Friday, April 13, 2018

বি রা ন

প্রতিটি স্নিগ্ধ সকালের গচ্ছিত রাখি আমার দৈনন্দিন সুখ ৷ পাহাড়ের গ্রীবার কাছে আমি মুখ রেখে সকল পংক্তি সাজাই কাব্যিক আকারে ৷ সেতুবন্ধের যে গান রচনার কথা ভেবে সাজাই কাগজ ও কলম, সেতুভঙ্গে ছিন্ন হয় দুপারের ভালোবাসার জড়োয়া অলঙ্কার ৷ স্বপ্নভাঙা  নদী বেয়ে জল যায় মহামিছিলের মতোন ৷ আর দুখি মানুষজন লুকিয়ে চুরিয়ে অশ্রু মিশিয়ে নোনা করে জল ৷ আমিও নোনাজলে স্নান করে বিবর্ণ হই ৷

আমার গীতল কথামালা ছন্নছাড়া পোড়া টিলার মতো আগামী জুমফসলের আশায় বিরান হয়ে যায় ৷

তাতে কিবা লাভ

তাতে কিবা লাভ হল আমার পিসির
আমি বাঙাল ৷ আমার পূর্বপুরুষ পূর্ববঙ্গের কিংবা পুববাংলার ৷ আমার উত্তরপুরুষ পশ্চিমবঙ্গে কিংবা পশ্চিমবাংলায় ৷ আর আমার প্রিয় ফুটবল দল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ৷ এই ক্লাবের কদিন আগের সচিব কল্যাণ মজুমদার সম্পর্কে আমার কাকা হন ৷ এই কাকাকে আমি চোখে দেখিনি কোনদিন ৷ তিনিও পুববাংলার ৷ আমার পূর্ববঙ্গীয় বাবা বলে গেছেন, তাই আমি জানি উনি আমার কাকা ৷ আমার বাবা বলতেন, সুধীর কাকা তাঁর বাড়ির পাশে নিজেদের প্রয়োজনের চেয়েও বেশ খানিকটা জায়গা বেশি রেখেছিলেন পুববাংলা থেকে তাঁর পরিজনরা আসবেন, পাশাপাশি বাড়ি করে থাকবেন ৷ পূর্ববঙ্গীয়দের টান এমনই ছিল সেদিন ৷ সেই সুবাদেই বোধহয় আমার অদেখা কাকার নাম ভাঙিয়ে উপকৃতও হয়েছি একবার ৷ সে বোধহয় গত শতকের আশি সাল ৷ আমরা পাঁচজন সহকর্মী ( আমি তাঁদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ) ভারত ভ্রমণে বেরুই ৷ ফেরার পথে আমার সহকর্মী দীপকদা দুম করে রেজিষ্ট্রি বিয়ে করে বসলেন ৷ মুনমুন বৌদির পরিবারও পুববাংলার ৷ শিয়ালদার টাওয়ার হোটেলে থেকে অনাড়ম্বর বিয়ের অনুষ্ঠানটি হয় ৷এই অধম আইনি সাক্ষী ৷ রাতের বেলা জানলাম হোটেল মালিকও পূর্ববঙ্গের ৷ নতুন বৌঠানকে নিয়ে আমরা সার্কুলার ট্যুর অনুযায়ী অসম হয়ে ট্রেনে ফিরব ৷ দীপকদার শ্বশুরমশাই একটা সিদ্ধান্ত দিলেন, বিয়েতে তো কিছু দিলেন না ৷ উদারচিন্তক দীপকদাও কোন কিছুর দেওয়া নেওয়ার ঘোর বিরোধী ৷ শুধু মেয়ে-জামাই ও আচমকা বরযাত্রীরা যদি প্লেনে যাই তবে আগরতলা- কোলকাতার টিকিটের টাকাটা তিনি দিতে চান ৷ দীপকদাকে নরম করানো যাচ্ছিল না কিছুতেই ৷শেষকালে টাওয়ার হোটেলের মালিক আমার ঠাকুরমার সূত্রে কোনো আত্মীয়তা রেশ ধরে মীমাংশা দিলেন ৷ দীপকদাকে বললেন, তুমি না হয় নিলে না ৷কিন্তু তোমার শ্বশুরমশাই তাঁর মেয়ের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্যে বোধহয় এ প্রস্তাব দিয়েছেন ৷ এই পূর্ববঙ্গীয় চালে আমার দাদাটি কুপোকাৎ হলেন ৷ টাকা তো দিলেন৷ কিন্তু দু এক দিনের মধ্যে টিকিট কোথায়? হোটেল মালিকসহ সবাই খোঁজখবর করলেন ৷ব্যবস্থা হল না ৷ আমরা ট্রেনেই ফিরব ৷ দেখা করতে গেলাম বালিগঞ্জে আমার কাকা কাকি ঠাম্মার সঙ্গে ৷ কথায় কথায় আমার মেজো কাকা জানলেন আমরা টিকিট পাচ্ছি না ৷ একটা চিরকুট লিখে আমার হাতে দিয়ে বললেন, ও তো আবার সাহিত্যিক ৷পড়ে দেখ তো আমার লেখায় ভুলটুল আছে কিনা ৷ এক কাজ করবি সোজা সিটি অফিস চলে যাবি ৷ ওখানে ডেপুটি ম্যানেজার কল্যাণ মজুমদার আছে ৷আমার নাম করে চিঠিটা দিবি ৷ হয়ে যাবে আশা করি ৷ সেখান থেকে ফিরে পরদিন চলে গেলাম সিটি অফিসে ৷ গিয়ে দেখি কল্যাণ কাকার চেম্বারের নেমপ্লেট কিন্তু দরজায় তালা ৷ আমার আশার গুড়ে কাঁকর ৷ যাক এসেছি যখন টিকিটের কাউন্টারে খোঁজটা নিয়ে যাই ৷ কাউন্টারে গিয়ে বললাম, আগরতলার টিকিট হবে? পাঁচখানা? কবেকার? কালই যেতে চাই ৷ কিসব দেখে টেখে কাউন্টারওয়ালা বললেন, সাতদিনের মধ্যে নেই ৷ ও হরি! আমতা আমতা করে কাকার চেম্বারের দিকে তাকিয়ে বললাম, কল্যাণ মজুমদার আছেন? ওদিক থেকে পাল্টা প্রশ্ন, কেন, কী দরকার? না, একটা চিঠি ছিল ওনার ৷ কাউন্টার কর্তা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, কখানা টিকিট লাগবে বললে? পাঁচখানা ৷ টাকা আছে? না টাকাতো আনিনি ৷খোঁজ নিতে এসছিলাম ৷ থাকো কোথায়? টাওয়ার হোটেলে ৷ আগরতলার লোকগুলোই ওরকম ৷ যাও, আধঘন্টার মধ্যে টাকা নিয়ে এস ৷আমি রাস্তায় নেমে ওপারে গিয়ে বড়োবজারের ভেতর দিয়ে সোজা টাওয়ার হোটেলে ৷ ফিরে এসে পাঁচখানা টিকিট নিয়ে বিশ্বজয় করে সুভদ্রাহরণ করলাম আমরা ৷ আমার সেই পূর্ববঙ্গীয় কল্যাণ কাকাকে আজো দেখি নি ৷ ইস্টবেঙ্গল ও বৈমানিক জীবন নিয়ে ভিন্নধর্মী লেখালেখির দৌলতে কোলকাতায় তাঁর যথেষ্ট পরিচিতি আছে ৷
আজই জানলাম পূর্ববাংলা- পশ্চিমবাংলার, ঘটি-বাঙালের সেই নস্টালজিক ব্যাপারটা নষ্ট হয়ে যাবে ৷ পূর্ববাংলা তো বাংলাদেশ হয়ে গেছে ৷ আর পশ্চিমবঙ্গও অগস্ত্যযাত্রার পথে শুধু বঙ্গ বা বাংলা রেখে যাবে ৷ এতো ভঙ্গ বঙ্গ তবু রঙ্গভরা ! আহা

