ত্রিপুরা রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চল একসময় হাতির জন্য বিখ্যাত ছিল ৷ পার্শ্ববর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামেও ছিল হাতির প্রাচুর্য ৷ এই অঞ্চলে ছিল 'হাতির দোয়াল' অর্থাৎ হাতির বাসস্থল ৷ ত্রিপুরা রাজ্যে এমন বেশ কয়েকটি হাতির দোয়াল ছিল ৷ আগরতলা শহরের বড়দোয়ালি একসময় ছিল হাতির বড়সড়ো বিচরণক্ষেত্র ৷ ( বড় + দোয়াল + ই) হাতি ধরার জন্যে বিশাল এলাকা নিয়ে তৈরি করা হত ফাঁদ ৷ হাতির প্রিয় খাদ্য কলাগাছের বাগানে ঘেরা থাকত এই ফাঁদ ৷ বাগানের মাঝে থাকত গভীর পরিখা ৷ যা নরম গাছ লতাপাতা দিয়ে ঢাকা থাকত ৷ কলাগাছের লোভে এসে বুনো হাতির দল এই গভীর পরিখায় পড়ে যেত ৷ তারপর পোষা হাতি দিয়ে এদের ধরা হত ৷ এই ফাঁদকে বলা হত 'খেদা' ৷ পরিখা বা গর্তের প্রতিশব্দ 'খাদ' ৷ এই 'খাদ থেকেই আঞ্চলিক উচ্চারণ 'খাদা' ৷ আরও বিকৃত হয়ে 'খেদা' শব্দটির সৃষ্টি ৷ এখানে ছিল প্রচুর 'খেদা' ৷ প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকায় 'হাতি খেদার গান' নামে পালাগানে এই অঞ্চলের বর্ণনা আছে ৷ হাতি নিয়ে কিংবদন্তী, লোককাহিনিও রয়েছে ৷ ককবরক লোককথায় নিষেধ না মেনে যাদুপুকুরে স্নান করায় শরীর ফুলে গিয়ে 'ভাইবোন হাতি হয়ে যাবার গল্প' রয়েছে ৷ লংতরাই পাহাড়ে খোঁড়া হাতি বিচরণের কিংবদন্তী রয়েছে ৷ ত্রিপুরা-চট্টগ্রামের পাহাড়ে যে শ্বেত হস্তী ছিল তারও প্রমান পাওয়া যায় প্রাচীন কাব্যগ্রন্থে ৷ রাজমালার ধন্যমাণিক্য খন্ডে আছে— 'ডাঙ্গর ফা রাজার কালে থানাংচিতে থানা ৷/ থানাংচি না মিলিলেক রাজাতে আপনা ৷৷/ থানাংচিতে এক হস্তি ধবল আছিল ৷/ হেড়ম্ব রাজায় তাকে চাহিয়া পাঠাইল ৷' সেই শ্বেত হস্তি তো আজ লুপ্ত হয়ে গেছেই ৷ হাতির দাবী নিয়ে মোগলদের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধও হয়েছিল ৷ গোবিন্দমাণিক্যের সময় সমতল ত্রিপুরা অর্থাৎ চাকলা রোশনাবাদ করদ রাজ্যে পরিণত হয় ৷ তখন থেকে মোগল বাদশাহকে পাঁচটি করে হাতি নজর দিতে হত ৷যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এই হাতিও অচিরেই নিঃশেষ হয়ে যাবে ৷
(ছবি: - ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া)
Sunday, August 12, 2018
ও মোর মাহুত বন্ধু রে......
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment