Tuesday, May 26, 2020

আ মা র নাম দু র্ না ম

Asoke Deb আমি তোমাকে তুই তো অপরাধী বলিনি বাক্যটা আবার পড়ার অনুরোধ রইল ৷ পাঠক তোমার অষ্টপয়েন্ট পড়ে আমাকেই এমন ভাববেন বলেছি ৷ লক্ষ করে থাকবে হয়তো তোমার পোস্টে যাঁরা কমেন্ট করেছেন তাঁদের অনেকেই আমার পোস্টেও করেছেন তো ৷
তোমাদের সন্ধ্যার সেই শান্ত উপহার সাব্রুম থেকে গিয়ে উপভোগ করেছি ৷ অবশ্যই তোমার ইনবক্সীয় নিমন্ত্রণে ৷ আর সেই সিরিজ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের একজন আমাকে ছাগদুগ্ধ পানের পরামর্শ দিয়েছিলেন ৷ গায়ে মাখিনি কোনোদিন ৷ তারপরেও নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্যে প্রতিটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছি ৷ শারীরিক অসুস্থ সেই উদ্যোক্তার কুশলসংবাদও জেনেছি ৷
   দলগোত্র নাই আমার ৷ যে কয় রাম ৷ তার লগেই যাম ৷ যদি সৃজনশীল হয় ৷
একবার একটা আলোচনাচক্রে আলোচনাকালে দর্শকাসনে উপবিষ্ট ভারি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করিনি বলে  মঞ্চ থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোক্তাদের একজন আমাকে তুলোধুনো করলেন আমার আলোচনায় নাকি তাদের কেরিয়ার নষ্ট হয়ে গেছেন ৷ কারা কারা নাকি দর্শকাসনে মুখিয়ে ছিলেন কখন তাঁদের নামটা উচ্চারণ করি ৷ অথচ আলোচনার চারদিন আগে আমি আমার স্ক্রিপ্ট জমা দিয়েছিলাম ৷
 একজন বিশিষ্ট কবির জন্ম শতবর্ষ উদযাপনে আমাকে সভাপতি করা হয় ৷ মঞ্চের পেছনে বিরাট ব্যানার ৷ কমিটির সবার নাম আছে ৷ সভাপতির নাম নেই ৷
সর্বশেষ কদিন আগে একটা প্যারোডি পোস্ট দিয়েছিলাম 'লকডাউনে অনেকেই বন্ধু বটে হয়/ সুসময়ে হায় হায় কেহ কারো নয় ৷' সেখানেও দুঃখজনক বিষয় আছে ৷ আমার দীর্ঘদিনের কবিবন্ধু ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন ৷ আহ্লাদে আঠেরো দুগুণে ছত্রিশখানা হয়ে রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে উনার কখানা কবিতা স্বকন্ঠে পাঠের ভিডিও পোস্ট করলাম ৷ অনেকেই দেখলেন, শুনলেন ৷ মন্তব্য করলেন ৷ হা, হতোস্মি ৷ সেই বন্ধু কবি আমার পোস্টের ছায়াও মাড়ালেননা ৷ 
 প্রায় সবাই নিজের যে কোনো কাজ দেখা শোনার জন্যে আমাকে ইনবক্স করেন ৷ আজও আছে ৷ আর আমার কোনোকিছুতে ' আরে ফালাইয়া থ'  ভাবে এড়িয়ে যান ৷ আর আমি সব নেমনতন্ন রক্ষা করি ৷ আর অপছন্দের কিছু বললে কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, ভাববাচ্য কিছুই বাদ যায়না ৷ 
 ভালো থাকো ৷ আনন্দে থাকো সবাইকে নিয়ে ৷  আরো একবার অনন্ত শুভেচ্ছা ৷