সব লোকে কয় লালন কী জাত

আজ বারুণী স্নান ৷ জলদেবতা বরুণের নাম থেকে এর উৎস ৷ বারুণী স্নান তাই জলের উৎসব ৷ চৈত্রমাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিথে এই উৎসব হয়ে থাকে ৷এদিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নদীতে স্নান ও তর্পণ করে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদান করেন ৷ উদ্দেশ্য পূণ্যার্জন ও পাপমুক্তি ৷ এক কথায় প্রাচীন মানুষের পূর্বপুরুষ পূজারই একটি ধারা এটি ৷ এ ধরণের পিতৃতর্পণকর্ম মহালয়াতেও আচরিত হওয়ার বিধি আছে ৷ আবার কোনো কোনো সম্প্রদায়ের বিশেষ ধর্মীয় কারণেও এই পার্বনটিকে বিশেষ মান্যতা দেন ৷ যেমন মতুয়া সম্প্রদায়ভূক্তরা তাঁদের ধর্মীয়গুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে, পশ্চিমবঙ্গে শ্যামনগরে এবং দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমের পশ্চিমদিকের গ্রাম বড়খলাতে এই তিথিতে মেলার আয়োজন করেন ৷  ত্রিপুরারাজ্যের দক্ষিণের সীমান্ত শহর সাব্রুম  সংলগ্ন ফেনি নদীর পাড়েও প্রতিবছর মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে হয়ে থাকে বারুণী স্নান ও মেলা ৷ ত্রিপুরা রাজ্যের ভারতভুক্তির বহু আগে থেকেই এই মেলা চলে আসছে ৷ ভারতভুক্তির পর যখন দুই দেশের মধ্যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় তখন থেকেই এই মেলা এক মানবিক আবেদনের রূপ নেয় ৷ এই মেলাতেই দেখা দেশের বাড়িতে ফেলে আসা মানুষজনের সাথে এপাড়ে উঠে আসা মানুষের ৷ নদীর বুকে এদিন দুপারের আত্মীয় স্বজনের গলা জড়িয়ে কান্নার রোলে বাতাস ভারি হয়ে উঠত ৷ এই প্রতিবেদকেরও ওপারের আত্মীয়স্বজনের সান্নিধ্যে এই করুণ আবহের অভিজ্ঞতা রয়েছে ৷ কালক্রমে বয়স্ক আত্মীয়স্বজনরা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন ৷ তাই এ দৃশ্য বর্তমান প্রায় বিরল ৷ পুরোণোদের যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে গেলেও বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যাঁরা এদেশে রয়ে গেছেন তাঁদের কেউ কেউ এদিনটাকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন ৷ তাছাড়া এখানকার ত্রিপুরি ও মগ জনজাতি অংশের মানুষের অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছে দুপারে ৷ তাঁরাও এদিন মিলিত হওয়ার সুযোগ নেন ৷

সম্প্রতি সাব্রুমের বারুণী মেলা আগের চেয়ে অনেক বড়ো আকারের  আন্তর্জাতিক রূপ নিয়েছে ৷ সেই ধর্মীয় বাধাবন্ধ আজ আর নেই ৷ কারণ বাঙালির রক্তেই আছে সম্প্রীতির বার্তা ৷ বাঙালিরই পূর্বসূরী চন্ডিদাস, লালন ফকির, রবীন্দ্রনাথ আর নজরুল ৷ যাঁরা মানুষে মানুষে সম্প্রীতির কথা বলেন ৷ সেই অসাম্প্রদায়িক বার্তা বুকে নিয়েই এদিন দুপারের হাজার হাজার লোক মিলিত হন ৷ নদী কোনো সীমানা হয় না ৷ কাঁটাতার কোন প্রতিবন্ধক হয় না ৷ ভূখন্ডের রাজনৈতিক, ভৌগোলিক ব্যবধান থাকে না ৷ দুই ভূখন্ডের মানুষ এক বন্ধনে বাঁধা পড়েন কিছুক্ষণের জন্যে ৷ কিছু ব্যবসায়িক বিষয়বুদ্ধিকে বাদ দিলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার উদাহরণ পাওয়া যায় না এদিনের মহামিলনে ৷ শৃঙ্খলাটা যেন মানুষের মন থেকেই বেরিয়ে আসে ৷ কোনো জাতপাত ধর্মান্ধতা এখানে মাথা তুলতে পারে ৷ শুধু মানুষ আসে মানুষের কাছে আন্তরিকতা নিয়ে ৷ এবছরও তার ব্যতিক্রম হয় নি ৷ বিরাটপুরুষ অন্তর্যামী অলক্ষ্যে হাসেন আনন্দে ৷ 'তাই তোমার আনন্দ আমার 'পর ৷'

