Friday, April 7, 2023
ফসল সংরক্ষণের লৌকিক প্রযুক্তি
Saturday, October 29, 2022
তিতাভাত
Wednesday, March 9, 2022
গাইল-ছ্যেহাইট
Monday, June 28, 2021
রথযাত্রা ও লোকসংস্কৃতি
Tuesday, June 18, 2019
ডা অ র
ডাঅর লাইগজে, ডাঅর
আষাঢ় মাসের এই অঝোর বর্ষণকে লক্ষ্য করে আমার মা একটা প্রবাদ বলতেন-দশরথের দশদিন/দেবতা করে রাইত দিন । আষাঢ় মাসের এই লাগাতর বর্ষণদিনগুলোর কয়েকটা নাম আছে । এগুলোর এক একটাকে ' ডঅর' বা 'ডাঅর' বলা হয় নোয়াখালি ভাষায় । এভাবে আষাঢ়ের প্রথম দশদিন 'দশরথের ডাঅর' ,রথযাত্রায় তিনদিনের 'রথের ডাঅর', 'অম্বুবাচীর ডাঅর' ইত্যাদি । এখনকার বৌ ঝিরা এসব লোকসাংস্কৃতিক বিষয় জানে কী ? না জানারই কথা ৷ কারণ এখন বর্ষাকালের সেই মেজাজ এবং চরিত্র হারিয়ে যেতে বসেছে ৷ এখন আর সেই 'ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিন' আর দেখাই যায়না ৷ সেতার বা সরোদবাদকের নিমগ্ন দীর্ঘবাদনের মতো লাগাতর বর্ষণ তো বিলোপের পথে ৷ জলে ভেজা শরীরে লেপ্টে থাকা ততোধিক ভেজা কাপড় নিয়ে পুকুরঘাট থেকে উঠে আসা তরুণীর মতো মনে হত চারধারের গাছগাছালিকে ৷ মনে হত পবিত্র অবগাহনের শেষে প্রকৃতির বন্দনার প্রস্তুতি নিচ্ছে সমস্ত চরাচর ৷
সেসময়ে লাগাতর বর্ষা হলে ধনীদরিদ্র নির্বিশেষে সকল পরিবারে অন্নাভাব দেখা দিত ৷ মাঠেঘাটে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষিশ্রমিকের মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে হত ৷ গৃহস্থের গোলায় ধান থাকলেও 'কোথা হা হন্ত'! একদিন দুদিনের বেশি তৈরি চাল ঘরে থাকতনা ৷ কারণ তখনকার সময়ে চালকল ছিলনা ৷ কাজেই মিলে ভাঙানো চালের প্রশ্নই ওঠেনা ৷ প্রায় গৃহস্থবাড়িতে ছিল ঢেঁকির প্রচলন ৷ 'বুদ্ধির ঢেঁকি' বলে প্রবাদে রসিকতা করা হলেও গৃহস্থের ধানভানার মুশকিল আসান ছিল এই ঢেঁকি ৷ 'ধান ভানো রে ভানো রে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া' গাইতে গাইতে তরুণী বৌ-ঝিরা ওক্তের চাল ওক্তে তৈরি করে নিত আর দশটা কাজের ফাঁকে ৷ ঢেঁকিতে চাল কুটার আগে ধান ভেজানো, ধান সেদ্ধ করা, রৌদ্রে শুকানো ইত্যাদি অনেকগুলো পদ্ধতির মধ্য দিয়ে ঢেঁকির পর্যায়ে আসত ৷ দীর্ঘবর্ষা হলে এইসব ধারাবাহিক পর্যায়ে ছন্দপতন ঘটত ৷ ফলে বর্ধিষ্ণু কৃষকের ঘরেও অন্ন থেকেও নেই অবস্থা হত ৷ পটু গৃহিনী আবার আবার গ্রামীন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্নপূর্ণার দায়িত্ব পালন করতেন ৷ কষ্ট করে পরিবারের সবার মুখে অন্ন তুলে দিতেন ৷ জলে ভিজিয়ে সেদ্ধকরা ধান রৌদ্রে দেওয়া যাচ্ছেনা লাগাতর বৃষ্টির জন্যে ৷ গিন্নি বসে গেলেন ঢেঁকির পাশে করে