স্বপ্নদাদা
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
এখন অনেক বড়ো হয়ে গেছি । দাদাদের বয়সী । দাদারা কেউ কেউ আছেন । অনেক দাদা নেই । তাঁরা শূন্যটিলায় ফিরে গেছেন । যাঁরা চলে গেছেন তাঁদের আমি দাদা ডাকি । আর যে দাদার রয়েছেন তাঁরা তো দাদাই । বয়সকালে এই দুই দাদারাই দাদাগিরি করতেন । আমি অনুজ সেই দাদাদের অনুকরণ করেছি । একসময় আমিও দাদা হয়ে উঠেছি । আমাকে এখন অনেকেই দাদা ডাকে । আসলে আমি আমি আমার দাদাদের নিয়ে সবসময় ভাবতাম । কিকরে যে তারা দাদা হল । আমি তাদের রাতে ঘুমুলে স্বপ্ন দেখতাম । কখনও কখনও দিনেও স্বপ্ন দেখতাম । তাঁরা আমার স্বপ্নদাদা ।
এই স্বপ্নদাদাদের একজন আমার ঘরেও ছিল । তবে আমি তাঁকে দেখিনি । বড়ো হয়ে মা-বাবার মুখে শুনেছি । পাড়া পড়শি সেই দাদার গল্প করত । সেও একদিন আমার স্বপ্নদাদা হয়ে যায় । আমার মা-বাবা নাকি গঙ্গার অভাবে তাকে ব্রহ্মপুত্রে বিসর্জন দিয়েছেন । কারণ সেকালে আমরা ব্রহ্মপুত্রের পারে থাকতাম । আমার ঘরের স্বপ্নদাদাকে তাঁরা কেন বিসর্জন দিয়েছেন তা কেউ জানে না । জানলেও আমাকে বলে না । না মা বাবা । না পড়শিরা । সে ঘটনার বহু পরে নাকি আমি আসি । তখন থেকে সবাই আমাকে দেখে । আমার ঘরোয়া স্বপ্নদাদাকে দেখে না । আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে । কখনও আমাকেও বলে । আমার ব্রহ্মপুত্র দাদাই নাকি আমার শরীর নিয়ে ফিরে এসেছিল মায়ের কাছে । তার সব দাদাগিরিও ভর করেছিল আমার শরীরে । চারদিকে আমার অগণিত অনুজ । গণদাদা আমি । আমার দাদাগিরি আমার এবং তাদের উপর ।
এখন মাও নেই । বাবাও নেই । সর্বশেষ যে কজন দাদা ছিলেন তাঁরাও নেই । দাদাগিরির শংসাপত্র হিসেবে বাবা আমাকে বাজারের শূন্য থলেটা দিয়ে গেছেন । আমাকে রোজ সেটা ভরে তুলতে হয় । থলেটা শূন্য হয় ।...আবার আমাকেই ভরে তুলতেই হয় ।...
No comments:
Post a Comment