Friday, June 19, 2020
'বাবা' শব্দে পিতৃতর্পণ
Thursday, December 13, 2018
দুটি কবিতা
হিমঘর
-------------------------------------
অঘ্রাণবিধূর কুয়াশাপিয়ানো, তোমার করুণ মূর্ছনায় আমাকে কাঁদিও ৷
কোমল ঝরনার স্বচ্ছ গভীরের নুড়ির চলন যেন দিকভুল
করে থমকে যায়
নোঙর
-------------------------------------------
সামনে খ্রিস্টমাস ৷
দিঘল ছায়ার গীর্জা মূক হয়ে আছে
ঝাউবনের পাশে ৷
বাতাস হিমস্নান মিশিয়ে পথ খুলে রেখেছে
কুমারী মেরির জন্যে ৷
ভালোবাসাভর্তি একটা নৌকো
সহসাই নোঙর করার কথা
দুখি মানুষ সব, পারে এসে দাঁড়াও
Tuesday, November 6, 2018
বিলোপ
এভাবেই মুছে যাই, মুছে যেতে হয়
যারা ভালোবাসে আর কাছে টেনে নেয়
তাদেরই কেউ কেউ মুছে ফেলে আমাকে
আর অন্য যারা ভাসমান দোনামনায় আছে
তারাও অবসরবিনোদনের কালে পাঁজিপুথি দেখে
খুঁজছে মাহেন্দ্র কিংবা অমৃতযোগ
কখন ছেঁটে ফেলা যায় আমাকে
এইসব মোছামুছি আর ঘষাঘষির ফলে
আমার শরীরে এখন চুম্বনচিহ্নের মতো
শুধু ফ্যাকাশে ইরেজারের ঘষটানো দাগ
Monday, October 15, 2018
অ সু খ
অসুখ নিয়েই কী আমাদের চলে যেতে হয়
হাত গুটিয়ে বসে থাকা অশ্বিনীসন্তান
কার নির্দেশ মান্য করে
কালঢেউ গুমরে উঠেও
নিস্তরঙ্গ গুজরান মেনে নেয়
অসুখ কে ছড়ায়? কার ঝোলায় লুকোনো মারণ ভাইরাস?
চুম্বনের উষ্ণতা ধরে রাখার সাধ্য থাকে না
নিষাদের তির তাক করা
ফেঁসে যাওয়া কারবাইনও গর্জে ওঠে
অসুখের ভেতরেও পথে নামে মানববন্ধন
হাতে হাতে সংক্রামিত উত্তাপ হৃদয়গোলাঘরে
পদাবলির অক্ষর দেববৈদ্যের দরজায় সেঁটে যায়
'এই করুণসন্ধ্যার দীপাবলি ফুঁ দিয়ে নেভানো বারণ'
Monday, September 17, 2018
আসল কতা অইলো গিয়া
এই বছরের আগিলা পূজাডা গনেইস্সাই ধইরা লাইছে ৷ পরিসংখ্যান দপ্তরের খাতাপত্রে অহন পইরযন্ত দুই হাজার সারে আঢারডা গণেশপূজার পাত্তা পাওয়া গেছে ৷ এইডা খালি আগরতলা শহরের হিসাব ৷ মমস্সলেরটি অহনঅ আইয়া সারছে না ৷ নেট খারাপ ৷ বিশ্বকর্মা ঠাউর রওনা দিবার লগে লগেঅই তার স্যাটেলাইট ইনডাসটিকের কর্মীরা যে যার বাইৎ গেছেগা ৷ গিরস্ত বাইৎ গেলেগা খেতের কামলারা যেমুন করে আরকী ৷ না আসল কতা অইলো গিয়া হিসাবটা ভেজাইল্লা লাগতাছে ৷আবার সারে কেরে? এইডা কুন হিসাব ? দ্যাবতার আবার আধা কী? না আসল কতা অইলো গিয়া মিনিসিপালির থিক্কা যহন গনাত বাইর অইলো তহন দেহা গেল কুনু কুন চুমুনির ধারে গণেশ ঠাকুররে একলা ফালাইয়া ভক্তরা নেশামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করনের লাইগ্গা