চৈত্রশেষের প্রার্থনা

কান্না ভুলে, শোক ভুলে বছরের শেষ দিনে
সবাইকে জড়িয়ে নেবো ভালোবাসার ঋণে ।
বড়ো জনে প্রণাম নিও, ছোটো জনে স্নেহ
অতীত দিনের স্মৃতিটারে মুছে দিও না কেহ ।
পুরোনোকে ঝোলায় ভরে চলব আবার পথে
নতুন বছর বরণ করি সবাইকে নিয়ে সাথে ।

নতুন বছর,নতুন স্বপ্ন,নতুন করে সব নেব
কান্নাটুকু মুছে ফেলে হাসি বিলিয়ে দেব ।
শপথ হোক না নতুন বছরে হাতে হাতে ধরে
হিংসা দ্বেষ ভুলে গিয়ে প্রীতি উঠুক ভরে ।
ধর্ম,বর্ণ,জাত্যাভিমান  থাক না এক পাশে
সবার প্রাণে প্রাণে যেন পবিত্রতা ভাসে ।

হোলি গান

বেনামী কুটিরের গায়ে আলপনা এঁকে রেখে
বর্ষবিদায়ের পথে আবিরের চালচিত্র--

কতোটা ভালোবাসা রেখে গেলে শান্তি নামে ৷
সকাল সন্ধ্যার আঁটিবাঁধা খুচরো সংসারের তালিকায়,
তালুতে দাদনের স্বরলিপি সুরের জন্যে উসখুস ৷
নেতিয়ে পড়ে মেজাজি মালিকের জবাকুসুম চোখের সামনে,
যার গায়ের জামায় বিগত হোলির আদিম গন্ধ ৷

হোলি তবু আসে ৷ আসে প্রতি সন ৷
তার ঝোলায় থাকে প্রাচীন মেইজাইয়ের উপহার,
বিলোবার পরিবেশ পায় না ৷
অথবা খুঁজে পায় না কোনো পবিত্র সূতিকাঘর ৷

Sunday, April 1, 2018

এই কী তোমার প্রেম ওগো হৃদয়হরণ

বইমেলা ৷ আর দশটা মেলার মতো নয় এই মেলা ৷ সংবৎসর আর সব মেলা হয় যেখানে থাকে শুধু ব্যসনের সামগ্রী ৷ বৈভবের সমাহার ৷ বিত্তবাসনার নিবৃত্তির উপকরণ ৷ মনোহারী সব সরঞ্জামের সমাবেশ ৷ বইমেলা এসব থেকে পুরোটাই আলাদা ৷ হ্যাঁ বইমেলারও একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে ৷ এ টেনে নেয় গুণীজনকে ৷ মননশীলতাকে ৷ ঐতিহ্যের প্রতিও দৃষ্টি ফিরিয়ে আনে বইমেলা তার পারিপার্শ্বিকতায় ৷ বইয়ের প্রতি প্রণয় আত্মার আকর্ষণ ৷ বিশ্বকে আপন করে নেবার প্রক্রিয়ায় কালো অক্ষরের আনন্দযজ্ঞ ৷ বইয়ের প্রতি ভালোবাসা বিশ্ব ইতিহাস সংস্কৃতিকে ভালোবাসা ৷ তার টানেই বইমেলায় সামিল হওয়া ৷ অজান্তেই মন বলে ওঠে- বইমেলা ‘ এই কী তোমার প্রেম ওগো হৃদয়হরণ? ‘

