Sunday, October 31, 2021

মি। স। ক। ল

আলোর উল্লাস উদার হয়ে জেগে উঠলেই
তোমাকে কেবলই মনে পড়ে

ভাবছি ভার্চুয়াল ফোঁটার জন্যে
তোমাকে মিসকল দেবো

Thursday, October 28, 2021

কালো মেয়ে

কালো মেয়ে
---------------------------------
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
**********************
আলোরাতের কালো মেয়ে লো  হৈমন্তী ঘ্রাণ তোর গায়ে 
কুয়াশার দীঘল রুমালে তুই  রেখেছিস জড়ায়ে

 লিপিদাগ শীতের আমন্ত্রণের  বিরল টেরাকোটা
লিখেছিস অমোঘ আখরে কালোবরণ ফোঁটা

যতোই জানি তোর ঠিকানা এই যে আঁধারমায়াগলি 
ততোবারই ভুলে যাই আমার কষ্ট গেরস্থালি

  এত কাল অবলীলায় মেখে নিলি তুই অঙ্গে
 তোর আলো বিলিয়ে দিলি তোর রূপটানেরই সঙ্গে ৷

চাঁ দ ম ঙ্গ ল

চাঁদমঙ্গল

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

অমোঘ বেদনার নিদান নিয়ে জেগে আছি আকাশের হাওরে । পুরাণের কথকেরা অপবাদ দিয়ে আমার জন্য তৈরি করে গেছেন চিরস্থায়ী মাথুর । হ্যাঁ, পুরাণ যাকে প্রেমিক বানায় সে প্রেমিক । যাতে এঁকে দেয় কলঙ্কে সে কলঙ্কিত  আজীবন । আমার কোন সহোদর নেই । আমার কোন প্রভু নেই । আমার প্রিয় ঘরনি নেই । পৃথিবী তার দিনলিপি খুলে আমাকে চিহ্নিত করে দ্বিঘাত বিভাজনে । কর্তনমুক্ত কাটাতে পারি এক পক্ষ । আমার ষোলোকলা ভাঙে আর গড়ে প্রতি পক্ষে । ভাঙা-গড়ার নিরন্তর উল্লাসের ভেতর রাতের পর রাত জাগছি আমি । জঠর ছেড়ে জীবনের পাঠ । পৃথিবীর দু প্রান্তেই আমার ঘর । আকাশের নীলহ্রদে বেয়ে চলি হলদেডিঙি । কি অদ্ভুত হাতেখড়ি দিয়ে শিখেছি বিষণ্ননামতা । পেয়েছি নির্জন এক  উদাসনগর । অগণিত নক্ষত্রমণ্ডলী আর ছায়াপথ সেখানে পারিজাতবাগিচা । মন্ত্রঃপূত মাদুলির ঘোরে যেন আমি সে পথে হাঁটি প্রতি রাত । এক আদিগন্ত দীঘলনদীর বুকে অন্ধকারে ছেড়ে যাই আমার নির্মলডিঙার বিহার । সন্ধ‍্যার বশীকরণে আমার প্রাচীন অবয়ব এগোতে থাকে অনিশ্চয় ঊষার রক্তিম ঘাটলার দিকে । কার অদৃশ‍্য আকর্ষণ নিয়ত টানে আমার উজ্জ্বল অবয়ব ? কার জন্য জাগি রাতের পর রাত ? আমার শরীরের কলঙ্ক দেখে সবাই । কলংক পারে শুধু তর্জনীশাসন । দূরের নগরী গন্তব‍্য প্রতিরাত । অথচ দেখিবার কেহ নাই । আমার ধ্রুবযাত্রা । কে আছো অনন্ত গোসাই ! তুমি কি আমার খবর জানো? পড়েছো কি আমার সঙ্গীহীন মায়াপথের মানচিত্র !

আমার শরীর বেয়ে ঝরে পড়ে উজ্জ্বল আলো । সোমপ্রভ আমি । আমার শরীর থেকে জন্ম নেয় আরেক মায়াতরুণীর শরীর । সুন্দর দোপাট্টা ছড়িয়ে সে এক অনুপম নারী । আমার প্রেমিকা । আমার দয়িতা । জোছনা তার নাম । হলুদ চন্দন তার শরীর । তাকে দেখে পাগল হয় মাতাল হরিণেরা । সে যখন সেজে ওঠে আমার পুরো শরীর জুড়ে তখন চরাচর জুড়ে অদ্ভুত মাদকতার ঘ্রাণ । আমাকে ভুলে যায় সবাই । বারোমাসি গান ধরে বাঙালি কবিয়াল । জোছনাকে নিয়ে আমার প্রেম । জোছনা আমার ঈর্ষা । আমি রূপবান সোম । প্রেমিক চন্দ্র । আমার প্রেম তো পুরাণপ্রবাহিত । কীর্তনকুলীন । আপন নাভিগন্ধে যেমন মাতাল হরিণী । আপন রূপে আমি গুণ মন ভোর । সুরলোকের তাবৎ তরুণীরা আমার প্রণয়েরর আশায় আতর মাখে গায় । অঙ্গরাগের কৌশল শেখে । রানিমক্ষিকার মতো একে একে কাছে আসে । আমিও বাঁধা পড়ি সুন্দরের কাছে । সুরসুন্দরীদের কাছে । পুরাণবন্দিত প্রেমিক আমি । সাতাশ দক্ষকন‍্যার মাঝেও আমি রোহিনীপুরুষ । রোহিনীপ্রেম আমাকে অভিশপ্ত করে । আবার শাপমোচনও হয় । আমার দেবদ্যুতি, আমার শৌর্য ও বীর্য প্রিয় হয়ে ওঠে দেবপত্নীসমাবেশে । চন্দ্রপ্রণয়ে ভেসে যায় তাদের সংসার । সমূহ আভিজাত‍্য ।দেববণিতাগণ ঘিরে থাকে আমাকে । আমি ডুবে যাই ভালবাসার অনন্তসায়রে । আমাকে আলিঙ্গন করেন আমার গুরুপত্নী স্বয়ং । অসামান্যা সেই রমণী আমার প্রেমের জোয়ার । জোছনাবান । নীতিশাস্ত্র পুড়ে যায় প্রণয়বহ্নির আগ্রাসী শিখায় । রাগবিলাসিনী সে রমণী তারা । স্বয়মাগতা । সেই মহামৈথুনে বুধসৃজন । চন্দ্র বংশের পত্তন । সেই প্রেম ঘরপালানো প্রেম। চারদেয়ালের বাঁধন ছেড়ে উদ্দাম হওয়ার প্রেম । আমার মিথভূষণ । এই প্রেমও আমায় করে অভিশপ্ত । আজন্ম কলঙ্কিত । আজও আমার বুকে চিরকলঙ্কের ক্ষতচিহ্নের ইঙ্গিত ।

সেই অভিশপ্ত ক্ষণ থেকে আমার কোন গুরু নেই । আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই । আমার আবহমান দিঘলদরিয়ার কথকতায় দিনলিপিময় ডিঙিভ্রমণে হারিয়ে গেলেই আমাকে তুলে ধরে এক কৃশানু নারী । সে আমার চিরঅনুগামিনী । আমার তারা । সমস্ত সংস্কার ভেঙে প্রতিটি পক্ষে আমার নবীন শীর্ণ শরীরে সে দেয় মোক্ষম প্রলেপ । জ্যোৎস্নার চন্দন । আমার নাওবাঁকা শরীরে তারার আশ্রয় চিরকালের ।

