Monday, January 4, 2021

গা। ন

গান

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

বেদনাআসমান থেকে বিষন্ন তারারা আঁধাররাতের শিউলি হয়ে গেল ৷ ঝরাবেলার গান সন্ধ্যাসিঁদুরের স্বপ্নওমের জন্যে ডুকরে ওঠে ৷ ফুরন্ত সূর্যাস্তচরাচর দীর্ঘশ্বাস ছুঁড়ে দেয় ব্যর্থচুমুর শেষদাগের আদলে ৷

যেখানে রেখেছ হৃদয় সে যেন প্রশ্রয়ে থাকে
চিরপদাবলি পুরাণপ্রত্যাশায় একা জেগে থাকে ৷

বারুদ

বারুদ
অশোকানন্দ রায়বর্ধন

বারুদের গন্ধ ভালো লাগে বলে অনেকেষ
শখে আহ্লাদে বাজি পোড়ায় ৷ বাজির গন্ধ
শুধুই মাদকতা আনে ৷ আর দূষণ ছড়ায়
বহুদূর পর্যন্ত ৷ সৃজনশীল কোনো গন্ধ নেই ৷

বারুদ অনেকে বুকে পুষে রাখে ৷ অনেকে
স্বপ্নে দেখে মোমছাল আর নতুন ভোরাই ৷
বারুদকে ভালোবেসে অনেকে জীবন বাজি
রাখে ৷ ইতিহাসে আশ্রয় নেয় ৷ কালের পুথিতেও ৷
আধুনিক মানুষেরা জানেনা বারুদের বিক্ষোভ
ওরা শুধু মাদকগন্ধে বাজি পোড়ায় ৷ পোড়ায় ৷
বিলাসী নাগরিক নোটবন্দী জানেনা ৷ আগুনে
উড়ে যায় কাগজি বাজি ছেঁড়া তাসের গুচ্ছ ৷

যেজন বুকে বারুদ গুঁজে রেখে সুদিনের স্বপ্ন
দেখে সে বেচারা একদিন মানববোমার মতো
বিস্ফোরণে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ৷ কাগজের পাতা
জুড়ে দগ্ধ ছবি ৷ বাতাসে বারুদের নতুন গন্ধ ৷
এ গন্ধ ভার্চুয়াল প্রজন্মের একদমই অচেনা ৷

শারদীয় কথামালা

শারদীয় কথামালা

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

সুন্দরের সাথে মার্চপাস্টের জন্যে
জমানো সংবৎসরের পারানি
অপত্যের হাসির অপেক্ষায় থাকে ৷
 
দূরের দ্বীপে চলে যাওয়া প্রজন্মের আশায়
কাশফুলের কাঁপন দেখে দেখে
নদীর পারেই শেষ ভদ্রাসনের
গন্ডি কেটে রাখি

শরতের নীল মতো কাজল গোলা আর
হুমকির বর্ষার মাঝেও মাঝরাতের
শেষ ট্রেনের হুইসিলও পেরিয়ে যায় সন্ততির অপেক্ষায় কাটে ৷

ভোর হলেই ঢাকের বাদ্যি বৃদ্ধাশ্রম পেরিয়ে যায়

অশোকানন্দ রায়বর্ধন ৷

১. গাধাতত্ত্ব ২. কোনো এক

গাধাতত্ত্ব

অশোকানন্দ রায় বর্ধন

গাধাকে মানুষ করা যায় কিনা জানিনা ৷ কিংবা ঘোড়াকে ৷ আমার বাবা প্রায়শই আমাকে মানুষ করার অনন্ত প্রচেষ্টা নিতেন ৷ আর আমাকে ভূষিত করতেন গর্দভ নামে ৷ গাধাকে মানুষ করার জন্যে তাঁর প্রতিদিন কঞ্চিকসরৎ চলত আমার পিঠের উপর ৷ মানুষ না হই নিদেনপক্ষে ঘোড়া করার জন্যে বেত মেরে ব্যতিব্যস্ত করতেন ৷ তাতে গাধাভূষণ আমি আজও মানুষ হতে পারিনি ৷ উপরন্তু প্রতীকী ঘোড়াটাও পিটুনি খেতে খেতে গাধাই হয়ে গেছে ৷