হিয়ানতে সইরা গেছে ৷ কী করন যায়, বছরের পর বছর ইট্টু ঠান্ডা গরমের ব্যাপার চইল্লা আইছে ৷পট কইরা তো আর বাদ দেঅন যায়না ৷ মানসম্মানের একটা পেসটিজ আছেনা ৷ এর লাইগ্গা গনইন্নারা গিয়া তথ্য লেহনের লাইগ্গা কেউরে পাইছেনা ৷ ঠাউর বুইল্লা কতা ৷ বাদ দেয় ক্যামনে ৷ মিনিসিপালির প্রণববাবু সাব্যস্তের মানুষ ৷ নাটক পরিচলানা করেন ৷ গুণী মানুষ ৷ চিকন বুদ্ধিও আছে তাইনের ৷ বুদ্ধি একখান বাইর করলেন ৷ মানুষ নাই দেবতা আছে ৷ এমুন যে কয়ডা পাইবেন অদ্দেক হিসাব ধইরা লান ৷ বার বার কী আর আঅন যাইব'? সাপঅ মরল', লাডিঅ বাংলনা ৷ হেমনে যাইয়া এই হিসাডা খারাইছে ৷
আসল কতা অইলো গিয়া গণেইশ্শা পূজার বাজারটা কেমনে ধরছে দ্যাহেন ৷ আগরতলা শহরের চুমুনিডির কুনকুনুডার মইদ্দে শনিবার শনিবারে শনিপূজা অয় ৷ ইডারঅ বাচ্ছরিক পূজা আছে কুনুকুনু জাগাৎ ৷ আগরতলার শনিঠাকুর খুব জাগ্রত ৷ চুমুনির মইদ্দে একছিডেন অইলেঅই শনিপূজা শুরু অইআ যায় ৷ এই শহরে শনিতলা বুইল্লা একটা জাগাঅ আছে ৷ কিন্তু মহাদেবতলা নাই, দুগ্গাতলা নাই, লক্খীতলা নাই, কাত্তিকতলা নাই ৷ আর কত কমু ৷ শনির ইহানঅ খুব নাম ডাক ৷ তাইনেই ছেলিব্রিটি আগরতলার ওপেন ফিল্ডে ৷ গণপতি ঠাকুরের আগমনে এইবার পরের দিনের শনিপূজাডিও মাইর খাইছে ৷ শনিপূজার কয়দিন আগের থিক্কা লাইটিং মাইক মিল্লা রাস্তার মইদ্দে একটা অরন্ডি লাইগ্গা যাইত ৷ এইবার গণপতি বাপ্পা মোরিয়া শনিরে মুড়াইয়া লাইছে ৷ মাথা বদলাইয়া দেওননি ছুডুবেলা? মামা গো! বুজছিলা হাতির মাথাৎ কুনুতা ধরতোনা ৷ তুমি রাজত্ব করবা? আর অইতোনা ৷ পঁচিশ বছর বহুত করছ' ৷ আর জ্বালাইওনা ৷ ( ছরি, কেউ রাজনীতিৎ নিয়েননা) ৷ আসল কতা অইলো গিয়া শনিঠাউর গত শনিবার জমাইতেই পারলেননা ৷ মাইক, লাইটিং, থার্মোকলের বাটিৎ খিচুড়ি, ফাইড রাইস কুনুতানেই কুনু কাম অইলনা ৷ হগ্গলতে এইবার ডাইটিং না করইন্না দেবতাডার দিকে ফিরা দৌড় লাগাইছে ৷ কেমনে এই দেহডা লইআ সুগার টুগার ছাড়া বাঁইচ্চা থাহন যায় ইডাঅই জানত' চায় হক্কলে ৷ডাক্তারের চরণে ট্যাহা ঢালতে ঢালতে ফতুর হ্যাকজন ৷ শনিঠাউর অ আর কিতা করতাইন ৷ বয়সঅ অইছে ৷ কোপের দৃষ্টিও নাই ৷ হাই পাওয়ার চশমা লাগে ৷ কি আর করন যায় ৷ কালের কাল বাইস্সা কাল, ছাগলে চাডে বাঘের গাল ৷ আবছা দৃষ্টিতে ভাইগনা গণেশের মন্ডবের দিকে চাইয়াই রইছেন ৷ সামনে দিয়া ঢাক বাজাইয়া, ট্রাকঅ উডাইয়া গণেশরে লইয়া যাইতাছে ৷ মাইনষে গণেশে নামে ধ্বনি দিতাছে গো! মনে পডে হেই গানডা- ফাইট্টা যায়, বুকটা ফাইট্টা যায়!