Tuesday, May 19, 2020

বিলোনিয়া মহাবিদ্যালয় ও আমার সময়

বিলোনিয়া মহাবিদ্যালয় ও আমার সময়

Dibakar Debnath আপনার লেখাটি পড়ে আমি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছি ৷ আপনাদের কাল আর আমাদের কালে বোধহয় খুব বেশি ফারাক ছিলনা ৷ তাই দৃশ্যপট মিলে গেছে অনেকটা ৷ একটা তিক্তকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমি সেদিন কলেজে প্রথম প্রবেশ করেছিলাম ৷ ভর্তি হয়ে যেদিন প্রথম ক্লাস করার জন্যে দূরের চাম্পাকাম্পা হাফওয়াল ঘরটাতে ঢুকি তার কিছুক্ষণ পরেই হৈ হৈ করে আমাদের বের করে নিয়ে আসা হল প্রিন্সিপাল রুমের সামনে ৷ তাঁকে নাকি ঘেরাও করা হবে ৷ সে বছর বিলোনিয়া কলেজ সরকার অধিগ্রহণ করে ৷ অথচ পূর্ব নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে পাঠরত এবং নবীন সব ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে উন্নয়ন তহবিলের নামে কুড়ি টাকা করে নেওয়া হয়েছে ৷ এটাকা ফেরত দিতে হবে ৷ দাবি জানাতে গিয়ে একসময় ছেলেরা প্রিন্সিপাল বি এন ঘোষালকে শারীরিক নিগ্রহও ৷ ধুতি ও সাদা পাঞ্জাবি পরা লম্বা ফর্সা বীরেন্দ্রনাথ ঘোষাল মহোদয় জোড়হাত করে কেঁদে ফেলেন ৷ পরে জেনেছে তিনি যাঁকে পুত্রবৎ স্নেহ করতেন এবং বাবা বলে সম্বোধন করতেন সেই ছাত্রনেতাটিই এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় ৷ প্রিন্সিপাল স্যর ডেভেলপমেন্ট কমিটির সঙ্গে কথা বলে টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন ৷ তার পরদিন থেকে তাঁকে আর কলেজে দেখিনি ৷ শোনা যায় অপমানে তিনি চাকরি ছেড়ে চলে যান ৷ আমাদের টাকাগুলো আর কেউ ফেরত পায়নি ৷ প্রচার হয় এ টাকা উনি মেরে দিয়েছেন ৷ কেউ কেউ বলেন সে টাকা বেড়ালের পিঠে ভাগের মতো অন্য একপক্ষ গায়েব করে দিয়েছেন ৷
 মহাবিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে আমি রবাহুত হয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম ৷ সে অনুষ্ঠানের বিলোনিয়ার এক ওজনদার জনপ্রতিনিধি ভাষণ দিতে উঠে কলেজ সৃষ্টির কথা বলতে গিয়ে এই মহাবিদ্যালয়ের জনক মহেন্দ্র মুহুরীর কথা একবারও উচ্চারণ করেননি ৷ এই মহাবিদ্যালয়ে আমি ১৯৭৩—৭৬ পড়েছিলাম ৷ বহু গুণী অধ্যাপকদের মধ্যে অরূপরতন স্যরের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ নিবিড় রয়েছে ৷ দুবছর আগে গেছিও তাঁর বাড়িতে ৷ পরিতোষ স্যরেরও খবর পাই ভাষাচার্য ড. পবিত্র সরকার মারফত ৷ আর যদি আত্মশ্লাঘা না হয় ইতিহাসের প্রয়োজনে লিখি ৷ আপনি যে শান্তিনিকেতন কম্প্লেক্সটার কথা উল্লেখ করলেন সেখানে সিঁড়িতে পা দিয়ে করিডরে ঢুকলে ডানদিকে দুটো রুম ছিল আর বাঁদিকে পরপর কয়েকটা ক্লাসরুম ছিল ৷ সিঁড়িতে পা দেওয়ার আগে ডানদিকের রুমের চুনকামহীন দেওয়ালের গায়ে একদিন দুস্টুমি করতে গিয়েই চক দিয়ে লিখে  ফেলেছিলাম শান্তিনিকেতন ৷ আসলেই সেদিন গোটা মহাবিদ্যালয় চত্বর শান্তিনিকেতন ছিল ৷❤️💝

Wednesday, May 13, 2020

কো য়া রে ন্টা ই নে র ক বি তা



এখন আমরা প্রত্যেকে মহান হয়ে উঠছি,
এখন আমরা প্রত্যেকে মানব হয়ে উঠছি,
সমূহ যন্ত্রণার ভেতর আমাদের বিশুদ্ধ পর্যটন ৷
ঘরের ভেতর বন্দী থেকেও আমরা আন্তর্জাতিক যেন—
পৃথিবীর আর সব প্রান্তের বেদনা আমাদের
ঘরের ভেতরেও শোকপরিবেশ গড়েছে ৷
আমরা প্রতিবেশীর মুখ দেখিনি অনেকদিন
অথচ আজ মুখোমুখি জানলায় চেয়ে থাকি ৷
আমাদের সদর দরজা বন্ধ থাকত ভিখিরির ভয়ে
আজ ছুটছি আমরা ত্রাণ নিয়ে বস্তির গলিতে ৷
দেশের বাড়ির কথা বারবার মনে পড়ে ৷ ফেলে আসা গ্রাম, উঠোনের সিঁদুরে আম
ছেলেবেলার সাথী খোঁড়া ভজন আর তার বাঁশির সুর ৷
কেমন আছে সুভদ্রা ধাইমা
মা চলে যাবার পর যে অঝোরে কেঁদেছিল আমাদের উঠোনে ৷

