Showing posts with label টেক্সট. Show all posts
Showing posts with label টেক্সট. Show all posts

Wednesday, May 8, 2019

রাঙিয়ে দিয়ে যাও গো

ত্রিপুরার সৃজনক্ষেত্রে আজ অস্থিরতা ৷ অবিশ্বাসের অশনিনির্ঘোষ ৷এই বিষবৃক্ষের বীজ অনেক আগেই পোঁতা হয়েছিল ৷ আজ সে গাছে ফল ধরেছে ৷ তার বিষক্রিয়ায় আজ আমরা সবাই লক্ষীন্দর ৷ ত্রিপুরা রাজ্যে আমরা যারা সুন্দরের আরাধনাকে জীবনের আর দশটা নিজস্ব কর্মের সঙ্গে জুড়ে নিয়েছি তারা কেউই ব্যক্তিগত লাভালাভের মোহে সেটা করছিনা ৷ কর্মক্ষেত্রে পরিচিতির পদমর্যাদার স্তরবিন্যাস থাকলেও সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনে সে ব্যবধান থাকেনা ৷ সেখানে সবাই একে অন্যের সতীর্থের মতো একাত্মতা অনুভব করি ৷ আমরা জানি আমাদের এই প্রান্তিক ভুবনের সৃজন বৃহত্তর বঙ্গসংস্কৃতির অঙ্গনে স্থায়ী দাগ রাখার মতো সৃষ্টি এখনও করে উঠতে পারিনি ৷ কিন্তু আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস রয়েছে স্থান নেবার জন্যে ৷ সেকারণেই আমরা একে অন্যের সৃষ্টিকে তুলে ধরার প্রয়াসী হই ৷ এভাবেই ত্রিপুরার প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকেও আজ উঠে এসেছেন সৃজনকর্মীরা ৷ সমৃদ্ধ হয়েছে আমাদের দীন আঙিনা ৷ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো উদ্যোগ নিলে শরিক হবার বা পাশে দাঁড়াবার সুযোগ নিই ৷ কিন্তু আমরা এও লক্ষ্য করেছি, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো উদ্যোগ নিলে অন্য আর একদল সেটাকে পাশ কেটে যান ৷ অনুষ্ঠানের ধারে কাছে থাকেননা কিন্তু বাইরে থেকে শলা নাড়েন ৷ উপযাচক হয়ে আগত অতিথিদের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে ওঠেন ৷ উদ্যোক্তাদের নির্ধারিত পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটান ৷ বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথি যেমন এখানে নৈশভোজের আসরে লাঞ্ছিত হয়েছেন তেমনি আমাদের রাজ্যের প্রিয় কবিদের বিরুদ্ধে ওদেশের কেউ সোস্যাল মিডিয়ায় বিশ্রী স্ট্যাটাস দেয় তখন এরাজ্যেরই কোনো সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুহূর্তে সেই স্ট্যাটাসকে ছড়িয়ে দিয়ে সেই নোংরামিকে উসকানি দেন ৷ আর নিজেদের মধ্যে ফেসবুকে ল্যাং মারামারি, কাউকে ছাগদুগ্ধ সেবনের পরামর্শ, কারো ব্যক্তিগত বিষয় উন্মোচন এসবতো আকছারই ঘটেছে ৷ যাঁর অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো অতিথি ব্যক্তিত্ব ফিরে গিয়ে বিষোদ্গার করেন, তাঁর পাশে কেউ প্রতিবাদ করার পর দেখা যায় কোনো এক উজ্জ্বল ভোরে দেখা যায় সাপে নেউলে একসাথে সেলফিশোভন হাসি বিতরণ করেন ৷ এও এক আজব আচার ৷ ফারাকটা হলো একসময়ে অঘটনগুলোর কর্তারা স্বনামেই কাজগুলো করেছেন ৷ আর আর আজকে মুখটাকে 'চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা' করে পরিচিতিকে অর্ধনারীশ্বর করে বেদনাদায়ক ঘটনাগুলো করছেন ৷ এখানে আমি কারু সাহসের বা ভীরুতার তুলনা করছিনা ৷ পুরীষ উভয়েই ঘাঁটছেন ৷ কেউ কেউ কানকথায়ও প্রিয়জনকে ভুল বুঝছেন ৷ বেদনাহত হচ্ছি প্রিয়জনের লাঞ্ছনায়, মানসিক যন্ত্রণায় ৷
অবসান ঘটানো যায়না কী এই কন্টকাকীর্ণ পরিবেশের ৷ এই অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্বের ৷ আসুন না, তরুণ কিংবা বরিষ্ঠজনেরা ৷ বসুন না সামনাসামনি ৷ রাগ অভিমান ঝেড়ে ফেলে এই কিরাতভূমির সৃজনকে সম্মিলিতভাবে তুলে ধরি বৃহতের আঙিনায় ৷ জীবনের যে সিঁড়িতে এসে পৌঁছেছি ৷ যে কোনদিনই পুষ্পস্তবক আমার জন্যে খুঁজে রাখতে হতে পারে ৷ আসুন না এই ভূমি আর তার প্রকৃতি ও মানুষকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিই ৷ সেই বিরাটপুরুষের জন্মদিনে এই বোধটাই ছড়িয়ে দিই সকল প্রাণে ৷