এইত গেল শনি ঠাউরের দুর্দশার কথা ৷ আর আজগা দেহি বিশ্বকর্মারঅ মাথাৎ বারি পড়ছে ৷ তাইনে সক্কালবেলা মাডিৎ লাইম্মাঅই টের পাইয়া লাইছইন এবছরের ভাইল বালানা ৷ আসল কতা অইলো গিয়া কয়দিন আগে গণেশ ঠাউরের পূজার মাইদ্দে মাইনষে যেমনে লামছে আর চান্দা টান্দা দিয়া হাত খালি কইরা লাইছে খরচাপাতি করছে বিশ্বকর্মার চাপটা যেমন নেওন যাইতাছেনা ৷ মাইনষের হাতঅ ট্যাহা পইসা কিচ্চু নাই ৷ অন্যান্য বছর বিশ্বকর্মা পূজার দিন কুনুক্কানঅ যাওন যাইতোনা গাড়ি রিসকার অভাবে ৷ পূজার আগে মানে দুফরের পরে ছাড়া রাস্তাৎ বাইর অইতনা গাড়ি টারি ৷ এইবার এমন কিচ্চু সমস্যা নাই ৷ হগ্গলে
ট্যাহা কামানির ধান্দাৎ লাগছে সহাল থিক্কা ৷ কুনসময় পূজা দিল', কুনসময় কিতা অইল ৷ চার দুহানের কুনাৎ যাইয়া বিশ্বকর্মা পুরিতরকারির অর্ডার দিয়া নিরিবিলি খাইতাছ্ল ৷ দুই একটা কথার আওয়াজ কানঅ বারি দিল ৷ ছয়-সাতমাস দইরা রুজি নাই, রেগার কাম নাই, কন্টাক্টরি নাই , কর্মচারীরার পে- কমিশনডাও ঝুলতাছে ৷ মাইনষের হাতঅ ট্যাহা পইসা আছে আর কত, থাকবঅ কত ৷ আহ হায়রে কী ব্যারাছেরার মাইদ্দে আইলাম- বিশ্বকর্মা মনে মনে কয় ৷ মনে মনে আবার হাসেঅ ৷ কদিন পরে ত বড় বৌদিঅ বাপের বাড়িৎ আইব ৷ আইবার সময় দেইক্কা আইছে কোমারে আঁচল প্যাঁচাইয়া বড়দার লগে ঝগড়া করতাছে বড়বৌদি ৷ বাপের বারিৎ আইঅনের লাইগ্গা ৷ আর ইহানঅ যে ভাতিজা বাজারডার দহল লইয়া লাইছে তাইনে কইতারবনি ৷
দুহানদাররে টিফিনের ট্যাহাডা দিয়া বাইর অইয়া একটা বিড়ি ধরাইয়া সুখটান দিল বিশ্বকর্মা ৷ চুমুনির মাঝখানঅ বিড়ি জ্বালাইছে ৷ পুলিশে ধরবনি ব্যাডারে ৷ আরেনা বিশ্বকর্মা জানে, ইহানঅ আইন অয় ৷ মানন লাগেনা ৷ গাড়িৎ উডেন, অটুৎ উডেন ৷ য্যামনে মন্দের হ্যামনে ভাড়া লইতাছে ৷ যাত্রী লইতাছে ৷ রাজ্যরে নেশামুক্ত করতাছে ৷ আবার মদের বার খুইল্লা দিতাছে ৷ সাপের মুহঅ চুমা চলে আবার ব্যাঙের মুহেঅ ৷ আসল কতা অইলগিয়া বড় বৌদিরে একটা ফুন করন লাগে ৷ ভাতিজার কান্ডকীর্তিডা জানান দরকার ৷ কদিন আগে বৌদি একটা মুবাইল লইআ আইছিল ৷ একটা সিম লাগাইয়া দেওনের লাইগ্গা ৷ একটা নিজস্ব মুবাইলের খুব দরকার ৷ ভক্তরা ফুন করে লক্কু-সরুর মোবাইলে ৷ তারা বিরক্ত অয় ৷ তারার গেইম খেলায় ডিসটাপ অয় ৷ একজন ভক্ত গতমাসে দিল মুবাইলডা ৷ বিশ্বকর্মা তার সিমের টাল থিক্কা একটা স্পেশাল নম্বরের সিম লাগাইয়া দিল মুবাইলডাৎ ৷ নম্বরটা মনে থাকার মতো আবার নিরাপদও ৷ পাঁচটা পাঁচ আর তিনটা তিন দিয়া নম্বরটা ৷ বৌদিরে বুঝাইয়া কইল নম্বরের ব্যাখ্যা ৷ পাঁচটা পাঁচ মানে বড়দার পঞ্চানন আর তিনটা তিন অইলো আপনার ত্রিনয়ন ৷ সব মিলাইয়া দশ ডিজিটের