Monday, October 25, 2021

নির্বিকল্প জাগরণের কবি পীযুষ রাউত

নির্বিকল্প জাগরণের কবি পীযুষ রাউত 

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশ ও বহির্বিশ্ব এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে । এই সংকট আমাদের চিন্তা চেতনা অস্তিত্ব এবং সৃষ্টিতেও গভীর ছাপ পড়তে বাধ্য । এই সময়ে যে সংকট, যে যন্ত্রণা তা কবি অনুভব করেন তাঁর শিল্পচেতনার মধ্য দিয়ে । প্রত্যেক কবি তাঁর অন্তর্গত হৃদয়ের ক্ষত এবং প্রকাশ ভঙ্গিমায় সমকালের প্রতিফলন ঘটান । কালের গতির ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে কবি কবিতায় ব্যক্তিগত ভাবনা, মেধার ক্ষরণ এবং শিল্প সত্তাকে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীল এবং হৃদয় সংবেদী বক্তব্য প্রকাশ্যে তৎপর থাকেন । তাঁর মগ্ন চৈতন্যে আলোড়িত বিশ্বসংসারের ক্রমপরিণতি, তাঁর যাপন আর উপলব্ধির মধ্য থেকে উঠে আছে নিবিড় অভিজ্ঞতা । তাঁর ভাষার চলনে  জীবনের দিগন্তব‍্যাপী সঞ্চরণশীল শব্দমধুকর বয়ে যায় স্বচ্ছ নিসর্গলাবণ‍্য নিয়ে । কবিতার বয়নে চিত্রিত হয় স্বতস্ফুর্ত লিরিকলিপি । কবিতার ভাষার আশ্রয়ে কবি সংকেতনিগূঢ় ভাষায় পাঠককে উপহার দেন আত্ম-অভিজ্ঞতার বাচনিক রূপান্তর । কবির ব‍্যক্তিচেতনার পারাপারহীন বোধবিন্দুর অস্থিরতা ও সংশয়, বিপন্নতা ও দ্বন্দ্ব বিশুদ্ধকথায় প্রকাশিত হয় । চারদিকের শংকা ও অনিশ্চয়তার মধ‍্যেই কবি তাঁর সৃষ্টির সংবেদনা অর্জন করেন ।
কবিতা পাঠকের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে সেটা পাঠক বিশেষে তারতম্য ঘটে । এই প্রজন্মের পাঠক যেমন এক অসহ্য দহনকালের প্রতিনিধি তেমনি কবির কাছেও জীবনদাহ‍্য সমস্ত প্রকরণ, সমস্ত জটিল শব্দায়ণ অন্ধকার ও আলোকের সমান্তরাল উপলব্ধি যেন বিদগ্ধবাচনিক অনুভবের ও উপলব্ধির মধ্য দিয়ে পাঠকের সামনে তার স্বরূপ উপলব্ধ হয় । কবি তার সৃষ্টিতেও পাঠকের মননভান্ডে একটা সম্পর্ক তৈরি করেন । প্রাকৃতজীবনের স্পন্দন ও তার প্রাকরণিক প্রকাশে জীবনের সঙ্গে নিবিড় সংযোগসূত্র রচনা করে । এই ফল্গুবাহী সূত্রই পাঠকের অন্তর্লীন কাম‍্য । অন্বয়ের বীক্ষণ । কবির এই শিল্পবৈদগ্ধ‍্য পাঠকজনকে গাঢ়সম্পৃক্ত করে ।

পঞ্চাশের দশকে বাংলাকবিতায় জীবনানন্দের অনুষঙ্গ যেভাবে ছায়াবিস্তার করেছিল তা ক্রমশ  স্বাবলম্বিতা অর্জনের দিকে এগিয়ে যায় বৈদগ্ধ‍্য, নাগরিক পরিশীলনে, বিমূর্ত ভাববিন‍্যাসে, অনিকেত আধুনিকতায় ও আন্তর্জাতিক  সূত্রসন্ধানে । এই দৃষ্টিভঙ্গি  ক্রমে স্বতন্ত্র বিশ্ববীক্ষণে রূপান্তরিত হতে সময় নেয়না । ষাটের শুরুতেই সৃষ্ট নানা কবিতা  আন্দোলন বাংলাকবিতার  নতুন সম্ভাবনার অভিযাত্রা । কিন্তু কেবলমাত্র ধ্বংস, বিনাশ, আত্মপীড়ন, ক্ষুৎকাতর ও জান্তববৃত্তির প্রকাশই কবিতার একমাত্র পরিচয় নয় । এই আত্মবিস্মৃতি ও আত্মপ্রতয়ের ঘূর্ণ‍্যাবর্তের হুল্লোড়ের মধ‍্যেই অস্থির অন্বেষণে উঠে আসে আর এক প্রত‍্যয়ী চেতনা । নবনির্ণিত এই চেতনায় কবিতার ভাববীজে যুক্ত হল আটপৌরে ও অভ‍্যস্ত শব্দবন্ধের উপল প্রবাহ ।

ষাটের দশকে 'অতন্দ্র' পত্রিকাকে কেন্দ্র করে পূর্বোত্তরের বরাক উপত‍্যকায় বাংলাকবিতার চর্চায় শক্তিপদ ব্রহ্মচারী, উদয়ন ঘোষ, বিমল চৌধুরী, করুণাসিন্ধু দে,ত্রিদিবরঞ্জন মালাকার, অতীন দাশ,দীনেশলাল রায়, কালীকুসুম চৌধুরী, ব্রজেন্দ্রকুমার সিংহ, জিতেন নাগ, রুচিরা শ‍্যাম, উমা ভট্টাচার্য্য, শান্তনু ঘোষ,রণজিৎ দাশ, মনোতোষ চক্রবর্তী, 'সাহিত‍্য'তে বিজিৎকুমার ভট্টাচার্য্য প্রমুখ জীবনবৃত্তের প্রাকরণিক প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছেন । সেসময়ের 'অতন্দ্র' পত্রিকার মাধ‍্যমে প্রথম পরিচিতি পান কবি পীযুষ রাউত । ফলে বরাক উপত‍্যকার কবিতাভূমির সমৃদ্ধ সৃষ্টিভান্ডার তাঁকে করেছিল পরিপুষ্ট ।

উত্তর-পূর্ব ভারতের শক্তিমান কবি ও প্রাবন্ধিক বিজিতৎকুমার ভট্টাচার্য তাঁর প্রবন্ধ লেখেন, 'পীযূষ স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে ১৯৫৯ সালে কাছাড় থেকে কৈলাশহর গিয়েছিলেন । কাছাড়ের কবি করুণাসিন্ধুর বন্ধু সিতাংশু পাল ছিলেন পীযুষেরও বন্ধু । ওখানেই তাঁর আধুনিক বাংলা কবিতার সঙ্গে সম্পর্কের শুরু ।১৯৬৩তে কৈলাশহর থেকে পীযূষ যখন ত্রিপুরার প্রথম কবিতার কাগজ 'জোনাকি' প্রকাশ করেন তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন কবি মানিক চক্রবর্তী, প্রদীপ বিকাশ রায় এবং শিল্পী-কবি বিমল দেবও কৈলশহরের এক দল শক্তিশালী কবি গোষ্ঠীর কাগজ ছিল 'জোনাকি' ( 'রামনাথ বিশ্বাস স্মারক বক্তৃতা'–উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলা কবিতা/ বিজিত কুমার ভট্টাচার্য ) ।