Sunday, August 12, 2018

ও মোর মাহুত বন্ধু রে......

ত্রিপুরা রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চল একসময় হাতির জন্য বিখ্যাত ছিল ৷ পার্শ্ববর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামেও ছিল হাতির প্রাচুর্য ৷ এই অঞ্চলে ছিল 'হাতির দোয়াল' অর্থাৎ হাতির বাসস্থল ৷ ত্রিপুরা রাজ্যে এমন বেশ কয়েকটি হাতির দোয়াল ছিল ৷ আগরতলা শহরের বড়দোয়ালি একসময় ছিল হাতির বড়সড়ো বিচরণক্ষেত্র ৷ ( বড় + দোয়াল + ই) হাতি ধরার জন্যে  বিশাল এলাকা নিয়ে তৈরি করা হত ফাঁদ ৷ হাতির প্রিয় খাদ্য কলাগাছের বাগানে ঘেরা থাকত এই ফাঁদ ৷ বাগানের মাঝে থাকত গভীর পরিখা ৷ যা নরম গাছ লতাপাতা দিয়ে ঢাকা থাকত ৷ কলাগাছের লোভে এসে বুনো হাতির দল এই গভীর পরিখায় পড়ে যেত ৷ তারপর পোষা হাতি দিয়ে এদের ধরা হত ৷ এই ফাঁদকে বলা হত 'খেদা' ৷ পরিখা বা গর্তের প্রতিশব্দ 'খাদ' ৷ এই 'খাদ থেকেই আঞ্চলিক উচ্চারণ 'খাদা' ৷ আরও বিকৃত হয়ে 'খেদা' শব্দটির সৃষ্টি ৷ এখানে ছিল প্রচুর 'খেদা' ৷ প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকায় 'হাতি খেদার গান' নামে পালাগানে এই অঞ্চলের বর্ণনা আছে ৷ হাতি নিয়ে কিংবদন্তী, লোককাহিনিও রয়েছে ৷  ককবরক লোককথায় নিষেধ না মেনে যাদুপুকুরে  স্নান করায় শরীর ফুলে গিয়ে 'ভাইবোন হাতি হয়ে যাবার গল্প' রয়েছে ৷ লংতরাই পাহাড়ে খোঁড়া হাতি বিচরণের কিংবদন্তী রয়েছে ৷ ত্রিপুরা-চট্টগ্রামের পাহাড়ে যে শ্বেত হস্তী ছিল তারও প্রমান পাওয়া যায় প্রাচীন কাব্যগ্রন্থে ৷ রাজমালার ধন্যমাণিক্য খন্ডে আছে— 'ডাঙ্গর ফা রাজার কালে থানাংচিতে থানা ৷/ থানাংচি না মিলিলেক রাজাতে আপনা ৷৷/ থানাংচিতে এক হস্তি ধবল আছিল ৷/ হেড়ম্ব রাজায় তাকে চাহিয়া পাঠাইল ৷' সেই শ্বেত হস্তি তো আজ লুপ্ত হয়ে গেছেই ৷ হাতির দাবী নিয়ে মোগলদের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধও হয়েছিল ৷ গোবিন্দমাণিক্যের সময় সমতল ত্রিপুরা অর্থাৎ চাকলা রোশনাবাদ করদ রাজ্যে পরিণত হয় ৷ তখন থেকে মোগল বাদশাহকে পাঁচটি করে হাতি নজর দিতে হত ৷যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এই হাতিও অচিরেই নিঃশেষ হয়ে যাবে ৷
(ছবি: - ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া)