নম্বর ৷ বৌদি খুব খুশি ৷ পহেটতে নিজের মুবাইলডা বাইর করল বিশ্বকর্মা ৷ নম্বরটা মনে আছে ৷ ফাইভ ফাইভ ফাইভ ফাইভ ফাইভ থ্রি থ্রি থ্রি...... হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো বৌদি ৷ আমি বিশু কইতাছি ৷ আরে! রিং অয় ৷ কাইট্টা ৷ আবার করে ৷ এবার কয় নট রিচেবল ৷ আবার ৷ নেটওয়ার্ক ষেত্র সে বাহার হ্যায় ৷ আবার ট্রাই করে ৷ হুরুজা ৷ সুইচ্ড অফ ৷ মোবাইল কুম্পানিডিও যে ... ৷ আরে স্বর্গে তো বিশ্বকর্মারই নেটওয়ার্ক চলে ৷ কারে দুষতাছে ৷ তাইলে কী তার কর্মচারীরা? আসল কতা অইলো গিয়া..........
Wednesday, July 11, 2018
বিলুপ্তপ্রায় লোকক্রীড়া 'লাঠিখেলা'
সংস্কৃত 'যষ্ঠি' শব্দ থেকে প্রাকৃতায়িত হয়ে বাংলায় লাঠি হয়েছে ৷ একসময় বিনোদন ও আত্মরক্ষার উপকরণ ছিল এই লাঠি ৷ যাঁরা লাঠিচালনায় পারদরশী তাঁদের বলা হয় লাঠিয়াল বা লেঠেল ৷ একসময় জমিদাররা আত্মরক্ষায়, জমিরক্ষায় কিংবা জমি দখল নিতে লাঠিয়াল নিয়োগ করতেন ৷ সেসময়ে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ও মেলায় বিনোদনের অঙ্গ হিসেবে লাঠিখেলার আয়োজন করা হত ৷ বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হত এই লাঠিখেলাকে কেন্দ্র করে ৷ অপরাধীকে শায়েস্তা করার জন্যে 'লাঠ্যৌষধম্' প্রয়োগ করা হত ৷ প্রবাদ আছে, 'লাডিরে ভূতেও ডরায় ৷ বাংলাসাহিত্যে লাঠিয়াল বা লাঠি খেলার অনেক প্রসঙ্গ আছে ৷ লাঠিয়াল চরিত্রের মধ্যে প্রমথ চৌধুরীর 'মন্ত্রশক্তি' গল্পের 'ঈশ্বরী পাটনী' বিখ্যাত হয়ে আছে ৷ তেমনি বিখ্যাত তার উক্তি, 'হুজুর, নেশায় শরীরের শক্তি যায় কিন্তু গুরুর কাছে শেখা বিদ্যে তো যায়না' ৷ বাংলার অধুনালুপ্ত এই খেলা বাংলার মার্শাল আর্টের বিশেষ উদাহরণ ৷রাজ্যের তরুণ গবেষক ও বিশিষ্ট কবি-সম্পাদক গোপাল দাস এই লোকক্রীড়াকে আবার তুলে এনেছেন পাদপ্রদীপের আলোয় ৷ তিনি তাঁর গবেষণাধর্মী লেখায় তুলে এনেছেন, লাঠি খেলা
গোপালচন্দ্র দাস
সিলেটের অঞ্চলের বিনোদনের এক অংশ ছিলো এই লাঠি খেলা।বাজারে ঢোল পিটিয়ে লাঠিখেলার স্থান সময় বলে দেওয়া হতো।বিশেষ এক ধরনের বাঁশ যা আকারে বেশী বড় হয় না,ভেতরে ফাঁপা বা ছিদ্র কম থাকে( যাকে সিলেটি ভাষায় নিষ্ফুল্লা বলে)। এ ছারা কেউ কেউ টেটুয়া কনকই অথবা কোন কারন বশতঃ বড় না হওয়া বরাক(ছিংলা বড়ুয়া) ও উক্ত খেলায় ব্যবহার করে থাকেন। গাড় বাসন্তি রঙ এর টেকসই ও মজবুত বাঁশ। অমাবশ্যায় বিশেষ করে শনিবার অথবা মঙ্গলবার হলে তো আর কথাই নেই। লাঠি খেলার বাঁশ অন্যের বাঁশঝাড় থেকে বেশীর ভাগই চুরি করে কাটা হয়।একটি বড় বাঁশ চাইলে এমনিতেই দিয়ে দিতে পারে কিন্তু লাঠি খেলার বাঁশ দেবে না বা বিক্রিও করবে না।কেউ লাঠিতে তৈল মর্দন করেন আবার কেউ খেলার পূর্বে রীটা(এক ধরনের গাছের গুটা যা ক্ষারযুক্ত)দিয়ে লাঠি ও নিজ হাত ধুয়ে নেন যাতে হাত থেকে লাঠি পিছলে না যায়।