স্থায়ী মাটির উনুনে আগুন দিয়ে কড়াই বসিয়ে ৷ উনুনে আঁচে কড়াইতে ধান গরম করে জল শুকিয়ে নিয়ে ঢেঁকিতে ফেলে কুটে নিচ্ছেন ৷ তাঁর পরিশ্রমের অন্নে পরিবারের দশজনের উদরপূর্তি ঘটছে ৷ শুধু তাই নয় ৷ এই পদ্ধতিতে ধার-উধার, সাহায্য-সহায়তার মাধ্যমে প্রতিবেশীর মুখেও হাসি ফুটতে দেখা গেছে বর্ষণসিক্ত বনবাদাড়ের নাম জানা-অজানা ফুলগুলোর মতো ৷ অভাবের মধ্যেও বর্ষাদেবী দুখিমানুষদের কেমন সম্প্রীতির বাঁধনে ও মমতায় পরস্পরকে কাছে টানত ৷
আজ বর্ষার সেই অপরূপ রূপমাধুরীও নেই ৷ সেই কান্নাঝরা মায়া কিংবা করুণাও নেই ৷ প্রকৃতির নির্মম রোষে আজ সব হারিয়ে যাচ্ছে ৷ ইট-কাঠ-পাথরের অরণ্যে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির কোমল সুষমা ৷ প্রকৃতি যেমন কোমল মাধুর্য হারিয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠছে তেমনি প্রকৃতির সন্তান মানুষের অন্তরও হয়ে উঠছে নির্মম ও নিষ্ঠুর ৷ প্রকৃতিকে হারিয়ে আমরাও অপ্রকৃতিস্থ হয়ে উঠছি ক্রমশ ৷ এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব ৷
Thursday, April 26, 2018
যমকীর্তন ও হটিকীর্তন
ঊনকোটি জেলা ও উত্তর ত্রিপুরায় বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে গীত হয় শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠ লীলাকীর্তন।
শ্রাদ্ধবাসরে হওয়ায় এই কীর্তনের নাম 'যমকীর্তন' ৷
দক্ষিণ ত্রিপরায়ও শ্রাদ্ধবাসরে এধরণের কীর্তন হয় ৷ নোয়াখালি চট্টগ্রাম থেকে উঠে এ অঞ্চলের হিন্দু ও বৌদ্ধ ( বড়ুয়া ) জনগণের সংস্কৃতিতে এই বিষয়টা রয়েছে ৷ এই কীর্তনকে এই অঞ্চলে বলা হয় 'হটি' কীর্তন ৷ হিন্দুবাড়িতে 'নিমাই সন্ন্যাস', 'হরিশ্চন্দ্রের শ্মশানমিলন', বৌদ্ধদের অনুষ্ঠানে 'বুদ্ধ সন্ন্যাস' কীর্তন করা হয় ৷
ঊনকোটি জেলা ও উত্তর ত্রিপুরার যমকীর্তন আর আমাদের হটিকীর্তন দুটোরই পরিবেশন প্রক্রিয়া ভিন্ন ৷ কিন্তু একই উদ্দেশ্য ফল্গুধারার মতো অলক্ষ্যে প্রবাহিত ৷ গোষ্টলীলার বিষয়বস্তুতে যেমন মায়ের সঙ্গে সন্তানের ক্ষণিক বিচ্ছেদবেদনার আবহ রয়েছে তেমনি নিমাইয়ের সন্ন্যাসযাত্রাও এক বিচ্ছেদবিধূর কাহিনি ৷ তেমনি ভাগ্যদোষে রাজা হরিশ্চন্দ্রেরও স্ত্রীপুত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শ্মশানচন্ডালের জীবিকায় দিনযাপনও বেদনাঘন ৷ শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এই পালাগুলো নির্বাচনের মধ্যেও অনির্দেশের পথে চলে যাওয়া প্রিয়জনের জন্যে বেদনার সুরটিই ধ্বনিত ৷ সেই বেদনার প্রকাশের প্রতীকী রূপ এই জাতীয় সংগীত ৷ স্থান ভেদে প্রকাশভঙ্গি হয়তো আলাদা কিন্তু অভিপ্রায় এক ৷