     তেমনি এক হার্দ্য বইমেলার নাম আগরতলা বইমেলা ৷ বিশ্বের বঙ্গভাষী অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম বইমেলা ৷ আজ ছত্রিশ বছরে পড়ল এই বইমেলা ৷ উনিশ শো একাশি সালের তিরিশে মার্চ মাত্র চব্বিশটি স্টল নিয়ে আগরতলা রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গনে শুরু হয়েছিল এই বইমেলা ৷ তারপর জুরি-দেও-মনু-হাওড়া-গোমতী-মুহুরী-ফেনির বুক দিয়ে বয়ে গেছে বহু জলস্রোত ৷ শৈশব পেরিয়ে, কৈশোর অতিক্রম করে, যৌবনের শ্যামল গরিমায় পৌঁছে গেছে আগরতলা বইমেলা ৷ আজ বিশ্বের নানাপ্রান্তের মানুষ জেনে গেছে আগরতলা বইমেলার নামমাহাত্ম্য ৷ আজই যখন দিবসের দাবদাহ ক্রমশ শীতল হয়ে আসবে, চৈতালি হাওয়ার বাসন্তী আমেজে যখন অপরাহ্ণ ভরে উঠবে কোমল মায়ায়, সেইক্ষণে উদ্বোধন হবে আগরতলা বইমেলার ৷ রাজ্যের মননের উৎসবমালার প্রধান মন্ডপের ৷

বই মানুষের সভ্যতার অপরিহার্য জীবনবীজ ৷ মানব ইতিহাস, সংস্কৃতির ধারক ও বাহক ৷ বইমেলাকে কেন্দ্র করে মানুষ পরস্পর মননের আনন্দ ভাগ করে নেন ৷ আগরতলা বইমেলাও সেজে উঠছে সেই নেশায় ৷ সেই আকর্ষণে ৷ রাতদিন খাটাখাটনির পর চলছে শেষ তুলির টান ৷ নির্মিয়মান স্থায়ী মঞ্চের অলঙ্করণ ৷ বইমেলাকে কেন্দ্র করে আগরতলা শহর জুড়ে শুরু হয় বইপ্রকাশের উন্মাদনা ৷ ইতিমধ্যে হৈ চৈ বাঁধিয়ে অনুষ্ঠান করে একঝাঁক বই প্রকাশ করে ফেলেছেন  নীহারিকা, ত্রিপুরা বাণী প্রকাশনী,ভাষা, তুলসী পাবলিশিং হাউসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ৷ মফস্বল শহর কুমারঘাট থেকে এসে আগরতলা শহরে গ্রন্থপ্রকাশ উৎসব সেরে ফেলেছেন স্রোত প্রকাশনের মতো বনেদি প্রতিষ্ঠান ৷ কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বই প্রকাশ করছেন ৷ মেলা চলাকালীন হবে আরো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বইপ্রকাশ অনুষ্ঠান ৷

এই মননের আনন্দে বসে নেই আজকের তারুণ্যও ৷ সরকারী চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের একঝাঁক ছাত্রছাত্রী ৷ তাঁরা হত কদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আলপনায় আলপনায় দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছেন বইমেলার প্রবেশপথ ৷ আমাদের চিরন্তন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে যে এ ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’ ৷ সময় এগিয়ে গেলেও, চারদিকে বিশ্বায়ণের থাবা বিস্তৃত হলেও, মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রকট রূপ নেওয়া সত্বেও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যে জাতির সংস্কৃতির গভীরে প্রবাহিত হয়, বইমেলার অভিমুখে এই পথশিল্প তারই ইঙ্গিতবাহী ৷ আগামী কদিন আগরতলা বইমেলা

জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি লালনের পীঠভূমি হয়ে উঠুক ৷