আবার ওড়াতে ইচ্ছে করে ভোমরা ঘুড়ি পাড়ার আকাশে,
বেলাশেষে কদবেলগাছটার ভেসে ওঠা শেকড়ে বেঁধে রাখলে
সারারাত অন্ধকারে অদ্ভুত গুঞ্জন তুললে
বাদুড়েরা পালিয়ে যেত ঘোষেদের আমবাগান থেকে ৷

এখন প্রতিদিন মনে হয় আগামী দিন ভোর হবে কিনা,
আজকের রাতটাও শেষ হবে কিনা তাও জানা নেই বলে
বেশি বেশি করে বন্ধুদের সুপ্রভাত আর শুভরাত্রি
জানাবার কথা একবারও ভুল করিনা ৷
সময় ভালো হলে এসে বেড়িয়ে যাবার দাওয়াত দিয়ে রাখি—
বন্ধুরাও আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখে ৷
এখন সবাই মনের কথা উজাড় করে লেখে, 
এক একটা শাস্ত্রবাক্য হয়ে ওঠে আমাদের প্রতিটি পংক্তি ৷ আমরা এখন পূর্বজর লেখার গভীরে গিয়ে মুগ্ধ হই ৷
এতোদিন পাতে তুলিনি সতীর্থের যে সৃষ্টিকে
আজ যেন মহার্ঘ মনে হয় ৷ ছড়িয়ে দিই স্বকণ্ঠে ৷
যে অনুজের দিয়ে যাওয়া সংকলনগ্রন্থ এতদিন
পড়েছিল অনাদরে, আজ ধুলো ঝেড়ে খুলে দেখি পরম মমতায় ৷

আজ ঘরবন্দী জীবনে বারান্দায় চাটাই পেতে
 হাতে নিচ্ছি দেশজ পুরাণ  আর মঙ্গলকাব্য ৷
সেইসব সৃজনের মূল্য যেন নতুন করে জীবনকেই
মেলে ধরে পৌরাণিক সহজিয়ায় ৷
হারানো দিনের চিরায়ত পদাবলি উঠে আসে কন্ঠে ৷
বাউল, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়ায়
শান্ত ও সরল জীবনের ঘরোয়া বিন্যাস
মুর্শিদের কাছে আকুল প্রার্থনার মদত করে ৷
আর হৃদয়ে ডোবানো অশ্রু নিবেদিত হয় মানুষের অসুখ সারাবার জন্যে ৷

এই বৈরী সময়ে, এই ত্রস্তকালে আমাদের ভেতর জেগে উঠেছে পশু ও প্রকৃতিপ্রেম ৷
আকাশের অগণিত নক্ষত্রকে,চাঁদ ও সূর্যকে আপন আত্মীয় মনে হয়
বনভূমি আর পাহাড়ের মাঝে খুঁজে পাই পরম প্রতিবেশীকে
নদী ও ঝরনা কিংবা বৃষ্টিপতনের শব্দ
বুকের ভেতরের কোনো অলৌকিক দেহতত্ত্ব আজ ৷
বনের যত নিরীহ স্বাধীন পশু ও পক্ষীকূল
কেবল নিঃস্বার্থ ভালোবেসে যেতে ইচ্ছে হয় তাদের
কাছে টেনে নিতে মন চায় ভীষণ ৷
আর আমরা কেবল পরস্পরের থেকে সাড়ে তিনহাত দূরে
সরে যাচ্ছি ক্রমাগত ৷
 
আমরা আজ কাতর, আমাদের অন্তঃস্তলে চাপা পড়া সমস্ত মহত্ব ও মমতা আজ দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছে ৷
দানে ও পুনর্বাসনে আমাদের নতুন নতুন পরিকল্পনা
আমরা চাইছি আমাদের সন্ততির সাথে
প্রতিবেশীর ঘরেও উনুন জ্বলুক
যে যার সাধ্যমতো বাড়িয়ে দিচ্ছি ইন্ধন ৷
আমাদের সমস্ত কৃতকর্মের জন্যে মার্জনার বিনিময়ে
দারুণ দারুণভাবে বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছে আমাদের ৷
সমস্ত উৎসবের জৌলুষ এবং অর্থের অহংকারের
দীপাবলি বর্জন করে ডাকের সাজ নিয়েই আমরা পার্বনে মেতে উঠতে চাই ৷

