অক্ষরের দীপান্বিতায় কবিতার বিভা
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
বড় রহস্যময় শব্দের শিল্প । কবিতা তো শব্দের চারুরাগ । চেতনার অন্তর্লীন বিস্ময়ভুবন । হৃদয়ের মসলিন শিল্প। হাজার আলোকবর্ষ থেকে ভেসে আসা শব্দের নিজস্ব স্রোত ।অসীম অনন্ত লোক থেকে সুরেলা আওয়াজ তুলে আসে শব্দ । আসে ঢেউ তুলে তুলে । ভেসে এসে বসে যায় জীবনের আখড়ায় । বিচ্ছিন্ন অস্তিত্ব সব জোট বাঁধে । অশরীরী কে একজন অলক্ষ্যে থেকে এগিয়ে দেন শব্দমালাকে ।
পারিজাত গন্ধ নিয়ে শব্দের পরিব্রাজন । শব্দ বসে বসে কথা হয় । সে কথায় থাকে অদ্ভুত মোহময়তা । সম্মোহনজালিকা । শব্দের গাঁথুনিতে যে কথার নির্মাণ তা হয়ে ওঠে নশ্বরতাহীন দৈবী টংকার । জীবনের মৃদঙ্গে আওয়াজ তুলে শব্দ জেগে ওঠে মুগ্ধ নয়নে । কুয়াশার বলিরেখা ভেদ করে জেগে ওঠে আলোর নির্ঝর । এক একটা চিত্র ভাষ্য স্পষ্ট হয় কাগজের বুকে কালো অক্ষরের স্বপ্নসন্ধানে । অন্তরেখ মায়া নদী বাঁক নেয় অবচেতনের পলিতে ।
আত্মউৎস খুঁজে নেবার জন্য আধিপথের দিকে ধায় মাধুকরী । পথের শুরুরও খোঁজ করতে হয় । সেখানে আলো জ্বলে । অতীতের দূমহলে ঘর তার । মাঠ পেরুলে পাথার । পাথারের নাম তেপান্তর । তেপান্তরের পরে আসে রূপকথার নদী ও সমুদ্র । সেসব অতিক্রমণের সাথে সাথে হারিয়ে যায় চেনা পথ । পুরনো দিগন্তের পরিচয় । আদ্যরশ্মির রেখা ।
পরিচয় এর জন্যই উল্টোসাধন । আলোদলিলের সন্ধান কর্ম তুলে দেয় শৈশবের শিস । ক্রমাগত অন্ধকারের মধ্যে পর্যটন শেষে আদিবীজ ভেসে ওঠে ফসিল স্তুপের ভেতর । সে বীজ হাতে নিলে দেখা যায় উজ্জ্বল সূর্যোদয় । ফিনকি দিয়ে ছোটা রশ্মিরেখার আকাশ আলোকিত । সে আকাশ থেকে পরিচিত নির্যাস ভাসে বাতাসে । আকাশমুক্ত বলেই তার গায়ে মৃগগন্ধ লেগে থাকে আকাশ স্বাধীন হতে শেখায় । ডানার কৌশল জানে আকাশ । নির্মিত ডানার বুনন আকাশের গোপন বিদ্যা । নির্মাণ শেষে বীজমন্ত্র দিয়ে দেয় মুক্তির । কুয়াশার চাদর থাকে না । থাকে ভ্রমণকথা । আলোর বিম্বে স্পষ্ট হয় ডানার ভেতরের রক্তের চলাচল । হাওয়ায় ভাসমান ডানায় সচল হয় শোণিতের কার্যক্রম।
শোণিতেরর তৎপরতার ভেতর নির্মাণ হয় দৃশ্যের মানচিত্র । সত্তার আনন্দবোধ কিংবা বেদনাবেহাগ ।শোণিতের চলমান বিন্দুও শব্দ হয় । জীবনের প্রহেলিকাকে যন্ত্রণার রূপ দেয় । যন্ত্রণা থেকে সৃষ্টি নেয় বিষাদবিগ্রহ । সে বিষাদের অর্চনা করতে করতে জীবনের সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচয় হয় । সৌন্দর্য বিস্মিত করে স্রষ্টাকে । সৌন্দর্যের অপার আলোর বিভার ভেতর দেখা যায় কাব্যপ্রতিমাকে । তাকে ঘিরে জ্যোতির বলয় । কবি তার আত্মাকে নিয়ে বসায় সে বলয়ে । কবি তখন হাসে আপন মনে । আপন নির্মাণখেয়ালে । কবিতার দীপান্বিতায় কবির স্নান হয়।
No comments:
Post a Comment