কিল মারবার গোঁসাই ৷
বলছিলাম ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কথা ৷ ঘুরতে ঘুরতে আজ এসে পৌঁছুলাম খাসপুর প্রত্নক্ষেত্রে ৷ দুতিনটে প্রাচীর ও পরিখাবেষ্টিত চারচালা প্রাচীন ইমারত ছাড়া আর কিছু নেই ৷ যত্নের ছাপও নেই ৷ অফিস বলতে একটা ছোট্ট দালান ৷ বসার ব্যবস্থা বলতে একটা প্লাস্টিকের টেবিল, দুটো চেয়ার সম্বল ৷ কর্মী আছেন দুজন একজন পুরষ ও মহিলা ৷ খই ভাজেন কিনা জানিনা ৷ তবে তাঁরা আছেন ৷ কোনো আলমারি বা আসবাবপত্র কিছুই নেই ৷ মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে লিপিখোদিত কয়েকটা প্রস্তরখন্ড ৷ আর আছে একটা পাওয়ার ট্রিলার ৷ প্রত্নস্থলটি সম্বন্ধে অফিসে যখন তথ্য চাইলাম তখন পুরুষ কর্মী ভদ্রলোক একটা পেটমোটা বাজারের থলে থেকে একটাল কাগজ বের করে তার থেকে দুমড়ানো একটা কাগজ বের করলেন ৷ তাতে কিছু তথ্য আছে ৷ আবছা ৷ তারই ছবি নিলাম ৷ জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের আলমারি, ফাইলপত্র নেই ৷ বললেন, আমরার কথা আর কইন না যে ৷ যা বললেন তাতে তাঁরা যে কতোটা অসহায় অব্যবস্থার শিকার তা সহজেই অনুমান করা গেল ৷ ভিজিটরস বুকের কথা আর তুললামই না ৷ বললেন এটা ক্যাম্প অফিস ৷ গুয়াহাটি থেকে প্রত্নতত্ব দপ্তর এটা দেখভাল করেন ৷ কোনো রেকর্ডপত্র কিছুই নেই ৷ কথায় কথায় জানলাম ভদ্রলোক ত্রিপুরায় ঊনকোটিতেও ছিলেন বেশ কিছুদিন ৷ উদয়পুরে তাঁর এক সহকর্মী আছেন ৷ মাধব সাহার বাড়ির উল্টোদিকে বাড়ি সহকর্মীটির অর্থাৎ নারায়ণ দেবনাথের ৷ দক্ষিণের পিলাকের কথাও বললেন কথাপ্রসঙ্গে ৷ আমার আগ্রহ দেখে তাঁর সংগ্রহে রাখা ডিমাসা জাতির ইতিহাসসংক্রান্ত কয়েকপাতার একটা প্রবন্ধের একটা জেরক্স কপি দেখালেন ৷ বললেন,কিছুই তো নেই ৷ অনেকেই তো জানতে এর ইতিহাস ৷ এটা উনি ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করে রেখেছেন ৷ প্রবন্ধটি অসমিয়া ভাষায় লেখা ৷ আমার জন্যে মহামূল্যবান সম্পদ ৷ পড়ে ফেললাম ঝটিতি ৷ গতকাল আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাবিভাগে গিয়েছিলাম ৷ উত্তরপূর্বের সাহিত্যসম্পর্কিত প্রচুর রেফারেন্স দেখলাম কিন্তু প্রাচীন ত্রিপুরা রাজ্য ও ডিমাসা রাজ্যের পারস্পরিক সম্পর্কের সূত্র বা সমকাল সম্বন্ধে কোন রেফারেন্স পাইনি ৷ অবশ্য আমি সেখানে খুব অল্প সময়ের জন্যে অবস্থান করি ৷ তবে তাঁদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছি ৷ ক্লাসের ব্যস্ততার মধ্যেও অধ্যাপক ড. দেবাশিস ভট্টাচার্য ও অধ্যাপক ড. রাহল দাস আমাকে সঙ্গসুধায় ঋণী করেছেন ৷ ওহো ভুলেই গেছি ৷ অধ্যাপক রাহুল দাস আমার হাতে তুলে দিয়েছেন উত্তরপূর্বের বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মিথিলেশ ভট্টাচার্যের একটি গল্পগ্রন্থ ও দ্বিরালাপ সাহিত্যপত্রের কয়েকটি সংখ্যা ৷যাই হোক, খাসপুর প্রত্নক্ষেত্রের কথায় আবার আসি ৷ আমাকে ওখানকার এই চিরকুটগুলো নিয়েই তৃপ্ত থাকতে হল ৷ প্রত্নতত্ত্ব দপ্তরের তরফ থেকে কোনো ইতিহাসনির্দেশক বোর্ড নেই ৷ এ ব্যাপারে নিজেদের হুঁশ না থাকলে কী হবে ৷ দপ্তরের মুরুব্বিসুলভ হুঁশিয়ারনামাটা ঠিক প্রবেশপথের মুখেই জ্বল জ্বল করছে ৷ এর আগে পরশুদিন গিয়েছিলাম উধারবন্দের কাঁচাকান্তি কালিবাড়িতে ৷ তথ্য জানার জন্যে টুকটাক প্রশ্ন করতে দুই পুরোহিত আমারদিকে এমনভাবে তাকালেন যেন বন থেকে বেরুনো নতুন চিড়িয়া দেখছেন ৷ জয় মা, অপরাধ নিওনা ৷ এই দুজন কিছুক্ষণ বাদে বাদে থালা থেকে প্রণামী তুলে নিয়ে মায়ের চরণের উপরে রাখা পুষ্পস্তুপের তলায় রাখা ঠোঙায় মজুদ করছেন ৷ আকাটদুটো মায়ের ইতিহাস কিছুই জানেনা ৷ শুধু রাঙ কামাইর ধান্দা ৷ এন আর সির খসড়ায় সাফল্য খুঁজে এরা আহ্লাদে অষ্টাশিখানা হয়ে মিষ্টিমুখ করছে বিদেশিবিতাড়নের উল্লাসে অথচ নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষায় উদাসীন ৷ 'নিজের ঘরেই জমে থাকে দুঃসহ অন্ধকার' ৷
No comments:
Post a Comment