত ৷ পড়াশুনোর পরেও নিবিড় যোগাযোগ ছিল আমাদের ৷ গত আঠাশ তারিখ গিয়েছিলাম তাঁর বাড়ি ৷ প্রিটোরিয়া স্ট্রিট থেকে কীভাবে যাব তোতাপাখিকে শেখানোর মতো করে শিখিয়ে দিয়েছেন ৷ বেহালা পেরিয়ে চারটে স্টপেজ পেরিয়ে পরাশরতলা ৷ নতুন বাড়ি করে ওখানে আছেন ৷ আদি বনেদি বাড়ি বড়িশায় ৷ ট্যাক্সিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রেখে চলেছেন ৷আমার সঙ্গে এই সময়ের শক্তিমান দুই কবি অভিককুমার দে এবং সুমন পাটারি ৷ আমরা তিনজনই দক্ষিণ ত্রিপুরার ৷ ওরা দুজন বাইখোরা ও আমি সাব্রুম ৷ গাড়ি থেকে নেমে পাল ফার্মেসির সামনে পৌঁছোনোর সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে ৷ আজো সুদর্শন গৌরকান্তি আমার স্যর ৷ যেন চৈতন্য মহাপ্রভুর হৃদয়ে ঠাঁই নিলাম এক দীন অনুসারী ৷ আমাকে জড়িয়ে স্যর অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলেন ৷ আমিও বুকের মধ্যে, গলার মধ্যে এক চাপ অনুভব করছি ৷তীব্র শিহরণ হচ্ছিল আমার ৷ চোখে জল এসে গেল আমার ৷' দুহুঁ কোরে দুহুঁ কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া' ৷ যতোক্ষণ ছিলাম স্যরের বাড়িতে স্নানের সময় ছাড়া মুহূর্তের জন্যে কাছছাড়া হন নি আমাদের ৷ কবিতা শুনলেন, কুশল জানলেন, সাহিত্য আলোচনা হল ৷ একে একে খোঁজ নিলেন তাঁর কর্মস্থল বিলোনিয়ার পরিচিতজনদের ৷দুঃখ পেলেন আমার মায়ের দেহান্তের কথা জেনে ৷ যেন একজন দূরদেশবাসীর সন্দেশসংগ্রহ ৷ হ্যাঁ ভুরিভোজনটি না করিয়েও ছাড়লেন না ৷ তাঁর ছেলে বাপ্পা তার দাদাভাইকে বার বার ফোন করছে, দাদা তোমরা যেও না ৷ আমি আসছি ৷সেদিনই তার ট্রেনিং শেষ হয়েছে ৷ মাঝে একদিন ৷ তারপরই জয়েন করবে মেট্রো রেলে ৷ পড়িমরি করে ও এলো ৷ হাতমুখ ধুয়ে বসে পড়ল আমার পাশে ৷ শিশুর সারল্যে ভরা মুখশ্রী নিয়ে এক নবীন যুবক ৷ আগামীকাল থেকে যার কাঁধে সংসারের গুরুদায়িত্ব পড়বে ৷ গুরুপত্নী কাকিমাও সারাদিন আমাদের জন্যে খাটাখাটনি করে থিতু হয়ে বসলেন আমাদের পাশে ৷ আর একপ্রস্থ চা সিঙাড়াসহ জমাটি আড্ডার পর আমরা উঠলাম ৷ যতোক্ষণ ছিলাম ছাত্রদিনের মতো জ্ঞানভান্ডার উজাড় করে দিয়েছেন আমাদের ৷আমার সঙ্গী তরুণদ্বয়ও আপ্লুত তাঁর সান্নিধ্যে ৷ যখন মিলনমেলা ভাঙলো পশ্চিমমুখো হয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছি ৷ আকাশলগ্ন অট্টালিকার আড়ালে থাকায় সূর্যদেবকে খুঁজে পেলাম না এই বিচ্ছেদের সাক্ষী থাকার জন্যে ৷ প্রাসাদসারির ছায়ার আঁধারে আর একবার প্রণাম করলাম আমার স্যরকে, আমার আত্মার অভিভাবককে ৷

No comments:

Post a Comment