খেলার আগে, ও চলাকালিন সময়ে ঢোলের বাজনা চলে।ঢোলের তালে তালে অনেকটা মার্শাল আর্টের বুলির মতো খেলোয়ার বুলি আউরান।দুদিকে দুই খেলোয়ার খেলার লাঠি নিয়ে যার যার সাধ্যমতো কসরৎ ও বিদ্যার বাহাদুরি প্রদর্শন করে অনেক হাত তালি ও হর্ষধ্বণি পান।
এক লাঠি দিয়ে অনেকেই খেলেন,কেউ কেউ কানজোখা (মাটি থেকে কান পর্যন্ত)লাঠি ব্যবহার করেন কিন্তু আসল লাঠি খেলাতে বাঁশ খাড়া করে যে ব্যক্তি লাঠি খেলবেন সেই ব্যক্তি মাটি থেকে বত্রিশ মুষ্টি উপরে বাঁশ কাটবেন এবং ঐ লাঠি শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তির জন্যে প্রযোজ্য অন্য কারো জন্যে নয়।খেলা শিখতে ওস্থাদ বা গুরু ধরতে হয়।
পুরো খেলাকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে,প্রতি ভাগে আট মুষ্টি। পুরো খেলা বত্রিশ মুষ্টি(৪×৮=৩২)।প্রথম ৮ কলা,উনি একই সাথে আটটি কলা কসরৎ প্রদর্শন করতে পারেন,এটা শিক্ষনীয় প্রাথমিক পর্যায়। এভাবে ১৬ মুষ্টি ২য়,২৪ মুষ্টি ৩য় ধাপ ও সর্বশেষ ৩২ মুষ্টি একজন পূর্ণ খেলোয়ার বা ওস্থাদ। উনি খেলা শিখাতে পারেন।উনি কঠোর সাধনা করেন ও সংযমী থাকেন।সাধারন হানাহানি মারামারিতে সেই কলা প্রয়োগ করেন না। শুধু প্রাণ রক্ষার্থে এই কলা ব্যবহার করতে পারেন।বত্রিশ মুষ্টির খেলোয়ারের অনেকেরই লম্বা চুল থাকে।নিজ চক্ষু প্রতিদ্বন্ধি খেলোয়ারকে দেখান না।পা ও চোখের দিকে তাকিয়ে অনেক সময় প্রতিদ্বন্ধি বুঝতে পারেন এখন শরীরের কোন অঙ্গে আঘাত আসতে পারে। খুব সাবধানে প্রতিটি অঙ্গ সঞ্চালন ও সতর্কতার সহিত প্রতিটি পা ফেলতে হয়।
একজন পূর্ণ খেলোয়ার খেলা শুরু হওয়ার পূর্বে সোনা রুপা তুলসী ও আতপ দুধ দিয়ে লাঠিকে শোধন করে নিজ কলা ,ওস্থাদ ,ও লাঠিকে যেমন সন্মান করেন তেমনি কিছু তুকতাক্ ,টোটকাও করে থাকেন।অমাবশ্যা শনিবার,অভাবে শুধু শনিবার অথবা শুধু অমাবশ্যায় মৃত ব্যক্তির দাহকাঠি(সিলেটি ভাষায় খুঁছিবারি)তে লেগে থাকা অঙ্গার খেলার লাঠির দুই মাথায় প্রবেশ করিয়ে পিতলের বাট লাগিয়ে বশিকরণ মন্ত্র তিনবার উচ্ছারণ করেন। আবার কেউ খেলা শুরুর প্রাক্ মুহূর্তে পূর্ববন্ধি করেন:- উত্তরে হিমালয় বন্ধি,হরগৌরী বন্ধি,পশ্চিমে জগন্নাথ বন্ধি,দক্ষিণে কালিদয় সাগর বন্ধি,পাতালে বাসুকির চরণ বন্ধি,পর্ব্বতে রাক্ষুসী বন্ধি,যে আমারে হিংসা করবো রাক্ষুসী তারে খাইবো। তিনবার লাঠিতে ফু দেওয়া হয়। লাঠি খেলা নিয়ে সিলেটি ভাষায় ক'লাইন দেওয়া হলো:-
