রবীন্দ্রনাথ ও উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ
ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহরটি ২৩°৫০' উত্তর অক্ষাংশ ও ৯১°১৭ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ ৭৬ দশমিক ৫০৪ কোটি কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হাওড়া নদীর তীরে অবস্থিত এবং উত্তর দিকের পাহাড়ের ঢালু অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত । এই শহর বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । শহরটি রাজ্যের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ । পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত যোগাযোগ থাকার ফলে আগরতলা আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ । এই আগরতলা শহরে রয়েছে একটি শ্বেতশুভ্র প্রাসাদ যার নাম 'উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ' । এটি একসময় ত্রিপুরারাজ্যের রাজাদের রাজপ্রাসাদ ছিল । আগরতলার চিলড্রেন পার্কের বিপরীতে দিকে লক্ষীনারায়ণবাড়ী রোডের পাশ দিয়ে রাজবাড়ীতে প্রবেশের প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে প্রাসাদটির মূল অবস্থান ২৩°৫০'১২.৬৭'' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৬'৫৭.৭২" পূর্ব দ্রাঘিমাংশ । প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ও প্রায় ২০ একর জমি নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই প্রাসাদ । এই প্রাসাদটির স্থাপত্যশিল্প অভিনব । ত্রিতলবিশিষ্ট এই প্রাসাদের শীর্ষে রয়েছে তিনটি গম্বুজ যার মধ্যে সর্বোচ্চটির উচ্চতা ৮৬ ফুট ( ২৬ মিটার ) । এটি চারতলাবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় টাওয়ারের উপর প্রতিষ্ঠিত । প্রাসাদটির নির্মাণকার্য শেষ হয় ১৯০১ সালে । এই প্রাসাদের নির্মাণশৈলীতে মুঘল, রোমান ও ব্রিটিশ স্থাপত্যশিল্পের প্রভাব রয়েছে । প্রাসাদের মেঝেতে মূল্যবান টাইলস বসানো । দরজা জানালা ও কাঠের সিলিংগুলি সুন্দর কারুকার্যময় । প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে সিংহাসন-কক্ষ, দরবার হল, পাঠাগার, অভ্যর্থনা হল, চাইনিজ রুম ও পাবলিক হল । প্রাসাদের সামনেই রয়েছে দুটি বিশাল জলাশয় । ইউরোপীয় ধাপে বিশাল বাগিচাও রয়েছে । বর্তমানে প্রাসাদপ্রাঙ্গনে সরকারি উদ্যোগে মিউজিক্যাল ফাউন্টেন এর ব্যবস্থাও রয়েছে । ২০১১ সাল পর্যন্ত এই রাজবাড়িতেই ছিল ত্রিপুরা বিধানসভা । বর্তমানে এটি রাজ্যের সংরক্ষিত জাদুঘর । সম্প্রতি আগরতলা শহরে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে আগত বিদেশি অতিথিরা এই রাজপ্রাসাদের স্থাপত্যসৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যান । আগরতলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ত্রিপুরার রাজাদের এই প্রাসাদটি নির্মানের ইতিহাসের সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথের নাম জড়িয়ে আছে ।
ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাচীন ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে, ত্রিপুরার রাজারা তাঁদের রাজত্বকালের বিভিন্ন সময়ে তাঁদের রাজধানী স্থানান্তরিত করেছেন । পরবর্তী সময়ে তাঁরা দীর্ঘদিন প্রাচীন রাঙ্গামাটি বা উদয়পুরে রাজ্যপাট চালাতে থাকেন । মহারাজা কৃষ্ণ মাণিক্যের( ১৭৪৮– ১৭৮৩ ) সময় ত্রিপুরার রাজধানীকে আবার সরিয়ে আনতে বাধ্য হন । ত্রিপুরার দক্ষিণ অঞ্চলে দক্ষিণশিক পরগনায় তাঁর এক প্রজা শমসের গাজী বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন । শমসের গাজীর সঙ্গে ত্রিপুরার রাজা কৃষ্ণমাণিকের যুবরাজ থাকাকালীন সময় থেকেই যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হয় । শমসেরের হাতে রাজা কৃষ্ণমাণিক্যকে পরাজিত হয়ে পশ্চাৎ অপসারণও করতে হয় । শমসের গাজীর সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি উদয়পুর থেকে তাঁর রাজধানী পরিত্যাগ করে পুরাতন আগরতলা এসে নতুন রাজধানী স্থাপন করেন । এই বিষয়ে ভুপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্তী তাঁর রাজমালা গ্রন্থে লিখেছেন,
"শমসেরের হস্তে পরাজিত হইয়া কৃষ্ণমনি উদয়পুর ত্যাগ করিয়া ( পুরাতন আগরতলা ) বসতি স্থাপনপূর্বক সেইখানে বসবাস করিতে আরম্ভ করিলেন । ধীরে ধীরে অনেকেই তাঁহার দলভুক্ত হইতে লাগিল" ( রাজমালা, ভূপেন্দ্র চন্দ্র চক্রবর্তী, শমসের গাজী, পৃষ্ঠা. ১৯৮ ) । এই প্রসঙ্গে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন যে–
" কৃষ্ণ মানিক্য যৌবরাজ্য কালে তিনি আগরতলায় ( পুরাতন আগরতলা ) বসতি নির্মাণ করেন একথা পূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে । শৈলমালার বেষ্টনে স্থানটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বলিয়া প্রতিভাত হওয়ায় তিনি সেখানে নদীর ধারে বসতি নির্মাণ করিয়া শমসের গাজী হইতে আত্মরক্ষা করেন ।" ( ওই পৃষ্ঠা ২০৪–২০৫ )
পুরাতন আগরতলা রাজধানী প্রতিষ্ঠা করার পরপরই তিনি রাজধানীকে সাজিয়ে তোলার জন্য সচেষ্টা হয়ে পড়েন ।
বাংলাদেশে ইংরেজ রাজত্ব শুরু হওয়ার সময়কালেই কৃষ্ণমাণিক্য তাঁর রাজধানী উদয়পুর থেকে আগরতলা স্থানান্তরিত করেন । এই সময়ে নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে তিনি তাঁর হৃতরাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন । এ সম্পর্কে ত্রিপুরার প্রখ্যাত গবেষক রমাপ্রসাদ দত্ত বিস্তৃত উল্লেখ করেছেন–
চট্টগ্রামের ইতিহাস থেকেও জানা যায় যে ১৭৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে মোহম্মদ রেজা খাঁ সে বছরেই ত্রিপুরা আক্রমণ করেন রেজা খাঁ দেওয়ান রামশংকর ৮ হাজার সৈন্য নিয়ে দক্ষিণশিকের গড় আক্রমণ করলেন । কৃষ্ণমাণিক্যের পক্ষে জয়দেব কবরা ও লুচি এক হাজার সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন কিন্তু যুদ্ধে জয় লাভের আশা নেই জেনে তারা 'ফাল্গুন কড়া' গড়ে আশ্রয় নেন । সেখান থেকে কসবা দুর্গে কৃষ্ণমাণিক্যের সঙ্গে যুক্ত হন । রামশংকর দেওয়ান এবার কসবা দুর্গ আক্রমণ করে জয় লাভ করেন । মহারাজ কৃষ্ণ মানিক্য পরাজিত ও নিরুপায় হয়ে কসবা দুর্গ ত্যাগ করে ভাদুগড়ে আশ্রয় নেন । সেখান থেকে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া অভিমুখে রওনা হয়ে যান ।
রেজা খাঁর দেওয়ান সেনাপতি রামশংকর যখন নিশ্চিন্তমনে রাজ্য শাসন করছেন, সে সময় সংবাদ এল মিস্টার হ্যারিভার লেস্ট চট্টগ্রাম আক্রমণ করে রেজা খাঁকে পরাজিত করেন । সে খবর পেয়ে দেওয়ান রামশংকর ত্রিপুরা রাজ্য ত্যাগ করে চট্টগ্রামের দিকে চলে যান । এদিকে বিনা যুদ্ধে কৃষ্ণমাণিক্য ত্রিপুরারাজ্য পুনরায় হস্তগত করেন ।