কোনো এক

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

কোনো এক সময়ে কোনো এক সমাজের মানুষ কোনো একজন মহাপুরুষের পূর্ণাবয়ব মূর্তি কোনো এক মোড়ের মাথায় বসিয়ে কোনো এক বিশেষ দিনে জন্মতিথি আর কোনো এক বিশেষ দিনে মৃত্যুদিন পালন করতে করতে ভুলেই যায় মহাপুরুষটি কে ছিল ৷

তারপর কোনো একদিন সেই মানুষটির পায়ের তলায় পলিথিন ঘেরা সংসার পাতে কোনো এক শহুরে রিক্সাওয়ালা আর তার রাতের রোজগেরে বউ আর অজানাঔরসজাত বালবাচ্চা ৷ অবশেষে কোনো একদিন একদল বিজয়ী মানুষের হল্লামিছিল সেই মহাপুরুষকে বিদেশী বলে চিহ্নিত করে বুলডজার দিয়ে ভেঙে ফেলে সে মূর্তি ৷ আর বেওয়ারিশ সংসারটাকে নাগরিকত্বহীন ঘুসপেটিয়া বলে বেঁধে নিয়ে যায় ৷

তারপর স্বচ্ছতার অভিযাত্রীরা এসে ছেঁড়া পলিথিন সরিয়ে সেখান দিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কের জন্যে জমি মাপে ৷

সং ক ট

সংকট

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

একটা বিলীন হওয়া সভ্যতা ইতিহাসের কবর থেকে উঠে এসেছে আবার ৷
আকাশের দিকে তাকিয়ে, তারার দিকে তাকিয়ে, 
ফুল কিংবা পাখির দিকে তাকিয়ে
সে দেখে সেই একই কথা বলছে আজ ৷
যেমন বলেছিল তার কবলিত দিনগুলোতে,  তার শেষের ক্ষণের সূর্যাস্তে ৷
আস্তে আস্তে সে সবার কাছে যায় ৷
সবাইকে জিজ্ঞাসা করে সেই প্রাচীন প্রশ্ন, তোমরা কি সতর্ক করোনি?  বলোনি এই বিপন্নতার কথা?

ওরা সমস্বরে বলল, হ্যাঁ আমরা বারবার বলেছি, বারবার কেঁদেছি, পায়ে মাথা কুটে বলেছি আসন্ন সংকটের কথা ৷
তাহলে কেন আবার আমাদেরই মতো ওদের ফিরে যেতে হচ্ছে শূন্যতার দিকে?  অন্ধকারের দিকে?

ওরা একসঙ্গেই বলে উঠল, ওরা শোনেনি আমাদের কথা ৷ ওরা দাম্ভিক ৷ ওরা জ্ঞানপাপী ৷ তাই আজ হেরে যাচ্ছে তারা ৷

মন্বন্তর

মন্বন্তর

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

লেবাং পতঙ্গেরা ছুটে যায় সাংকেতিক কাঠিবাজিতে
অথবা জাটিংগার বুনো আগুনে ঝাঁকে ঝাঁকে আত্মহননমুখী পাখির দল

মগজের ভেতর ক্লোরোফরম চেপে ধরলে বেহুঁশ মানুষ
এগিয়ে যায় অতলান্ত খাদের দিকে

এক একবার মারী ও মড়ক আসে মানুষের মহল্লায়
মানবতার ফুলের গুচ্ছ তখন অপ্রয়োজনে পড়ে থাকেনা ৷ হৃদয় থেকে বেরুতে থাকে রাজপথে ৷

কোভিড ১৯

# কোভিড—১৯ #

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

দুঃসময়ে পবিত্র উলটপুরাণ মেলে ধরে
বাচাল সেনাপতি শাস্ত্রবাক্য বিতরণের 
পুরুতমশাই  কৃতিত্বের লম্বা হাই তোলেন

বন্দী পুতুলেরা সব সামাজিক দূরত্ব মেনে
প্রতিবাদী নাটুকেপনায় বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় 

মাস্কের আড়ালে শৈল্পিক চোখ নিয়ে
প্রকৃত বেড়াল মৎস্যগন্ধা মুখে ভাষণ ঝাড়ে

কোভিডকালে এক একটি নিরাময়কেন্দ্রের
লক্ষণরেখার ভেতরে মানবতা লুটোপুটি খায়

নরকগুলজার গোশালায় অগ্রগামী যোদ্ধার ইনাম বিতরণ অব্যাহত