মায়ানদী
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
ঘরে ফেরার সময় হয় । ধুলো ঝেড়ে উঠে যায় ফসলিবালিকা । চরের ঘাস মাটি লেগে থাকা গায় প্রকৃতির মানচিত্র । তুষারবালিকা সরস্বতী হতে পারে নি সে । জন্মকৌশলে ঢাকে দারিদ্র্যের মানচিত্র । অন্ধকার হতে হতে শরীর ঘিরে বিষাদকুহক । টলমল নদী জলে কলস ডোবায় । জলেরা কথা বলে ওঠে কল কল করে । রোদের ভ্রমণ শেষ হয়ে গেলে তার অদ্ভুত খেলা শুরু হয় ।জোছনা এলে ঢেউগুলোতে কাঁচপোকা উড়ে । শূন্যকলস ভরতে থাকলে উজাড় হয়ে যায় নদী । তার জল বাউল হয়ে ধ্যানমগ্ন হয় । বালিকার স্নান দেখে সে ।
সারাদিন নদীর শরীরে আলো বয়ে গেলেও অন্তরে সে রাতকামী । কেননা রাতের এক রহস্যময় মাদকতা রয়েছে । দিনের পর দিন অযথা সংসার পেতেছে সে ভূমির গর্ভে । আসলে বয়ে যাওয়া তার নিত্য বাউলপ্রকরণ । একতারার মতো একাকী পেরুতে হয় সব পথ । নদীর নিঃসঙ্গতার কথা কেউ বলে না । কেবল হইচই উঠে তার ভাঙনের দোষে ।
সেই চরবালিকা বোঝে নদীটির ব্যথা । তার শরীরের ঘ্রাণ বিলিয়ে দেয় নদীকে তাই । প্রতি সন্ধ্যায় তার শরীর রাখে নদীর জন্য । আর শীতল ঢেউলিপি মেখে নেয় তার দেহে । তার ভেতর থেকে গান গেয়ে ওঠে সন্ধ্যাপাখি । জল ছেড়ে উঠে যাবার সময় সে ছড়িয়ে যায় বিষাদপালক । তবুও তো কাল আবার ফিরতে হবে নদীর মায়ায় । রাত হলেও প্রতিদিন পৃথিবীর সব দরজা আর খিড়কি খোলে নিয়মিত ।
No comments:
Post a Comment