মুঠির উপরে মুইট
যে ধরবা লাঠি
তান বত্তিশ মুইট।
সোনা রুপা তুলসী
লাঠিত ঘষাও আওয়া দুধ
বেটিন্তর কাপরের নীচেদি
যাইও নারে পুত।
মায় মুরব্বির আশিব্বাদ লও
উস্থাদ ধর সাইচ্ছা
চুক নায় বুদ্ধি দিয়া দেখ
শত্রু তোমার সামনে বাইচ্ছা।
শুধু শক্তি দিয়ে উত্তেজিত হয়ে এই খেলায় জয়লাভ করা যায় না। আত্ম সংযম, কলা কুশলী, বুদ্ধির সঠিক ব্যবহার করতে হয়।
লাঠি খেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামে গঞ্জে ছোটখাটো মেলা বসে।ছোট বড় সবাই এই খেলা ও মেলাকে উপভোগ করেন।
এই খেলায় শর্তশাপেক্ষে না হয়ে যদি খোলা মেলা রীতি অনুযায়ী হয় ,তাহলে অনেকেরই হাত মাথা ফেটে যায়,এবং খেলা শেষে প্রতিদ্বন্ধিকে সহনুভূতি সহ মলম পট্টি করাতে দেখা যায়। বাস্তবে এটা একটা বন্ধুত্বপূর্ণ খেলা,যা আজকাল লুপ্তপ্রায়। ( লাঠিখেলা - গোপালচন্দ্র দাস) ৷
11-07-2018
পারমিতার জন্যে
সম্পাদক:- অমিশা দাস
Monday, May 21, 2018
ব্র হ্ম পু ত্র
ব্র হ্ম পু ত্র
এই যুবক ট্রেনে আমাদের সহযাত্রী ৷ হিন্দিভাষী ৷নাম বললেন জে কে আনন্দ ৷ জীতেন্দ্রকুমার আনন্দ নিরামিষাসী ৷ বিহারে বাড়ি ৷ নানা জায়গায় ধর্মীয় সঙ্গীত কীর্তনাদি পরিবেশন করে জীবিকা নির্বাহ করেন ৷ উনি তাঁর দল নিয়ে ডিমাপুর থেকে ফিরছেন ৷ আমরা উঠেছি একই কামরায় লামডিং থেকে ৷ গাড়িতে সারাদিন কথাবার্তার মধ্যে একটা অন্তরঙ্গতা তৈরি হয়েছে ৷ পথের খাবার আমার সহ্য হয়না ৷ তাই খাওয়া দাওয়ায় সাবধানে আছি ৷ উনারাও কিছু খাচ্ছেননা নিরামিষাশী হওয়ায় ৷ শেষ বিকেলে আমি একবাটি টক দই ও রুটি নিলাম ৷ এই আইডিয়াটা যুবকের ভালো লাগল ৷ তিনি ও তাঁর বন্ধুরা একবাটি করে খাট্টা দই ও রুটি নিয়ে খেলেন ৷ আমি আমার বোতল থেকে জল খেয়ে বোতলটা ফেলে দিলাম ৷ ওঁরাও জলটল খেয়ে আবার গল্প জুড়লেন ৷ সন্ধ্যার প্রাক মুহূর্তে এক মহিলা হন্তদন্ত হয়ে আমাদের কামরায় এসে বলছেন, ভাইয়া পিনেকা পানি হ্যায়? পিনেকা পানি? আমি তো চেয়ে রয়েছি নিম্নবিত্তের এই মুসলিম মহিলার দিকে ৷ কী করব আমি ৷ আমার কাছে তো আর জল নেই ওকে দেবার মতো ৷ আমার উল্টোদিকে বসা সেই যুবক মুহূর্তে তার জলের বোতল থেকে বেশ খানিকটা জল তাকে দিয়ে দিল ৷ মহিলা চলে যাওয়ার পর আমি যুবককে বললাম, ভাইয়া তুমনে বহুত বড়া কাম কিয়া ৷ হামারা শাস্ত্রবিধি মে কহতা হ্যায় জলদান মহাপুণ্য ৷ তুম নে ওহি কিয়া আজ ৷ সন্ধ্যা হয়ে গেছে ৷ আলিপুর দুয়ার পেরিয়ে যাচ্ছে ট্রেন ৷ বাইরে মাঝে মাঝে ধাবমান ট্রেনের সিটি, জনপদ থেকে ভেসে আসা সন্ধ্যার উলুধ্বনি আর আজানের আহ্বান মিলে এক অপূর্ব সিম্ফনি আমার মনের আলিবাঁধা দুয়ারটা পুরো যেন খুলে দিল ৷ এই ধর্মপ্রাণ হিন্দু যুবক এই কিংকর্তব্যবিমূঢ় মহিলাকে যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তা ভারতের সম্প্রীতির চিত্রটাকেই যেন এই সন্ধ্যায় দেখতে পেলাম ৷ আমার এবারের পরিব্রাজনে এটা পরম প্রাপ্তি ৷ ব্রহ্মপুত্র মেলের আরোহী এই যুবকই আজকের ব্রহ্মপুত্র ৷
