Friday, September 28, 2018

বাস্তুকথা

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

জেগে ওঠা শপিং মলগুলো বৈভবমহল সাজে

দিনভর রোদ্দুরের আস্ফালনে কাবু হয়ে থাকা

শ্রমজীবী প্রাণীটি ঘাম মুছে  চুপচাপ চোখের

সুখের জন্যে সেদিকে তাকায় ৷ ভেতরে যে ক্রোধ

ঘুমিয়ে থাকে, তা ক্রমশ বিষাদ হয়ে নোনা ঘামের

সাথে শরীরে শুকায় ৷ তার বুক থেকে স্বপ্নমুগ্ধ

মাকড়শা তিরতির করে মলের চুড়োয় উঠে যায় ৷

যে তার যাবতীয় রক্ত শিবিরবিহীন ঢেলে চলেছে

প্রতিদিন তার কাছে শপিং মল আর স্বর্গের সিঁড়ি

সমান অধরাই থাকে ৷ মা-ঠাকুরমা গল্পের সন্ধ্যা

ফিরে আসে তার দুপুরযোগালির ব্যস্ত খোলসে ৷

সে শুধু অপেক্ষায় থাকে প্রতিটি শরতের আসন্ন

ভোরের জন্যে ৷ সেই সকালগুলোই শুধু নিষ্পাপ, থাকে অলৌকিক কুয়াশার কোমল পোষাক পরে৷

বিষাদভাষায় যা লেখা থাকে তাই তার বাস্তুকথা ৷

Friday, September 21, 2018

প্রবল বর্ষণে পাতাগোষ্ঠী বৃষ্টিকে
ধরে রাখে না
মাটিতে মিলিয়ে দেয় রস

মাটিও সে রসদ নিজের কাছে
না রেখে শেকড়ের আনাচে কানাচে
পৌঁছে দেয়

নিঃসর্ত আদান প্রদানে নেই
কোনো কামসাগর

কেবল সৃজনের পাঠশালায়
বেজে ওঠে গোপন শৈলী

শূন‍্যতা

শূন্যতা

দূরের দেও নদী কাছে এসে ভদ্রাসন ভেঙে দিয়ে যায় / জনপদজীবনের হাহাকার হয়ে মুছে ফেলে প্রাচীন বাস্তুচিহ্ন/ প্যারী মাসটারের টোলচিত্র উধাও হবার সঙ্গে সঙ্গে / কোথায় হারিয়ে যায় সদ্য খোলায় ভাজা সাদা মুড়ির উষ্ণ তৈলচিত্র / পাড়াতুতো ঠাকুমার বিবাহপ্রস্তাব একটা আবছা সংসারচিত্র/ দারিদ্র্যময় রোমান্স আর প্রেমদায় স্বপ্নমুখরতায় কবুতরের আত্মগুঞ্জন/

সে সব অতীত খাল বিলের স্রোতের কোমল দৌড় পেরিয়ে /  সখি আজ তোমার চোখের পর্দায়
চলমান আকাশচিত্র দেখি /