ষাটের দশক থেকে কবি পীযূষ রাউত বাংলা কাব্যজগতে তার যে অভিযাত্রা শুরু করেন,আজও তিনি বাংলা কাব্যে সমানভাবে এবং অক্লান্তভাবে পরিক্রমা করে চলেছেন । ইতোমধ্যে তাঁর প্রায় কুড়িটির অধিক কাব্যগ্রন্থ ও অন‍্যান‍্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ।  জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও অনুভবের যাত্রাপথে প্রতিনিয়ত বিরামহীন অতিক্রম করে চলেছেন তিনি । প্রত‍্যহিক জীবন থেকে আহৃত গভীর বিশ্বাস এবং দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর এক একটি কাব্যগ্রন্থে । তাঁর কবিতা ইতোমধ্যে অসংখ্য পাঠকের বিমুগ্ধ আগ্রহের সৃষ্টি করেছে ।  তাঁর কাব্যে তিনি কখনো মূর্ত থেকে বিমুর্ত, কখনো সময়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, কখনো অভিজ্ঞতার নির্যাসের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন । তাঁর অক্লান্ত আত্মপর্যটনে এক স্বতন্ত্র কবিসত্তা নিয়ে বাংলা কাব্যে তিনি বিরাজ করছেন । ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প দিয়ে তাঁর লেখালেখি শুরু । তারপর তিনি একের পর এক কাব্য গ্রন্থ প্রকাশ করে চলেছেন । ত্রিপুরার প্রথম কবিতার কাগজ 'জোনাকি' পীযূষ রাউত শুরু করেছিলেন ষাটের দশকের সূচনায় তারপর তিনি ছোটগল্পের কাগজ 'স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন' সম্পাদনা করেন । তাঁর সম্পাদিত শেষ কাগজ 'অরণ্যে আমরা' । কবি পীযূষ রাউত প্রতিদিন কবিতা রচনা করেন এবং কবিতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত তার বসবাস ।
একজন যথার্থ কবি তাঁর কবিতায় সর্বদা একটা স্বাতন্ত্র্যবোধ রক্ষা করে চলেন । একজন মৌলিক কবি তাঁর কবিতায় শুধুমাত্র নিজস্ব পরিচিতি রক্ষা করেন না । তিনি কবিতাকে তিল তিল করে রচনা করে তার নিজস্ব কাব্য ভুবন গড়ে তোলেন । যে কাব্য ভুবন অন্য কারো সঙ্গে মিশ খায় না । দেখা যায় যে একজন শক্তিশালী কবি তার পূর্বজ কোন কবির প্রভাবের দ্বারা প্রভাবিত হন  । কিন্তু ধীরে ধীরে সে কবি তাঁর একটা নিজস্ব কাব্যভুবন গড়ে তুলতে সক্ষম হন । এক সময়ে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যভুবন থেকে বেরিয়ে এসে রবীন্দ্রনাথ নিজস্ব কাব্যমানস ভুবন রচনা করেছিলেন । আবার রবীন্দ্রনাথের কালেই নজরুল ইসলাম বাংলা কাব্যে এক স্বকীয় ভুবন গড়ে তোলেন । রবীন্দ্রসমকালীন রবীন্দ্রবলয় ভেঙে বেরিয়ে আসেন জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখ । পীযূষ রাউত ও তার সমকালে শক্তি-সুনীল, উত্তর-পূর্বের শক্তিপদ ব্রহ্মচারী, করুণা সিন্ধু দে প্রমুখদের যে কাব্য বলয় তা থেকে বেরিয়ে নিজস্ব কাব্যশৈলী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন । কবি প্রতিনিয়ত নিজেকে ভাঙছেন এবং গড়ছেন।  তাই তাঁ দ্বিধাহীন উচ্চারণ– 'তাহলে পীযূষ রাউত তিন মাস এক বছর অন্তর অন্তর/ তুমি পিনকোড বদলাচ্ছ/ বদলাচ্ছ মোবাইল সিমও ।/ এটা অবশ্য তোমার বহুবছরের শখ ।এটা তোমার/  রক্তবাহিত অভ্যাস গৃহস্থের চোখে/ বদ অভ্যাস।/ হতে পারে এটা তোমার ভবিতব্য ।'( যাযাবর ) কবি পীযুষ রাউতকে আজও আমরা সমানভাবে এই সময়ের কাব্যভুবনের একজন পরিচিত স্বতন্ত্র মেধা হিসেবে দেখছি । তাঁর স্বকীয়তা, তাঁর স্বাতন্ত্র‍্য বিষয়ে তিনি নিজেই উচ্চকিত–' আমাদের সম্মিলিত চোখে মৃত মানুষের অভিব্যক্তি/ আমাদের কন্ঠে পৃথিবীর গভীরতা নির্জনতা/ কর্ণকুহরে শীতরাত্রির দীর্ঘশ্বাস/ অনুভূত এই অপমৃত্যু শুধু কি আমার?/ এ আমাদের সম্মিলিত বোধ / বহুজনের অভিশপ্ত প্রাত্যহিক/  বহুজনের ম্লান দিনলিপি/  তবু নৈসর্গিক রীতি মেনে এখনো সুর্যোদয় প্রতিদিন....'(  তবুও ) ।

জীবন অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে কবি তার প্রতিফলন ঘটান তাঁর কবিতায় । তাঁর শব্দে, তাঁর মনের ভাবকে তাঁর ব্যক্তিজীবনের পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলী থেকে তাঁর যে অভিজ্ঞতা অর্জন সেগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অত্যন্ত সাবলীল শব্দচয়নের মধ্য দিয়ে জাগিয়ে তোলেন তাঁর কবিতার প্রাণ । তাঁর মানসস্তরে কবিতা দারুণভাবে এক অবিভাজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলে। তিনি নিজেকে নিয়ে প্রতিমুহূর্তে বিশ্লেষণ করেন । জীবনঅনুভূতিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়েও শব্দরূপ প্রকাশ করেন –১.
' আমার তুচ্ছ স্বপ্নগুলি লৌকিক নেশার মত আমাকে/  সর্বক্ষণ পেয়ে বসে; এই ধরুন বাড়ি ফেরবার মুখে/ এখন রাত বারোটায়! মনে পড়ে/ সাদা শ্বেত পাথরের মতো সেই ইস্কুলবাড়ি,/  আমার সমস্ত দুপুরের চিন্তাভাবনা দূর হলে/  শহরের উপকণ্ঠে সূর্যাস্ত সময়ের শীতল কোনো মন্দাক্রান্তা মাঠ,/ অনুর্দ্ধ তিরিশের  কোন কোন যুবতীর অনুষ্টুপ মুখ/  আমার চোখের উপর শেষ স্ট্রাম এখনো অনেক দূর' । ( লৌকিক আশ্রয় ) । ২. ' বুকের অসুখ, বেশকিছু কাঁচাপাকা চুল ।/ ভাদ্র রোদে ধাঁ ধা করছে বালি । যতদূর দৃষ্টি যায়/ শুধু বালি আর বালি ।/ বালিতে বন্ধ্যা নারী  তার গোপন আছে ।/  তির তির দুঃখ আছে মনে।/ সজ্ঞানে অস্বীকার করি তাকে/ অভিনয় এক নিদারুন শিল্প হয়ে/  চৈতন্য দিয়েছে অন্ধকার মেঘ/  অচিরেই একদিন/ বেদুইন সরদারের পাথর রুক্ষতা অবয়বে নিয়ে/  মুখোমুখি হব শত্রুর ।' ( জন্মজুয়াড়ী ) কবির আত্মমুখী এই যে পর্যালোচনা, এই যে জীবনপরম্পরার দহন তা তো বিশ্বরূপেরই বাস্তব রূপের প্রকাশ । যা তিনি নিজের  অবয়বের ক্রমপরিণতির প্রতীকী নির্ণয় করেছেন । এ তো প্রতিদিনের বিশ্বরূপের পরিবর্তনের গোপন কারুকৃতি ।

