Monday, May 21, 2018

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ

ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল সাব্রুমের দ্বিতল কংগ্রেস ভবন ৷ খাস জমি থেকে দলীয় অফিস তুলে দেওয়ার সরকারি নির্দেশ অনুসারে ৷ মানলাম খাস জমি উদ্ধার হল ৷ এই জমিতে হয়ত জনকল্যাণমুখী কোন পরিকল্পনা রূপায়িত হবে ৷ কিন্তু কথাটা হল এই যে দলীয় অফিসগুলো ভাঙা হচ্ছে একের পর এক ৷ পরোক্ষভাবে এগুলো কিন্তু জনগণের টাকায় তৈরি ৷ সে সরকারী দল হোক কিংবা বিরোধী দলের ৷ আর জনগণই বিভিন্ন দলের সদস্য ৷ রাজনৈতিক কাজকর্মে অংশগ্রহণের জন্যে জনগণকে অধিকার সংবিধানই দিয়েছে ৷ আর আমার ধ্যানের ভারতের জনগণের বৃহত্তর অংশই দরিদ্র ৷ যারা নিজের বাস্তুভিটের উপর যে চালাঘরটি তোলেন তার তার শতচ্ছিন্ন অবস্থা থাকলেও দলীয় অফিসটাকে একটু সুন্দর করে গড়ে তুলতে চায় ৷ সে যে দলই হোক ৷ সরকারী খাসজমিতে হওয়ার ফলে এই দরিদ্র মানুষগুলোর জমি কেনার টাকাটা বেঁচে যায় ৷ জনকল্যাণকামী সরকার সরকারী নিয়ম মেনে সরকারী খাস জমিতে গড়ে ওঠা দলীয় অফিস করার জন্যে, রাজনৈতিক কাজকর্ম চালানোর জন্যে  বন্দোবস্ত দিয়ে দিতে পারে ৷ রাজনৈতিক দলগুলো তো দেশের শত্রু নয় ৷ তাহলে দেশের আপৎকালীন সময়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয় ? অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি আমার দেশ যখনই সংকটপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে , বহিঃশত্রুর আক্রমণের মুখে পড়েছে তখনি আমাদের সংসদে দলমত নির্বিশেষে সকল সদস্য একমত হয়ে যে সময় যে সরকার থেকেছেন তার সময়োপযোগী পদক্ষেপের পাশে দাঁড়িয়েছেন ৷ দেশের সংহতি, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে এই ঐক্যই তো ভারতের চিরন্তন আদর্শ ৷ আশৈশব তো এটাই দেখে এসেছি ৷ তেমনি প্রয়োজনে এই পার্টি অফিসগুলো আপৎকালীন সাময়িক আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায় ৷ যেমন দাঁড়ায় বন্যা কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের সময় ৷ সাব্রুমের যে দলীয় অফিসটি ভেঙে দেওয়া হল তার একতলায় কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছোটো ব্যবসায়ী ব্যবসা করে প্রতিপালন করতেন নামমাত্র ভাড়ায় ৷ রাজনৈতিক রং দেখে তো এদের ভাড়া দেওয়া হয়নি ৷ তার চেয়ে বড়ো কথা, সাবরুমের কংগ্রেস অফিসই তো ছিল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম আশ্রয়স্থল ৷ এখান থেকেই পরিচালিত হয়েছিল এক নং সেক্টরের বহু কাজকর্ম ৷ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম দলটি সেদিন সাব্রুমের কংগ্রেস অফিসে উঠেছিলেন ৷ তারপর তখনকার ব্লক কংগ্রেস সভাপতি জ্ঞানেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী, কংগ্রেস নেতৃত্ব কালিপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, যদুনন্দন সিংহ, আশুতোষ নন্দী প্রমুখ তাঁদের আগরতলায় বৃহত্তর যোগাযোগের জন্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন ৷ জিয়াউর রহমান, মাহফজুল বারি ( আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী) , রফিকুল ইসলাম বীরোত্তম, তরুণ অফিসার কাদের,  শেকান্তর মেম্বারসহ বহু মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচিহ্ন বহন করে সাব্রুমস্থিত সেসময়ের কংগ্রেস অফিস ৷ অবশ্য সেসময়ে কংগ্রেস অফিসটি ছিল একটি চালাঘর ৷ আরো আগে রাজন্য আমলে এর পাশের দক্ষিণের জায়গায় ছিল রাজার বনকর অফিস ৷ এখান থেকে ফেনি নদী দিয়ে বয়ে নিয়ে যাওয়া বাঁশ ছন প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদের ভাইট্টাল কাটতে হত ৷ ত্রিপুরা রাজ্যের ভারতভূক্তির কিছু আগে বা পরে অফিসটি উঠে যায় ৷এমন বহু ইতিহাস জড়িয়ে এই স্থানকে কেন্দ্র করে ৷ প্রতিবছর সাব্রুমে যে বৈশাখী মেলা হয় ৷ সে সময়ে বাইরে থেকে অনেক ব্যবসায়ী আসেন ৷ তাদেরও অনেকে রাত কাটাতেন এই দালানের ছাদে ৷ কতো বলব ৷ আজ সাব্রুমের যিনি জনপ্রতিনিধি,  অল্প কয়দিনের মধ্যে যিনি শান্তি সম্প্রীতি রক্ষায় এবং উন্নয়নমূলক কাজকর্মের জন্যে নিবিড় আত্মনিয়োগ করে দলমত নির্বিশেষে ইতোমধ্যে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলেছেন তাঁরও রাজনৈতিক জীবনের সুরুয়াত হয়েছে এই কংগ্রেস অফিস থেকে ৷ এই দালানবাড়িটি নির্মানে সেদিন তাঁরই মুখ্য ভূমিকা ছিল ৷ তারপর দলীয় অন্তর্কলহে তাঁকে বের হয়ে যেতে হয় এই দালান ৷ সেদিনের নেতৃত্বকে কিন্তু তার জন্যে খেসারতও দিতে হয়েছিল রাজনৈতিকভাবে ৷ জনগণ বর্তমান বিধায়ক শংকর রায়ের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন নীরবে ৷ সাব্রুমের বহু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মূক সাক্ষী আজ ধুলোয় মিশে গেল ৷ এ দালানটিকে রেখে কিছু গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করা হলে সরকারী নতুন নির্মান ব্যয়েরও সাশ্রয় হত ৷ ইতিহাসের নির্বাক সাক্ষীও বেঁচে থাকত জনগণের বুকে ঐতিহ্যদালান হিসেবে ৷

No comments:

Post a Comment