Monday, September 17, 2018

আসল কতা অইলো গিয়া

এই বছরের আগিলা পূজাডা গনেইস্সাই ধইরা লাইছে ৷ পরিসংখ্যান দপ্তরের খাতাপত্রে অহন পইরযন্ত দুই হাজার সারে আঢারডা গণেশপূজার পাত্তা পাওয়া গেছে ৷ এইডা খালি আগরতলা শহরের হিসাব ৷  মমস্সলেরটি অহনঅ আইয়া সারছে না ৷ নেট খারাপ ৷ বিশ্বকর্মা ঠাউর রওনা দিবার লগে লগেঅই  তার স্যাটেলাইট ইনডাসটিকের কর্মীরা যে যার বাইৎ গেছেগা ৷ গিরস্ত বাইৎ গেলেগা খেতের কামলারা যেমুন করে আরকী ৷ না আসল কতা অইলো গিয়া হিসাবটা ভেজাইল্লা লাগতাছে ৷আবার সারে কেরে?  এইডা কুন হিসাব ?  দ্যাবতার আবার আধা কী?  না আসল কতা অইলো গিয়া মিনিসিপালির থিক্কা যহন গনাত বাইর অইলো তহন দেহা গেল কুনু কুন চুমুনির ধারে গণেশ ঠাকুররে একলা ফালাইয়া ভক্তরা নেশামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করনের লাইগ্গা হিয়ানতে সইরা গেছে ৷ কী করন যায়, বছরের পর বছর ইট্টু ঠান্ডা গরমের ব্যাপার চইল্লা আইছে ৷পট কইরা তো আর বাদ দেঅন যায়না ৷ মানসম্মানের একটা পেসটিজ আছেনা ৷ এর লাইগ্গা গনইন্নারা গিয়া তথ্য লেহনের লাইগ্গা কেউরে পাইছেনা ৷ ঠাউর বুইল্লা কতা ৷ বাদ দেয় ক্যামনে ৷ মিনিসিপালির প্রণববাবু সাব্যস্তের মানুষ ৷ নাটক পরিচলানা করেন ৷ গুণী মানুষ ৷ চিকন বুদ্ধিও আছে তাইনের ৷ বুদ্ধি একখান বাইর করলেন ৷ মানুষ নাই দেবতা আছে ৷ এমুন যে কয়ডা পাইবেন অদ্দেক হিসাব ধইরা লান ৷ বার বার কী আর আঅন যাইব'? সাপঅ মরল', লাডিঅ বাংলনা ৷ হেমনে যাইয়া এই হিসাডা খারাইছে ৷
আসল কতা অইলো গিয়া গণেইশ্শা পূজার বাজারটা কেমনে ধরছে দ্যাহেন ৷ আগরতলা শহরের চুমুনিডির কুনকুনুডার মইদ্দে শনিবার শনিবারে শনিপূজা অয় ৷ ইডারঅ বাচ্ছরিক পূজা আছে কুনুকুনু জাগাৎ ৷ আগরতলার শনিঠাকুর খুব জাগ্রত ৷ চুমুনির মইদ্দে একছিডেন অইলেঅই শনিপূজা শুরু অইআ যায় ৷ এই শহরে শনিতলা বুইল্লা একটা জাগাঅ আছে ৷ কিন্তু মহাদেবতলা নাই, দুগ্গাতলা নাই, লক্খীতলা নাই, কাত্তিকতলা নাই ৷ আর কত কমু ৷ শনির ইহানঅ খুব নাম ডাক ৷ তাইনেই ছেলিব্রিটি আগরতলার ওপেন ফিল্ডে ৷ গণপতি ঠাকুরের আগমনে এইবার পরের দিনের শনিপূজাডিও মাইর খাইছে ৷ শনিপূজার কয়দিন আগের থিক্কা লাইটিং মাইক মিল্লা রাস্তার মইদ্দে একটা অরন্ডি লাইগ্গা যাইত ৷ এইবার গণপতি বাপ্পা মোরিয়া শনিরে মুড়াইয়া লাইছে ৷ মাথা বদলাইয়া দেওননি ছুডুবেলা? মামা গো! বুজছিলা হাতির মাথাৎ কুনুতা ধরতোনা ৷ তুমি রাজত্ব করবা? আর অইতোনা ৷ পঁচিশ বছর বহুত করছ' ৷ আর জ্বালাইওনা ৷ ( ছরি,  কেউ রাজনীতিৎ নিয়েননা)  ৷ আসল কতা অইলো গিয়া শনিঠাউর গত শনিবার জমাইতেই পারলেননা ৷ মাইক, লাইটিং,  থার্মোকলের বাটিৎ খিচুড়ি, ফাইড রাইস কুনুতানেই কুনু কাম অইলনা ৷ হগ্গলতে এইবার ডাইটিং না করইন্না দেবতাডার দিকে ফিরা দৌড় লাগাইছে ৷ কেমনে এই দেহডা লইআ সুগার টুগার ছাড়া বাঁইচ্চা থাহন যায় ইডাঅই জানত' চায় হক্কলে ৷ডাক্তারের চরণে ট্যাহা ঢালতে ঢালতে ফতুর হ্যাকজন ৷ শনিঠাউর অ আর কিতা করতাইন ৷ বয়সঅ অইছে ৷ কোপের দৃষ্টিও নাই ৷ হাই পাওয়ার চশমা লাগে ৷ কি আর করন যায় ৷ কালের কাল বাইস্সা কাল,  ছাগলে চাডে বাঘের গাল ৷ আবছা দৃষ্টিতে  ভাইগনা গণেশের মন্ডবের দিকে চাইয়াই রইছেন ৷ সামনে দিয়া ঢাক বাজাইয়া, ট্রাকঅ উডাইয়া গণেশরে লইয়া যাইতাছে ৷ মাইনষে গণেশে নামে ধ্বনি দিতাছে গো!  মনে পডে হেই গানডা- ফাইট্টা যায়, বুকটা ফাইট্টা যায়!
