Monday, February 26, 2024

ব ইয়ের ফাঁদ পাতা ভুবনে ভুবনে

বইয়ের ফাঁদ পাতা ভুবনে ভুবনে

কবিতা ছাপানো আর কবিতা পাঠের সুযোগ দেওয়ার নামে টাকা কামানোর ধান্দা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে । মফস্বলের, ভিনরাজ্যের এমন লিখতে আসা বহু তরুণ-তরুণী এদের পাল্লায় পড়ে লাগাতর ঠকে যাচ্ছেন । আপনি সময়োপযোগী এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন । তরুণ লিখিয়েরা এত কিছু জানে না বোঝে না । শুধু নিজের নামটা ছাপার অক্ষরে দেখার জন্যে এদের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হয় । এই প্রতারকরা আবার নানা সাহিত্যসংগঠন করে অর্থের বিনিময়ে প্রতিদিন অনলাইন কবিতা প্রতিযোগিতা ও শংসাপত্র প্রদান করে । গাঁটের কড়ি খসিয়ে কবিতাভ্রমণে নিয়ে যায় । সাহিত্যাঙ্গনে নানা কায়দায় এরা প্রতারণার ফাঁদ পেতে রেখেছে ।

কবিতাফাঁদ

 কবিতাফাঁদ

কবিতা ছাপানো আর কবিতা পাঠের সুযোগ দেওয়ার নামে টাকা কামানোর ধান্দা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে । মফস্বলের, ভিনরাজ্যের এমন লিখতে আসা বহু তরুণ-তরুণী এদের পাল্লায় পড়ে লাগাতর ঠকে যাচ্ছেন । আপনি সময়োপযোগী এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন । তরুণ লিখিয়েরা এত কিছু জানে না বোঝে না । শুধু নিজের নামটা ছাপার অক্ষরে দেখার জন্যে এদের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হয় । এই প্রতারকরা আবার নানা সাহিত্যসংগঠন করে অর্থের বিনিময়ে প্রতিদিন অনলাইন কবিতা প্রতিযোগিতা ও শংসাপত্র প্রদান করে । গাঁটের কড়ি খসিয়ে কবিতাভ্রমণে নিয়ে যায় । সাহিত্যাঙ্গনে নানা কায়দায় এরা প্রতারণার ফাঁদ পেতে রেখেছে ।

Sunday, February 25, 2024

বই নিয়ে আশার আকাশপ্রদীপ

বই নিয়ে আশার আকাশপ্রদীপ

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

আগরতলা বইমেলা দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আজ একটি সম্মানজনক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে । বিশ্বের অন্যান্য বড়ো বড়ো বইমেলার সঙ্গে আগরতলার বইমেলার নাম আজ একসঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে । হাঁটি হাঁটি পা পা করে রবীন্দ্রভবনের প্রাঙ্গনে শুরু হওয়া বইমেলা আজ হাঁপানিয়া প্রাঙ্গণের বিশাল পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে । সৌন্দর্যের আন্তরিকতায় এই মেলা আজ পবিত্র ভূমি হয়ে দাঁড়িয়েছে । আগরতলা বইমেলার সুবাদে বইমেলার সঙ্গে জড়িত প্রকাশনা শিল্পের সৌজন্যে ত্রিপুরার সাহিত্য আজ বহির্ত্রিপুরা ও বিশ্বের গুণীজন সমাজের কাছে সুপরিচিত । ত্রিপুরার লেখালেখি আজ সসম্মানে সর্বত্র সমাদৃত । ত্রিপুরার কবি সাহিত্যিকদের নাম আজ মূলধারার সঙ্গে সমানভাবে উচ্চারিত হয় । 

এই বইমেলার শুরুর দিনে যাঁরা ছিলেন তরুণ । আজ তাঁরা অনেকেই বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছেন । অনেকে জীবন-মৃত্যুর সীমানা পেরিয়ে গেছেন দূরের ঠিকানায় । প্রয়াতজন ও প্রবীনদের লেখায় সমৃদ্ধ হয়েছে রাজ্যের সাহিত্যভবন । আর এখন তো বইমেলা জুড়ে তারুণ্যের প্রবাহ । এই সময়ে সপ্তশ্রী কর্মকার, প্রিয়াঙ্কা দেবনাথ, সঞ্জয় দত্ত, নয়ন দে, সঙ্গীতা দাস, সুধীর দাস, জগন্নাথ বণিক, শহিদুল ইসলাম, সংহিতা চৌধুরী, মন্দিরা লস্কর, আব্দুল হালিম, বিদ্যুৎ হোসেন, বিধর্ণা মজুমদার এর মত তরুণ তরুণীরা এগিয়ে এসেছেন সাহিত্যের অঙ্গনে । এঁরা অনেক বেশি প্রাণবন্ত অনেক বেশি সংগঠিত । আর সময়ের কারণে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে তাঁদের লেখা অতি দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের সামনে সামাজিক মাধ্যমের সৌজন্যে । মুহূর্তে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে তরুণ প্রজন্মের সৃজন । তাঁদের সৃষ্টির গুণমান সম্বন্ধেও অতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন তাঁরা । ফলে তাঁদের দ্রুতগতিতে পরিশীলিত হওয়ার সুযোগ থাকছে । হতেও হচ্ছে । তাঁদেরই মধ্যে একদল নিজেদের নিয়োজিত রাখছেন নিবিড় পাঠের মধ্যে । বিশ্বের নানাভাষার ও বাংলাভাষার ধ্রুপদী সৃষ্টিসম্ভারকে তাঁরা অন্তরে আহরণ করে চলেছেন । এরাই আগামী দিনে রাজ্যের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করবেন ।

 আর একদল আছেন যাঁরা সাহিত্যচর্চার নামে রাজ্যের সাহিত্যের অঙ্গনে আবর্জনা স্তূপ তৈরি করে চলেছেন । যাঁরা শুধু লেখেন । পড়েন না । সমকালের সাহিত্যের সঙ্গে যাঁদের কোনো যোগাযোগ নেই তাঁদের মধ্যে কবিরাই সংখ্যায় বেশি । এঁরা এখনো শব্দচয়নে, ভাষা ব্যবহারে গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক অতিক্রম করতে পারেননি । তাঁরা বাংলা কবিতার অগ্রজ কবিদের কবিতার সঙ্গে পরিচিত নন । সমকালে বাংলা কবিতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তাও জানেন না । এই সময়ের সমগ্র বাংলাকবিতা তো দূর অস্ত,  আমাদের রাজ্যের কাব্য ও কথাসাহিত্যের গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে তাঁরা অন্ধকারে । তাঁরা পড়েননি আমাদের রূপন মজুমদার, শান্তনু মজুমদার, পঙ্কজ কান্তি মালাকার, রাহুল শীল, সংগীত শীল, রুবেল হোসেন, পান্থ দাস, গোপাল দে, গোপাল বনিক, দেবব্রত চক্রবর্তী প্রমুখদের কবিতা । এঁরা তরুণতম কবি ভবানী বিশ্বাসের সাড়া জাগানো 'দিদার সুরলা গান'-র খবর রাখেন না । এরা বইমেলায় যান । লিটল ম্যাগাজিন স্টলে প্রবেশ করেন না । এঁরা অনলাইনে প্রতিদিন পুরস্কৃত হন । আর তার ছবি পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায় । এঁরা সাহিত্যের কাগজও করেন যা মোটেই লিটল ম্যাগাজিন পদবাচ্য নয় । অথচ এঁরা জানেন না ঘাটের পয়সা খরচা করে কি অসাধারণ সব লিটল ম্যাগাজিন করে চলেছেন জয় দেবনাথ, চয়ন সাহা, দীপেন নাথশর্মা, মিঠু মল্লিক বৈদ্য, অনামিকা লস্কর, সৈকত মজুমদার, দীপ্সি দে, উর্মি সাহাড. ঝর্ণা বনিক, গীতশ্রী ভৌমিক, শাশ্বতী দাস প্রমুখরা । এঁরা দেশ-বিদেশে সাহিত্যের চড়ুইভাতিতে যান । ত্রিপুরার প্রতিনিধিত্ব করেন । দীর্ঘবছরের বইমেলাতেও এঁদের কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি ।

বইমেলাকে অনেকেই বিনোদনের মেলা হিসেবে আজও মনে করে চলেছেন । এঁরা বইমেলায় যান । সপরিবারেই যান । সরকারি পরিবহনের সুযোগ নিয়ে বিনি পয়সায় মেলা পরিক্রমা করেন । ফুচকা খান, ফাস্টফুড খান । আচার খান । যতটা হুমড়ি খেয়ে পড়েন খাবারের দোকানে, তার দশমাংশও বইয়ের স্টল গুলোতে নয় । এঁরা খালি হাতে মেলায় ঢোকেন । খালি হাতে বেরিয়ে যান । সরকারি যান ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বাড়ি ফেরেন । ভিড় বা ট্রাফিক জ্যামের কারণে গাড়িটি তাদের বাড়ির স্টপেজ থেকে দশ হাত এগিয়ে দাঁড়ালেও বিরক্ত হন দশ কদম পেছনে হাঁটতে হবে বলে ।

আর এই প্রতিকূলতার মাঝেও থাকে আলোর স্ফুরণ । বড়ো হয় লিটিল ম্যাগাজিনের প্যাভেলিয়ান যেখানে আজও অতন্দ্র প্রহরী ৭৫ উত্তীর্ণ তরুণ নকুল রায় । আজও প্রকাশকরা যত্ন সহকারে প্রকাশ করে চলেছেন নতুন নতুন গ্রন্থ । এসে যোগ  দিচ্ছেন শিক্ষিত তরুণ প্রকাশক । ধ্রুপদী ও নান্দনিক সৃষ্টি নিয়ে । জন্ম নেয় তরুণদের নতুন প্রকাশন সংস্থা । প্রকাশনার পাশাপাশি তাঁরা আয়োজন করেন নানা সাহিত্য অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ করেন দেশের ও দেশের বাইরে গুণীজনদের । বইমেলা ঘিরে রাজ্যের সাহিত্যের কর্মকাণ্ড উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকে । এখানেই আগরতলা বইমেলার সফলতা । সার্থকতা ।

Sunday, February 18, 2024

মায়ানদী

মায়ানদী 

অশোকানন্দ রায়বর্ধন 

ঘরে ফেরার সময় হয় । ধুলো ঝেড়ে উঠে যায় ফসলিবালিকা । চরের ঘাস মাটি লেগে থাকা গায় প্রকৃতির মানচিত্র । তুষারবালিকা সরস্বতী হতে পারে নি সে । জন্মকৌশলে ঢাকে দারিদ্র্যের মানচিত্র । অন্ধকার হতে হতে শরীর ঘিরে বিষাদকুহক । টলমল নদী জলে কলস ডোবায় । জলেরা কথা বলে ওঠে কল কল করে । রোদের ভ্রমণ শেষ হয়ে গেলে তার অদ্ভুত খেলা শুরু হয় ।জোছনা এলে ঢেউগুলোতে কাঁচপোকা উড়ে । শূন্যকলস ভরতে থাকলে উজাড় হয়ে যায় নদী । তার জল বাউল হয়ে ধ্যানমগ্ন হয় । বালিকার স্নান দেখে সে ।

সারাদিন নদীর শরীরে আলো বয়ে গেলেও অন্তরে সে রাতকামী । কেননা রাতের এক রহস্যময় মাদকতা রয়েছে । দিনের পর দিন অযথা সংসার পেতেছে সে ভূমির গর্ভে । আসলে বয়ে যাওয়া তার নিত্য বাউলপ্রকরণ । একতারার মতো একাকী পেরুতে হয় সব পথ । নদীর নিঃসঙ্গতার কথা কেউ বলে না । কেবল হইচই উঠে তার ভাঙনের দোষে । 

সেই চরবালিকা বোঝে নদীটির ব্যথা । তার শরীরের ঘ্রাণ বিলিয়ে দেয় নদীকে তাই । প্রতি সন্ধ্যায় তার শরীর রাখে নদীর জন্য । আর শীতল ঢেউলিপি মেখে নেয় তার দেহে । তার ভেতর থেকে গান গেয়ে ওঠে সন্ধ্যাপাখি । জল ছেড়ে উঠে যাবার সময় সে ছড়িয়ে যায় বিষাদপালক । তবুও তো কাল আবার ফিরতে হবে নদীর মায়ায় । রাত হলেও প্রতিদিন পৃথিবীর সব দরজা আর খিড়কি খোলে নিয়মিত ।

Friday, February 16, 2024

শেকল বাঁধা হাতি

শেকল বাঁধা হাতি

 অশোকানন্দ রায়বর্ধন

টিংকু একদিন সকাল থেকে জুড়ে দিল বায়না–
বাবা তো একদিনও কোথাও বেড়াতে নিয়ে যায় না ।
শুনেছি স্কুল মাঠে পড়েছে নাকি সার্কাসের তাঁবু, 
পশু পাখির মেলা সেথা দেখতে যাব বাবু ।
 সকাল থেকে ঘ্যানর ঘ্যানর কানটা ঝালাপালা,
কি আর করা দেখতে হবে সার্কাসের খেলা ।

বিকেল বেলা বাপ বেটাতে চলল মাঠের পানে– 
সার্কাসের তাঁবু পাতা মাঠের মাঝখানে খেলা তখনও শুরু হয়নি সময় অনেক বাকি,
 বাবা বলেন, কি আর হল কর চলো খাঁচা দেখি ।
মাঠের কোণে খাঁচায় বাঁধা হরেক পশুপাখি 
কিচির মিচির, চিল্লাচিল্লি, করছে ডাকাডাকি ।

দেখতে দেখতে বাপ বেটাতে হাতির সামনে এল,
খাঁচায় বন্দি ছিল না হাতি শেকল বাঁধা ছিল ।
 এত সরু শেকল ছিল বিশাল হাতির পায়ে, 
চাইলে হাতি ছিঁড়ে ফেলবে এক পলকা ঘায়ে ।
 অবাক ব্যাপার ! হাতি মোটেই শিকল টানছে না তো– 
পালাতে পারলেও চেষ্টা মোটেই করছে নাকো ।

এটা দেখে তাজ্জব ছেলে, বাবাকে প্রশ্ন করে 
 সরু শেকল তবু হাতি কেন চুপটি করে ?
 ইচ্ছে করলেই শেকল ছিঁড়ে হতে পারে মুক্ত 
বনে চলে যেতে পারে সেটাই তো উপযুক্ত ।

বাবা তখন ভেবে চিন্তে এদিক-ওদিক চায়,
একটু দূরে মাহুতটারে আছে দেখতে পায় ।
ডেকে তারে বলেন বাবা, ওহে মাহুত ভাই সরু শেকলে হাতি বাঁধা চিন্তার কি কিছু নাই ?
শিকল ছেড়ে পালায় যদি কি করবে ভাই ?

 মাহুত বলে, না, না কর্তা, ভয়ের কিছু নাই 
ছোটবেলায় বাঁধতাম তাকে সরু শেকল দিয়ে, 
যতই টানুক চেষ্টা তার যেত যে বিফল হয়ে ।
গায়ে তখন জোর ছিল কম ছিঁড়ত না শেকল,
সেই বিশ্বাস এখনো তার রয়েছে অবিচল । 

দীর্ঘদিনের অসফলতা মনের মধ্যে বাস 
শক্তিশালী এখন যদিও মনের শক্তি নাশ 
বোবা প্রাণী জানে না তো সফলতার মানে,
 মনের জোরেই হাজার চেষ্টা সফলতা আনে ।

Wednesday, February 14, 2024

বই, আধুনিকতায় ও সংস্কৃতিতে

বই, আধুনিকতায় ও সংস্কৃতিতে 

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

অতি প্রাচীনকাল থেকে মানুষ তার নিজের মনের ভাবকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার প্রয়াস চালিয়ে গেছে । পাহাড়-পর্বতের গায়ে, গুহাগাত্রে চিত্রাংকনের মাধ্যমে তার মনের ভাবকে স্থায়ী রূপ দিয়ে গেছে । ক্রমান্বয়ে মানুষ ভাবপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ভাষাকে গ্রহণ করেছে ।‌ মৌখিক ভাষার মাধ্যমে মানুষ খুব সহজে মনের ভাব প্রকাশ করতে পেরেছে । এই সাফল্য অত্যন্ত লক্ষণীয় হলেও মৌখিক ভাষা বা কথা স্থায়ী নয় । কথা নশ্বর । এই কথাকে চিরস্থায়ী করে রাখার জন্য, অবিনশ্বর করে তোলার জন্য মানুষ সেদিন আবিষ্কার করেছিল লিপি । তবে লিপির এই ইতিহাস এত প্রাচীন যে কিভাবে মানুষ লিপির আবিষ্কার করেছিল সে তথ্য আজকের দিনে সঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব নয় । তবে বর্তমানের বিজ্ঞানের যুগে, বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতির কারণে প্রাচীন লিপির নানা নিদর্শন দেখে লিপি বিশারদগণ লিপি সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন । তাঁদের গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায় যে আনুমানিক পাঁচ-ছয় হাজার বছর আগে মানুষ লিপির ব্যবহার শুরু করে । প্রথমদিকে লিপি ছিল  চিত্রলিপি । ছবি আঁকার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করার চেষ্টা করা হত । একসময় এই চিত্রলিপির পর্যায় অতিক্রম করে মানুষ নতুন এক ধরনের লিপি আবিষ্কার করল । এই লিখনপদ্ধতির নাম ভাবলিপি । এই পদ্ধতিতে একটি মাত্র ছবির মাধ্যমে একটি মাত্র বিষয়কে না বুঝিয়ে একটা বিশেষ ভাবকে প্রকাশ করতে লাগল । তা থেকে ধীরে ধীরে অক্ষরলিপির উদ্ভব হয় । একসময় তা থেকে আধুনিক ধ্বনিলিপিরও সৃষ্টি হয় । 

লিপিবিশেষজ্ঞগণ প্রাচীন কয়েকটি সভ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন । যেখানে লিপির ব্যবহার ও ক্রমোন্নয়ন চলছিল । প্রাচীন এশিয়া, পারস্য, মিশরসহ সব সভ্যতায় লিপির ব্যবহার ছিল । সেই অনুযায়ী প্রাচীন কয়েকটি লিপির কথা জানা যায় সেগুলো হল– সুমেরীয় লিপি, মিশরীয় লিপি, সিন্ধুলিপি, খরোষ্ঠী লিপি ও ব্রাহ্মী লিপি । অধিকাংশ লিপীবিশারদগণ মনে করেন খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম-অষ্টম শতকে ব্রাহ্মী লিপির উদ্ভব হয়েছিল । এই ব্রাহ্মীলিপি থেকে খ্রিস্টপূর্ব দুশো অব্দে কুষাণ লিপির উদ্ভব হয় । কুষাণ লিপি থেকে সৃষ্টি হয় সিদ্ধমাতৃকা লিপি । খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের দিকে সিদ্ধমাতৃকা লিপি থেকে সৃষ্টি হয় কুটিল লিপির । এই কুটির লিপি থেকে অষ্টম শতকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন লিপির জন্ম নেয় । সেরকম পূর্ব ভারতে সৃষ্টি হয় গৌড় লিপি বা প্রত্ন বাংলা লিপি । এই হিসেবে পন্ডিতগণের মতে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে বাংলা লিপির জন্ম হয় । 

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ লেখার প্রয়াস চালিয়ে গেছে । নানা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপাদানে মানুষ লিখতে চেয়েছে । মানুষের সেইসব লিখনসামগ্রীগুলো হল– ( পাথর, তুঁত, বট, নিম ইত্যাদি ) গাছের বাকল, ( কলা, তাল, ভুজ ও অন্যান্য ) গাছের পাতা, প্যাপিরাস ঘাস, কাঠ, পোড়ামাটির ফলক বা ইট, তুলা ও রেশমজাত বস্ত্র, হাতির দাঁত,  জীবজন্তুর চামড়া (পার্চমেন্ট ও ভেলাম ) ধাতু ( সোনা, রুপা, তামা, সিসা, পিতল, টিন ইত্যাদি ) কচ্ছপের খোল ও কাগজ ।

 প্যাপিরাস শব্দ থেকে এসেছে পেপার । বাংলায় কাগজ । এই কাগজের জন্ম যিশুখ্রিস্টের জন্মের একশো বছর পর আনুমানিক একশো পাঁচ খ্রিস্টাব্দে চীনারা কাগজের ব্যবহার শুরু করে । কিন্তু কাগজের বই তৈরি হতে সময় লাগল আরো পাঁচশো বছর । ছয় শতাব্দীর দিকে চিনারাই প্রথম হাতে লেখা বই প্রকাশ করে । আরো আট-নয়শো বছর পরে পনেরো শতাব্দীতে জন্ম নিল ছাপাখানা । তারপর থেকে ঘটে গেল এক নীরব জাগরণের পর্যায় । ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, জার্মানির গুটেনবার্গ সাহেব তাঁর প্রেস থেকে প্রথম ছেপে বের করেছিলেন বাইবেলের কয়েকটি অধ্যায় । গুটেনবার্গের ছাপাখানা আর তাঁর প্রথম ছাপা বই বাইবেল দিয়ে সারা বিশ্বে বইয়ের ব্যাপক যাত্রার সূত্রপাত ঘটে । তারপর থেকে সভ্য মানুষের জীবনে অপরিহার্য হয়ে গেছে বই । আধুনিক মানুষ তার অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা কিংবা অনুভূতিগুলিকে ধরে রাখতে চেয়েছে বইয়ের মধ্যে ।

জ্ঞানের প্রসারের ক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম হলো বই । বই জন্ম নেওয়ার পরেই ক্রমে ক্রমে তার সৌষ্ঠবে অনেক উন্নতি ঘটেছে । তেমনি গড়ে উঠেছে ছোটো বড়ো বহু গ্রন্থাগার । বই নিয়ে আধুনিককালে বিশ্বব্যাপী বিপণনেরও একটা পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছে । বই নিয়ে সংস্কৃতি, জ্ঞানচর্চা আর বাণিজ্যের এক সুন্দর মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে আজকের দিনে ।

মানুষের জীবন যখন কর্মচঞ্চল্য আর ব্যস্ততায় পূর্ণ সেই সময়ে জীবনে প্রাণের ও আনন্দের হিল্লোল বয়ে আনে উৎসব । এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই মানুষ মানুষের কাছাকাছি আসে । তারই ফলশ্রুতিতে স্থান দখল করে নেয় মেলা । মেলা আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক জীবনের অন্যতম অঙ্গ । মেলা বাঙালির সংস্কৃতির প্রাণস্বরূপা । মহামিলনের ভূমি । মেলার মাধ্যমে একসময়ের কর্মব্যস্ত বাঙালিজীবন পেয়েছে জীবনেরই সঞ্জীবনী মন্ত্র ও প্রাণশক্তি । একদিন এরকমই একটি মেলাকে কেন্দ্র করে সারা বাংলায় দেখা দিয়েছিল নবজাগরণের প্রথম লহর । ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা তথা ভারতের সাধারণ জনগণের মধ্যে জাতীয় চেতনার জাগরণ সৃষ্টির এবং জাতীয় গৌরব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্রিটিশ ভারতে আয়োজন করা হয়েছিল একটি মেলার । ১৮৬৭ সালের এপ্রিল মাসে ঠাকুর পরিবারের ও রাজনারায়ণ বসুর সহযোগিতায় নবগোপাল মিত্র 'হিন্দু মেলা' ( ১৮৬৭-১৮৯৯ ) প্রতিষ্ঠা করেন । চৈত্রসংক্রান্তির দিন হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এটি চৈত্রমেলা নামেও পরিচিত ছিল । এই প্রতিষ্ঠান জাতীয় মেলা ও স্বদেশী মেলা নামেও পরিচিতি লাভ করে । আর এই মেলার ভুবনে প্রিয়জনসান্নিধ্যব্যাকুল সভ্য মানুষের আধুনিক সংস্করণ হল বইমেলা । শিক্ষিত মানুষের বেঁচে থাকার রসদ হল বই । বই দর্পণের মতো । সেখানে সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে । সভ্যতার সত্যচিহ্নকে তুলে ধরে বই । আর বইকে নিয়ে মেলা শুধু বইয়ের মেলা নয় । কোন পশরার মেলা নয় । এ এক প্রাণের মেলা আত্মার সঙ্গে আত্মার মেলবন্ধন ঘটে এখানে । আর এই মিলনের মাধ্যমে মানুষের বিভেদ দূর হয়ে যায় । সংকীর্ণতার বন্ধন কেটে যায় । আধুনিক সংস্কৃতির উদার ঐতিহ্যকে বয়ে নিয়ে আসে বইমেলা ।

আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতি ঐতিহ্যের প্রতি বৃষ্টির দিলেও আমরা দেখি যে প্রথমেই একাধিক ধর্মগ্রন্থ শুরু হয়েছে পাথরে বা ফলকে খোদাই করে পরবর্তী সময়ে তা বই হিসেবে পরিগণিত হয়েছে । বহু প্রাচীনকাল থেকে গ্রন্থ বা বই যে মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখেন তার প্রমাণ হল বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ সমূহকে বলা হয় পবিত্র বই । যেমন হিন্দুদের গীতা, ভাগবত মুসলমানদের আল-কোরআন, খ্রিস্টানদের বাইবেল, শিখদের গুরুগ্রন্থ সাহেব ইত্যাদি গ্রন্থকে পবিত্র গ্রন্থ হিসেবে শ্রদ্ধা করা হয় । এছাড়াও হিন্দু সংস্কৃতিতে গ্রন্থ বা পুস্তককে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে । জ্ঞানের দেবী বা বিদ্যার দেবী হিসেবে সরস্বতীর আরাধনা করা হয় । দেবী সরস্বতী শুভ্রবর্ণা । তাঁর একহাতে বাদ্যযন্ত্র ও অন্যহাতে থাকে বই । জ্ঞানের প্রতীক বই দেবীর হাতে শোভা পায় । দেবীর প্রণাম মন্ত্রে উচ্চারণ করা হয় বইয়ের কথা–

    নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে ।
   বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাং দেহি নমোহস্তুতে ।।
  জয় জয় দেবী চরাচর সারে কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে ।
  বিনা পুস্তক রঞ্জিত হস্তে ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্তুতে ।।

বই যে অধ্যয়নের জন্য, এমনি ফেলে রাখার জন্য নয় সে নির্দেশও আমরা পাই সুক্তিরত্নমালায়– পুস্তক স্থা তু যা বিদ্যা পরহস্তগতং ধনম্ । / কার্যকালের সমুৎপন্নে ন সা বিদ্যা ন তদ্ধনম ।। বইয়ের মধ্যে বিদ্যা ( পুঁথিগত বিদ্যা ) এবং পরের হস্তগত ধন ( পরাধীন ধন ) সময়ের প্রয়োজনে কাজে লাগেনা ।

বাঙালির লৌকিক আচারেও দেখা যায় যে, সরস্বতী পূজার সময় দেবীর উপাচারের পাশে বইও রাখা হয় । পূজার শেষে দেবীর আশীর্বাদী ফুল, দূর্বা শ্রদ্ধা সহকারে বইয়ের পাতার ভাঁজে রেখে দেওয়া হয় । এছাড়া বই মাটিতে পড়ে গেলে বা পায়ে লেগে গেলে তা তুলে শ্রদ্ধার সঙ্গে কপালে বা মাথায় ঠেকিয়ে প্রণাম করা হয় । আমাদের শৈশবে দেখেছি পাঠ্যবই সংগ্রহ করা খুবই দুষ্করঞ ছিল । কোন ভাবে দু একটি বই সংগ্রহ হলে অন্য সহপাঠীরা তা থেকে টুকে নিয়ে নিজেরা পাঠ প্রস্তুত করত । বইয়ের স্বল্পতার কারণে শ্রেণীকক্ষ থেকে অনেক সময় বই চুরি হয়ে যেত । সেটা এড়ানোর জন্য অনেকে বইয়ের পাতায় নিষেধাত্মক ছড়া লিখে রাখত এরকম এই প্রতিবেদকের স্মরণে থাকা একটি ছড়া এখানে উল্লেখ করছি–
 
 আমার বাবা গিয়াছিলেন ঢাকা
 সঙ্গে নিয়েছিলেন টাকা 
টাকা দিয়া কিনলেন বই 
আমার বই আমার সই 
এই বই যে করিবে চুরি 
তার গলায় পড়িবে ছুরি—ইত্যাদি । যাতে বইয়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের কথা নিহিত থাকে এবং শ্রদ্ধেয়বস্তু চুরি না করার ট্যাবুও কার্যকর হয় ।

পরিশেষে এ কথাই বলা যায় যে বই আধুনিক যুগের ফসল হলেও তা সুদূর অতীতকাল থেকেই আমাদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক জীবনের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে বই আজ আমাদের বৃহত্তর জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে তাই কবির ভাষায় বলতে হয় –

হেথায় মিশেছে দিশি দিশি হতে বিপুল জ্ঞানের ধারা,
শত মনীষীর চিন্তার বাণী, আনন্দে আকুল পারা ।


—————————————————————

Friday, February 9, 2024

বাংলা সাংবাদিকতার ধারা ও কাজী নজরুল ইসলাম

বাংলা সাংবাদিকতার ধারা ও কাজী নজরুল ইসলাম 

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

সাংবাদিকতার জগতে আধুনিকতার সূচনা ঘটে ১৮ শতকের ইউরোপে । উপনিবেশিক শাসনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এশিয়ার অন্যান্য অনেক দেশের আগেই ভারতবর্ষের বাংলা অঞ্চলের সাংবাদিকতার সূত্রপাত হয় । ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কলকাতা থেকে প্রথম প্রকাশিত জেমস অগাস্টাস হিকির 'বেঙ্গল গেজেট' প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলায় আধুনিক সাংবাদিকতার সূচনা হয় । পত্রিকাটির বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, সকল পক্ষের জন্য উন্মুক্ত হলেও এটি কারো দ্বারা প্রভাবিত নয় এমন একটি সাপ্তাহিক রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক পত্রিকা । ১৮১৮ সালে বাংলা সাংবাদিকতার সূচনা হয় । সে বছর বেঙ্গল গেজেট ( কলকাতা ) দিকদর্শন ( কলকাতা ) এবং সমাচার দর্পণ ( শ্রীরামপুর ) নামে তিনটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল । প্রথম বাংলা সংবাদপত্র সমাচার দর্পণ শ্রীরামপুর থেকে ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয় । ১৮৪৭ সালে তদানীন্তন পূর্ব বাংলার রংপুর থেকে 'রংপুর বার্তাবহ' প্রকাশিত হয় ও ঢাকা থেকে 'ঢাকা প্রকাশ' ১৮৬১ সালে এবং 'ঢাকা দর্পণ' ১৮৬৩ সালে প্রকাশিত হয় ।

বাংলা ভাষায় বাঙালি পরিচালিত প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র সংবাদ প্রভাকর ( প্রথম প্রকাশ : ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুন ) । সম্পাদক ছিলেন ঈশ্বর গুপ্ত । এই পত্রিকাটির সেকালে রাজনৈতিক চেতনা প্রকাশের ক্ষেত্রে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না । তবে সাহিত্য, শিক্ষা ইত্যাদি প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল । এরপর হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় 'হিন্দু পেট্রিয়ট' এবং দ্বারকাননাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত 'সাপ্তাহিক সোমপ্রকাশ' ( ১৫ নভেম্বর, ১৮৫৮ ) । হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সেই সময়ে ইংরেজদের দ্বারা অত্যাচারিত প্রজাদের পক্ষে কলম ধরেন 'হিন্দু পেট্রিয়ট'র সম্পাদক হিসেবে । হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় হিন্দু পেট্রিয়ট সম্পাদনা করেন ১৮৫৬ থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত ।  ১৮৫৪ থেকে হরিশচন্দ্র ইংরেজদের শাসন আর নীলকরদের শোষণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন । এক নির্ভীক, দৃঢ়চেতা, বঙ্গসন্তান হিন্দু পেট্রিয়টের আপোসহীন সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় নিবন্ধের মাধ্যমে নীল বিদ্রোহের একের পর এক বিবরণ প্রকাশ করতে থাকেন তাঁর সংবাদপত্রে । ফলে নীলকরদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয় । ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু হয় । হরিশচন্দ্র এই মত দেন যে কঠোর শোষণের ফলে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়েছে । সম্ভবত হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ই দেশে প্রথম সংবাদপত্র সম্পাদক যিনি বিভিন্ন জায়গায় সংবাদদাতা রেখেছিলেন । যশোরে তাঁর সংবাদদাতা ছিলেন শিশির কুমার ঘোষ । ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় বসুমতি নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় । ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের 'ডন' পত্রিকা ।দেশাত্মবোধ জাগ্রত করার ক্ষেত্রে নব নব চিন্তাধারা সঞ্চরণে ডনের কৃতিত্ব অনন্য সাধারণ । এর আয়ুষ্কাল ছিল ১৬ বছর । ১৯০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পত্রিকাটি পরিবর্তিত হয় 'দি ডন এন্ড সোসাইটিজ ম্যাগাজিন' নামে । শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯১৩ সালের নভেম্বরে । ১৯০৬ সালের মার্চ মাসে সন্ত্রাসবাদীদের মুখপাত্ররূপে 'সাপ্তাহিক যুগান্তর' প্রকাশিত হতে থাকে । এই পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক ছিলেন ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত । রাজদ্রোহিতার অভিযোগে ভূপেন্দ্রনাথ ও ব্রহ্মবান্ধবকে অভিযুক্ত করা হয় । বিদেশী শাসকদের অধীনে থাকা বিচারব্যবস্থাকে মেনে নিতে অস্বীকার করেন ব্রহ্মবান্ধব । ফলে কারাগারে বন্দী থেকেই তাঁর মৃত্যু হয় ।

এর পরপরই নজরুল বাংলা সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক বলিষ্ঠ অধ্যায়ের সূচনা করেন । অভিভক্ত বাংলার বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম । সাংবাদিকতার মাধ্যমেও কাজী নজরুল ইসলাম বিপ্লবী ধারার প্রবর্তন করেছিলেন । জনগণকে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে এবং বিপ্লবী জাগরণ ঘটাতে তিনি সাংবাদিকতার মাধ্যম কেউ হাতিয়ার করে নিয়েছিলেন । নজরুলের সম্পাদিত পত্রিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নবযুগ, ধুমকেতু, লাঙল ( পরবর্তী কালে গণবাণী নামে প্রকাশিত ) । এই পত্রিকাগুলো বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে । সাহিত্য, সমকালীন রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র হয়ে উঠেছিল কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত পত্রিকাগুলো । সাংবাদিক জীবন শুরুর আগে করাচি সেনানিবাসে হাবিলদার পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন নজরুলের সাহিত্যজীবন শুরু হয় । করাচি সেনানিবাস থেকে তাঁর প্রেরিত কয়েকটি গল্প কবিতা ও প্রবন্ধ কলকাতার 'সওগাত',  'প্রবাসী'  ও 'বঙ্গীয় সাহিত্য পত্রিকা' প্রভৃতিতে প্রকাশিত হয় । ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও ১৯২০ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সেনার ৪৯ নম্বর বেঙ্গলি রেজিমেন্ট ভেঙে গেলে মার্চ মাসে নজরুল দেশে ফিরে কলকাতায় সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবন শুরু করেন । কলকাতায় তাঁর প্রথম আশ্রয় ছিল ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অফিসে সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা মোজাফফর আহমেদের সঙ্গে । নজরুল ও মোজাফফরের যৌথ সম্পাদনায় ১৯২০ সালে প্রকাশিত হয় নবযুগ পত্রিকা । এতে সম্পাদক হিসেবে ফজলুল হকের নাম মুদ্রিত হলেও মূলত নজরুল এবং মোজাফফর আহমদই
 ছিলেন এই পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক । এখান থেকেই তাঁর সাংবাদিক জীবনের সূত্রপাত হয় । খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের তীব্রতায় তখন সারা দেশ ছিল উত্তাল । সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের চুলচেরা বিশ্লেষণ ফুটে উঠেছিল এই পত্রিকায় । নবযুগ পত্রিকাতেই কবি অত্যন্ত আধুনিক চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন । এখানেই তাঁর বেশ কিছু রাজনৈতিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় যার প্রতিটিতেই ছিল জ্বলন্ত দেশপ্রেমের প্রকাশ । আন্তর্জাতিক চেতনা এবং বৈপ্লবিক চিন্তার বিস্তার । অত্যাচারী ইংরেজ শাসক, দেশীয় তোষামোদকারী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে শক্তিশালী ও ক্ষুরধার সম্পাদকীয় রচনার মাধ্যমে তিনি সেদিন ইংরেজ শাসকদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন । বিদেশী শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে সারা দেশব্যাপী যে গণজাগরণ শুরু হয়েছিল তা আরো গতিশীল করতে কাজী নজরুল ইসলাম নবযুগ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতার জগতে অবতীর্ণ হন । ১৯২০ সালে নবযুগ পত্রিকায় 'মুহাজিরিন হত্যার জন্য দায়ী কে ?' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লেখেন যার জন্য পত্রিকার জামানত ১০০০ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং নজরুলের উপর পুলিশের নজরদারি শুরু হয় । অবশ্য এই প্রবন্ধ প্রকাশের আগেও নজরুলের জ্বালাময়ী লেখার কারণে ইংরেজ সরকার তিনবার এই পত্রিকাটিকে সতর্ক করেছিল ।

নজরুল নবযুগে সংবাদ পরিবেশনের স্টাইল ও তার হেডিং প্রণয়নে ও মন্তব্যে, বড়ো সংবাদকে সুকৌশলে সংক্ষিপ্তকরণ, মাঝে মধ্যে ছোটো ছোটো কবিতা ও প্যারোডির ব্যবহারে সংবাদগুলিকে উপভোগ্য করে তুলতেন । নজরুলের  কলমে কথ্যভাষার সঙ্গে আরবি, ফারশসি, দেশি শব্দের নিপুণ প্রয়োগে সেগুলোকে সরস, তীক্ষ্ণ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠত । নজরুল অনেক সংবাদের শিরোনাম দিতেন কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে । এক্ষেত্রে বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের অনেক গান ও কবিতাকে তিনি ব্যবহার করেছেন । যেমন রবীন্দ্রনাথের একটি গানের লাইন, 'তোমারি গেহে পালিছ স্নেহে / আমি ধন্য ধন্য হে' । সেখান থেকে নজরুল তাঁর নিজের মতো করে একটি সংবাদের শিরোনাম করলেন, 'তোমারই জেলে পালিছ ছেলে / আমি ধন্য ধন্য হে' । আর প্রত্যেকটি সংবাদের শিরোনাম ছিল পাণ্ডিত্য ও বৈদগ্ধ্যে সমৃদ্ধ ।  সংবাদের শিরোনামে বৈচিত্র্য সৃষ্টির জন্য তিনি লোকসাহিত্য, বৈষ্ণবপদাবলি ইত্যাদির দ্বারস্থ হয়েছেন । রবীন্দ্রনাথের কবিতার পংক্তি ভেঙে সংবাদের শিরোনাম করেছেন তিনি । যেমন, ক)  আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার  পরাণসখা ফৈসুল হে আমার । খ) কালাতে ধলাতে লেগেছে এবার মন্দমধুর হাওয়া / দেখি নাই কভু, দেখি নাই ওগো, এমন ডিনার খাওয়া । নবযুগ পত্রিকায় দেশের খবর, পরদেশপঞ্জি, মুসলিম জাহান, ইত্যাদি সংবাদ বিভাগ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল । মুসলিম জাহানে প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনামের নমুনা– দাড়িতে আগুন লেগে অক্কা / টরে টক্কা টরে টক্কা । অর্থাৎ জন ক্যামিয়াস নামে স্কটল্যান্ড এর এক অধিবাসী একদিন আধার রাতে ঘড়ি দেখার জন্য দেশলাই জালে দুর্ভাগ্যক্রমে তার দাড়িতে আগুন লেগে জামা ও বিছানায় আগুন ধরে যায় শেষে লোকটি আগুনে পুড়ে মরে । এই সংবাদের শেষে টিপ্পনী ছিল–'এবার টিকিট এ আগুন লাগবে কখন ? / কি আনন্দ, কি আনন্দ !

নবযুগ প্রকাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ১৯২২ সালের মে মাসে নজরুল 'দৈনিক সেবক' পত্রিকায় যোগদান করেন । এই পত্রিকার মালিক ছিলেন মাওলানা আকরাম খান । দুর্ভাগ্যক্রমে নজরুল এই পত্রিকার সঙ্গে বেশি দিন যুক্ত থাকতে পারেননি । ১৯২২ সালের ২৫ জুন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুর পর নজরুল এক বিরাট সম্পাদকীয় প্রবন্ধ রচনা করেন । কর্তৃপক্ষ লেখাটি কাটছাঁট করে প্রকাশ করায় নজরুল ক্ষুব্ধ হয়ে ওই পত্রিকার সংস্থা ত্যাগ করেন । ১৯২২ সালের ১১ আগস্ট নজরুলের সম্পাদনায় অর্ধসাপ্তাহিক 'ধুমকেতু' প্রকাশিত হয় । নবযুগ পত্রিকায় নজরুলের বিশেষ ভূমিকার পর ধুমকেতু পত্রিকার প্রকাশ ছিল একান্তই অবধারিত । এই পত্রিকাকে অভিনন্দন জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ প্রমূখ অনেকেই আশীর্বাণী প্রেরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাণী ছিল—

 আয় চলে আয়, যে ধুমকেতু, 
আঁধারে বাঁধ অগ্নি সেতু, 
দুর্দিনের এই দুর্গ শিরে 
উড়িয়ে দে তোর বিজয়কেতন । 
অলক্ষণের তিলক রেখা, 
রাতের ভালো হোক না লেখা 
জাগিয়ে দে রে চমক মেরে, 
আছে যারা অর্ধচেতন ।

ধুমকেতুর সম্পাদকীয়তেই তিনি পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি করলেন, 'সর্বপ্রথম ধুমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায় ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশ বিদেশের অধীনে থাকবে না ।' নবযুগের মতো ধূমকেতুতেও সংবাদ শিরোনামে নজরুল বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন । ধূমকেতুর এরকম কয়েকটি শিরোনাম–অমৃতবাজার পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক মতিলাল ঘোষের মৃত্যু সংবাদ এর শিরোনাম 'মর্ত্যের মতিলাল স্বর্গে' । বোম্বাই প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির কয়েকজন গভর্মেন্টের গোয়েন্দা বিভাগের গুপ্তচর হিসেবে ধরা পড়ার পর সংবাদের শিরোনাম 'বাঘের ঘরে ঘোঘের বাসা / ঘর শত্রু বিভীষণ' । সত্যাগ্রহ যুদ্ধ নতুন করে শুরু হলে খবরের শিরোনাম হয় 'দুঃশাসনের বস্ত্রহরণ' । মুলতান ও তেলেনিপাড়ায় মহরম উপলক্ষে মারামারি হলে খবরের হেডিং দেন 'মহরম নিয়ে দহরম মহরম' ।  বার্লিনে পুলিশের সাথে কমিউনিস্ট মিছিলকারীদের হাঙ্গামার খবরের শিরোনাম 'পুলিশে কুলিশে' । সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে তুরস্কের সংগ্রাম সমর্থন করে একটি শিরোনাম 'চালাও যুদ্ধ চালাও' । তারপর মন্তব্যসহ সংবাদটি পরিবেশিত হয়েছে 'সে মানে না মানা / লাঠি দেখলেই বলে না না' । দিল্লিতে এক শিশুর ট্রাম এর নিচে কাটা পড়ে মারা গেলে ট্রামচালককে জনতা মারধর করে এবং পুলিশ তাকে আটক করে । এই খবরের হেডিং দেওয়া হয় 'এসব কন্ডাক্টর ব্যাটাদের তুলো ধোনা করা উচিত' । ডাবলিনে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কেন্দ্রটি উড়িয়ে দেয়ার জন্য চরমপন্থীরা বেশ কয়েকটি বোমা রেখেছিল । তারই একটি ফেটে বিকট শব্দ হয়েছিল । এই খবরের শিরোনাম দেন 'বোম ভোলানাথ' । এই উদ্ধৃতিগুলো থেকে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, নজরুল ইসলামের সংবাদচেতনা ও তার সঙ্গে সেন্স অব হিউমার যথেষ্ট মাত্রায় সমৃদ্ধ ছিল ।

১৯২৫ সালের শেষ দিকে ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখে লেবার স্বরাজ পার্টি গঠিত হওয়ার পর নজরুলের পরিচালনায় 'লাঙল' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয় । সেখানে তাঁর বিখ্যাত সাম্যবাদী কবিতাগুচ্ছ প্রকাশিত হয়েছিল যা কমুনিস্ট ম্যানিফেস্টোর ভাবানুসরণে রচিত হয়েছিল । ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা বাঁধলে লাঙল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় পত্রিকাটির প্রচার সংখ্যা হ্রাস পায় । এরপর লাঙলের নাম পরিবর্তন করে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই আগস্ট 'গণবাণী' প্রকাশিত হয় । নজরুল গণবাণীর সম্পাদক ও লেখক ছিলেন । এই পত্রিকায় নজরুলের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে লেখা কবিতা মন্দির মসজিদ, লাল নিশান, কান্ডারী হুশিয়ার ইত্যাদি প্রকাশিত হয় । তাঁর লাঙল পত্রিকায় নজরুল ম্যাক্সিম গোর্কির 'মা' উপন্যাস যা কিনা সমাজতান্ত্রিক ভিত্তির উপর রচিত, তার অনুবাদ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে গেছেন । এই পত্রিকায় প্রকাশিত নজরুলের 'আনন্দময়ীর আগমনে' কবিতাটির জন্য নজরুলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হয় এবং তাঁর এক বছরের কারাদন্ড হয় ।

 কাজী নজরুল ইসলামের সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি সাম্যবাদী দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন । বাংলা সাংবাদিকতার ইতিহাসে নজরুলের ভূমিকা অবিস্মরণীয় । কি কবিতায়, কি গানে যেমন তাঁর মনোভাব অখন্ডভাবে প্রকাশ করতে ভয় পাননি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও তেমনি তিনি জনতার সঙ্গে একাত্ম মিশে ছিলেন । পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে তিনি স্বাধীনতার বাণী প্রচার করেছেন । শুধুমাত্র বাংলা গান ও কবিতা নয়, সাংবাদিকতার মাধ্যমে সাম্যমৈত্রীর কবি, প্রেম ও দ্রোহের অগ্রণী কবি, জাগরণ ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের  জন্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে গিয়েছিলেন ।

Friday, February 2, 2024

র-এ-য-ফলা লেখার কায়দা ।

র-এ- য-ফলাল লেখার কায়দা 

মোবাইলে যাঁরা GBoard-এ সরাসরি বাংলা হরফ ব্যবহার করে টাইপ করেন, তাঁরা ওই দু'বার কমা (,) দিয়ে শব্দের মাঝে হসন্ত আনার অভীষ্টে সিদ্ধিলাভ করতে পারবেন না। osh বা ইত্যাদি পদ্ধতির প্রশ্ন ওঠে না। তাঁদের জন্য উপায় বলছি, উদাহরণসহ, সঙ্গে ছবিও দেখতে অনুরোধ। 
ধরুন, মফস্‌সল লিখবেন। তাহলে ম, তারপর ফ, তারপর স টাইপ করে হসন্ত দিন। তারপর স্পেসবারের পাশে যে key-টি আছে (<|> আকৃতির, ছবিতে চিহ্নিত করে দিলাম), সেটি একবার টিপুন। তারপর আবার স ও ল টাইপ করুন, পেয়ে যাবেন মফস্‌সল।
ওই এক‌ই key ব্যবহার করে আরেকটি অতি সাধারণ সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, তা হল 'র‌্যালি'-জাতীয় শব্দ লিখতে গিয়ে 'র্যালি' লিখে ফেলা। এই দৃশ্যদূষক ভুলটি বাংলা খবরের কাগজ বা ব‌ইপত্রে আকছার দেখে ক্লান্ত হয়ে গেছি, প্রায় রোজই দেখা যায়। আসুন, দেখা যাক সহজ সমাধানটা কী। ধরুন র‌্যানডম লিখবেন। তাহলে প্রথমে র টাইপ করুন। তারপর ওই <|> key-টি একবার টিপে তার পরে য-ফলা টাইপ করুন, তারপর আকার। আকার। তাহলেই কেল্লা ফতে হবে। পরীক্ষা প্রার্থনীয়।

জানি না ইতোমধ্যে কেউ সমাধানটি বাতলে দিয়েছেন কি না। তাহলে দয়া করে অবজ্ঞা করবেন। 🙏🏼