গতকাল শান্তিরবাজারে 'দেবদীপ' সাহিত্যপত্রের প্রকাশ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সম্পাদক-কবি অনামিকা লস্করের আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলাম পত্রিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে । কালিবাজারের পঞ্চায়েত সাংস্কৃতিক মিলনায়তনে অত্যন্ত সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও নান্দনিক এই অনুষ্ঠানে এক প্রাণচঞ্চলতার স্ফুরণ ঘটেছিল । একেবারে তারূণ্যেরই প্রাধান্য লক্ষ করা গেছে পুরোটা অনূষ্ঠানে । মধ্যাহ্নভোজন পর্বটিও ছিল বনভোজনের পরিবেশে প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে । আমাকে 'দেবদীপ সম্মান-২০২২ এ ভূষিত করে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন এই সাহিত্যপত্র পরিবার । তাঁদের মূল্যায়ন আমি চিরদিন মাথায় তুলে রাখব ।
সাহিত্যপত্র পরিবার এদিন আমার হাত দিয়ে রাজ্যের বর্ষিয়ান কবি ও সাহিত্যসংগঠক হরিনারায়ণ সেনগুপ্ত মহোদয়কে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করলেন । আজকের প্রজন্ম হয়ত জানেনা হরিনারায়ণদা ষাটের দশক থেকে বিলোনিয়ায় সাহিত্যচর্চা করে আসছেন । প্রচারবিমুখ অত্যন্ত নীরব সংগঠক দাদা সাতের দশকে নিজের সম্পাদনায় নিয়মিত 'অগ্রণী' সাহিত্যপত্র প্রকাশসহ বিলোনিয়ায় আরো বহু সাহিত্যপত্রের প্রকাশের ক্ষেত্রে উৎসাহ দিয়ে গেছেন । তাঁর প্রত্যক্ষ পরিচর্যায় এই কলমচিসহ বেশ কজন কবি ও গল্পকার পরবর্তীকালে রাজ্যের সাহিত্যক্ষেত্রে স্থান করে নিয়েছেন । সাতের দশকের প্রথমদিকে বিলোনিয়ার একনম্বর টিলায় সাড়া জাগানো সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করাসহ বহু সৃজনশীল কাজে তিনি সেসময়ের অনেক তরুণকে উৎসাহিত করেছেন । সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অনুজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো কার্পণ্য কোনোদিন ছিলনা । হরিনারায়ণদার প্রত্যক্ষ লালন না পেলে সাতের দশকের লাজুক কলেজপড়ুয়া ছেলেটা আজকের অশোকানন্দ হয়ে উঠতে পারতনা । আমার জীবনের প্রথম পুরস্কার 'অগ্রণী সাহিত্য পুরস্কার' সাতের দশকের মাঝামাঝি সময়ে হরিনারায়ণ দা আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন । 'দেবদীপ সাহিত্য পত্রিকা' সাহিত্যের নিভৃত অলিন্দের এই কারিগরকে সম্মান জানিয়ে যথার্থ উত্তরসূরীর দায়িত্ব পালন করলেন । আমিও আমার সাহিত্যকর্মের গুরুকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাওয়ায় গর্ববোধ করছি । আমি গতকাল আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম দাদাকে মঞ্চে পেয়ে । অগ্রজরা নতুন প্রজন্মের মাথায় হাত রাখলে প্রজন্ম এভাবেই এগিয়ে যায় ।
আমাদের সবার প্রণাম নেবেন দাদা ।
No comments:
Post a Comment