ব্র হ্ম পু ত্র
এই যুবক ট্রেনে আমাদের সহযাত্রী ৷ হিন্দিভাষী ৷নাম বললেন জে কে আনন্দ ৷ জীতেন্দ্রকুমার আনন্দ নিরামিষাসী ৷ বিহারে বাড়ি ৷ নানা জায়গায় ধর্মীয় সঙ্গীত কীর্তনাদি পরিবেশন করে জীবিকা নির্বাহ করেন ৷ উনি তাঁর দল নিয়ে ডিমাপুর থেকে ফিরছেন ৷ আমরা উঠেছি একই কামরায় লামডিং থেকে ৷ গাড়িতে সারাদিন কথাবার্তার মধ্যে একটা অন্তরঙ্গতা তৈরি হয়েছে ৷ পথের খাবার আমার সহ্য হয়না ৷ তাই খাওয়া দাওয়ায় সাবধানে আছি ৷ উনারাও কিছু খাচ্ছেননা নিরামিষাশী হওয়ায় ৷ শেষ বিকেলে আমি একবাটি টক দই ও রুটি নিলাম ৷ এই আইডিয়াটা যুবকের ভালো লাগল ৷ তিনি ও তাঁর বন্ধুরা একবাটি করে খাট্টা দই ও রুটি নিয়ে খেলেন ৷ আমি আমার বোতল থেকে জল খেয়ে বোতলটা ফেলে দিলাম ৷ ওঁরাও জলটল খেয়ে আবার গল্প জুড়লেন ৷ সন্ধ্যার প্রাক মুহূর্তে এক মহিলা হন্তদন্ত হয়ে আমাদের কামরায় এসে বলছেন, ভাইয়া পিনেকা পানি হ্যায়? পিনেকা পানি? আমি তো চেয়ে রয়েছি নিম্নবিত্তের এই মুসলিম মহিলার দিকে ৷ কী করব আমি ৷ আমার কাছে তো আর জল নেই ওকে দেবার মতো ৷ আমার উল্টোদিকে বসা সেই যুবক মুহূর্তে তার জলের বোতল থেকে বেশ খানিকটা জল তাকে দিয়ে দিল ৷ মহিলা চলে যাওয়ার পর আমি যুবককে বললাম, ভাইয়া তুমনে বহুত বড়া কাম কিয়া ৷ হামারা শাস্ত্রবিধি মে কহতা হ্যায় জলদান মহাপুণ্য ৷ তুম নে ওহি কিয়া আজ ৷ সন্ধ্যা হয়ে গেছে ৷ আলিপুর দুয়ার পেরিয়ে যাচ্ছে ট্রেন ৷ বাইরে মাঝে মাঝে ধাবমান ট্রেনের সিটি, জনপদ থেকে ভেসে আসা সন্ধ্যার উলুধ্বনি আর আজানের আহ্বান মিলে এক অপূর্ব সিম্ফনি আমার মনের আলিবাঁধা দুয়ারটা পুরো যেন খুলে দিল ৷ এই ধর্মপ্রাণ হিন্দু যুবক এই কিংকর্তব্যবিমূঢ় মহিলাকে যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তা ভারতের সম্প্রীতির চিত্রটাকেই যেন এই সন্ধ্যায় দেখতে পেলাম ৷ আমার এবারের পরিব্রাজনে এটা পরম প্রাপ্তি ৷ ব্রহ্মপুত্র মেলের আরোহী এই যুবকই আজকের ব্রহ্মপুত্র ৷
21 May, 2018
No comments:
Post a Comment