    এইত গেল শনি ঠাউরের দুর্দশার কথা ৷ আর আজগা দেহি বিশ্বকর্মারঅ মাথাৎ বারি পড়ছে ৷ তাইনে সক্কালবেলা মাডিৎ লাইম্মাঅই টের পাইয়া লাইছইন  এবছরের ভাইল বালানা ৷ আসল কতা অইলো গিয়া কয়দিন আগে গণেশ ঠাউরের পূজার মাইদ্দে মাইনষে যেমনে লামছে আর চান্দা টান্দা দিয়া হাত খালি কইরা লাইছে খরচাপাতি করছে বিশ্বকর্মার চাপটা যেমন নেওন যাইতাছেনা ৷ মাইনষের হাতঅ ট্যাহা পইসা কিচ্চু নাই ৷ অন্যান্য বছর বিশ্বকর্মা পূজার দিন কুনুক্কানঅ যাওন যাইতোনা গাড়ি রিসকার অভাবে ৷ পূজার আগে মানে দুফরের পরে ছাড়া রাস্তাৎ বাইর অইতনা গাড়ি টারি ৷ এইবার এমন কিচ্চু সমস্যা নাই ৷ হগ্গলে
ট্যাহা কামানির ধান্দাৎ লাগছে সহাল থিক্কা ৷ কুনসময় পূজা দিল',  কুনসময় কিতা অইল ৷ চার দুহানের  কুনাৎ যাইয়া বিশ্বকর্মা পুরিতরকারির অর্ডার দিয়া নিরিবিলি খাইতাছ্ল ৷ দুই একটা কথার আওয়াজ কানঅ বারি দিল ৷ ছয়-সাতমাস দইরা রুজি নাই, রেগার কাম নাই, কন্টাক্টরি নাই , কর্মচারীরার পে- কমিশনডাও ঝুলতাছে ৷ মাইনষের হাতঅ ট্যাহা পইসা আছে আর কত, থাকবঅ কত ৷ আহ হায়রে কী ব্যারাছেরার মাইদ্দে আইলাম- বিশ্বকর্মা মনে মনে কয় ৷ মনে মনে আবার হাসেঅ ৷ কদিন পরে ত বড় বৌদিঅ বাপের বাড়িৎ আইব ৷ আইবার সময় দেইক্কা আইছে কোমারে আঁচল প্যাঁচাইয়া বড়দার লগে ঝগড়া করতাছে বড়বৌদি ৷ বাপের বারিৎ আইঅনের লাইগ্গা ৷ আর ইহানঅ যে ভাতিজা বাজারডার দহল লইয়া লাইছে তাইনে কইতারবনি ৷
    দুহানদাররে টিফিনের ট্যাহাডা দিয়া বাইর অইয়া একটা বিড়ি ধরাইয়া সুখটান দিল বিশ্বকর্মা ৷ চুমুনির মাঝখানঅ বিড়ি জ্বালাইছে ৷ পুলিশে ধরবনি ব্যাডারে ৷ আরেনা বিশ্বকর্মা জানে, ইহানঅ আইন অয় ৷ মানন লাগেনা ৷ গাড়িৎ উডেন, অটুৎ উডেন ৷ য্যামনে মন্দের হ্যামনে ভাড়া লইতাছে ৷ যাত্রী লইতাছে ৷ রাজ্যরে নেশামুক্ত করতাছে ৷ আবার মদের বার খুইল্লা দিতাছে ৷ সাপের মুহঅ চুমা চলে আবার ব্যাঙের মুহেঅ ৷ আসল কতা অইলগিয়া বড় বৌদিরে একটা ফুন করন লাগে ৷ ভাতিজার কান্ডকীর্তিডা জানান দরকার ৷ কদিন আগে বৌদি একটা মুবাইল লইআ আইছিল ৷ একটা সিম লাগাইয়া দেওনের লাইগ্গা ৷ একটা নিজস্ব মুবাইলের খুব দরকার ৷ ভক্তরা ফুন করে লক্কু-সরুর মোবাইলে ৷ তারা বিরক্ত অয় ৷ তারার গেইম খেলায় ডিসটাপ অয় ৷ একজন ভক্ত গতমাসে দিল মুবাইলডা ৷ বিশ্বকর্মা তার সিমের টাল থিক্কা একটা স্পেশাল নম্বরের সিম লাগাইয়া দিল মুবাইলডাৎ ৷ নম্বরটা মনে থাকার মতো আবার নিরাপদও ৷ পাঁচটা পাঁচ আর তিনটা তিন দিয়া নম্বরটা ৷ বৌদিরে বুঝাইয়া কইল নম্বরের ব্যাখ্যা ৷ পাঁচটা পাঁচ মানে বড়দার পঞ্চানন আর তিনটা তিন অইলো আপনার ত্রিনয়ন ৷ সব মিলাইয়া দশ ডিজিটের নম্বর ৷ বৌদি খুব খুশি ৷ পহেটতে নিজের মুবাইলডা বাইর করল বিশ্বকর্মা ৷ নম্বরটা মনে আছে ৷ ফাইভ ফাইভ ফাইভ ফাইভ ফাইভ থ্রি থ্রি থ্রি...... হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো বৌদি ৷ আমি বিশু কইতাছি ৷ আরে!  রিং অয় ৷ কাইট্টা ৷ আবার করে ৷ এবার কয় নট রিচেবল ৷ আবার ৷ নেটওয়ার্ক ষেত্র সে বাহার হ্যায় ৷ আবার ট্রাই করে ৷ হুরুজা ৷ সুইচ্ড অফ ৷ মোবাইল কুম্পানিডিও যে ... ৷ আরে স্বর্গে তো বিশ্বকর্মারই নেটওয়ার্ক চলে ৷ কারে দুষতাছে ৷ তাইলে কী তার কর্মচারীরা? আসল কতা অইলো গিয়া..........

