বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার পত্রপত্রিকা ও সাংবাদিকদের ভূমিকা
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
১৬ই ডিসেম্বর । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবস । একাত্তরের ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে যে স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু হয়েছিল সেদেশে আজকের দিনে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আসে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ত্রিপুরা রাজ্যের সর্বস্তরের জনগণ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ববর্গ, বিভিন্ন পেশার মানুষজন, সমাজকর্মী একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন । দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকেছিলেন ত্রিপুরার মানুষ । সেই দিনের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার সাংবাদিক, চিত্রসাংবাদিক, পত্র-পত্রিকাসমূহেরও বিরাট ভূমিকা ছিল । আগরতলা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সমর রাজধানী । সাব্রুমের হরিনা ছিল তাদের এক নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ।
দৈনিক সংবাদ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে সেদিন এদেশের ও বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা একত্রিত হয়ে কলম ধরে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে । দেশ-বিদেশের সাংবাদিকরাও এই প্রতিষ্ঠানে এসে তথ্য সংগ্রহ করতেন । যার দরুন খানসেনাদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই দৈনিক সংবাদ । দৈনিক সংবাদ অফিসকে ধ্বংস করার জন্য তারা গোলাও নিক্ষেপ করেছিল দৈনিক সংবাদ অফিসের লক্ষ্য করে । কিন্তু সৌভাগ্যবশত সেদিন ওই গোলা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় । সম্পাদক ভূপেন দত্ত ভৌমিক, বিপুল মজুমদার, অধ্যাপক মিহির দেব, অধ্যাপক সুখময় ঘোষ, সেদিনের চিত্র সাংবাদিক রবীন সেনগুপ্ত, তরুণ সাংবাদিক বিকচ চৌধুরী প্রমুখগণ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন । অন্যান্যদের মধ্যে বিশেষভাবে নাম করতে হয় অনিল ভট্টাচার্য, স্বপন ভট্টাচার্য, ননীগোপাল চক্রবর্তী প্রমুখদের । মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহদানের লক্ষ্যে সৃষ্ট 'রোশেন আরা' মিথ তো বিকচ চৌধুরীর মেধাবী কলমপ্রসূত । আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রত্যক্ষচিত্র দুঃসাহসিকতার সঙ্গে ধারণ করেছিলেন চিত্রসাংবাদিক রবীন সেনগুপ্ত । ডিসেম্বরে ভারতীয় বাহিনীর জেনারেল অরোরার সঙ্গে একমাত্র ভারতীয় সাংবাদিক বিকচ চৌধুরী বিমানে ঢাকা যাওয়ার বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন । একমাত্র তিনি ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রত্যক্ষ করেন পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ । ভারতীয় সাংবাদিকরা সেদিন ঢাকা পৌঁছাতে পারেননি । তাঁরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর PRO কর্নেল রিখির সঙ্গে ১৮ তারিখ ঢাকায় পৌঁছেছিলেন । মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গী হয়ে রবীন সেনগুপ্ত মৈমনসিংহ হয়ে ঢাকা পৌঁছেছিলেন ।এদিকে ৮ডিসেম্বর রামগড়ের হানাদার মুক্তির দিনে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক স্বপন ভট্টাচার্য ।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোর কথা আজও তেমনভাবে জানানো হয়নি নতুন প্রজন্মকে । যেকারণেই প্রতিবেশী দেশ হয়েও এই প্রজন্মের একটা অংশ ক্রোধ ও ঘৃণা বর্ষণেই তৃপ্তি পায় । যা আদৌ কাম্য নয় । পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির মাধ্যমে তো বিশ্বসভায় প্রথম সারিতে স্থান করে নেওয়া সম্ভব ।
আসুন, আজকের দিনে আমরা প্রতিবেশী হিসেবে মৈত্রীর কথা বলি, সম্প্রীতির কথা বলি, শান্তির কথা বলি । ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দীর্ঘজীবী হোক ।
ছবিঋণ : চিত্রসাংবাদিকের ক্যামেরায় মুক্তিযুদ্ধ– রবীন সেনগুপ্ত
No comments:
Post a Comment