তার জন্যে সমস্ত অনৈতিক ও অশালীন অঙ্গবস্ত্র পরিত্যাগ করে
ক্রমাগত আমরা মানুষই হয়ে  উঠছি আর একবার ৷ মানুষ হয়ে উঠছি যেন ৷

ত্রিপুরার বাংলা কবিতার হাজার বছর

ত্রিপুরার বাংলা কবিতার ইতিহাস সংক্রান্ত এ পর্যন্ত যে সমস্ত মান্য কাজ হয়েছে সেগুলোতে প্রাচীনতার ক্ষেত্রে রাজমালাকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে ৷ আমাদের কবিতার ইতিহাস যে হাজার বছর অতিক্রান্ত সেই বিষয়ে আমার একটা দুর্বল প্রবন্ধ আছে ৷ রাজ্যের বিশিষ্ট কবি দিলীপ দাসের অনুরোধে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার 'বঙ্গ-সংস্কৃতি উৎসব ১৪২২র স্মারকগ্রন্থেরজন্য প্রবন্ধটি লিখেছিলাম ৷ "ত্রিপুরার বাংলা কাব্যের হাজার বছর" শিরোনামে সেটি ওই গ্রন্থে প্রকাশিতও হয়েছিল ৷ প্রবন্ধটি সেদেশে প্রশংসিত হয়েছিল ৷ আমাদের রাজ্যেও কবি দীলিপ দাসসহ অনেকেই পড়েছেন ৷ মুখে প্রশংসাও করেছেন ৷ পরবর্তীতে সেটি বর্ধিত আকারে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত কবি মধুমঙ্গল বিশ্বাসের দৌড় সাহিত্য পত্রিকার ৩৩ বর্ষ • জানুয়ারি ২০১৭ এর বিশেষ ক্রোড়পত্র  : ত্রিপুরা সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ৷ সেখানেও পাঠক ও গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রবন্ধটি ৷ একজন তো তাঁর ত্রিপুরার সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থে এক জায়গায় ছোট্ট দুটো ঊর্ধ্ব কমার মধ্যে রেখে আমার পুরো প্রবন্ধটাই ঢুকিয়ে দিয়েছেন ৷ আজকের দিনেও ত্রিপুরার কবিতার আলোচনার সময় কথাটা  ক্ষীণভাবে কেউ কেউ তোলেন ৷ কিন্তু কে প্রথম বিষয়টা তুলেছেন সেটা ভাসুরের নামের মতো ট্যাবুতে অনুচ্চারিত রয়ে গেছে ৷ আমার তোলা প্রসঙ্গটা ভুল হলে আলোচনা সমালোচনা করা হোকনা ৷ আমি সমৃদ্ধ হই ৷ এই প্রবন্ধ প্রকাশের পরে ত্রিপুরার বাংলাকবিতা বিষয়ে অত্যন্ত সুন্দর ও পরিশ্রমী একটি বিশাল গবেষণা অভিসন্দর্ভও প্রকাশিত হয়েছে ৷ বহু খোঁজখবর করে দুষ্প্রাপ্য তথ্যউপাত্ত সংযোজিত হলেও অধীনের লেখাটা আলোচনায় আসেনি ৷ এই সমস্ত দুঃখজনক কারণে আমার আর পরিশ্রম করে কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছে হয়না ৷  সমালোচনা এরাজ্যে দূর অস্ত ৷ নস্যাৎও করেননা ৷ স্রেফ এড়িয়ে যান ৷ অথবা নকল করে নিজের মহল্লায় বাহাদুরি নেন ৷ আমি যাঁর সৃষ্টির নিবিড় আলোচনা করলাম তাঁকে আমার কোনো গ্রন্থের আলোচনা করতে বললে হেসেই উড়িয়ে দেন ৷ ভাবি কী ছাই পাঁশ লিখেছি এতদিন ৷