অপরদিকে ইংরেজগণ চট্টগ্রামের শাসনভার নিয়ে নেন । Mr Harryvarlest চিফ আফিসার Mr. Thomas Rumbold, Mr. Ramdolf Marriatt ও Walter Wilkins মেম্বার এসিস্টেন্ট পদে নিযুক্ত হন । গোকুল ঘোষাল তাদের দেওয়ান হন । ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারি মহম্মদ রেজা খাঁর নিকট হতে ইংরেজরা শাসনভার গ্রহণ করেন এবং কিছুদিন পরে ম্যরিয়ট সাহেব ত্রিপুরার জমিদারি বিভাগে ইংরেজের অধিকার স্থাপনের উদ্দেশ্যে কুমিল্লায় আসেন । তার সঙ্গে আসেন লেফটেন্যান্ট মথি সাহেব । 'কৃষ্ণমালা' গ্রন্থে তাঁকে 'মাতিছ' সাহেব বলে উল্লেখ করা হয়েছে । লেফটেন্যান্ট মথি কৈলারগর ( কসবা ) দুর্গের নিকট এসে শিবির স্থাপন করেন । কৃষ্ণমাণিক্য সে খবর পেয়ে কৈলারগড় দুর্গ ছেড়ে তিনকড়ি ঠাকুর, গোবর্ধন ঠাকুর ও জয়দেব রায়কে সঙ্গে নিয়ে সিংঙ্গারবিল গ্রামে চলে গেলেন । মথি সাহেব তখন কৃষ্ণমাণিক্যকে জানালেন, ' যুদ্ধের অভিপ্রায়ে আমি আসিনি । আমি মহারাজের সঙ্গে জমিদারি বিষয়ে আলাপ আলোচনার জন্য এসেছি ।' এ খবর পেয়ে কৃষ্ণমাণিক্য 'মনিঅন্ধ' গ্রামে ইংরেজদের সঙ্গে দেখা করলেন । সেখান থেকে প্রয়োজনীয় আলাপ আলোচনা সেরে কৈলাগড়ে ফিরে এলেন । কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর পুনরায় তিন হাজার সৈন্য নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক দক্ষিণ দিকে লুচিদর্পকে আক্রমণ করেন । লুচিদর্প তখন কৃষ্ণমাণিক্যের অধীনে দক্ষিণশিকের শাসনকর্তা । সেনাপতি জয়দেব রায় লুচিদর্পকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন এবং উভয়ের সম্মিলিত আক্রমণে আব্দুল রেজ্জাক পরাজিত হন । তখন কৃষ্ণমাণিক্য দেখলেন বারবার মগ ও মুসলমানেরা রাজধানী উদয়পুর আক্রমণ করে । সুতরাং অনেক চিন্তার পর তিনি উদয়পুর থেকে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা স্থানান্তরিত করেন এবং সেখানে তিনি নগর স্থাপন করেন । এ সম্পর্কে রাজমালায় আছে–
"আশ্বিন মাসের দুর্গোৎসব দশমীর দিনে ।
ত্রিপুরা এগার শ সত্তৌরের সনে ।।
কৃষ্ণমাণিক্যের রাজ্য খ্যাতি হইল তখন ।
( রাজমালা–কৃষ্ণমাণিক্য খন্ড, পৃষ্ঠা ৫০ )
আগরতলা সংক্রান্ত প্রাচীন তথ্যাদির সন্ধান পেতে গেলে প্রধানত ত্রিপুরার রাজনৈতিক ইতিহাসসম্বলিত দুটি প্রাচীন গ্রন্থে সাহায্য নিতে হয় । একটি হল শ্রীরাজমালা–চতুর্থ লহর ও দ্বিতীয়টি কৃষ্ণমালা গ্রন্থ । কৃষ্ণমাণিক্য যে তাঁর রাজধানী পুরাতন আগরতলায় স্থানান্তরিত করেছিলেন তা রাজমালায় উল্লেখিত তথ্য থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় । রাজমহলায় আরেকটি জায়গায় লেখা হয়েছে–
এগার শ সত্তৈর সন হএত যখন ।
আগরতলা রাজধানী করিল তখন ।।
( শ্রী রাজমালা–চতুর্থ লহর, কৃষ্ণমাণিক্য খন্ড, পৃষ্ঠা ৫১ )
ত্রিপুরা থেকে খ্রিস্টাব্দের ৫৯০ বছরের ব্যবধান থাকে সেই হিসেবে ১১৭০ ত্রিপুরাব্দ + ৫৯০ = ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে পুরাতন আগরতলায় রাজধানী পত্তন হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় ।
এছাড়া কৃষ্ণমালাতেও এ বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে । কৃষ্ণমালার ১৩০–১৩১ পৃষ্ঠা ও ১৪৬ পৃষ্ঠায় পরিষ্কার লেখা আছে–
