গতকাল সন্ধ্যায় আগরতলা চেকপোস্টের সর্বশেষ বাধা অতিক্রম করে যখন বাইরে এসে দাঁড়ালেন বাংলাদেশের সম্মাননীয় অতিথিবর্গ তখন আপনমনেই বলে উঠলেন এই সময়ের শক্তিমান কথাকার, জলজীবনের নিবিড় উন্মোচক শ্রদ্ধেয় হরিশংকর জলদাস , 'ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে' ৷ ভাবছিলাম, হঠাৎ করেই কী এই রবীন্দ্রসূক্ত উচ্চারিত হল তাঁর ওষ্ঠদ্বয়ে ? স্বীয় ভূখন্ড পেরিয়ে এসে আর এক ভূমিতে চরণচিহ্ন দিয়েই তিনি যেন অনুভব করলেন বৃহতের আহ্বান ৷ আবহমানকাল ধরে প্রবাহিত যে রক্তধারা, যে সংস্কৃতির স্রোতস্বী পুরুষানুক্রমে তিনি বহন করে চলেছেন তারই প্রতিফলন যেন এই অমোঘগোধূলির মায়াঅন্ধকারে এই ভূমিভাগেও চিরবিচ্ছুরণ ঘটছে ৷ এখানেই নিজেকে হৃদয় উজাড় করে মেলে ধরা যায় ৷ এখানে তাঁর অন্তর্গত ভদ্রাসন থেকে বেরিয়ে এসে বৃহদালয়ে প্রবেশের কাঙ্ক্ষার তীব্র আর্তি উৎসারিত ৷ মানুষের জীবনের প্রতিমুহূর্তের ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে, প্রতিপলের সুখ আহ্লাদের সঙ্গে ও তার বিপরীতে মানবিতার চরম অসম্মানের দগ্ধক্ষণের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থেকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিশাল ভুবনের মকরন্দের আস্বাদটি যাঁরা নেন তাঁদের কাছে আপননিলয়টি অনেক পেছনে পড়ে থাকে ৷ এক তীব্র যন্ত্রণা থাকে অসীমের মহালয়ের সঙ্গে মিলনের ৷ আরো আরো বড়ো জগৎটার সঙ্গে মিলিত হবার ৷ একজন জীবনসন্ধানী নিজেকে ভেঙে আসার আকুতি আজীবন বয়ে চলেন ৷ একজীবনভর খুঁজে ফেরেন সেই সত্যপিরকে যিনি ক্ষুদ্রকায় প্রায়ান্ধকার অলিন্দ থেকে তাঁকে বিশ্বপ্রাসাদের বিরাট আঙিনায় পোঁছে দিতে পারেন ৷ আর সেই মধুঅঙ্গনের সঙ্গে বহুপরিচিত 'মোর ঘরের' সাথে কোনো মিল থাকেনা ৷ সেখানেই তো জীবনের আসল আনন্দযজ্ঞ ৷ অকৃত্রিম প্রতিবেশ ৷ জীবনসন্ধানী সে পথ দিয়েই পায়ে পায়ে এগিয়ে যান ৷ তার জন্যে কম্পাস সেই অন্তর্পুরুষ ৷ যিনি পারেন ঘরছাড়া করাতে প্রতিটি সৃজনকর্মীকে ৷
সেপ্টেম্বর একুশ, দুহাজার আঠারো