কবিতার প্রাণ হলো কবির মনোজগৎ । কবির মনের ভাব ও তার বিভিন্ন মনোজাগতিক বিষয়কে অনুভব করে কবিতা গড়ে ওঠে । সুনির্বাচিত শব্দের বিন্যাস সার্থক কবিতাকে সৃষ্টি করে সুন্দর বাচনিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কবিতাও সুন্দর হয়ে ওঠে । 'জীবন, এ তুই কেমনতর হতচ্ছাড়া চরিত্র ।/ কোন কিছুতেই তোর ধৈর্য নেই । কোনো কিছুতেই আসক্তি/ না নারী না সুরা/ না কোন সৃষ্টিকর্ম না কোনো/ ভালো লাগার নদী ও স্বদেশ । (হতচ্ছাড়া এক চরিত্র ) । শব্দের এই যে সৌন্দর্য সম্ভার এবং তার আপন বিন্যাস,  কবিতার বৈভব এবং অবয়বকে চিত্তাকর্ষক করে তোলে । আবার কবিতা কখনো কখনো একেবারেই আটপৌরে একেবারেই  প্রতিনিয়ত শ্বাস-প্রশ্বাসের মত স্বাভাবিক প্রকৃতি নিয়ে স্বভাব সুলভ গতিতে সহজ শব্দ বিন্যাসের মধ্য দিয়ে এক অনাবিল গদ্য শৈলীকে মাধ্যম করে কবি পীযূষ রাউত তার প্রিয় কণ্ঠস্বরকে কবিতায় তুলে ধরেন । তাঁর কবিতার বিশেষ বৈশিষ্ট্য সহজ সরল অনাড়ম্বর শব্দের বাঁধনি । যেখানে কোনো কৃত্রিমতা নেই । যেখানে কোন আবরণের চাকচিক্য নেই । সহজ সরল অনাবিল গদ্যশৈলী তার কবিতার লক্ষণ । যেমন– ১. ' কিছু লিখতে গেলেই/ আমার অতি প্রিয় ভাঙা চায়ের পেয়ালা কথা,/ আমার চুরি যাওয়া হংকং মেড এভারেডি টর্চের কথা,/ কৈশোরে পঠিত ঠাকুরমার ঝুলি, গোপাল ভাঁড়/ কিংবা আরব্য উপন্যাসের কথা চারিধারে ভিড় করে আসে' । ( পরিদর্শক আমি ) । ২.নবকুমার নই তো,/  সমুদ্রে সকাল দেখে/ বলে উঠব, বাঃ অদ্ভুত সুন্দর/  আশিকির রাহুল নইতো,/ তোমাকে দেখেই নিমেষেই/  ছলকে উঠবে বুক...( নগরবাসী ) ৩.  'যে যাই বলুক/ যাই ভাবুক/ তোর এই অকম্পিত হাতের উপর হাত রাখলে/ পুড়তে থাকে ত্বক/ পুড়তে থাকে বিশ্বাস...(  না ভালোবাসার কয়েকটি লাইন ) ৩. ' একজন প্রবীণ ও একজন প্রবীণার পক্ষে/ দেড় হাজার বর্গফুটের চার কামরার এই ঘর/ বিশাল এক শুনশান প্রান্তর। প্রভূত নির্জনতা আর প্রায় একলা থাকার । এরকম সুযোগ আর উপকরণ দ্বিতীয় কোথায় ?/ আর দুজনের পক্ষে ভালোলাগার ?/ সে যদি হতো দূরের অতীত, স্বীকৃতি মুহূর্তমাত্র/ বিলম্বিত হতো  মোটেই । ( এই ঘর এই বাড়ি )

দেশবিভাগের ফলে কবিকে হারাতে হয় তার পুরনো বাস্তু ভূমি । প্রাচীন ভূগোল, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি । সেই সব হারানো স্মৃতিগুলো স্টালজিক বয়নে বারবার তার কবিতায় ফিরে আসে । 'দেশের বাড়ির সেই কুশিয়ারা নদী কিংবা শারদীয় কাশফুল/ কিংবা সবুজের পটভূমি জুড়ে হলুদ সরষে-ফুল/ কিংবা নারকেল বোঝাই নৌকার মিছিল কিংবা/ কলকাতার গন্ধমাখা মালবাহী স্টিমার কিংবা পাঁচিল-শাসিত/ তিন বিঘা জমির উপর সুবিশাল বাড়ি কিংবা উত্তরকালে/ দেশবিভাগের পর টিলা ও সমতল সমন্বিত চাতলা-ভ‍্যালি...কিংবা ' আমরা কয়েকজন কয়েকজনের জন্য/ চিরকাল বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকব । যেমন দেশের বাড়িতে/ নৌকার জন্যে প্রতীক্ষমান মা ও আমি, আমিও ছোট ভাই/ নদীতীরে/ উদ্দাম হওয়ার মধ্যে/ আমরা কয়েকজন কয়েকজনের জন্য....( আমরা কয়েকজন কয়েকজনের জন্য ) । আপন বাস্তুভূমির জন‍্যে এই হাহাকার তিনি আজীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন । ' নারকেল কিংবা চাল কিংবা অন্য কোনো পণ্য-বোঝাই/ বিশাল গুমটি নৌকায় সেই কবে ষাট বছর আগে/ দেখেছিলাম নদীমাতৃক জন্মভূমি আমার । তারপর/ এইতো সেদিন, চার দিন চার রাত্রির আকস্মিক দেখা ।/ জন্মভূমি মাত্রেই কারো কারো ক্ষেত্রে স্বদেশ নয় এই যেমন/ হতভাগ্য আমি ।/ তবু একথা সত্য যে,/ সেই সাহেব শাসনের কালে আমার ছেলে বেলায়/ সত্যি সত্যি স্বদেশ ছিল জন্মভূমি আমার।( বাংলাদেশ, কবিতা সফর )। সেই স্বদেশ সম্পর্কে তাঁর অন্তরঙ্গ অনুভূতি ' প্রথম কান্নার দিন/ প্রথম দেখার দিন/ আমার পবিত্র কৈশোরের দিন/ স্বদেশ ছিল সে ।/ এখন পর দেশ, বিদেশ ।/ তবু নাড়ির টান যুগ যুগান্তর/ অতিক্রান্ত, এখনো কোনও কোনও দিন অনুভূত হয় ।/ তাকে খুঁজি/ মানচিত্রে কাঁটাতারে ওপারে, লোকমুখে, কখনোবা/ টিভি চ্যানেলে, খবরের কাগজে, শামসুর রাহমানের কবিতায় । ( বাংলাদেশ কবিতা সফর )