Thursday, April 30, 2020

কো য়া রে ন্টা ই নে র ক বি তা



এখন আমরা প্রত্যেকে মহান হয়ে উঠছি,
এখন আমরা প্রত্যেকে মানব হয়ে উঠছি,
সমূহ যন্ত্রণার ভেতর আমাদের বিশুদ্ধ পর্যটন ৷
ঘরের ভেতর বন্দী থেকেও আমরা আন্তর্জাতিক যেন—
পৃথিবীর আর সব প্রান্তের বেদনা আমাদের
ঘরের ভেতরেও শোকপরিবেশ গড়েছে ৷
আমরা প্রতিবেশীর মুখ দেখিনি অনেকদিন
অথচ আজ মুখোমুখি জানলায় চেয়ে থাকি ৷
আমাদের সদর দরজা বন্ধ থাকত ভিখিরির ভয়ে
আজ ছুটছি আমরা ত্রাণ নিয়ে বস্তির গলিতে ৷
দেশের বাড়ির কথা বারবার মনে পড়ে ৷ ফেলে আসা গ্রাম, উঠোনের সিঁদুরে আম
ছেলেবেলার সাথী খোঁড়া ভজন আর তার বাঁশির সুর ৷
কেমন আছে সুভদ্রা ধাইমা
মা চলে যাবার পর যে অঝোরে কেঁদেছিল আমাদের উঠোনে ৷

আবার ওড়াতে ইচ্ছে করে ভোমরা ঘুড়ি পাড়ার আকাশে,
বেলাশেষে কদবেলগাছটার ভেসে ওঠা শেকড়ে বেঁধে রাখলে
সারারাত অন্ধকারে অদ্ভুত গুঞ্জন তুললে
বাদুড়েরা পালিয়ে যেত ঘোষেদের আমবাগান থেকে ৷

এখন প্রতিদিন মনে হয় আগামী দিন ভোর হবে কিনা,
আজকের রাতটাও শেষ হবে কিনা তাও জানা নেই বলে
বেশি বেশি করে বন্ধুদের সুপ্রভাত আর শুভরাত্রি
জানাবার কথা একবারও ভুল করিনা ৷
সময় ভালো হলে এসে বেড়িয়ে যাবার দাওয়াত দিয়ে রাখি—
বন্ধুরাও আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখে ৷
এখন সবাই মনের কথা উজাড় করে লেখে, 
এক একটা শাস্ত্রবাক্য হয়ে ওঠে আমাদের প্রতিটি পংক্তি ৷ আমরা এখন পূর্বজর লেখার গভীরে গিয়ে মুগ্ধ হই ৷
এতোদিন পাতে তুলিনি সতীর্থের যে সৃষ্টিকে
আজ যেন মহার্ঘ মনে হয় ৷ ছড়িয়ে দিই স্বকণ্ঠে ৷
যে অনুজের দিয়ে যাওয়া সংকলনগ্রন্থ এতদিন
পড়েছিল অনাদরে, আজ ধুলো ঝেড়ে খুলে দেখি পরম মমতায় ৷

আজ ঘরবন্দী জীবনে বারান্দায় চাটাই পেতে
 হাতে নিচ্ছি দেশজ পুরাণ  আর মঙ্গলকাব্য ৷
সেইসব সৃজনের মূল্য যেন নতুন করে জীবনকেই
মেলে ধরে পৌরাণিক সহজিয়ায় ৷
হারানো দিনের চিরায়ত পদাবলি উঠে আসে কন্ঠে ৷
বাউল, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়ায়
শান্ত ও সরল জীবনের ঘরোয়া বিন্যাস
মুর্শিদের কাছে আকুল প্রার্থনার মদত করে ৷
আর হৃদয়ে ডোবানো অশ্রু নিবেদিত হয় মানুষের অসুখ সারাবার জন্যে ৷

এই বৈরী সময়ে, এই ত্রস্তকালে আমাদের ভেতর জেগে উঠেছে পশু ও প্রকৃতিপ্রেম ৷
আকাশের অগণিত নক্ষত্রকে,চাঁদ ও সূর্যকে আপন আত্মীয় মনে হয়
বনভূমি আর পাহাড়ের মাঝে খুঁজে পাই পরম প্রতিবেশীকে
নদী ও ঝরনা কিংবা বৃষ্টিপতনের শব্দ
বুকের ভেতরের কোনো অলৌকিক দেহতত্ত্ব আজ ৷
বনের যত নিরীহ স্বাধীন পশু ও পক্ষীকূল
কেবল নিঃস্বার্থ ভালোবেসে যেতে ইচ্ছে হয় তাদের
কাছে টেনে নিতে মন চায় ভীষণ ৷
আর আমরা কেবল পরস্পরের থেকে সাড়ে তিনহাত দূরে
সরে যাচ্ছি ক্রমাগত ৷
 