Thursday, September 13, 2018

প থ


কী করে যে মেঘের দেশে,জলের কাছে যাই
মুদ্রারাক্ষস মঞ্চে উঠে ভাওয়াইয়া ভজনায় মাতোয়ারা
খেতের ধান মাঠেই ঝরে গেলে পরে
নবান্ন হতে কী মতে?
সাঁইগো তোমার দাড়ির বনে কোন গুণ যে ধরো

আমি বান্দা ঘুরে মরি মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ার
আর তোমার নামে জিকির সবাই
অলিন্দে অলিন্দে আঘাত করে
আমার কান ঝালাপালাগো মুর্শিদ

আমি কোন দিকে গেলে মেঠোপথ পাব।

Tuesday, September 11, 2018

সময়ের বস্তাবাঁধনের ঘূর্ণি থেকে
কী করে বিচ্ছিন্ন হতে হয়
সে কৌশল
কেউ শেখালো না
না স্যারেরা না কোনো দিদিমণি

বন্ধুদের দিকে যতো
বাড়াতে চাই
আমার আর্ত হাত
কে যেন টেনে নিয়ে
দুমড়ে মুচড়ে দেয়
সেই নাকি সময়

কেন এমন করে সময়
কোনো দিকে তাকাতে পারি না
ঘাড় ঘোরানোটাও বারণ

বলুন বন্ধুরা
সে কী আমার ঈর্ষাতুরা ঘরণি
কিংবা ছিটকে যাওয়া প্রেমিকা

লাঙলের অগ্রমুখে লুকিয়ে আছে সীতার কান্নাজনম

ডা না

ডানা
পাখির ডানার মধ্যে লুকানো স্বপ্ন আড়ালে বড়ো হয়/আর আকাশ ধরার জন্যে সে পাড়ি দেয় অনন্তপথ/সে পথের বার্তা কেবল জমাট তুলোর মেঘের প্রদেশ/তোলপাড় করেনা/সমস্ত সম্ভাব্য স্বপ্নকে বাঁচিয়ে দেয় নিষ্ঠ নিয়মে/

Friday, September 7, 2018

তুমি আমার কথায় রেগে যাও বলেই
বার বার উসকে দি তোমার অচিন অভিমান

আমার শব্দের ময়ালে শুরু হয় তোলপাড়

কবিতা হওয়ার জন্যে সে কী দৌড়ঝাঁপ
আমি আবডালে দাঁড়িয়ে কেষ্টঠাকুর

বলো তাহলে কেমন অঘটন
************-*-*--***********
তুমি নিজেকে বড়ো বেশি কুহেলিপ্রবন ভাবো
অথচ আমার সাংকেতিক ভাষান্তরের কোন মাধ্যম তোমার নেই