Sunday, June 17, 2018

ঋ ণ স্বী কা র

আজ আমার এক বিরল অভিজ্ঞতা হল ৷ তুলে ধরার আগে প্রিয় পাঠকবর্গের কাছে বিনীত আবেদন রাখছি আজ অন্তত পাঠের পর লাইক বাটন চেপে এড়িয়ে যাবেন না ৷ ছোট্ট একটা মন্তব্য রাখার প্রয়াসও নেবেন ৷ আপনাদের সুচিন্তিত মন্তব্য থেকে রসদ নিয়ে আমি পুষ্ট হতে চাইছি আজ ৷ মনের গহনের একটা দ্বন্দ্বের নিবৃত্তিও চাইছি ৷
ভীষণ নিস্তরঙ্গ শান্ত আমার শহরটা ৷ মাঝে মাঝে সীমান্ত নদীটাই অশান্ত হয় ৷ উত্তাল ঢেউ তুলে দুকুল ভাসায় ৷ এই যেমন কদিন আগে বেপরোয়া প্লাবনে কাঁদিয়েছে আমাদের গ্রাম জনপদ ৷ আর মাঝে মাঝে দু একটা আকস্মিক দুর্ঘটনা, প্রিয়জনের হঠাৎ অচিনপুরে চলে যাওয়ায় আমরা ব্যথিত হই ৷ এছাড়া প্রতিদিন ছোটোখাটো সুখদুঃখের স্মৃতি নিয়েই আমাদের নিত্যযাপনচিত্র ৷ মহকুমা শহর থেকে প্রতিদিন যাওয়া আসা করা বাসগুলোই রাজধানীর ও রাজ্যের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগের অবলম্বন ৷ প্রয়োজনে একে অন্যের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে যাতায়াত করি ৷ এরই ফাঁকে কারো প্রয়োজনীয় ঔষধটা এনে দেওয়া, কারো পড়ুয়া ছেলেমেয়ের কাছে টাকাটা চাউলটা পৌঁছে দেওয়া, মাতাবাড়ি ত্রিপুরাসুন্দরী মায়ের ভোগের পেঁড়া এনে দেওয়া এসব ছোটোখাটো ফুটফরমাশ আমরা একে অন্যের জন্যে হাসিমুখেই কেউ না কেউ কখনো সখনো করে থাকি ৷ এসবের জন্যে কেউ কারো কাছে ঋণী থাকেন বা দুর্বলতা অনুভব করেন না ৷ তেমন করে কেউ মনেও রাখেন না ৷ জীবন তার মতো করে গড়িয়ে যায় ৷ যে বা যিনি উপকার করলেন তিনিও কী আর মনে রাখেন এসব !  আসলে এই মফস্বল শহরে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই একে অন্যের সঙ্গে কম বেশি পরিচিত ৷ খবরাখবর রাখি ৷ সুসম্পর্ক রাখি ৷ রাজনীতি এই শহরে এখনও তিক্ততার পর্যায়ে পৌঁছায়নি ৷ যার যার কর্মসূচীর শেষে একসঙ্গে বসে চা পান করেন ৷ এখনও দুদিন দেখা না হলে আন্তরিক উদ্বিগ্নতার জবাব দিতে দিতে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে বিলম্ব হয় ৷ নগর বা মহানগর হয়ে ওঠেনি এখনও আমার শহর ৷ শতাব্দীপ্রাচীন শহর এখনও নিষ্কলঙ্ক বলেই জানি ৷