কর করি রিপু চন্দ্র শাকের সময় ।
জৈষ্ঠ মাসে সময়েতে করিয়া বিজয় ।।
যুবরাজ আদেশেতে জয়দেব রায় ।
মন কৌতুহলে আসিলেক কসবায় ।।
তবে যুবরাজার পাইয়া অনুমতি ।
কুমিল্লাতে রহে ভদ্রমনি সেনাপতি ।।
যুবরাজের শাসে দেশ সুখে আছে প্রজা ।
আশ্বিন মাসে নির্বাহিল দুর্গাপূজা ।।
তারপরে মন্ত্রীগণে মন্ত্রনা করিয়া ।
যুবরাজ ঠাঁই নিবেদন করে গিয়া ।।
নিজ দেশ হইল বশ রিপু নাহি আর ।
এখন উচিত অভিষেক হইবার ।।
( পৃষ্ঠা ১৩০–১৩১ )
****************************"
তারপরে রাজা গেল আগরতলায় ।
বসতি কারণে পুরি করিল তথায় ।।
তারপরে পাত্র মিত্র গনে রাজার আদেশে ।
নির্ম্মাইল নগর আগরতলা দেশে ।।
উপরোক্ত তথ্যগুলো থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, কৃষ্ণ মাণিক্যের আমলেই পুরাতন আগরতলায় রাজধানী স্থাপিত হয় । এরপর কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য তাঁর রাজত্বকালে ( ১৮৩০–১৮৪৯ ) পুরাতন আগরতলা বা পুরান হাউলি থেকে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ১০ মে ১২৪০ ত্রিপুরাব্দে তিনি সিংহাসনে আরোহন নতুন হাউলি নামে বর্তমান আগরতলায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেন । কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য বর্তমান রাজধানী আগরতলা বা আগরতলা শহরের প্রথম রূপকার হলেও তাঁর রাজ্যাভিষেক হয়েছিল পুরাতন আগরতলাতেই । করেন । সে সময় ভারতের গভর্নর লর্ড বেন্টিংক এর পক্ষে মিস্টার টমসন পুরাতন আগরতলা এসে মহারাজ কৃষ্ণকিশোর মাণিক্যকে সনদ ও খেলাত প্রদান করেছিলেন । মহারাজা কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য তার প্রতিদানে ব্রিটিশ রাজ সরকার কে ৬৩ টাকা আট আনা মূল্যের সোনার ও রূপার অলংকার, দুটি সোনার মোহর ও ১৬ টি রূপার মুদ্রা উপহার দিয়েছিলেন । মহারাজা কৃষ্ণকিশোর মাণিক্যবাহাদুর 1১৮৩৮ সালে পুরাতন আগরতলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে হাওড়া নদীর তীরে তার রাজধানী সরিয়ে আনেন । এই হাওড়া নদীর প্রাচীন নাম ছিল 'সাইদ্রা' । পরবর্তী সময়ে এই নামের বিলোপ সাধন ঘটে । রাজধানী নতুন জায়গায় স্থানান্তরের বিষয়ে ডঃ নলিনীরঞ্জন রায়চৌধুরী লিখেছেন—
কৃষ্ণকিশোর মাণিক্যের রাজত্বকালের বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল পুরাতন হাবেলি বা আগরতলা থেকে বর্তমান আগরতলায় রাজধানী স্থাপন । কৈলাসচন্দ্র সিংহের মতে শিকারের সুবিধার জন্য বহু অর্থ ব্যয় করে কৃষ্ণকিশোর মানিক্য নতুন হাবেলি নামক নগর নির্মাণ করে সেখানে রাজ্যপাট স্থাপন করেছিলেন । ( মানিক্য শাসনাধীন ত্রিপুরার ইতিহাস–ড. নলিনীরঞ্জন রায় চৌধুরী, জ্ঞান বিচিত্রা আগরতলা, পৃ. ৬৮ )
ড. নলিনীরঞ্জন রায় চৌধুরী তাঁর গ্রন্থে স্থানান্তরের কাল উল্লেখ না করলেও J E Cumming এর গ্রন্থ Sarvey and sSettlement of the Chakla Roshnabad Estate in District Tipperah and Noakhali গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেছেন–New Agartala or nutan habili was founded in 1838 in the time of Raja Krishna Kishore Manikya. ( page 65. )
শুধুমাত্র যে শিকারের উদ্দেশ্যেই রাজধানী বর্তমানে আগরতলায় স্থানান্তরিত হয়েছিল তা নয় । হাওড়া নদী বেয়ে সেকালে ভাটির অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা নৌকা নিয়ে পার্বত্য ত্রিপুরায় ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আসতেন । নদীপথ সংকীর্ণ হওয়ার কারণে বর্তমান আগরতলার উজানে আর নৌকাগুলো নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না । ব্যবসায়ীরা নতুন হাবেলি অংশে তাঁদের নৌকা বাঁধতেন । আর পুরাতন আগরতলা পাহাড়বেষ্টিত হওয়ার ফলে পূর্বদিক থেকে প্রায়শই কুকিরাএসে রাজধানীতে হামলা করত । ব্যবসায়িক ও প্রতিরক্ষাজনিত কারণেও কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য তাঁর রাজধানী বর্তমান আগরতলায় সরিয়ে এনেছিলেন । একসময় এই জায়গার নাম ছিল সাইদ্রা । কৃষ্ণ মাণিক্য সাইদ্রা নামের বিলোপসাধন ঘটিয়ে পুরানো রাজধানী আগরতলার সঙ্গে মিলিয়ে নতুন রাজধানীর নামও আগরতলা রাখলেন । ১২৫৯ ত্রিপুরাব্দের দোসরা বৈশাখ কৃষ্ণকিশোরের মৃত্যুর পর ঈশানচন্দ্র মাণিক্য রাজপদে অধিষ্ঠিত হন । তাঁর অভিষেক হয়েছিল ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের পহেলা ফেব্রুয়ারি । ঈশানচন্দ্র মাণিক্য ইংরেজ সরকারকে ১১১ টি স্বর্ণ মুদ্রা নজরানা দিয়েছিলেন
১৮৬২ সালে ঈশানচন্দ্র মাণিক্য আগরতলায় একটি নতুন রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন । এই প্রাসাদে প্রবেশের একদিন পর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে বাতব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে রাজা পরলোকগমন করেন । ( মাণিক্যশাসনাধীন ত্রিপুরার ইতিহাস– ড. নলিনীরঞ্জন রায় চৌধুরী, পৃষ্ঠা ৭৪ )
এরপর বীরচন্দ্র মাণিক্য ( ১৮৬২–১৮৯৬ ) রাজা হন । তিনি তাঁর দীর্ঘ রাজত্বকালে পিতার নির্মিত রাজপ্রাসাদেই অতিবাহিত করেন । এই রাজপ্রাসাদেই তাঁর পুত্র রাধাকিশোরের অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল । কিন্তু রাধাকিশোরের রাজ্যভিষেকের পরপরই ১৮৯৭ সালের ১২ মে এক বিধংসী ভূমিকম্পে মহারাজা ইশানচন্দ্র মাণিক্য নির্মিত রাজপ্রাসাদটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় । ফলে সেটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায় । তখন মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য সপরিবারে এই প্রাসাদ ত্যাগ করে জগন্নাথবাড়ির উত্তরাংশে ছনবাঁশের তৈরি অস্থায়ী বাংলোয় চলে যান ।
তারপরে একটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণের পরিকল্পনা তাঁর মাথায় আসে । কিন্তু ভয়াবহ ভূমিকম্পে রাজবাড়িসহ রাজধানীর সমস্ত বাড়িঘর তছনছ হয়ে যাওয়ার ফলে এবং রাজ তহবিলের আর্থিক অবস্থাও সংকটাপন্ন হওয়ায় সর্বোপরি প্রাসাদাভ্যন্তরে রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠায় তিনি তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না । বড়ঠাকুর সমরেন্দ্রচন্দ্র বীরেন্দ্রকিশোরকে যুবরাজ পদে নিয়োগ করায় তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি ইংরেজ সরকারের কাছে অভিযোগ জানান । এরকম বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যেই রাধাকিশোর রবীন্দ্রনাথকে ত্রিপুরায় আগমনের আমন্ত্রণ জানান ।