Thursday, September 6, 2018

শিক্ষক হতে চেয়ে এই পেশায় এসেছিলাম ৷ একজন নিষ্ঠ শিক্ষার্থীও হতে পারলামনা ৷ গত শতাব্দীর আটাত্তর সালে মালিগাঁওয়ে জয়েন করার আহ্বান এসেছিল সহকারি স্টেশন মাস্টার হিসেবে ৷ ঘরকুনো স্বভাব আর পড়াশুনোর প্রতি আগ্রহ আর আদর্শের প্রতি আনুগত্যে বিদ্যালয় শিক্ষকতায় এলাম ৷ দেখলাম যে বিদ্যা আর জ্ঞান নিয়ে এ পেশায় এসেছি অনেক শিক্ষার্থী আমার চেয়ে অনেক বেশিই জানে ৷ আর সহকর্মী শিক্ষক শিক্ষিকাগণ তো যার যার বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী৷ দিকপাল সব ৷আমি তো 'হংসমধ্যে বকযথা' ৷ জ্ঞানবিদ্যার দুর্বলতায় কুঁকড়ে যাই প্রতিদিন ৷ শ্রেণিকক্ষে রোজ যাই ৷ ডায়াসে গিয়ে দাঁড়াই ৷ আক্ষরিক একটা ব্যবধান তৈরি হয় ছাত্রশিক্ষকের সত্যি ৷ কিন্তু আমি মনশ্চক্ষে দেখি নিজেকে ওই শিক্ষার্থীদের পেছনের সারিতে ৷ হ্যাঁ, ভাবলাম আমার পেশাগত উৎকর্ষতা আনতে হলে আমাকেও শিক্ষার্থী হতে হবে ৷ হয়ে গেলাম শিক্ষার্থী ৷ প্রতিদিন আমি নিয়ম করে বাধ্য ছাত্রের মতো বইয়ের সান্নিধ্যে থাকতাম ৷ ছাত্রছাত্রীদের ভালো পাঠ দেওয়ার জন্যে থাকত আমার প্রস্তুতি ৷ প্রতিদিন ক্লাসের শেষে নিজেকে প্রশ্ন করতাম, দিনের সেরা পাঠটা দিতে পারলাম তো? সত্যি কথা তৃপ্তি কোনোদিনই আসতনা ৷ লাজুক প্রকৃতির কম কথা বলা মানুষটা কীভাবে আকর্ষক বাচনভঙ্গী আয়ত্ব করব ৷ বারান্দায় পায়চারী করে উৎকর্ণ হয়ে শুনতাম অগ্রজ শিক্ষকদের পাঠদান ৷ অনুকরণ করার চেষ্টা করতাম তাঁদের কৌশল ৷ সবার গুণগুলোকে ফুলের মতো আহরণ করে মালা গেঁথে গলায় পরে আমি নকল গুরুদেব শুধু করেই খেয়েছি গোটাজীবন ৷ পেশায় দক্ষতা আনার জন্যে যেই গুরুদের একলব্যের মতো অনুকরণ করেছি আড়ালে সেই গুরুদের প্রণাম ৷ গুরুগিরির অভিনয়ে কোন ফাঁক রাখিনি ৷ আর এখানে সফল তার প্রমান পেলাম গতকাল ৷ সকাল থেকে অজস্র ফোন, মেসেজে শুভেচ্ছা, স্টিকার ৷ কাছের ৷ দূরের ৷ দূরান্তের ৷ সবাই আমার ছাত্র কিংবা ছাত্রী ৷ 'আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি'৷ ওদের কীকরে বোঝাই আদতে 'সবার আমি ছাত্র' ৷ আমি তোমাদের কাছ থেকে অনেক নিয়েছি আমি ৷ তোমরা 'গ্রহণ যত করেছ ঋণী তত করেছ আমায়' ৷ পেশাগত দিক থেকে সরকারি বিদায়পত্র পেলেও যেন আমার রেহাই নেই ৷ ভাবছিলাম বেলা তো পড়ে এল ৷ একটু ঘুরেটুরে বাকি দিনগুলো গুজরান করে দেব ৷ চলছিলও তেমনটা ৷ চক্কর দেওয়া শুরু করেছিলাম ৷ পেশার নেশায় মত্ত দিনগুলোতে সহধর্মিনীকে নিয়ে একসঙ্গে বেরুইনি একদিনও ৷ লজ্জায় ৷ ছোট্ট জায়গা ৷ সবাই সবার পরিচিত ৷ অনেকে গ্রামীন সরল রসিকতাও করেন সম্পর্কের অশ্লীলতা মিশিয়ে ৷ একটা উদাহরণ দিচ্ছি ৷ বিয়ের পরপরই নববধূকে নিয়ে এক প্রতিবেশির বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষায় যাচ্ছি ৷ ঠা ঠা দুপুর ৷ গাঁয়ের বটগাছের তলায় বিশ্রাম করছেন মনমোহন কাকা ৷ আরো কয়েকজন ৷ পাশ দিয়ে