খন্ডিত স্বদেশ নিয়েও কবি ক্ষুব্ধ । সংক্ষোভের অস্থিরতার কবি স্বধীনতাকে দেখেন তীব্র শ্লেষে অঙ্গারে । স্বপ্নে আর বাস্তবে যে ফারাক তা ধরা পড়ে তাঁর চেতনার আরশিতে । ' বিমল জানিস তো নেহেরু শান্তির জন্য কবুতর উড়াতেন ।/ ইদানিং ওইসব কবুতর কঙ্কাল সম্বল করে যাদুঘরে, কাচের টেবিলে সুদূর অতীত । ম্লান গন্ধের মধ্যে সুদূর অতীত' । ( কবুতর ) । ' সাতচল্লিশের পনরো আগস্ট গান্ধীজী বলেছিলেন–/ আজ আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে । বোঝেনি । কেউ/ বোঝেনি ।/ স্বাধীনতার ঘোড়া কিন্তু অনুভব সচেতনায় বুঝেছিল সব । ( স্বাধীনতার ঘোড়া ) এই পঞ্চক স্বাধীনতায় অনবরত প্রতারিত হতে হতে মানুষ যেন প্রতিবাদের ভাষাও আজ হারিয়ে ফেলছে । কবি সে কথাই বলছেন তাঁর কবিতায়– 'খা খা সব গিলে খা–  এই বলেই /বক্তা নিমেষের মধ্যেই/ আত্মগোপন করলো ইঁদুরের গর্তে ।/একজন চরিত্রহীন মাস্টারমশাই বললেন– দেখলে তো,/ এই আমাদের চরিত্র । বদলে গ‍্যাছে প্রতিবাদের ভাষা এবং/ এ্যাকশন ।/ রুখে দাঁড়াবার হাত নেই, পা নেই, এই যেমন/ টিম-ইন্ডিয়ার ধোনি । নেই বলেই/ ভোট প্রহসনে সেজেগুজে অংশ নিই ।/ নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে/ আগুনের সর্বনাশ দেখি। আগুনের ভাষা আমরা/ আদপেই বুঝি না ( প্রতিবাদ ) । কবি তাঁর কবিতায় অগ্রজ কবিদের প্রভাবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের অবস্থান সম্বন্ধে স্পষ্টতই বলেছেন –' এই যে বেঁচে থাকা/ বড় তীব্র ভাবে বেঁচে থাকা, আসক্তি-অনাসক্তিকে/ সমগুরুত্ব দিয়ে এই যে প্রতিদিন/ শব্দ শব্দ খেলা,/ এই যে শুধু কবিতার জন্য/ অমরত্ব তাচ্ছিল্য করা–এ শুধু তোমাকেই মানায় ।/ শক্তির মেঘ মেঘ রহস্য থেকে দূরে,/ বহুদূরে তোমার ভালবাসায় নিরহংকার সারল্যকে স্যালুট ।/ বলেছ–হে তরুণ, আমাকে দ‍্যাখো । আমারই হাতে/ সমবেত হাত হে সৈনিক ।/ এভাবেই বেঁচে থাকা, এভাবেই আমার/ প্রত্যেকটি দিন । এই আমার নির্বিকল্প আমি । আমি জেগে আছি । দারুণ দারুণ ভাবে বেঁচে আছি / দেশে দেশান্তরে, সর্বত্র । (সুনীল কথা ) । কবি যাপনের অফুরান শক্তি লাভ করেন কবিতার সময়চিহ্নিত অবস্থান থেকেই । স্বচ্ছতায় স্পষ্ট তাঁর  কথাবীজ । তিনি তাই বলেন -' বারংবার জন্মজুয়াড়ীর মতো মেতে উঠি আত্মঘাতী বিনষ্ট খেলায়' । এ যেন 'প্রভু নষ্ট হয়ে যাই'র মতোই সুস্পষ্ট স্বীকারোক্তি ।
কবি পীযুষ আজীবন মানুষের কথাই বলে বেড়িয়েছেন তাঁর আত্মজৈবনিক উপাচারের অঞ্জলিতে । তাঁর নাতনিকে নিয়ে লেখা 'তোর্ষা সিরিজ'ও সংবেদনশীল মানবিকতায় উত্তীর্ণ । জীবন-আভিজ্ঞান ও বোধের অভিজ্ঞতার কবিতার অন্তরে বাজে মানবিকতার সুর । শিশু তোর্ষা এখানে মানবিকতার প্রতীক । ' তোর্ষা, এখন রাত এগারোটা ।/ তোর হরিণ হরিণ চক্ষুদুটি কপাট বন্ধ । ঘুমোচ্ছিস ?নাকি বুড়োবন্ধু কাছে নেই বলে ঘুম আর না-ঘুমের/ সীমান্তে পৌঁছে অতীত-কাতর ? ( তোর্ষা-৮ )

