Showing posts with label আলোচনা ।. Show all posts
Showing posts with label আলোচনা ।. Show all posts

Wednesday, August 24, 2022

ত্রিপুরারাজ‍্যে বাংলাভাষা ও সাহিত‍্যে উচ্চশিক্ষা

ত্রিপুরা রাজ‍্যে প্রধান দুটি ভাষা প্রচলিত । বাংলা ও ককবরক । রাজ‍্যের বৃহদংশের জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা এটি । কিন্তু এই দুই ভাষায় উচ্চশিক্ষা গ্লহণের সুযোগটি ক্ষীণ । রাজ‍্যের একটি উচ্মচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এম বি বি বিশ্ববিদ‍্যালয় শুরু থেকেই শিক্ষাপ্রসারের চেয়ে পেটোয়া বিদ‍্যাজীবীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল ।  যার ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সযোগ না থাকার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত এখানে অস্বাভাবিক নয় । শিক্ষাবিস্তার নয় । কিছু বশংবদ বিদ‍্যাব্রতীই এখানকার আসল নির্মান । এখানে কেন্দ্রীয় স্তরে একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে । সেখানেও বাংলা ব্রাত‍্য ।  মানোপযোগী না হওয়ার ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের  দূরশিক্ষণের মাধ‍্যমে বাংলা স্নাতকোত্তর পড়ার ক্ষীণ সুযোগটিও আজ বন্ধ । যার ফলে, প্রতি বছর ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ‍্যালয়ে বাংলাভাষা ও সাহিত্য পড়ার জন‍্যে প্রচন্ড ভিড় হয় । ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাবিভাগের সুনামও দেশবিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে । ত্রিপুরা বিশ্ববিদ‍্যালয়ে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন‍্যে  প্রতিবছর  দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও দেশের বাইরে থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিড় করে থাকেন । ফলে সবাই সুযোগ পান না । যাঁদের মধ‍্যে রাজ‍্যের উচ্চশিক্ষার্থীরাও প্রচুর রয়েছেন । সুযোগবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা যদি প্রাগুক্ত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেতেন তবে তাঁরাও রাজ‍্যের মুখ উজ্জ্বল করার সুযোগ পেতেন । 

Thursday, April 21, 2022

কালবৈশাখী

কালবৈশাখী একটি স্থানীয় বৃষ্টিপাত ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ জোরালো ঝড় যা চৈত্র-বৈশাখ মাসের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা,আসাম, বিহার, ছত্রিশগড়, ঝাড়খন্ড ও বাংলাদেশে চৈত্র-বৈশাখ মাসে হয়ে থাকে । কবি মোহিতলালের কবিতায় ও পাই 'নববর্ষের পুণ‍্যবাসরের কালবৈশাখী আসে' এবং 'চৈত্রের চিতাভস্ম উড়ায়ে জুড়াইয়া জ্বালা পৃথ্বীর' অর্থাৎ এই দুটো মাসের কথা উল্লেখ আছে । 'কালবৈশাখী' শব্দটির মধ্যেও বৈশাখ মাসের ইঙ্গিত রয়েছে । নজরুলের গানেও আছে  'এল ওই কালবোশেখী, কাটাবি কাল বসে কি ?'
পুনশ্চ : আমাদের এ অঞ্চলের আরেকটা সময়ও একধরনের স্থানীয় ঝড় হয়ে থাকে তাকে 'আশ্বিনের ঝড়' বলে যা আশ্বিন-কার্তিক মাসে হয় । কালবৈশাখী ঝড় বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ধান, পাট, চা জাতীয় ফসলের চাষের জন্য উপযুক্ত হয় । আর অন্যদিকে আশ্বিনের ঝড়ে সুপুষ্ট ফসল মাঠে মারা যায় । হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর 'বেনের মেয়ে' উপন‍্যাসে আশ্বিনের ঝড়ের বর্ণনা রয়েছে ।

Thursday, March 31, 2022

হারিয়ে যাওয়ার আগে : একটি গ্রন্থপাঠের গৌরচন্দ্রিকা

'হারিয়ে যাওয়ার আগে' : একটি  গ্রন্থপাঠের গৌরচন্দ্রিকা

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

শিক্ষকতার পেশায় এসে শেখানোর চাইতে শিখেই গেছি দীর্ঘদিন । এখনও শিখছি । আমার চাকরি জীবন শুরু হয় সাব্রুম হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে । এই স্কুলে সেকালের ডাকসাইটে দিকপাল শিক্ষকদের সান্নিধ্যে এসে ছিলাম আমি । আমাকে প্রথম দিন স্কুলের দরজা থেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় স‍্যর । হাত ধরে প্রথম ক্লাসে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সুভাষ দাস, অর্থনীতির শিক্ষক । এভাবে ধীরে ধীরে গোপাল দেবনাথ, রমনীমোহন নাথ, রঞ্জিত দেবনাথ, ড.ননীগোপাল চক্রবর্তী,কমল অধিকারী, নারায়ণ রায়, ড. রঞ্জিত দে প্রমুখ বেশ কয়েকজন নামজাদা শিক্ষকের স্নেহের ছায়ায় কাটিয়েছিলাম দীর্ঘদিন । চাকুরি চলাকালীন সময়ে অনেকে নতুন এসে জয়েন করেছেন । অনেকে নতুন কর্মক্ষেত্রে বদলি হয়ে গেছেন । অনেকে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন । আমার কয়েক দিন আগে এই স্কুলে জয়েন করেছিলেন আমার অগ্রজপ্রতিম দীপক দাস । সেসময়ে আমাদের স্টাফ রুম ছিল জমজমাট । পড়াশোনা, আড্ডা, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদি নিয়ে জ্ঞানচর্চার একটা বৃহৎ পরিসরের মধ্যে আমি এগিয়ে যাচ্ছিলাম ‌। শম্ভু চৌধুরী, শিখা ভট্টাচার্য্য, বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য, গৌরগোপাল দাস, চম্পাকলি বিশ্বাস, নেপাল সরকার, অর্জুন শর্মা, নিতাই ভৌমিক  এঁরাও প্রত‍্যেকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে ছিলেন জ্ঞানভান্ডার । শিক্ষা ছাড়াও শিক্ষক আন্দোলনের পুরোধাপুরুষ ছিলেন বেশ কয়েকজন । লক্ষ‍্যণীয় হল এই শিক্ষকমন্ডলীর অধিকাংশেরই ছিল সাহিত‍্যে অগাধ বিচরণ । লিখতেও পারতেন হাত খুলে । যাঁদের মধ‍্যে আজও অনেকে রাজ‍্যের লেখালেখির জগতে সুনামের সঙ্গে বিচরণ করছেন । ফলে 'চন্দন গাছের সঙ্গে থেকে ভেরেন্ডা গাছ ও যেমন চন্দনের বৈশিষ্ট্য লাভ করে তেমনি আমিও এই গুণীজনদের মধ‍্যে মধ‍্যে থেকে নিজেকে সমৃদ্ধ করবার বিরল সুযোগ পেয়েছিলাম । আমাকে বিভিন্নভাবে তাঁরা সাহায‍্য করতেন যাতে লেখালেখিতে উৎকর্ষ আসে । তীক্ষ্ণ সমালোচনাও করতেন । এঁদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানের পরিধি প্রতিদিন আমাকে নতুন করে জাগাত । 

আমার অগ্রজপ্রতিম দীপকদা যার সঙ্গে আমি দীর্ঘ আটাশ বছর এই স্কুলে কাজ করেছি  । বাংলাসাহিত‍্যে অবাধ বিচরণ তাঁর । ক্ষুরধার যুক্তির জাল বিস্তার করে বক্তব‍্য রাখতে পারেন । মুহুর্মুহু বেদ-পুরাণ-নীতিগল্প থেকে উদাহরণ টেনে বক্তব‍্যকে সমৃদ্ধ করতে পারেন তিনি । কবিতা আর গান ছাড়া তাঁর বক্তব‍্য সম্পূর্ণ হয়না । তবে কিছুটা আবেগপ্রবণ তিনি । আবেগের রাশ টানতে পারেননা । আর এই আবেগময়তার কারণেই তাঁর অনেক গুণগ্রাহী শ্রোতা রয়েছেন । আর তাঁর আর একটি গুণ হল কাউকে তিনি অবমূল‍্যায়ন করেননা । তাঁর স্পষ্টবাদিতারও শিল্প রয়েছে । আমার লেখার একজন মনযোগী পাঠক ও গঠনমূলক সমালোচক তিনি । দীর্ঘদিন লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন  । সম্প্রতি তাঁর সেইসব লেখার বাছাই করা কিছু নিবন্ধকে দুই মলাটে বন্দী করেছেন 'হারিয়ে যাওয়ার আগে' শিরোনামে । এবারের বইমেলায় আগরতলার প্রকাশন সংস্থা 'নীহারিকা' থেকে প্রকাশিত হয়েছে এই গ্রন্থ ।  কথাবলার মতো ঝরঝরে ভাষায় লেখা এই লেখায় তাঁর পাঠব‍্যাপ্তি পাঠক প্রতি ছত্রে ছত্রে অনুভব করবেন । প্রতিটি লেখায় ঝরঝরে গদ‍্যশৈলী, কবিতার উদ্ধৃতি, গ্রন্থপাঠের নির্যাস পাঠককে মুগ্ধ করবে । তাঁর লেখা জুড়ে মৃত‍্যুচেতনা এক নিপুণ অনুষঙ্গ । যা জীবনবোধে স্নাত করে ।

 গত পরশু আমাদের পূর্বতন কর্মক্ষেত্র সাব্রুম দ্বাদশ শ্রেণি বিদ‍্যালয়ের প্রধানশিক্ষক দিলীপচন্দ্র দাস মহোদয় এবং শিক্ষক নিতাই ভৌমিক  আমাকে ও দীপকদাকে গতকাল স্কুলে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান । গতকাল নিতাই ভৌমিকের চাকরিজীবনের অবসরগ্রহণ উপলক্ষ‍্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন‍্যে । প্রধানশিক্ষক দিলীপচন্দ্র দাস মহোদয় কিছুদিন আমাদের তিনজনকে একসঙ্গে পেয়েছিলেন । সেই অনুষ্ঠানে আচমকাই দীপকদা আমাকে এবং নিতাই ভৌমিককে তাঁর সদ‍্যপ্রকাশিত গ্রন্থ 'হারিয়ে যাওয়ার আগে' তুলে দেন ।
আসলে আমি দীপকদাদের মতো অগ্রজদের স্নেহ এবং দিলীপচন্দ্র দাস স‍্যর এবং নিতাই ভৌমিকদের মতো অনুজদের শুভেচ্ছায় বাঁচার রসদ পাই ।
এই ভরসাতেই ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে পাঠকের রসভঙ্গ করার সাহস পাই  । 

সবার জন‍্যে শুভকামনা ।