পেরিয়ে যাবার সময় মনমোহন কাকা বলে উঠলেন, কিআ রেবা ৷ তোঁয়ার মারে লই কনডে য'র? উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠল ৷ বলে কি রে এ ব্যাটা ! চোখে দেখতে পায়না? আমি এমন বেকায়দায় পড়িনি কখনও ৷ একে গরম ৷ তার মধ্যে লজ্জায় আমার চোখ -মুখ-কান দিয়ে গরম ভাপ ছুটছে ৷ জবাব দেব না ঝগড়া করব ৷ মুহূর্তের মধ্যে সমাধান করলেন আমার সঙ্গের ভদ্রমহিলা ৷ তাঁর চটপট জবাব, আন্নের মারে এনা লই যার ৷ এই এনা ৷ আক্কল ওক ৷ আর কইবানি? যারা এতক্ষণ আদি রসিকতায় হেসেছিল তারাই একযোগে মনমোহন কাকাকে ইঙ্গিত করল ৷এই সমাধানে আমি রীতিমতো চমকে যাই ৷ মনে মনে ভাবি, জীবনে একজন শক্ত বডিগার্ড পেয়েছি ৷ সেই থেকে আমরা দুজন নিজের এলাকায় খুব একটা একসঙ্গে বেরুতামনা ৷ বেরুলেও একটা নিরাপদ দূরত্ব থাকত দুজনের মধ্যে ৷ শুধু উনি গোস্সা করে বাপের বাড়ি গেলে সেখানে গিয়ে একসঙ্গে ঘোরাফেরা করেছি গিন্নির মান ভাঙানোর জন্যে ৷ রিটায়ার করার পর বেশ ঘুরছিলাম দুজনে ৷ ছবিটবিও দিচ্ছিলাম ফেসবুকে তারমধ্যেই মহকুমার শিক্ষক দিবস উদযাপন কমিটি তলব করল আমাকে ৷ দায়িত্বও একটা কাঁধে চাপল ৷ গতকাল আবার ধরে বেঁধে তুলে দেওয়া হল অনুষ্ঠানমঞ্চে ৷ মঞ্চভীতি আমার বরাবরের ৷ আমি আড়ালে থেকে কাজ করতে ভালোবাসি ৷ দায়িত্ব এলে ফাঁক রাখিনা ৷ বেশি সিরিয়াস হতে গিয়ে কষ্টও পেতে হয় ৷ এমনসব প্রিয়জনের কাছ থেকে আব্দার এল যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি দীর্ঘদিন, শিক্ষার্থী হিসেবে পেয়েছি, পেশাগত প্রশিক্ষণ দেবার সময় সান্নিধ্য পেয়েছি ৷ ' অনুরোধ তার এড়ানো কঠিন বড়ো' ৷ বসতেই হল অনুষ্ঠানমঞ্চে ৷ আবরণ উন্মোচন হল স্মরণিকার ৷ যা সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব বর্তেছিল আমার উপর ৷ সময়ে লেখা, বিজ্ঞাপন না আসা, টাইপিংয়ের সমস্যা,প্রুফ দেখা সর্বোপরি ছাপতে দেওয়ার সময় গোদের উপর বিষফোড়ার মতো টানা বিদ্যুৎবিভ্রাট ৷ সব মিলিয়ে দক্ষযজ্ঞের মধ্যে এই স্মরণিকা প্রকাশ ৷ ফলে যা হবার তাই হয়েছে ৷ হাঁসজারু গোছের একটা কিছু হাজির করা গেছে ৷ এসব কাজ যথেষ্ট সময় নিয়ে না করলে সমৃদ্ধ হয়না ৷ সাফল্যও আসেনা ৷ উনিশ বছর ধরে যখন স্মরণিকাটি প্রকাশ হয়ে আসছে তাহলে কয়েকমাস আগে থেকেই তো লেখা সংগ্রহ করা যেতেই পারে ৷ শিক্ষকরা যেখানে লেখক সেখানে মান আর বিষয়বৈচিত্র্যের অভাব ঘটার কথাই নয় ৷ প্রতিকূলতা সত্বেও এ সংখ্যাটি যথেষ্ট সমৃদ্ধই হয়েছে ৷ ত্রুটি বা ঘাটতি যা রয়েছে সবই আমার ৷ এখানে এসেই আমার অভিনয়ে ব্যর্থতা ৷ গতকাল তাই দীর্ঘদিন পর কিছুটা ব্যস্ততায় কাটিয়েছি ৷ মঞ্চে বসেও অনেক মেসেজ পেয়েছি ৷ কিন্তু জবাব দিতে পারিনি ৷ গতকাল যাঁরা আমাকে বিভিন্নভাবে শুভেচ্ছা, সম্মান জানিয়েছ/জানিয়েছেন সবাইকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভকামনা জানাচ্ছি ৷ সর্বশক্তিমান সবার মঙ্গল করুন ৷

