তাতে কিবা লাভ হল আমার পিসির
আমি বাঙাল ৷ আমার পূর্বপুরুষ পূর্ববঙ্গের কিংবা পুববাংলার ৷ আমার উত্তরপুরুষ পশ্চিমবঙ্গে কিংবা পশ্চিমবাংলায় ৷ আর আমার প্রিয় ফুটবল দল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ৷ এই ক্লাবের কদিন আগের সচিব কল্যাণ মজুমদার সম্পর্কে আমার কাকা হন ৷ এই কাকাকে আমি চোখে দেখিনি কোনদিন ৷ তিনিও পুববাংলার ৷ আমার পূর্ববঙ্গীয় বাবা বলে গেছেন, তাই আমি জানি উনি আমার কাকা ৷ আমার বাবা বলতেন, সুধীর কাকা তাঁর বাড়ির পাশে নিজেদের প্রয়োজনের চেয়েও বেশ খানিকটা জায়গা বেশি রেখেছিলেন পুববাংলা থেকে তাঁর পরিজনরা আসবেন, পাশাপাশি বাড়ি করে থাকবেন ৷ পূর্ববঙ্গীয়দের টান এমনই ছিল সেদিন ৷ সেই সুবাদেই বোধহয় আমার অদেখা কাকার নাম ভাঙিয়ে উপকৃতও হয়েছি একবার ৷ সে বোধহয় গত শতকের আশি সাল ৷ আমরা পাঁচজন সহকর্মী ( আমি তাঁদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ) ভারত ভ্রমণে বেরুই ৷ ফেরার পথে আমার সহকর্মী দীপকদা দুম করে রেজিষ্ট্রি বিয়ে করে বসলেন ৷ মুনমুন বৌদির পরিবারও পুববাংলার ৷ শিয়ালদার টাওয়ার হোটেলে থেকে অনাড়ম্বর বিয়ের অনুষ্ঠানটি হয় ৷এই অধম আইনি সাক্ষী ৷ রাতের বেলা জানলাম হোটেল মালিকও পূর্ববঙ্গের ৷ নতুন বৌঠানকে নিয়ে আমরা সার্কুলার ট্যুর অনুযায়ী অসম হয়ে ট্রেনে ফিরব ৷ দীপকদার শ্বশুরমশাই একটা সিদ্ধান্ত দিলেন, বিয়েতে তো কিছু দিলেন না ৷ উদারচিন্তক দীপকদাও কোন কিছুর দেওয়া নেওয়ার ঘোর বিরোধী ৷ শুধু মেয়ে-জামাই ও আচমকা বরযাত্রীরা যদি প্লেনে যাই তবে আগরতলা- কোলকাতার টিকিটের টাকাটা তিনি দিতে চান ৷ দীপকদাকে নরম করানো যাচ্ছিল না কিছুতেই ৷শেষকালে টাওয়ার হোটেলের মালিক আমার ঠাকুরমার সূত্রে কোনো আত্মীয়তা রেশ ধরে মীমাংশা দিলেন ৷ দীপকদাকে বললেন, তুমি না হয় নিলে না ৷কিন্তু তোমার শ্বশুরমশাই তাঁর মেয়ের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্যে বোধহয় এ প্রস্তাব দিয়েছেন ৷ এই পূর্ববঙ্গীয় চালে আমার দাদাটি কুপোকাৎ হলেন ৷ টাকা তো দিলেন৷ কিন্তু দু এক দিনের মধ্যে টিকিট কোথায়? হোটেল মালিকসহ সবাই খোঁজখবর করলেন ৷ব্যবস্থা হল না ৷ আমরা ট্রেনেই ফিরব ৷ দেখা করতে গেলাম বালিগঞ্জে আমার কাকা কাকি ঠাম্মার সঙ্গে ৷ কথায় কথায় আমার মেজো কাকা জানলেন আমরা টিকিট পাচ্ছি না ৷ একটা চিরকুট লিখে আমার হাতে দিয়ে বললেন, ও তো আবার সাহিত্যিক ৷পড়ে দেখ তো আমার লেখায় ভুলটুল আছে কিনা ৷ এক কাজ করবি সোজা সিটি অফিস চলে যাবি ৷ ওখানে ডেপুটি ম্যানেজার কল্যাণ মজুমদার আছে ৷আমার নাম করে চিঠিটা দিবি ৷ হয়ে যাবে আশা করি ৷ সেখান থেকে ফিরে পরদিন চলে গেলাম সিটি অফিসে ৷ গিয়ে দেখি কল্যাণ কাকার চেম্বারের নেমপ্লেট কিন্তু দরজায় তালা ৷ আমার আশার গুড়ে কাঁকর ৷ যাক এসেছি যখন টিকিটের কাউন্টারে খোঁজটা নিয়ে যাই ৷ কাউন্টারে গিয়ে বললাম, আগরতলার টিকিট হবে? পাঁচখানা? কবেকার? কালই যেতে চাই ৷ কিসব দেখে টেখে কাউন্টারওয়ালা বললেন, সাতদিনের মধ্যে নেই ৷ ও হরি! আমতা আমতা করে কাকার চেম্বারের দিকে তাকিয়ে বললাম, কল্যাণ মজুমদার আছেন? ওদিক থেকে পাল্টা প্রশ্ন, কেন, কী দরকার? না, একটা চিঠি ছিল ওনার ৷ কাউন্টার কর্তা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, কখানা টিকিট লাগবে বললে? পাঁচখানা ৷ টাকা আছে? না টাকাতো আনিনি ৷খোঁজ নিতে এসছিলাম ৷ থাকো কোথায়? টাওয়ার হোটেলে ৷ আগরতলার লোকগুলোই ওরকম ৷ যাও, আধঘন্টার মধ্যে টাকা নিয়ে এস ৷আমি রাস্তায় নেমে ওপারে গিয়ে বড়োবজারের ভেতর দিয়ে সোজা টাওয়ার হোটেলে ৷ ফিরে এসে পাঁচখানা টিকিট নিয়ে বিশ্বজয় করে সুভদ্রাহরণ করলাম আমরা ৷ আমার সেই পূর্ববঙ্গীয় কল্যাণ কাকাকে আজো দেখি নি ৷ ইস্টবেঙ্গল ও বৈমানিক জীবন নিয়ে ভিন্নধর্মী লেখালেখির দৌলতে কোলকাতায় তাঁর যথেষ্ট পরিচিতি আছে ৷
আজই জানলাম পূর্ববাংলা- পশ্চিমবাংলার, ঘটি-বাঙালের সেই নস্টালজিক ব্যাপারটা নষ্ট হয়ে যাবে ৷ পূর্ববাংলা তো বাংলাদেশ হয়ে গেছে ৷ আর পশ্চিমবঙ্গও অগস্ত্যযাত্রার পথে শুধু বঙ্গ বা বাংলা রেখে যাবে ৷ এতো ভঙ্গ বঙ্গ তবু রঙ্গভরা ! আহা
Friday, April 13, 2018
তাতে কিবা লাভ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment