Showing posts with label গ্রন্থ আলোচনা. Show all posts
Showing posts with label গ্রন্থ আলোচনা. Show all posts

Tuesday, May 2, 2023

কবিতায় রোমান্টিক ভাবনা

কবিতায় রোমান্টিক ভাবনা

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

কবিতার মধ্যেই  ফুটে উঠে কবির কাব্যব্যক্তিত্ব । কবি তাঁর কল্পনার পরিধিবিস্তারের মাধ্যমে তাঁর কাব্যপ্রতিভার স্বকীয়তাকে প্রকাশ করেন । এই প্রকাশের মূলে রয়েছে কবির ভাবনার সুদূরপ্রসারের ক্ষমতা । যার দ্বারা কবি নিজেকে অন্য কবির থেকে আলাদা করে নির্মাণ করেন । এই আশ্চর্য কল্পনাপ্রবণতাকে সাহিত্যের ভাষায় রোমান্টিকতা বা রোমান্টিজম বলে । রোমান্টিকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে অধ্যাপক হার্বাট বলেছেন, an extraordinary development of imaginative sensibility. কল্পনাপ্রবণতার ব্যতিক্রমী উন্নয়ন হল রোমান্টিজম । ওয়াটস ডাল্টন যেটাকে বলেন, Renascnce of wonder. অর্থাৎ বিস্ময়ের আবির্ভাব । রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, 'বিস্ময়ে তাই জাগে আমার প্রাণ ।' 

 বাংলা কাব্যের প্রথমদিকের গীতিকবিদের কাব্য ভাবনা রোমান্টিকতায় আচ্ছন্ন । পরবর্তী সময়ে বাংলা কাব্যপ্রবাহ অনেক দূর এগিয়ে গেছে । রোমান্টিকতা কবিতার প্রধান উপজীব্য হলেও তার প্রকাশভঙ্গিতে বহু পরিবর্তন হয়ে গেছে । পরিবর্তনই হল আধুনিকতা । প্রকাশভঙ্গির আধুনিকতায় কবিকে স্বকীয়তায় চিহ্নিত করে । 

কবি মায়া মজুমদার একজন সহজ সরল গ্রাম্য গৃহবধূ । জীবনের দীর্ঘসময় কর্মব্যস্ততায় নিজের সংসারের বেড়াজালে আবদ্ধ থেকেছেন এবং সমাজসেবা মধ্যে মগ্ন থেকেও দীর্ঘদিন নীরবে কাব্যচর্চা চালিয়ে গেছেন ।জীবনের শেষ পর্বে এসে তাঁর কবিতাকে বৃহত্তর পরিসরে প্রকাশের  প্রতি ঝুঁকেছেন । এই শতাব্দীর প্রথম দশকের শেষার্ধ থেকে তিনি রাজ্যের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কবিতা প্রকাশে মনোনিবেশ করেছেন । সর্বাধুনিক সময়কালে বসে কবিতা রচিত হলেও তাঁর কবিতা কিন্তু সেই অনুযায়ী সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে পারছে না । এখনো তাঁর কবিতা প্রাক-আধুনিক কবিদের গীতিকবিতার লক্ষণাক্রান্ত বলা যেতে পারে । কিন্তু তাঁর অন্তর্মুখী নিভৃত সৃষ্টিতে তিনি বিরত নেই সেটাই বড়ো কথা ।

সময়ের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও দীর্ঘকালব্যাপী কবির কাব্যচর্চার নিরন্তর প্রয়াসের ফলশ্রুতিতেই ইতোমধ্যে তাঁর তিন তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে গেছে । তাঁর প্রথম ও দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ যথাক্রমে 'এই তো জীবন' এবং 'নীল মেঘের বেদনা' প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালের আগরতলা বইমেলাতে এবং তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ 'থমকে যাওয়া মন' প্রকাশিত হয়েছে জানুয়ারি ২০২২ এ । তাঁর প্রতিটি কাব্যগ্রন্থে ছাপ্পান্নটি করে কবিতা রয়েছে । সংসারের সমস্ত দায়দায়িত্ব নির্বাহ করে বহু লিখিত কবিতা থেকে ঝাড়াই বাছাই করে একশো আটষট্টিটি কবিতা ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা একজন গৃহবধূর পক্ষে অসাধ্যসাধনই বলা যেতে পারে নিরন্তর সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে । একারণে কবির এই দুরূহ প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাতেই হয় । তাঁর কবিতাগুলোর প্রায় সব কয়টি একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যেই আবর্তিত হয়েছে । আলাদা করে নাম না করেও বলা যায় যে, তাঁর কবিতায় প্রধানত যে ভাবনাগুলো উঠে এসেছে তা হল–

১. কবিতায় তাঁর নিজস্ব ভালোলাগা মন্দলাগার প্রকাশ
২. জীবনের বাস্তবতাকে নির্মমভাবে প্রত্যক্ষ করে নিজের অতৃপ্তি ও অসন্তোষের প্রকাশ
৩. প্রকৃতির সজীব ও চৈতন্যময় সত্তার স্ফুরণ
৪. আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যের উপাসনা
৫. কখনো কখনো বিষন্নতা ও নিঃসঙ্গবোধ

 তিনটি কাব্যগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমেই কবিকে স্বতন্ত্রতায় চিহ্নিত করা যাবে । আলোচিত তিনটি কাব্যগ্রন্থই অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় রচিত এবং পড়ে ভালো লাগবে । প্রতিটি গ্রন্থ ই প্রকাশিত হয়েছে ত্রিপুরার বিশিষ্ট প্রকাশন সংস্থা 'মৌমিতা প্রকাশনী', আগরতলা থেকে ।

কেসহিস্ট্রি আর কথাসাহিত্যে সমাজসমস্যার প্রকাশ

কেসহিস্ট্রি আর কথাসাহিত্যে সমাজসমস্যার প্রকাশ

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

 মামলায় জড়িয়ে পড়লে বোঝা যায় তার মধ্যে কি জট আর জটিলতা । আইন ও বিচারব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল বিষয় । মানুষ সুবিচারের জন্য আদালতে যান । এক্ষেত্রে আইনজীবীর বিশেষ ভূমিকা থাকে । অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়ের উপর তাঁকে নজর রাখতে হয় । আইনজীবী তাঁর মক্কেলের পক্ষে বিভিন্ন রকম তথ্য উপাত্ত বিচারকের কাছে তুলে ধরেন । সে ক্ষেত্রে সাক্ষ্য বা তথ্য উপস্থাপনের সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে বা অসাবধানতাবশত দৃষ্টি এড়িয়ে গেলে তা অনেক সময় বিচার প্রার্থীর বিপক্ষে যেতে পারে । আইনজীবীর বিচক্ষণতা ও স্পষ্ট মনোভাবের ফলে মক্কেল মামলায় সঠিক বিচার পায় । আবার আইনজীবীর শুধুমাত্র ব্যক্তিগত লাভালাভের বিষয়কে প্রাধান্য দিলে তখন বিচার ব্যবস্থা মার খায় ।

দেবরঞ্জন চৌধুরী পেশায় আইনজীবী । তার পিতাও একসময় আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । ফলে বিচারালয়ের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের একটা যোগাযোগ রয়েছে । বিচার ব্যবস্থার নাড়িনক্ষত্র সম্বন্ধে তিনি বিশেষভাবে অবগত আছেন । বিচার ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে বহু ঘটনার সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত । বিচারকার্য পরিচালনা করতে গেলে বিচারক আইনজীবী এবং মামলার বাদী-বিবাদী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বহু খুঁটিনাটি দিকের উপর নজর রাখতে হয় ।

 আদালতের অলিন্দে দীর্ঘকাল পদচারণার ফলে বিশিষ্ট আইনজীবী দেবরঞ্জন চৌধুরী বিচার প্রক্রিয়াকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন । সুবিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে মক্কেলকে মামলা করার জন্য উৎসাহিত করার পাশাপাশি আইনজীবীরা যে পেশাগত দায়িত্বের উর্ধ্বে উঠে সামাজিক দায়িত্ব পালনেও ভূমিকা নিতে হয়, সে দিকটিও লক্ষ্য রাখতে হয় সে ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ।

লেখক তাঁর 'বিচারালয়ের অভিজ্ঞতা' ( প্রকাশক মৌমিতা প্রকাশনী, বইমেলা ২০০৩ ) গ্রন্থে বিচারব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত তাঁর সারা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কিছু ঘটনা তুলে ধরেছেন । বৈঠকি ঢঙে বর্ণনা করা তাঁর কেস হিস্ট্রিগুলো পড়লে জানা যায়, কিভাবে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনজীবীর গভীর অনুসন্ধানী পদক্ষেপের ফলে সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মক্কেল সুবিচার পায় । আবার ত্রুটিপূর্ণ জবাবের কারণে এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি এক্সিবিট করার ক্ষেত্রে গাফিলতি থাকার ফলে 'বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে' । একেবারে সহজ সরল ভাষায় লেখক ছোটো ছোটো কেসহিস্ট্রি তুলে ধরে অত্যন্ত সুখপাঠ্য করে তুলেছেন বইটি । আইনঘটিত বিষয় হলেও আইনি কচকচি নেই বইটিতে । তাই পাঠক খুব আগ্রহের সঙ্গে বইটি পড়বেন । বাদী বিবাদীর নাম উল্লেখ না থাকলেও বর্ণিত মামলা সংক্রান্ত ঘটনা স্মরণ করে  এই গ্রন্থের মাধ্যমে রাজ্যের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার ইতিহাস ও জানতে পারবেন পাঠক । এটা একটা বাড়তি পাওনা ।

'দীপ শিখা' দেবরঞ্জন চৌধুরীর দ্বিতীয় গ্রন্থ । এই গ্রন্থেরও প্রকাশক মৌমিতা প্রকাশনী, আগরতলা । প্রকাশকাল বইমেলা ২০২৩ উপন্যাস না বলে এটিকে একটি বড় গল্প  বলা যেতে পারে । গল্পের মূল দুটি চরিত্র দীপ ও শিখা  কৈশোরের বন্ধুত্ব থেকে যৌবন সমাগমে পরস্পরের অজান্তে একে অন্যকে ভালোবেসে ফেলে । একসঙ্গে কলেজে পড়াশোনা করতে করতে শিখাকে একদিন রাজ্যান্তরী হতে হয় । মা-বাবা ও অন্যান্য অভিভাবকদের চাপে পড়াশোনায় মেধাবী ও অন্যান্য গুণে গুণান্বিতা এই মেয়েকে তারা বিয়ে দিয়ে দেয় । কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ভালো ঘরে বিয়ে হলেও একদিন গাড়ি দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয় শিখা, তার স্বামী ও দুই সন্তান । দুদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারা যায় শিখার স্বামী । দুই অসহায় সন্তান নিয়ে তার স্বামীর গৃহে স্থান হয় । এদিকে দীপ চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে কলকাতার ডাক্তার নীলরতন সরকার হাসপাতালে কর্মজীবন শুরু করে । ভাগ্যক্রমে দীপের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে শিখার । একসময় তারা পরস্পরকে চিনতে পারে ।  গভীর অন্তর্দ্বন্দ্বে দীর্ণ হয় উভয়ের মন । কিন্তু একদিন শিখাকে সুস্থ করে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয় দীপ ।

তারপর বহুদিন পর তাদের বাল্যবন্ধু গল্পের কথক আবার যোগাযোগ তৈরি করতে পারে দীপ ও শিখার সঙ্গে । সেদিন দেখা যায়  দীপ বার্ধক্যে জর্জরিত । শিখা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে । ছেলেও প্রতিষ্ঠিত । মেয়ে ও জামাই যাদবপুরে থাকে । মেয়ের বাড়িতে এলে শিখা দীপকে দেখে যায় । উভয়ের ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হলেও কৈশোরের কাছাকাছি আসা দুটি মন এক হতে পারেনি কোনোদিন । 'ওদের কাছে তাই তাদের বাল্য জীবনের ভালোবাসা যেন জীবনের সমস্ত কিছু বলার মধ্যেও যেন অপূর্ণতা ও অভিশাপ
 ।'

এই হল গল্পের বিষয়বস্তু । নিটোল প্রেম ও অপূর্ণতার গল্প হলেও আজ থেকে ষাট সত্তর বছর আগের সামাজিক অবস্থার প্রতিই মূলত তিনি ইঙ্গিত করেছেন তাঁর গল্পে । এ প্রসঙ্গে লেখক নিজেই তাঁর গল্পের ভূমিকায় লিখেছেন, "আইনজীবী প্রফেশন থেকে নিজেকে আইনের গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রেখে মনে হল সমাজের বিভিন্ন প্রতিকূলতা এবং অজ্ঞতা আজও সার্বিকভাবে আমাদের সমাজের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । তারই উদাহরণ নীরমহলের স্থপতি রাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের একটি বিশেষ কীর্তি যেটিকে নষ্ট করে দেওয়ার মানসিকতা এবং আজও আমাদের সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার মেয়েদের জীবনের এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে আছে । তারই প্রকাশ করার ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র ।" 

গল্পের আড়ালে সমকালের একটি সমস্যাকে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছেন লেখক তাঁর লেখার নিপুন বাঁধুনিতে । গল্পটি পড়ার পর পাঠককে ভাবাবে ।

Monday, March 28, 2022

বিপ্লব উরাং-এর নির্বাচিত কবিতা

বিপ্লব উরাং-এর নির্বাচিত কবিতা

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

ত্রিপুরায় সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে কবিতার ধারাটি সমৃদ্ধ । এরাজ্যে বাংলা ছাড়াও অন্যান্য ভাষায় নিরন্তর কবিতা রচনা হচ্ছে । ছিলোমিলো এখানকার চা-বাগান অঞ্চলের মানুষজনের ভাষা  । এই ভাষাতে যে কয়জন কবিতা রচনা করে ইতোমধ্যে পাঠকমহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন তাদের মধ্যে বিপ্লব উরাং এর নাম অবশ্যই উচ্চারণ করতে হয় । বিপ্লব উরাং মোহনপুর মহকুমার ঈশানপুরে চা-শ্রমিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । ফলে তাঁর মাতৃভাষাও ছিলোমিলো । পাশাপাশি বাংলা কবিতায় ও তিনি সমান দক্ষতার ছাপ রাখেন ।তাঁর কবিতায় চা বাগান অঞ্চলের জীবন-সংস্কৃতি ও তাদের সংগ্রামের পাশাপাশি বর্তমান সময়ের মানুষের যন্ত্রণা ও লড়াকু মানসিকতার কথা তীক্ষ্ণ ও তীর্যকভাবে ফুটে ওঠে একেবারে সরল শব্দে । তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'এক বিঘত জমিন' প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে । তারপর থেকে তাঁর কাব্য খ্যাতি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমানা ছাড়িয়ে আরও বৃহত্তর সড়কপথে যাত্রা করেছে ।

আগরতলা বইমেলার চতুর্থদিন সন্ধ‍্যায় লিটল ম‍্যাগাজিন এনক্লেভে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম । এই সময়ে একটি টেবিলে চোখে পড়ল 'বিপ্লব উরাং-এর নির্বাচিত কবিতা' বইটির দিকে । সদ‍্য বেরিয়েছে আগরতলার প্রকাশনা সংস্থা 'তিনকাল' থেকে । সংগ্রহ করলাম বইটি । বত্রিশ পাতার ছোট্ট শরীরের বইটিতে রয়েছে একুশটি কবিতা । কবি তাঁর শৈশব থেকে দেখে এসেছেন চা-শ্রমিকদের নিত‍্যদিনের জীবনযুদ্ধ । পুরুষানুক্রমে বাহিত হয়ে আসা এই সংগ্রামের কথা লেখার জন‍্যে তিনি তাগিদ অনুভব করেন । তাই তিনি লেখেন ১.'তকে লিখতে হবেক/ভাঙ্গা ঝুপড়ি ঘরে থাকে/কুপিবাতি জ্বলায় করে/লিখাই পড়হা করেছিস ।/ঘরপেন্দারে স্কুল নাই ছিল ।/গাড়িভাড়ার অভাবে কখন সখন পায়ে হাঁটে স্কুল করেছিস ।' ( তকে লিখতে হবেক )
২.'বাগানে কলঘরে কাম করতে যাইয়ে/বেনুকাকার হাত দুইটা/মেসিনে দুই টুকরা হইয়ে যাইয়েছিল/বিনা চিকিচ্ছায় তিনমাস পিছে/টপাস করে চলে গেল ।' ( তকে লিখতে হবেক ) । সময়ের প্রেক্ষিতে কবি লিখতে গিয়ে সংশয়াপন্নও হয়ে পড়েন । 'চখেত কত কিছুই দেখছি ।/সাচ কথা লিখতে গেলে ডর ডর লাগে ।' ( মনটা ছটফটাছে ) ।উৎকন্ঠাসংকুল মন নিয়েও কবি দগ্ধ সময়ের রূপান্তরের স্বপ্ন দেখেন । 'আনধার চারদিকেই আন্ধার ।/আনধারে ডুবে থাকেও ক‍্যানে/কে জানি লতুন সকালের জনে/হামরা একসঙ্গে লড়তে নাই পারি ।/সপন দেখি এক সুন্দর সকালের ।' ( সপন দেখা ) 
বিপ্লব উরাং এর কবিতায় কবি বারবার 'বেচারাম'কে এনেছেন । ১. বেচারাম পড়ে শুনায়-/হাঁ করে শুনি আর বিড়বিড়ায়-/চুতিয়ারা মুরগির ঠ‍্যাং খাইয়ে/ঝুটা কথা লিখে দিয়েছিস-/শরমিকরা ভাল আছে ! ( খবরিওয়ালা ) ২. নাই বেচারাম, চুপ করে আর ঝোপতে/ থাকলে চাকরী নাই পাবি । ( ছিনাই করে লিব ) ৩. বেচারাম,/ শুনলম তুই ন কবি। হয়েছিস ।/ কবতা লিখছিস ।/ বাঃ, ভালা কথা । ( তকে লিখতে হবেক ) ।

মনে হয় বেচারাম কবিরই আত্মসী । অথবা সেইসব শ্রমজীবি মানুষের প্রতিনিধি, যুগ যুগ ধরে যাদের শ্রম-ঘাম বিক্রি হয়ে আছে মালিকের গদিতে । যারা 'মাথাপিছু হপ্তাহে/চাল আটা মিলায় তিন কেজি, দুইশগেরাম' রেশন দেয় শ্রমের বিনিময়ে । তাও ' ক‍্যামন চাল জানিস/পাথর মিশাইল !/আর আটায় ভুষি ভর্তি ।' ( রেশন ) । কী নিদারুণ দুঃখভরা রসিকতা উঠে আসে বিপ্লব উরাং-র কবিতায় ।

Tuesday, November 21, 2017

আরক্তসুন্দর মুখশ্রী - সন্মাত্রানন্দ

আ # ত্রিপুরার ত্রিপুরেশ্বরী
র # চর্যাপদে কৃষিজীবনের চিহ্ন
ক্ # জীবনানন্দের ছায়াশরীরিণী নায়িকা
ও কবিতার অনুভবী পাঠক
ত # গদ্যের গলগথা
সু # ক্রুদ্ধ মনীষীদের আরক্তসুন্দর মুখশ্রী
ন্ #বিবেক-মানসে আবির্ভূত শ্রীরামকৃষ্ণ-প্রণামমন্ত্র
দ # একটি গল্পে ভারতের জাতীয় ইতিহাস
র্ # সারদা দেবী ঃ এই বেদনাক্লিষ্ট পৃথিবীতে
দুঃখজয়ের এক আশ্চর্য অভিজ্ঞান
মু # স্বামী বিবেকানন্দ, একটি নাট্যানুষ্ঠান ও
এক অলোকসামান্যা অভিনেত্রী
খ # Angels Unawares-র ভাবালোকে
স্বামী বিবেকানন্দের জীবনদর্শন
শ্ # বিবেকানন্দের ভাষ্যকার
স্বামী রঙ্গনাথানন্দ
রী # হ্যাঁ, আপনাকে বলছি.......
** প্রণম্য অগ্নির দ্বাদশ শিখার বিস্তার