আমাদের কাব্য ভুবনের 'দ্বাদশ অশ্বারোহী'র এক অশ্বারোহী পীযূষ রাউত । আরেকজন অগ্রণী অশ্বারোহী স্বপন সেনগুপ্ত পীযূষ সম্বন্ধে বলেন– 'পীযুষের লেখার বিষয় চলমান সময়, মানুষ ও সমাজ । বহমান সমাজ ওসময়ের  প্রতিটি দাগ একটু নিবিড় ভাবে তাকালে তার কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায় । যত বয়স বাড়ছে তত পরিণত গূঢ় কণ্ঠস্বর বেজে উঠছে তার কবিতায় । কখনও মনে হয় আর্দ্র, কখনো স্থিতধী । আবার কখনো মনে হয় প্রচন্ড অতীতের দিকে ফিরে তাকানো । পীযুষের ভালোলাগা এবং মন্দ লাগা ব্যাপারটা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না, প্রচন্ড গতিশীল । বরাক উপত্যকার প্রতি তার নিবিড় চলা টান দীর্ঘকালের । ওখানকার খন্ড চিত্র, চিত্রকল্প, ছবিও মানুষ বারবার তার কবিতায় ফিরে এসেছে । নগর সভ্যতা নিয়ে নির্মম পরিণতি ও হাহাকার এবং পরিহাস আছে পীযূষের কবিতায় । মানুষের অধঃপতন স্বাভাবিকভাবেই তাকে আহত করে । করে বিচলিত । এই সময়ের সমস্ত দাগই তার কবিতায় উঠে এসেছে, যা কখনো প্রচ্ছন্ন, কখনো ভাসমান । (বন্ধু পীযূষ রাউত –স্বপন সেনগুপ্ত ) তাঁর কবিতায় বরাক উপত‍্যকার চিত্র ১.' কুশিয়ারার শান্ত জলে অশান্ত কল্লোল তুলে/ সেকালের বন্দর শহর শিলচরে যেত ।(একটি প্রাচীন চিত্র )। 'বাম হাতে চা বাগানের অনুচ্চ টিলাভূমির অনন্ত সবুজ' । ( চাতলার মুখ ) । ২. 'আংকিক হিসাবে তিপ্পান্ন বছর তো হবেই। / সেই সময় রাঙিরখাড়ি থেকে/ শিলচর হাইলাকান্দি সড়ক ধরে যেতে যেতে/ পথের দু'ধারে ধু ধু করা ধানমাঠ আর/ বাতাসের অবাধ উচ্ছ্বাস ।/ বাম হাতে/ সোনাই রোড ধরে শেষ টার্নিং পর্যন্ত খালি চোখ দেখে/ কদা- কদাচিৎ ধুলো উড়িয়ে ছুটে চলা গাড়ি/ সে হতে পারে বাস/ হতে পারে পণ্যবাহী লরি ।( শিলচর টু জ্বালেঙ্গা ) । তেমনি পাই ত্রিপুরার নৈসর্গ চিত্রও–১.' ঊনকোটি বেলকুমের দাবানল শহর ধর্মনগর থেকে/ চোখে পড়ে না । অনুমিত হয় হেমন্ত শীত ঋতুতে জ্বলে উঠছে/ অনুল্লেখ্য লিলিপুট পাহাড় । (ঊনকোটি বেলকুম থেকে )। ২.' একা । অসহায় । আর আমি ?/ পুরনো বসতির শহর ধর্মনগরে/ বইমেলার আলোয়/ অন্যরকম ধর্মনগর/ সুবেশ মানুষের ব্যস্ততাবিহীন ভিড়ে/ ততোধিক সম্মিলিত/ ততোধিক উজ্জ্বল । ( অসুখ– ইতি তোমারই )
কবি পীযূষ রাউত তার কবিতা সম্বন্ধে নিজস্ব অনুভব প্রকাশ করেছেন এইভাবে 'আমার মাঝে মাঝে ভয় হয়, আমি কি কবিতার স্বর্গ থেকে খুব শিগগিরই বিচ্যুত হব ? যদি হই তবে আমাদের মহান শিক্ষাবিভাগকে এর জন্য দায়ী করবো । এমন এক পরিবেশে তাদের করুণায় আমি এসেছি যেখানে সাহিত্য শিল্প নিয়ে চর্চা করা সাঁতরে প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করার মত অবাস্তব ব্যাপার । অথবা অন্য একটি সন্দেহ মনের মধ্যে হতে চেষ্টা করে । কবি নয়, একজন সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবনের স্বাভাবিক নিয়মেই কি এই অন্যমনস্কতা অনীহা অথবা আলস‍্য ? তবু আশাবাদ আমার প্রচন্ড । জীবনের সবকিছু ত্যাগ করতে পারি, কিন্তু কবিতাকে পারিনা । কোন বিশেষ আইডিয়া কিংবা আদর্শবোধ কিংবা বিশেষ কোন মতবাদ প্রকাশের জন্য আমি কবিতা লিখি না । আমি যে ব্যক্তিমানুষ তার সুখ-দুঃখের ব্যক্তিক অনুভূতি প্রকাশ করতে আমি আগ্রহী । পাঠকের মনের সঙ্গে আমার বক্তব্য যদি মিলে যায় আপত্তি নেই । না মেলে যদি, দুঃখ নেই শুধু এইটুকু বিশ্বাস করি, যেহেতু দৈনন্দিন অভাবক্লিষ্ট নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের একজন নিতান্ত সাধারণ মানুষ আমি, সেহেতু আমার দুঃখ আমার সুখ পাঠকের মনকে স্পর্শ না করে পারবেনা  ।' ( কবিতা লেখার ইতিহাস–  পীযূষ রাউত / জোনাকি, নবমবর্ষ, দশম সংখ‍্যা,শরৎপর্যায় হাজার ১৯৭১ )।
দীর্ঘকালব‍্যাপী নিরন্তর নিরবচ্ছিন্নভাবে অগণিত কবিতা রচনার মাধ‍্যমে কবি তাঁর সৃজনে বিষয়ের বহুবৈচিত্র‍্যসহ কালচেতনায় সমৃদ্ধ করে তুলেছেন এবং তা পৌঁছে দিয়েছেন পাঠকের হৃদয়ের অতলপ্রদেশেও ।

Friday, October 22, 2021

বৃ ষ্টি

বৃষ্টি,বুঝেছি তোমার চটুলকলা
বেরুতে তো দেবে না
আর কানাঘুষোর ভয়ে আঁকড়ে ধরতেও বাধা

