Showing posts with label লোকসংস্কৃতি. Show all posts
Showing posts with label লোকসংস্কৃতি. Show all posts

Friday, April 7, 2023

ফসল সংরক্ষণের লৌকিক প্রযুক্তি

ফসল সংরক্ষণের লৌকিক কৃষিপ্রযুক্তি

 আগেরকার দিনে ধান,গম প্রভৃতি খাদ্যশস্য ও সরষে, তিল, তিশি ইত্যাদি তৈলবীজ ও মটর, ছোলা ইত্যাদি দানাশস্য সংবৎসরের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হত । এই ফসলগুলোকে সাধারণত গোলায় তুলে রাখা হত । গোলা তৈরিতেও যথেষ্ট শিল্পনৈপুণ্য ছিল । জলপ্লাবনের হাত থেকে রক্ষার জন্য গোলাকে একটু উঁচুস্থানে বসানো হত । ইঁদুরের উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্যে গোলার বাহির দিক গোবর-মাটির শক্ত প্রলেপ দেওয়া হত । কীটনাশক হিসেবে গোলার ভেতরে ছড়িয়ে রাখা হত নিম, নিশিন্দা ইত্যাদির পাতা । একসময় গ্রামদেশে সুপুষ্ট পাকা টম্যাটো  গাছশুদ্ধ উপড়ে উল্টো করে ঘরে ঝুলিয়ে রাখা হত । আর রসুন গাছশুদ্ধ তুলে বেনীর মতো পাকিয়ে থোকা থোকা দীর্ঘদিন এভাবে ঝুলানো অবস্থায় রাখা হত । যখন দরকার পেড়ে রান্নায় ব্যবহার করা হত । ফসলের মূল ঋতু ছাড়া অন্য সময়ের জন্য সঞ্চয়ের গ্রামীন প্রযুক্তি ছিল এটা । আবার আলু, মাষ্টি আলুর মতো অনেক ফসল পাতলা করে কেটে কড়া রোদে শুকিয়ে রেখে দেওয়া হত ।

Saturday, October 29, 2022

তিতাভাত

তিতাভাত

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

প্রথমে পাতে থানকুনি পাতা ও আদা । ভাতের মধ‍্যে নিমপাতা । ডালের মধ‍্যে উচ্ছে বা করলার টুকরো । অথবা হেলেঞ্চার ডাঁটাকুচি দিয়ে মুগ ডাল । গিমে শাক, সর্ষে দিয়ে পেপের সুক্তো । শেষপাতে গ্রাইন্ডারে নিমপাতা চটকে সরবত । যাতে এগুলো খেলে যমে না ছোঁয় । নরমাংস তেতো লাগে তার কাছে । তাই পরিবারের গুরুজন মারা গেলে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের পর পরবর্তী প্রজন্মকে যমের হাত থেকে রক্ষা করতে অন‍্য আত্মীয়স্বজনরা তিতাভাতের আয়োজন করেন ।

Wednesday, March 9, 2022

গাইল-ছ‍্যেহাইট

গাইল-ছ‍্যেহাইট নিয়ে অনেক লোকসাংস্কৃতিক কর্মকান্ড রয়েছে । এখন এর ব‍্যবহার বিরল । করইগাছ দিয়ে গাইল এবং গাবগাছের কাঠ দিয়ে ছ‍্যেহাইট দক্ষ কারিগররা তৈরি করতেন । বলা হয় গাইল হল ভাই ও ছ‍্যেহাইট হল বোন ।

Monday, June 28, 2021

রথযাত্রা ও লোকসংস্কৃতি

রথোৎসব বা রথযাত্রার সঙ্গে বহুবিধ লোকসাংস্কৃতিক বিষয় জড়িয়ে রয়েছে । রথযাত্রা সূর্যপূজারও ইঙ্গিত করে । সূর্যের সপ্তাশ্ববাহিত রথে পরিক্রমণের কথা মনে করায় । আদিম মানুষ সূর্যকে দেবজ্ঞানে ভক্তি ও পূজা করত । আদিম মানুষ লক্ষ করেছিল সূর্যালোক শস্য উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজনীয় । জলবর্ষী মেঘের স্রষ্টা এবং ঋতুচক্রের নিয়ন্তা হল সূর্য । শষ্যোৎপাদনের জন্যে আলো ও জল অপরিহার্য ।  সে হিসেবে রথযাত্রা উর্বরতাকৃষ্টির সঙ্গেও জড়িত । বর্ষার সমাগমে এই উত্সব কৃষিউৎসবের রূপভেদ । ঋতুচক্রের পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও সূর্যের ভূমিকা প্রধান বলে আদিম মানুষ সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঋতুউৎসবের আয়োজন করত । আদিম মানুষের ধারনা ছিল সূর্যকে রথে চড়িয়ে অয়ঃচক্রে পরিভ্রমণ করালে সারা বছর সূর্যের গতিপ্রকৃতি ঠিক থাকবে এবং ফলস্বরূপ কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদনের সহায়ক ঋতুচক্রের আবর্তনের নিয়মেও কোন হেরফের হবে না ।

Tuesday, June 18, 2019

ডা অ র

ডাঅর লাইগজে, ডাঅর
আষাঢ় মাসের এই অঝোর বর্ষণকে লক্ষ্য করে আমার মা একটা প্রবাদ বলতেন-দশরথের  দশদিন/দেবতা করে রাইত দিন । আষাঢ় মাসের এই লাগাতর বর্ষণদিনগুলোর কয়েকটা নাম আছে । এগুলোর এক একটাকে ' ডঅর' বা 'ডাঅর' বলা হয় নোয়াখালি ভাষায় । এভাবে আষাঢ়ের প্রথম দশদিন 'দশরথের ডাঅর' ,রথযাত্রায় তিনদিনের 'রথের ডাঅর', 'অম্বুবাচীর ডাঅর' ইত্যাদি । এখনকার বৌ ঝিরা এসব লোকসাংস্কৃতিক বিষয় জানে কী ? না জানারই কথা ৷ কারণ এখন বর্ষাকালের সেই মেজাজ এবং চরিত্র হারিয়ে যেতে বসেছে ৷ এখন আর সেই 'ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিন' আর দেখাই যায়না ৷ সেতার বা সরোদবাদকের নিমগ্ন দীর্ঘবাদনের মতো লাগাতর বর্ষণ তো বিলোপের পথে ৷ জলে ভেজা শরীরে লেপ্টে থাকা ততোধিক ভেজা কাপড় নিয়ে পুকুরঘাট থেকে উঠে আসা তরুণীর মতো মনে হত চারধারের গাছগাছালিকে ৷ মনে হত পবিত্র অবগাহনের শেষে প্রকৃতির বন্দনার প্রস্তুতি নিচ্ছে সমস্ত চরাচর ৷
      সেসময়ে লাগাতর বর্ষা হলে ধনীদরিদ্র নির্বিশেষে  সকল পরিবারে অন্নাভাব দেখা দিত ৷ মাঠেঘাটে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষিশ্রমিকের মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে হত ৷ গৃহস্থের গোলায় ধান থাকলেও 'কোথা হা হন্ত'! একদিন দুদিনের বেশি তৈরি চাল ঘরে থাকতনা ৷ কারণ তখনকার সময়ে চালকল ছিলনা ৷ কাজেই মিলে ভাঙানো চালের প্রশ্নই ওঠেনা ৷ প্রায় গৃহস্থবাড়িতে ছিল ঢেঁকির প্রচলন ৷ 'বুদ্ধির ঢেঁকি' বলে প্রবাদে রসিকতা করা হলেও গৃহস্থের ধানভানার মুশকিল আসান ছিল এই ঢেঁকি ৷ 'ধান ভানো রে ভানো রে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া' গাইতে গাইতে তরুণী বৌ-ঝিরা ওক্তের চাল ওক্তে তৈরি করে নিত আর দশটা কাজের ফাঁকে ৷ ঢেঁকিতে চাল কুটার আগে ধান ভেজানো, ধান সেদ্ধ করা, রৌদ্রে শুকানো ইত্যাদি অনেকগুলো পদ্ধতির মধ্য দিয়ে ঢেঁকির পর্যায়ে আসত ৷ দীর্ঘবর্ষা হলে এইসব ধারাবাহিক পর্যায়ে ছন্দপতন ঘটত ৷ ফলে বর্ধিষ্ণু কৃষকের ঘরেও অন্ন থেকেও নেই অবস্থা হত ৷ পটু গৃহিনী আবার আবার গ্রামীন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্নপূর্ণার দায়িত্ব পালন করতেন ৷ কষ্ট করে পরিবারের সবার মুখে অন্ন তুলে দিতেন ৷ জলে ভিজিয়ে সেদ্ধকরা ধান রৌদ্রে দেওয়া যাচ্ছেনা লাগাতর বৃষ্টির জন্যে ৷ গিন্নি বসে গেলেন ঢেঁকির পাশে করে স্থায়ী মাটির উনুনে আগুন দিয়ে কড়াই বসিয়ে ৷ উনুনে আঁচে কড়াইতে ধান গরম করে জল শুকিয়ে নিয়ে ঢেঁকিতে ফেলে কুটে নিচ্ছেন ৷ তাঁর পরিশ্রমের অন্নে পরিবারের দশজনের উদরপূর্তি ঘটছে ৷ শুধু তাই নয় ৷ এই পদ্ধতিতে ধার-উধার, সাহায্য-সহায়তার মাধ্যমে প্রতিবেশীর মুখেও হাসি ফুটতে দেখা গেছে বর্ষণসিক্ত বনবাদাড়ের নাম জানা-অজানা ফুলগুলোর মতো ৷ অভাবের মধ্যেও বর্ষাদেবী দুখিমানুষদের কেমন সম্প্রীতির বাঁধনে ও মমতায় পরস্পরকে কাছে টানত ৷
আজ বর্ষার সেই অপরূপ রূপমাধুরীও নেই ৷ সেই কান্নাঝরা মায়া কিংবা করুণাও নেই ৷ প্রকৃতির নির্মম রোষে আজ সব হারিয়ে যাচ্ছে ৷ ইট-কাঠ-পাথরের অরণ্যে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির কোমল সুষমা ৷ প্রকৃতি যেমন কোমল মাধুর্য হারিয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠছে তেমনি প্রকৃতির সন্তান মানুষের অন্তরও হয়ে উঠছে নির্মম ও নিষ্ঠুর ৷ প্রকৃতিকে হারিয়ে আমরাও অপ্রকৃতিস্থ হয়ে উঠছি ক্রমশ ৷ এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব ৷

Thursday, April 26, 2018

যমকীর্তন ও হটিকীর্তন

ঊনকোটি জেলা ও উত্তর ত্রিপুরায় বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে গীত হয় শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠ লীলাকীর্তন।
শ্রাদ্ধবাসরে হওয়ায় এই কীর্তনের নাম 'যমকীর্তন' ৷
দক্ষিণ ত্রিপরায়ও শ্রাদ্ধবাসরে এধরণের কীর্তন হয় ৷ নোয়াখালি চট্টগ্রাম থেকে উঠে এ অঞ্চলের হিন্দু ও বৌদ্ধ ( বড়ুয়া ) জনগণের সংস্কৃতিতে এই বিষয়টা রয়েছে ৷ এই কীর্তনকে এই অঞ্চলে বলা হয় 'হটি' কীর্তন ৷ হিন্দুবাড়িতে 'নিমাই সন্ন্যাস',  'হরিশ্চন্দ্রের শ্মশানমিলন',  বৌদ্ধদের অনুষ্ঠানে 'বুদ্ধ সন্ন্যাস' কীর্তন করা হয় ৷

ঊনকোটি জেলা ও উত্তর ত্রিপুরার যমকীর্তন আর আমাদের হটিকীর্তন দুটোরই পরিবেশন প্রক্রিয়া ভিন্ন ৷ কিন্তু একই উদ্দেশ্য ফল্গুধারার মতো অলক্ষ্যে প্রবাহিত ৷ গোষ্টলীলার বিষয়বস্তুতে যেমন মায়ের সঙ্গে সন্তানের ক্ষণিক বিচ্ছেদবেদনার আবহ রয়েছে তেমনি নিমাইয়ের সন্ন্যাসযাত্রাও এক বিচ্ছেদবিধূর কাহিনি ৷ তেমনি ভাগ্যদোষে রাজা হরিশ্চন্দ্রেরও স্ত্রীপুত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শ্মশানচন্ডালের জীবিকায় দিনযাপনও বেদনাঘন ৷ শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এই পালাগুলো নির্বাচনের মধ্যেও অনির্দেশের পথে চলে যাওয়া প্রিয়জনের জন্যে বেদনার সুরটিই ধ্বনিত ৷ সেই বেদনার প্রকাশের প্রতীকী রূপ এই জাতীয় সংগীত ৷ স্থান ভেদে প্রকাশভঙ্গি হয়তো আলাদা কিন্তু অভিপ্রায় এক ৷