Wednesday, September 5, 2018

স্তব্ধতার সময় প্রতিটি পতনের শব্দ  শোনা যায়      বাতাসের ফিসফিস নিঃশ্বাসও                কানে আসে

দূরের ঘন্টাধ্বনি সময়ের আঁক কষে      ভবিতব্যের দড়িতে দুলে দুলে
*******************************
এখন এমন সিঁদেল সময়
চোরা রিংটোন বাজায়  অবেলায়
ধরলেই শোনাবে সর্বশেষ প্রস্থানবার্তা

এভাবেই একদিন  আমার খবরও পৌঁছাবে
স্বজন সুজনের মোবাইলে

বুকের ভেতর বাংলোবাড়ি দিয়েছিলাম
কাছে থাকবে কবিতা লিখবে
ফুল ফোটার আওয়াজ পাবো শব্দের জোছনায়
আমার হা হুতাশ ঘর ছেড়ে দিয়ে
গেলে অনন্তের আলপথে
শীতল শিশিরে হিম পায়ের দাগ


বিছানায় পড়ে আছে কবিতার  খাতা
কলম আর পরিচিত  চশমা

চলমান ফ্যানের হাওয়ায় তোমার কস্তুরীগন্ধ
ঘরময় ছড়িয়ে পড়ছে নিরালে