শূন্যবিরতি তাই  ঝরে চলেছো
অন্তত ঘরে তো থাকবো
তোমার চোখের চাতালে

ভেতরচালাকি কে বুঝবে আর

Thursday, October 21, 2021

দুর্গাপুজো

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব ৷ দুর্গোৎসবের সঙ্গে দুটি সাংস্কৃতিক ধারা প্রবহমান ৷ তার মধ্যে একটি আর্য-পৌরাণিক ও অপরটি লৌকিক  ৷ পৌরাণিক ধারা অনুযায়ী দেবীপূজার মূল উৎস ধরা হয় বেদ ও অন্যান্য কিছু পুরাণ কাহিনিকে ৷ বেদে আছে  অম্ভৃণ ঋষির কন্যা ব্রহ্মবাদিনী বাক সর্বপ্রথম তাঁর অতীন্দ্র ধ্যাননেত্রে আবিষ্কার করেন দেবীসূক্ত ৷ এই দেবীসূক্তই মাতৃবন্দনার মূল ৷
শারদীয়া দুর্গাপূজাকে বলা হয় 'অকালবোধন' ৷ কালিকাপুরাণ ও বৃহদ্ধর্মপুরাণ অনুযায়ী রাম ও রাবনের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল ৷ হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে শরৎকালে দেবতারা নিদ্রামগ্ন থাকেন ৷ তাই এই সময়ে তাঁদের পূজা করা বিধেয় নয় ৷ অকালে পূজা করা হয়েছিল বলে এই পূজার নাম 'অকালবোধন' ৷ এই দুই পুরাণ অনুযায়ী রামকে সাহায্য করার জন্যে ব্রহ্মা স্বয়ং দেবীর বোধন ও পূজা করে ছিলেন ৷ অন্যদিকে কবি কৃত্তিবাস ওঝা তাঁর রামায়ণে লিখেছেন রাম স্বয়ং দেবী দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন ৷
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে কৃষ্ণকে দুর্গাপূজার প্রবর্তক বলে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ মহাভারতে বর্ণিত আছে, শ্রীকৃষ্ণের রাজত্বকালে কুলদেবী হিসেবে দেবী দুর্গা পূজিতা হতেন ৷ কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ চলাকালীন অর্জুন ও প্রদ্যুম্ন দুর্গাদেবীর পূজা করেছিলেন ৷ বিভিন্ন সময়ে দেবদেবীরা যে দুর্গাপূজা করেছিলেন তার একটি তালিকাও ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে পাওয়া যায় ৷ এটি নিম্নে তুলে ধরা হলো: -
প্রথমে পূজিতা সা চ কৃষ্ণেন পরমাত্মনা ৷
বৃন্দাবনে চ সৃষ্টাদ্যৌ গোলোকে রাগমন্ডলে ৷৷
মধুকৈটভভীতেন ব্রহ্মনা সা দ্বিতীয়তঃ ৷
ত্রিপুরপ্রেষিতেনৈব তৃতীয়ে ত্রিপুরারিণা ৷৷
ভ্রষ্টশ্রিয়া মহেন্দ্রেণ শাপাদ্দুর্বাসসঃ পুরা ৷
চতুর্থে পূজিতা দেবী ভক্ত্যা ভগবতী সতী ৷৷
তদা মুনীন্দ্রৈঃ সিদ্ধেন্দ্রৈঃ মুনিমানবৈঃ ৷
পূজিতা সর্ববিশ্বেষু বভুব সর্বতঃ সদা ৷৷
সৃষ্টির আদিতে গোলোকস্থ আদি বৃন্দাবনক্ষেত্রের মহারাসমন্ডলে কৃষ্ণ প্রথম দুর্গাপূজা করেন ৷ দ্বিতীয়বার দুর্গাপূজা করেন ব্রহ্মা ৷ মধু ও কৈটভ দৈত্যদ্বয়কে নিধনের জন্য তিনি দেবীর শরণাপন্ন হন ৷ ত্রিপুরাসুরের সঙ্গে যুদ্ধের সময় মহাদেব তৃতীয়বার দুর্গাপূজা করেছিলেন ৷ দুর্বাসা মুনির শাপে শ্রীভ্রষ্ট হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র যে দুর্গাপূজা করেন তা চতুর্থবারের দুর্গাপূজা ৷ দেবী ভাগবত অনুসারে ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু পৃথিবীর শাসনভার গ্রহণ করার পর ক্ষীরোদসাগরের তীরে মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মান করে দুর্গার পূজা করেন ৷ জাগতিক মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঋষি মান্ডব্য,হারানো রাচ্য ফিরে পাওয়ার জন্যে রাজা সুরথ, সমাধি বৈশ্য এবং কার্তবীর্যার্জুন বধের জন্যে বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম দেবী দুর্গার পূজা করেন ৷
বাংলার অত্যন্ত প্রাচীন দুর্গাপূজা হলো পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ী মন্দিরের পূজা ৷দেবী মৃন্ময়ী ছিলেনমল্লভূমের রাজরাজেশ্বরী, মল্ল রাজবংশের কুলদেবী ৷ মল্লরাজ জগৎমল্ল 997 খ্রিস্টাব্দে এই পূজার প্রবর্তন করেন ৷ কোন কোন ইতিহাসবিদ রাজশাহীর তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণের কথা উল্লেখ করেন ৷ 1606 খ্রিস্টাব্দে মুঘল শাসনামলে বাংলার দেওয়ান রাজা কংসনারায়ণ খ্যাতিলাভের উদ্দ্যেশ্যে আট লাখ টাকা খরচ করে ঘটা করে দুর্গাপূজা করেন ৷ নদিয়ার ভবানন্দ মজুমদার, কোচবিহারের রাজবাড়ি সর্বত্র এই সময়ে দুর্গাপূজার সূচনা হয় ৷কোলকাতার বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার1610 সালে সপরিবার দুর্গা্পূজার প্রচলন করেন ৷ এজন্যেই সপ্তদশ শতাব্দীকে দুর্গাপূজার সূচনা ধরা হয় ৷

Wednesday, October 20, 2021

স্বীকার্য

স্বীকার্য

উত্তরের কথা যদি বলো তুমি আমি যাবো দক্ষিণে  
জল যদি সামান্য গড়ায় আমি বসতে পারি না 
জল যদি উঠোনে গড়ায় আমি দাঁড়াতে পারি না
জল যদি পথে গড়ায় পারি না আমি এগোতে
আর জল যদি ভূখন্ড ভাসায় আর 
হৃদয়ে যদি নতুন বাঁক আনে গড়ানো জল
তখন কোথায় যাবো, বলো ফুলসই? 

উত্তরের কথা বলো যদি তুমি আমি যাবো রাই দক্ষিণে ৷

Tuesday, October 19, 2021

ঠি। কা। না

ঝোলার ভেতর খাতা ও কলম
       একহাতে একতারা
গান লিখি আর গেয়ে বেড়াই
       দিন যে হলো সারা
দিনের শেষে ঝোলা ঝাড়ি
     পারের কড়ি কই
বিলাপ আর বারমাস্যা
   খাতায় তুলে লই
একতারাতে সুর তুলি তার 
     মেঠো পথে ফিরে
দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামে
    আঁধার আসে ঘিরে
সেই আঁধারে পাড়ি দেবো
    পথ যে অজানা
সেই আঁধারেই খুঁজে পাবো 
      আমার ঠিকান

পেট্রোল

তেল ফুরোলে লাইন হবে
সুযোগ পেলে ব্ল্যাক হবে
চিরস্থির কবে তেল হায় রে পেট্রোল পাম্পে
************************************
************************************
************************************
সেই ধন্য নরকুলে
লোকে যারে নেপো বলে
মনের মন্দিরে নিত্য দধির স্বপন

তুরু রু

তুরু রু তুরু রু তুরু রু
বাঁশি বজায় মারাংবুরু
পুব্বেতে উনাইলঅ ম্যাঘ
 পশ্চিমে বরষিলঅ গ
ভিজ্যে গ্যালঅ প্যান্ড্যালের কাপড়

ষাট ষাট বালাই ষাট
জল থৈ থৈ পথ ঘাট
এ্যামুন জাড়ে ভিজ্যে গ্যালঅ
সান্তালী বেটির কাঠামগুলো

তুরু রু তুরু রু তুরু রু
বাঁশি বজায় মারাংবুরু

কালো দলিল

কালো দলিল

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

সময়ের চাকার সাথে সাথে বদলে যাবার কথা
আদিম ধারনা, পুরোনো পোষাক । 
আধুনিকতা আসবে
কলাপাতার নবীন রঙে ।

 লোকায়ত সব তহবিলের থাকেনা 
কোনো চাবি কিংবা আলতারা
অথচ সেইসব পুরোনো গোষ্ঠীযুদ্ধ 
জিনগত পাপের মতো 
মননে গেঁথে থাকে ।

সেইসব ঘুমন্ত কীটকুল  চাড়া দিয়ে ওঠে
অজানা গুজবের অন্ধ আবেগে ।
মধ‍্যযুগের পাতা ছিঁড়ে খুঁড়ে 
ওড়ে কালের বাতাসে ।
মানুষের বিবেক তখন আবার অমানুষ হয় । 
আর এক কালো দলিল সংখ‍্যায় বাড়ে ।