21 May, 2018
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল সাব্রুমের দ্বিতল কংগ্রেস ভবন ৷ খাস জমি থেকে দলীয় অফিস তুলে দেওয়ার সরকারি নির্দেশ অনুসারে ৷ মানলাম খাস জমি উদ্ধার হল ৷ এই জমিতে হয়ত জনকল্যাণমুখী কোন পরিকল্পনা রূপায়িত হবে ৷ কিন্তু কথাটা হল এই যে দলীয় অফিসগুলো ভাঙা হচ্ছে একের পর এক ৷ পরোক্ষভাবে এগুলো কিন্তু জনগণের টাকায় তৈরি ৷ সে সরকারী দল হোক কিংবা বিরোধী দলের ৷ আর জনগণই বিভিন্ন দলের সদস্য ৷ রাজনৈতিক কাজকর্মে অংশগ্রহণের জন্যে জনগণকে অধিকার সংবিধানই দিয়েছে ৷ আর আমার ধ্যানের ভারতের জনগণের বৃহত্তর অংশই দরিদ্র ৷ যারা নিজের বাস্তুভিটের উপর যে চালাঘরটি তোলেন তার তার শতচ্ছিন্ন অবস্থা থাকলেও দলীয় অফিসটাকে একটু সুন্দর করে গড়ে তুলতে চায় ৷ সে যে দলই হোক ৷ সরকারী খাসজমিতে হওয়ার ফলে এই দরিদ্র মানুষগুলোর জমি কেনার টাকাটা বেঁচে যায় ৷ জনকল্যাণকামী সরকার সরকারী নিয়ম মেনে সরকারী খাস জমিতে গড়ে ওঠা দলীয় অফিস করার জন্যে, রাজনৈতিক কাজকর্ম চালানোর জন্যে বন্দোবস্ত দিয়ে দিতে পারে ৷ রাজনৈতিক দলগুলো তো দেশের শত্রু নয় ৷ তাহলে দেশের আপৎকালীন সময়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয় ? অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি আমার দেশ যখনই সংকটপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে , বহিঃশত্রুর আক্রমণের মুখে পড়েছে তখনি আমাদের সংসদে দলমত নির্বিশেষে সকল সদস্য একমত হয়ে যে সময় যে সরকার থেকেছেন তার সময়োপযোগী পদক্ষেপের পাশে দাঁড়িয়েছেন ৷ দেশের সংহতি, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে এই ঐক্যই তো ভারতের চিরন্তন আদর্শ ৷ আশৈশব তো এটাই দেখে এসেছি ৷ তেমনি প্রয়োজনে এই পার্টি অফিসগুলো আপৎকালীন সাময়িক আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায় ৷ যেমন দাঁড়ায় বন্যা কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের সময় ৷ সাব্রুমের যে দলীয় অফিসটি ভেঙে দেওয়া হল তার একতলায় কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছোটো ব্যবসায়ী ব্যবসা করে প্রতিপালন করতেন নামমাত্র ভাড়ায় ৷ রাজনৈতিক রং দেখে তো এদের ভাড়া দেওয়া হয়নি ৷ তার চেয়ে বড়ো কথা, সাবরুমের