আমরা আজ কাতর, আমাদের অন্তঃস্তলে চাপা পড়া সমস্ত মহত্ব ও মমতা আজ দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছে ৷
দানে ও পুনর্বাসনে আমাদের নতুন নতুন পরিকল্পনা
আমরা চাইছি আমাদের সন্ততির সাথে
প্রতিবেশীর ঘরেও উনুন জ্বলুক
যে যার সাধ্যমতো বাড়িয়ে দিচ্ছি ইন্ধন ৷
আমাদের সমস্ত কৃতকর্মের জন্যে মার্জনার বিনিময়ে
দারুণ দারুণভাবে বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছে আমাদের ৷
সমস্ত উৎসবের জৌলুষ এবং অর্থের অহংকারের
দীপাবলি বর্জন করে ডাকের সাজ নিয়েই আমরা পার্বনে মেতে উঠতে চাই ৷

তার জন্যে সমস্ত অনৈতিক ও অশালীন অঙ্গবস্ত্র পরিত্যাগ করে
ক্রমাগত আমরা মানুষই হয়ে  উঠছি আর একবার ৷ মানুষ হয়ে উঠছি যেন ৷

Saturday, April 25, 2020

ডিটান

Dibyendu Nath  এমন কিছু বাক্যাংশ বাশব্দগুচ্ছ যা বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয় ৷ অর্থাৎ যিনি কথা বলছেন তাঁর কথার প্রতি শ্রোতার নজর কাড়ার জন্যে, কথাটার গুরুত্ব বোঝাবার জন্যে এই বিশেষ বাক্যাংশ বা শব্দগুচ্ছ কথার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় ৷ সেই অনুযায়ী 'দৃষ্টিআনয়ন' শব্দ থেকে 'দিঠি আনা',  দৃষ্টির 'দিঠি' রূপটি পদাবলি সাহিত্যে আছে 'এক  দিঠ করি ময়ূর ময়ূরী কন্ঠ করয়ে নিরীক্ষণ' ৷ তা 'দিটান'>ডিটান শব্দটি রূপান্তরিত হয়েছে ৷ 'ডিট' শব্দটি যে সিলেটিতে দৃষ্টি বোঝায় তার উদাহরণ হল, সংস্কারবশত আমরা বলি,'অবায় চাইছনা ৷ 'ডিট' লাগবো ৷ এই 'ডিট লাগা' মানে নজর লাগা ৷

Tuesday, March 31, 2020

মেইলবক্স খুলে দেখতে চাইছি কে আজ বোকা বানাল এদিনেতেমন কোনো হাস্যকর প্রয়াসের কোনো ছাপ নেইকেবল পাতার পর পাতা জুড়ে কান্নার মাতমঅশ্রুসিক্ত ইমোজি সব উঠে আসছে ওস্তাদজির সানাই হয়েআর টাইমলাইনের পাতা জুড়ে ঘন ঘন ট্যাগভয়ংকর উল্লাসে ফেটে পড়া সব হিংসাময় সব বসন্তকথাআমার চারপাশের বাতাস ভারি হয়ে আছেপঞ্চাশ হাজার মুখের করুণ বৃত্ত প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দুলছেএ ভূখন্ড সীমিত হওয়ায় কেউই অপরিচিত নয়,সবারই হাল হকিকৎ জানা ৷ উনিশ বিশ সবাই সমান বিত্তবান ৷আমার জনপদে এখন মন্বন্তরের নীরবতা নেমেছেআশাহত কুপিবাতি হাওয়ায় কাঁপছে, কখন বুঝি নিভে যায় ৷এই অন্ধকারেই দেখি একদল মর্ষমান শরীর ডঙ্কা বাজিয়ে মশালনাচে নেমেছে ৷ কী তীব্র তাদের হল্লাবোল! ক্রমশ পাথর হয়ে খসে পড়ে যাচ্ছে অজস্র কান্নামুখ আর উল্লসিত হিংস্র অবয়বগুলো শ্বাপদ হয়ে বেরিয়ে পড়ছে ৷প্রতিবেশী বলে আর কেউ নেই মানুষের শরীর নিয়েলক্ষ্মণরেখার দুইপাশে অসহিষ্ণু খাদক এবং অসহায় খাদ্যআজ বসন্তপুষ্পের দিনে এভাবেই সাজানো আমার প্রোফাইল ৷