ঘরে ঘরে ডাক পাঠাল

ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো......
******************************
মাটির প্রদীপের শিখা মাটির বুকে তির তির করে জ্বলতে থাকুক কিংবা অট্টালিকার কার্নিশে কার্নিশে সমবেত বৃন্দশিখায় মেতে উঠুক তাদের সম্মিলিত কুচকাওয়াজ এই ধরণীকে মাতিয়ে তোলার জন্যেই নিবেদিত ৷ ভুবনপুরের অন্ধকার দূর করার জন্যেই নিবেদিত প্রাণ নিভৃতে তৈলাধারে সংরক্ষিত রসদকে পাথেয় করে আলোকবন্দনায় রত ৷ যে রাতকীটসমূহ তাদের পক্ষবিধূননের মাধ্যমে বাধার সৃষ্টি করে আলোকযাত্রার সুরম্য উপাসনার, তার কোনো প্রতিবাদ করে না আলোকদল ৷ আজ যে আলোকোৎসবের ক্ষণ ৷ আজ শুধু আলোদান আর আলোকিত হওয়ারই ব্রতক্ষণ ৷ সমবেত আলোবিতরণে নিজেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে আলোপ্রদীপ ৷ অপরকলঙ্ক বিকশিত করা  আজ আলোকাভিসারীর অভীষ্ট নয় ৷ তিমিরনিশার কলঙ্ক ঘুচানোর, আলোকস্নানে স্নিগ্ধ করার সপ্রদীপ মহড়়া এরাতের লক্ষ্য ৷ অন্তহীন অন্ধকার পথযাত্রীর হাতে আলোকবর্তিকা তুলে দেওয়ার মাঝে পবিত্র হওয়ার যে কুম্ভস্নান সেই স্নানে সিক্ত হয়ে দূরীভূত হয় অন্তরের তমসা ৷ সেই মহাহোমের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশীদার হলেও এক পরম তৃপ্তি পরমানন্দ ৷ আলোর দীপালিকা সেই চিরানন্দের বার্তাবাহক ৷ পবিত্র স্নাতক ৷ আসুন আলোকস্নাত হই অফুরন্ত আলোকুম্ভে ৷

Friday, October 8, 2021

সু র

ভেবেছিলাম তোমার শরীরের স্পষ্ট আকাশ
আরো স্বচ্ছনীল হয়ে ভেসে উঠবে
বাহা শাড়ির জমকালো আচ্ছাদন  ছিঁড়ে বেরিয়ে পড়বে বিস্ফারিত ভূগোল

এই কাশের মেলায় উজ্জ্বল দোলা চাই
তোমার জীবনার্ত বিভঙ্গে
পিপাসা মেটাবার মিনারেল জল যেমন শোভন শোকেসে সেজেগুজে থাকে

তুমি  তেমন হলে
বুকের মধ্যে অদৃশ্য ঘন্টি
করুণ শাস্ত্রীয় সুরে 
বেজে যাবে বেজেই যাবে

Tuesday, October 5, 2021

জী ব ন

বিসর্জন থেকে ফিরে এলে
অমোঘ স্নানে মনন সিক্ত হয়

জলবিন্দু মাখা শরীরে মুক্তো হেসে ওঠে
কোলাহল স্তিমিত হয়ে জাগে শান্তকাল

মিলনের ভাঙনে যেন
আবার সৃজনের ভিতে ঢালাইয়ের আস্তর বিছানো হয়

ধীরঘুম থেকে চোখ তোলে জীবন


শরৎ শান্তি

শরৎ শান্তি

এখন শরৎকাল ৷ আমরা মেতে উঠছি উৎসবে ৷ 
আসলে কী শরৎকাল?  আসলে কী উৎসবের ঋতু এখন?
এই কিরাতপ্রদেশ থেকে এখনো অরণ্য যায় নি অগস্ত্যের পথে ৷
এখনো পাহাড়ে পাহাড়ে সবুজ আবিরের মাখামাখি ৷ স্বাধীন সবুজের সমারোহ ৷
স্বাধীন বলছি এই জন্যে, এইসব অফুরান প্রাকৃতিক রঙগুলো 
আজ আর স্বাধীন নয় ৷এরা এক একটি রাজনৈতিক প্রতীক ৷
 সিঁথিরঙ লাল একদলের, সন্ন্যাসচিহ্ন গেরুয়া একদলের, তরুণ ঘাসের সবুজে চিহ্নিত হয় আর কোনো দল ৷
তবুও  কিরাতঅরণ্যের গায়ে মাখা সবুজ
তার চিরবান্ধব ৷ আজন্মপরিচয় ৷ আজো তার
শিখর থেকে নদীবিছানা সবুজকে জড়িয়ে আছে
 আশরীর৷
তারপরেও এই শরৎ কোন সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে আটকে আছে ৷
এখনো এই প্রদেশের দূরবর্তী কোনো শান্ত নিভৃত গাঁয়ে তাপমাত্রার পারদ
চৈত্রের দুপুরকে ছাড়িয়ে যায় ৷
আকাশের উদ্দাম নীল এখনো কালো মেঘের গর্জনের ভয়ে
পালিয়ে বেড়ায় ৷
রাতের ঘাসের কোনো তাগিদ নেই শিউলির জন্যে হিমের বিছানা পেতে রাখবার ৷ কুয়াশা ঝরে না মৃদু ও নিঃশব্দ ধারাপাতে ৷
 তবুও এই আগুনের আঁচে র মধ্যে আমরা উৎসবকে আবাহনের জন্যে অন্তরের বরণডালা সাজাই ঘরে ঘরে ৷ উৎসবের সিরিজ আমাদের সাথে এগিয়ে চলে  ধনী নির্ধন নির্বিশেষে ৷ ####################
এপারে মানুষ, ওপারেও মানুষ ৷ এই মানুষের হৃদয়ের রঙ লাল৷ ওই মানুষের হৃদয় রক্তিম বরণ ৷
তবু দুই পারের মানুষের মাঝে কাঁটাতার কেন?  কারা দিনরাত একে তাতিয়ে যায়, ওকে উস্কে যায় অবিরাম ৷
যাদের গোলায় মজুদ মারণাস্ত্রগুলো জং ধরতে ধরতে বাজারে তোলবার অযোগ্য হবার ভয়ে আর লোকসানের দুশ্চিন্তায় ঘুম আসে না তারাই দিনরাত কানমন্ত্র দিয়ে যায় কখনো ডান কানে, কখনো বা বাঁ কানে ৷ বিষমন্ত্র শুন শুনে ক্রমশ তলিয়ে যায় দুপারের বিবেক ৷ হাত পা ছুঁড়তে শুরু করে পরস্পরের বিরুদ্ধে ৷ ক্রমে ক্রমে ক্রোধের পারদ চড়ে ৷ উৎসবের মঞ্চ ভেঙে পড়ে ৷ একে অন্যকে ঘায়েল করাই উৎসবের উন্মাদনা ৷ঢাকের কাঠি হয়ে যায় রণদামামা ৷অদৃশ্য নির্দেশকের বাঁশি বেজে ওঠে এক বীভৎস ইঙ্গিতের ভাষায় ৷ লুকায় শান্তি,  হারায় উৎসব ৷ মৃৎপ্রতিমা নয় ৷ মৃত্যুপ্রতিমা কাঁধে কাঁধে চলে শোকভাসানে যেন ৷ এই শরতের ধাবমান নীলের শরীরে চলো আমরা  গুঁজে দিই সাদা সাদা পালক ৷ শান্তির নিশানের মতো যারা উড়ে বেড়াবে সারা আকাশ জুড়ে ৷ 
এসো বন্ধু, এসো প্রিয় পড়শি, আমাদের ধুনুচি নাচের ধ্রুপদী ধোঁয়ায় একসাথে মেশাই ভালোবাসার মুখর সুবাস ৷
 বলো,  বলো হে সবাই একসাথে, একই ঐকতানে - শান্তি, শান্তি এবং শান্তি আসুক নেমে আমাদের প্রতিটি চৌকাঠে ৷

Friday, October 1, 2021

ব‍্য থা

তুমি তো এলে মাগো
ঘাটের সেঁউতি সোনারই রয়ে গেল

আজও আমার মতো করে
বইতে পারলাম না

অর্থহীন সুন্দর গড়াগড়ি যায়