কংগ্রেস অফিসই তো ছিল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম আশ্রয়স্থল ৷ এখান থেকেই পরিচালিত হয়েছিল এক নং সেক্টরের বহু কাজকর্ম ৷ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম দলটি সেদিন সাব্রুমের কংগ্রেস অফিসে উঠেছিলেন ৷ তারপর তখনকার ব্লক কংগ্রেস সভাপতি জ্ঞানেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী, কংগ্রেস নেতৃত্ব কালিপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, যদুনন্দন সিংহ, আশুতোষ নন্দী প্রমুখ তাঁদের আগরতলায় বৃহত্তর যোগাযোগের জন্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন ৷ জিয়াউর রহমান, মাহফজুল বারি ( আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী) , রফিকুল ইসলাম বীরোত্তম, তরুণ অফিসার কাদের, শেকান্তর মেম্বারসহ বহু মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচিহ্ন বহন করে সাব্রুমস্থিত সেসময়ের কংগ্রেস অফিস ৷ অবশ্য সেসময়ে কংগ্রেস অফিসটি ছিল একটি চালাঘর ৷ আরো আগে রাজন্য আমলে এর পাশের দক্ষিণের জায়গায় ছিল রাজার বনকর অফিস ৷ এখান থেকে ফেনি নদী দিয়ে বয়ে নিয়ে যাওয়া বাঁশ ছন প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদের ভাইট্টাল কাটতে হত ৷ ত্রিপুরা রাজ্যের ভারতভূক্তির কিছু আগে বা পরে অফিসটি উঠে যায় ৷এমন বহু ইতিহাস জড়িয়ে এই স্থানকে কেন্দ্র করে ৷ প্রতিবছর সাব্রুমে যে বৈশাখী মেলা হয় ৷ সে সময়ে বাইরে থেকে অনেক ব্যবসায়ী আসেন ৷ তাদেরও অনেকে রাত কাটাতেন এই দালানের ছাদে ৷ কতো বলব ৷ আজ সাব্রুমের যিনি জনপ্রতিনিধি, অল্প কয়দিনের মধ্যে যিনি শান্তি সম্প্রীতি রক্ষায় এবং উন্নয়নমূলক কাজকর্মের জন্যে নিবিড় আত্মনিয়োগ করে দলমত নির্বিশেষে ইতোমধ্যে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলেছেন তাঁরও রাজনৈতিক জীবনের সুরুয়াত হয়েছে এই কংগ্রেস অফিস থেকে ৷ এই দালানবাড়িটি নির্মানে সেদিন তাঁরই মুখ্য ভূমিকা ছিল ৷ তারপর দলীয় অন্তর্কলহে তাঁকে বের হয়ে যেতে হয় এই দালান ৷ সেদিনের নেতৃত্বকে কিন্তু তার জন্যে খেসারতও দিতে হয়েছিল রাজনৈতিকভাবে ৷ জনগণ বর্তমান বিধায়ক শংকর রায়ের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন নীরবে ৷ সাব্রুমের বহু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মূক সাক্ষী আজ ধুলোয় মিশে গেল ৷ এ দালানটিকে রেখে কিছু গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করা হলে সরকারী নতুন নির্মান ব্যয়েরও সাশ্রয় হত ৷ ইতিহাসের নির্বাক সাক্ষীও বেঁচে থাকত জনগণের বুকে ঐতিহ্যদালান হিসেবে ৷