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ১৮৯৯ সালের মার্চ মাসের ২৭ তারিখ দোল পূর্ণিমার দিন প্রথমবার ত্রিপুরায় পদার্পণ করেন । রাজবাড়ির ভগ্নদশা প্রাপ্ত হওয়ায় সেবার রবীন্দ্রনাথ কর্নেল বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন । সেবার মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্যের সঙ্গে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সংকট, প্রশাসনিক বিষয় এবং নতুন রাজপ্রাসাদ নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেন ও পরামর্শ দান করেন । সেদিন যে রবীন্দ্রনাথ ত্রিপুরার রাজার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বহুমুখী প্রতিভার বাইরে আরেক নতুন রবীন্দ্রনাথকে সবার সামনে হাজির করেছিলেন । এই রবীন্দ্রনাথ রাজনীতি, অর্থনীতি এমনকি কূটনীতিতেও যথেষ্ট অভিজ্ঞ । রবীন্দ্রনাথ এই চক্রান্ত কুটিল সময়ে রাধাকিশোরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন । ঋণভারে জর্জরিত রাধাকিশোর কিভাবে ঋণ পেতে পারেন, কিভাবে তাঁর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবেন সে ব্যাপারে তিনি রাধাকিশোরকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন ।
'রবীন্দ্রনাথ ও ত্রিপুরা' গ্রন্থে চিঠিপত্রের বিভাগে একটি তারিখ বিহীন পত্র সংযোজন করা হয়েছে । সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঋণসংক্রান্ত বিষয়ে রাধা কিশোরকে জানান যে–
"বিপুল সম্মানপূর্বক নিবেদন—
সমস্ত অবস্থা আমার কাছে যে রূপ প্রতিভাত হইতেছে খোলাসা করিয়া বলিবার চেষ্টা করি । মহারাজ গবর্নমেন্টের যোগে ঋণসংগ্রহ করেন ইহা এখানকার কয়েকজনের বিশেষ আগ্রহের বিষয় হইয়াছে দেখিতেছি । গবর্ণমেন্ট যে লোককে ঋণশোধের উদ্দেশ্যে নিযুক্ত করিবে শুনিতেছি সে লোকটি প্লান্টার শ্রেণীয়– তাহাকে আয়ত্ত করা স্যান্ডস প্রভৃতি লোকের পক্ষে কঠিন হইবে না ।
তাহা হইলে নাগপাশে এ রাজাকে রীতিমতো বেষ্টন করিতে পারিবে এবং গবর্ণমেন্টের ভারপ্রাপ্ত লোকের সহিত মহারাজের স্বার্থঘনিষ্ঠ কর্মচারীদের যোগ ঘটে তবে মহারাজকে নিতান্ত দুর্বল হইতে হইবে ।******** 'ব্যাঙ্ক অব বেঙ্গল' হইতে ঋণ পাওয়া যাইবে না, অন্য কোন প্রাইভেট ব্যাংক হইতে ঋণ গ্রহণ করিতে হইবে এ কথাটি সন্দেহজনক । প্রাইভেট ব্যাঙ্কের সহিত গোপন স্বার্থের সম্বন্ধ স্থাপন করা সহজ । এমনকি গবর্নমেন্টের উচ্চ কর্মচারীর পক্ষেও তাহা দুঃসাধ্য নহে ।"
সেদিন রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে ও প্রত্যক্ষ উদ্যোগে অবশেষে ব্যাংক অব বেঙ্গল থেকে ঋণ পাওয়া গিয়েছিল । কবির প্রত্যক্ষ যোগাযোগের ফলে মেসার্স মার্টিন বার্ন কোম্পানির স্থপতি আলেকজান্ডার মার্টিন ও বাবু রাজেন্দ্রলাল মুখোপাধ্যায় এই রাজপ্রাসাদ নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ।
"১৩১২ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে রবীন্দ্রনাথ তৃতীয়বারের মতো আগরতলা সফর করেন । সে সময় রাজ্যের জন্য ঋণগ্রহণ ও মন্ত্রী নিয়োগের ব্যাপারে রাজা চিন্তা-ভাবনা করছিলেন । রাধা কিশোর এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কবির সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন । রাজনৈতিক স্বার্থপ্রণোদিত নাম চক্রান্তে রাজা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেই জন্য রবীন্দ্রনাথ চাইলেন বিশ্বস্ত দক্ষ নিষ্ঠাবান রমণীর মোহন চট্টোপাধ্যায়কে ( দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জামাতা ) মন্ত্রীপদে নিয়োগ করতে । রমণীবাবু কবির আত্মীয় । তিনি তখন কলকাতায় উচ্চপদে কর্মরত । সেই স্থায়ী কাজ থেকে ছুটি নিয়ে তাঁকে আসতে হবে ত্রিপুরার রাজ দরবারে । রবীন্দ্রনাথ সেই ব্যবস্থা করেছিলেন । কবি এটাও চাইছিলেন যে রমণীবাবুকে নিয়োগের পূর্বে যেন ঋণসংগ্রহের ব্যাপারটি স্থগিত রাখা হয় । কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আত্মীয় কেন মন্ত্রী পদে নিযুক্ত হবেন ? সেদিন আগরতলার প্রভাবশালী মহলের কেউ কেউ এটা চাইছিলেন না । তাই এর বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিতভাবে অপপ্রচারও শুরু হয়ে যায় । ত্রিপুরা থেকে একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে কবি ফিরে গেলেন কলকাতা ।এ যাত্রায় ত্রিপুরাতে তার কি অভিজ্ঞতা হল ? মহারাজকে তিনি লিখলেন, "আমি ইহা দেখিলাম যে, সেখানে দলাদলি খুব প্রবল হইয়াছে– এরূপ অবস্থায় মহারাজের তরফে তাকানো কোন দলের পক্ষে সম্ভব হয় না– অপর দলকে ব্যর্থ করা ও নিজের দলের জন্য বল সংগ্রহ করা ইহাই প্রত্যেক পক্ষের প্রধান চিন্তনীয় হয় । এমন স্থলে মহারাজের অনিষ্ট অবশ্যম্ভাবী । ( নতুন হাভেলির ছয় মানিক্য–পান্নালাল রায় / পৌনমী প্রকাশনী, আগরতলা, পৃ. ৬৪ )
১৮১১ শকাব্দের ১০ বৈশাখ শনিবার তথা ২৩ এপ্রিল ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ এক শুভক্ষণে এই প্রাসাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় । এই বিষয়ে প্রস্তরফলকে লিখিত সংস্কৃত শ্লোকটি ছিল—
শীতাংশুদ্বন্দ্ধরন্দ্রোদধিজ পরিশিতে শাক্যবর্ষে সুলগ্নে
বৈশাখ সুরজাহে গগনবিধুমিতে রোপিতা যস্য ভিত্তি ;
সোহয়ং 'নামোজ্জয়ন্ত' সুরগণ কৃপয়া পূর্ণতা প্রাপ্য সৌধ
শ্রীশ্রী রাধাকিশোর ত্রিপুর নৃপপদ স্বরণযোগ্যা বিভাতু"
সন ১৩০৯ ত্রিপুরাব্দ । ( তথ্য : শিলালিপি সংগ্রহ– ৩৫ পৃ. )
"১৮২১ শকাব্দের বৈশাখ মাসের ১০ তারিখ শনিবার শুভলগ্নে যাহার ভিত্তি স্থাপিত হইল সেই 'উজ্জয়ন্ত' নামক প্রাসাদ দেবগণের কৃপায় পূর্ণতা প্রাপ্ত হইয়া ত্রিপুরা নৃপতি শ্রী শ্রী রাধাকিশোর মাণিক্যের পাদস্পর্শে বিরাজ করুক ।"
পরবর্তী সময়ে মহারাজ রাধাকিশোরের আদেশে এবং দায়িত্ব পেয়ে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে শিলালিপি সংগ্রহের পরে চন্দ্রোদয় বিদ্যাবিনোদ শ্লোকটি গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেন । শ্লোকে উল্লিখিত চন্দ্রোদয় বিদাবিনোদ কর্তৃক প্রাসাদটির নামকরণের তথ্য ঠিক নয় । চন্দ্রোদয় বিদ্যাবিনোদ প্রাসাদটি নির্মাণের পরে ১৯০২ সালে খ্রিস্টাব্দে রাজকার্যে নিযুক্ত হয়েছিলেন ।
এই উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের নামকরণ রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন বলে একটা জনশ্রুতি জড়িয়ে আছে । কিন্তু এই তথ্যটি মনে হয় ঠিক নয় । কারণ উজ্জয়ন্ত নামের সঙ্গে রাধাকিশোর পূর্বেই পরিচিত ছিলেন । মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য যুবরাজ থাকাকালীন সময়েই 'উজ্জয়ন্ত নাট্য সমাজ' নামে তাঁর একটি নিজস্ব নাট্যদল ছিল । শক্তি হালদার মহোদয় কর্তৃক সম্পাদিত এবং কলকাতা বইমেলা ২০০১-এ প্রকাশিত 'ত্রিপুরা নাট্য আন্দোলনের ধারা' গ্রন্থে রমাপ্রসাদ দত্ত লিখিত রচনায় রাজন্য আমলে ত্রিপুরার উল্লেখযোগ্য নাট্যসংস্থার যে অনুষ্ঠানসূচির উল্লেখ রয়েছে তাতে উজ্জন্ত নাট্য সমাজের প্রযোজনায় অভিনীত অনেকগুলো নাটকের নামোল্লেখ পাওয়া যায় । এতে করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এই উজ্জয়ন্ত নাট্য সমাজ থেকে পরবর্তী সময়ে রাজপ্রাসাদের নাম 'উজ্জয়ন্ত' রাখা হয়েছে ।
"রাধাকিশোর মাণিক্য এই উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের পুরো ব্যয়ভার চাকলা রোশনাবাদের আয় থেকে মিটিয়ে ছিলেন । রবীন্দ্রনাথের পরামর্শ মত ব্যাঙ্ক অব বেঙ্গল থেকে ১০ লক্ষ টাকা ধার নিয়ে এই রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছিল । চাকলার তহবিল থেকে ওই ঋণ সুদসমেত পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছিল ।" ( আধুনিক ত্রিপুরা : প্রসঙ্গ রাধাকিশোর মাণিক্য, ড. দ্বিজেন্দ্র নারায়ণ গোস্বামী, অক্ষর পাবলিকেশন, আগরতলা ) এবং ( রবীন্দ্রনাথ ও ত্রিপুরা-চট্টোপাধ্যায় ও গঙ্গোপাধ্যায়, পৃষ্ঠা ১৯ )
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ত্রিপুরার সম্পর্কের সূত্র ধরে মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্যের সঙ্গে তাঁর যে সখ্যতার সৃষ্টি হয়েছিল সেই সুবাদে কবি রাজ্যের রাজকুলের এবং জনগণের সুখ-দুঃখেরও ভাগীদার হয়েছিলেন । রাজা যখনই রাজ্যের অভ্যন্তরে প্রাসাদে কিংবা প্রশাসনে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তখনই রবীন্দ্রনাথ পাশে দাঁড়িয়েছেন । সবসময় ত্রিপুরার মঙ্গল চিন্তা করেছেন তিনি । রাজ পারিষদ কর্নেল মহিম ঠাকুরকে তিনি লিখেছেন, "ত্রিপুরা রাজ্যের মঙ্গল সাধনের জন্য আমি বারংবার তোমার দিকে তাকাই । এই রাজ্যের সঙ্গে যেন আমার ধর্মের সম্বন্ধ বাঁধিয়া গেছে– আমি যতই ইচ্ছা করি ইহার সম্বন্ধে আমার মনকে উদাসীন করিতে পারি না—"( রবীন্দ্রনাথ ও ত্রিপুরা ) । বহু প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ত্রিপুরারাজ্যের স্বার্থে তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার মাধ্যমে সেদিন মহারাজাকে যে সৎ পরামর্শ দিয়েছিলেন তার ফলেই সেদিন ত্রিপুরার মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য স্থাপত্যশিল্পের অভিনব নিদর্শন, কারুকার্যময় এই উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ গড়ে তুলতে পেরেছিলেন । পরোক্ষে হলেও রবীন্দ্রনাথের নাম এই প্রাসাদের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ।
সহায়ক গ্রন্থতালিকা :
১. রবীন্দ্রনাথ ও ত্রিপুরা— রবীন্দ্র শতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ, ত্রিপুরা সরকার
২. রাজমালা— ভূপেন্দ্র চন্দ্র চক্রবর্তী
৩. আগরতলার ইতিবৃত্ত— রমাপ্রসাদ দত্ত
৪. শ্রীরাজমালা
৫. কৃষ্ণমালা
৬. মানিক্য শাসনাধীন ত্রিপুরার ইতিহাস— ড. নলিনীরঞ্জন রায়চৌধুরী, জ্ঞান-বিচিত্রা, আগরতলা
৭. নতুন হাবেলির ছয় মাণিক্য— পান্নালাল রায়, পৌনমী প্রকাশনী, আগরতলা
৮. রবীন্দ্রনাথ ও প্রাসাদ রাজনীতি— পান্নালাল রায়, ত্রিপুরা বাণী প্রকাশনী, আগরতলা
৯. শিলালিপি সংগ্রহ— চন্দ্রোদয় বিদ্যাবিনোদ
১০. Survey and Settlement of the Chakla Roshnabad Estate in District Tripperah and Noakhali— J E Cumming
No comments:
Post a Comment