আমাদের এই শহরের চিন্তাশীল, ভাবুক,  মননশীল,তরুণ উদ্যোগী,সংবাদকর্মী, অবসরজীবী, নিষ্কর্মা এবং বুদ্ধিব্রতীদের মরূদ্যান হল এবিসিডি ৷ অর্থাৎ অশোক বসাকের চায়ের দোকান ৷ মালিক অশোকদা ব্যবসার তুলনায় এই মানুষগুলোর আড্ডা, হৈ চৈ, স্বভাব,ব্যবহার, আবদার নীরবে সহ্য করেন ৷ তাঁর বিখ্যাত রসগোল্লার মতো নিজেও সুরসিক ৷ দিনের বিভিন্ন সময়ে আড্ডার সদস্য পাল্টায় ৷ যেসময়ে অশোকদা থাকেননা তখন আড্ডাস্থল তাঁর ছেলে গৌরসুন্দরের বন্ধুদের দখলে চলে যায় ৷  এখানে আড্ডা দিতে আসা প্রত্যেকের সম্বন্ধে একটা করে ক্যারেকটারিস্টিক নোম্যানক্লেচার ব্যবহার করেন অশোকদা ৷ সবাই মজাও পায় ৷ আর জানেন কার কীরকম খাবার পছন্দ ৷ কে জিলিপি ভালোবাসেন, কে রসমালাই, কে গরম রসগোল্লা, কে কোন মিষ্টি নিরিবিলি বাড়ি নিয়ে যেতে পছন্দ করেন এমনকি কার বাড়িতে কারা কী পছন্দ করে সব তাঁর জানা ৷ আর জানেন কে চায়ে চিনি খাননা, কে কম খান, কে লিকার চা খান, কে দুধচিনিচা খান ৷ সব তাঁর নখদর্পনে ৷ অর্ডার দিলেই হল ৷ চেহারাটা দেখে নিয়ে সেভাবেই প্লেস করেন ৷ আমরাও যখন আড্ডায় মশগুল হই ৷ কেউ না কেউ চায়ের অর্ডার দিই ৷ সে সময়ে কেউ কোন কারণে খেতে আগ্রহী না হলে জানিয়ে দেয় ৷ কেউনা কেউ পেমেন্ট করি ৷ এ নিয়ে কোনো সমস্যা হয়না ৷ নির্ভেজাল আড্ডায় যেমন হয় আর কী ৷ দাম বাকি রাখতে হলে অশোকদা নিজেই জেনেবুঝে খাতায় লিখে রাখেন ৷
আজও বিকেলবেলা বাড়িতে বাজারটা পৌঁছে দিয়ে এখানে আড্ডা দিতে বসেছি ৷ আমার অগ্রজপ্রতিম দীপকদা (স্বপনদা)  সঙ্গে তাঁর এক বন্ধু আগে থেকেই এ দোকানের বারান্দার বিখ্যাত পার্লামেন্ট কর্নারে বসেছিলেন ৷ তাঁরা কথাবার্তা বলছিলেন ৷ আমি বসেই তিনটে চায়ের অর্ডার দিলাম ৷ খোকন এসে চায়ের ধরন বুঝে নিচ্ছে ৷ নবাগত দাদা প্রথমত নিমরাজি হলেন পরে বললেন আমার সুগার ৷ চা টা অবশ্যই সেভাবে দিও কিন্তু ৷ খোকন ফিরে গিয়ে ঠিকঠাকমতোই চা করে এনে আমাদের দিল ৷ বেশ কতক্ষণ কথাবার্তা বললাম আমরা তিনজন ৷ একসময় স্বপনদার বন্ধু বাজারে যাবেন বলে উঠলেন ৷ আমাকে বললেন, আপনি আমাকে চা খাইয়েছেন ৷ আমি আপনার কাছে ঋণী রইলাম ৷ আমি আর একদিন চা খাওয়াব আপনাকে ৷ আপনি না করতে পারবেননা ৷ আমি বললাম, আরে একি বলছেন আপনি ৷ না না....... এ কী ৷ স্বপনদা বললেন, আরে কী কও তুমি ৷
তিনি চলে গেলেন ৷ আর বিশেষ কথা হলনা ৷
আমার একটু খটকা লাগল ভদ্রলোকের সৌজন্যতায় ৷ এমন অঙ্কের হিসাবে আমরা কী খাই না খাওয়াই ৷ তাও এককাপ মাত্র চা ৷ ভদ্রলোকের এথিকস হয়তো এটা ৷ ভালো খারাপ বুঝে উঠতে পারছিনা ৷ আসলে আমি কী এই এক কাপ চায়ের বিনিময়ে উত্তমর্ণ হয়ে গেলাম ৷ রবীন্দ্রনাথ যে বলেছেন, 'গ্রহণ যতো করেছ, ঋণী ততো করেছ আমায়' ৷ একথাটার মানে তাহলে কী? বিনীত ঋণী হওয়ার সুযোগ কোথায়?