এবারের পুজোর মরসুমে প্রকৃতিও বৈরী । এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু প্রান্তিক মানুষের জীবিকাও । পুজোর তিনদিন সময়ের আয় দিয়েই পুজোর পরেই পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবার স্বপ্ন দেখেছেন । লিখতে গেলে তা বিশাল হয়ে যাবে । এত এত মানুষের শ্রমে ও শিল্পে সৃষ্ট মন্ডপের নান্দনিক আয়োজন । সব মিলিয়েই তো পুজোর আনন্দ মা ! এবারের আনন্দ কি জলে ভেসে যাবে আনন্দময়ী !
গত কবছর ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে যে, পুজোর সময়েতেই যেন আসল বর্ষাটা নামে । আর শারদোৎসবের সমস্ত আয়োজন মাঠে মারা যায় । বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আমাদের খন্ডের ঋতুচক্র তছনছ হয়ে গেছে । প্রকৃতি ক্রমশ রুদ্রমূর্তি ধারণ করছে । এটা ক্রমশ বাড়বেই । মূলত ভারতীয় কৃষিজীবন এই এবারের পুজো
এবারের পুজো
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
ঋতুচক্র মেনেই অতিবাহিত হত । বর্ষাবিদায়ের কালে শরতের আগমণে প্রকৃতি ক্রমশ শান্ত হয়ে এলেই হত দেবীর বোধনের আয়োজন । মাঠের ফসল তখন পূর্ণগর্ভা । তার দিকে তাকিয়ে আশায় বুক বাঁধে কৃষক । আর এই কৃষকদের ঘিরেই রয়েছে নানা পেশার মানুষ । যাদের জমি নেই, জিরেত নেই । বীজ বোনা আর ফসল তোলার মাঝখানে তাদের কোনো কাজ থাকে না । একটা টানা অভাবের মধ্য দিয়ে তাদের দিনাতিপাত করতে হয় । গ্রামীন অর্থনীতিতে এইসময়টা বন্ধ্যা সময় । আর এই সময়টাতেই হয় দেবীর বোধনের আয়োজন । অকালবোধন । মানে অসময়ের বোধন । দুঃসময়ের বোধন । এসময়ে এই অসময়ে সমাজের নানা প্রান্তিক পেশার মানুষকে যুক্ত করে কাজের বিনিময়ে খাদ্যের ব্যবস্থা করে দেয়া এই বোধনের আর এক উদ্দেশ্য । ভূস্বামীর দয়ায় নয় । অনুদানে নয় । কর্মের মাধ্যমে দুঃসময়ের রসদ সংগ্রহ করবেন প্রান্তিক মানুষ । শ্রদ্ধার শ্রমলব্ধ আয় তার জীবিকার দানাপানি । কৃষিভিত্তিক আর্থসামাজিক জীবনে এও ছিল দেবীবোধনের অন্তর্রহস্য । সেই ধারা আজও চলে আসছে ।
কিন্তু ক্রমশ প্রকৃতি বৈরী হয়ে উঠছে । আমরা প্রকৃতিকে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছি এতদিন । প্রকৃতিকে আমরা নিংড়ে নিয়েছি শুধু । লুঠ করেছি তার সব সম্পদ । প্রকৃতিকে দিইনি কিছুই। তাই তার এত ক্ষোভ । এত রুদ্ররোষ । কেড়ে নিচ্ছে আমাদের লোভার্জিত সম্পদ । আমাদের হর্ষ, আনন্দ । উৎসব । আর তাতেই দেবীবোধনের এই সময়টা হুমকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে । প্রকৃতির কাছে আমরা অসহায় । অথচ বছরের এই সময়টার দিকে মুখ চেয়ে অপেক্ষায় কত শত শান্ত শুষ্ক অসহায় মুখ ! পরের চাঁদায় গড়ে তোলা লাখোয়ারি পুজো জলে ভেসে গেলে বারো ইয়ারের কি আর ক্ষতি । কিন্তু এতে যে একদল অসহায় মানুষের রুটিতে টান পড়ে ।তাদের চোখের জলে বানভাসি হয় ।এভাবে চলতে থাকলে আগামীদিনে কি সম্ভব হবে দেবীর অকালবোধন ? শক্তিরূপা,শক্তিময়ীর কাছে আর্জি রাখা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই আমাদের ।
No comments:
Post a Comment