Saturday, May 20, 2017

ভাইফোঁটা


আজ সকালে রওনা হলাম আগরতলার পথে ৷ বাসে প্রচন্ড ভিড় ৷ ভাইফোঁটাকেন্দ্রিক গমনাগমন ৷ আমার জন্যে ভাইফোঁটা নেই ৷ অভাগা আমি ৷ গিন্নিঠাকরুণ ভাইদের ফোঁটা দেবেন ৷নেমনতন্ন করেছেন ৷ পরের তেলে নাকি বামুন সুন্দর ৷খরচাপাতি দিকটা দেখতে আমাকে রওনা হতে হল ৷ যাক গে সে সব ব্যক্তিগত কথা ৷ সাব্রুম থেকে রওনা হবার জন্যে বাসে উঠেই দেখি সব জানালার সঙ্গের সিটগুলো দখল হয়ে গেছে ৷ শুধু বাঁদিকে পেছনের চাকার ওপর যে সিটটা পড়ে সেটা খালি ৷ যাত্রাপথে থ্যাকনার ভয়ে কেউ ওখানে বসে নি ৷ আমি ভাবলাম, মরা মাছ ভাঙা ডুলা ৷পড়ে থাকব একপাশে ৷ মনুবাজার আসার পর আমার সামনের ও পাশের সিটের দুজন নামলেন শুধু ৷ সেখান থেকে এক মহিলা সঙ্গে দুটো বাচ্চা নিয়ে উঠলেন ৷ বড়োটি মেয়ে ছোটোটি ছেলে ৷ মহিলা বিধায় কনডাক্টর তাঁকেই সিটের সুযোগ দিতে চাইলেন ৷ দুটো বাচ্চাই গাড়িতে বমি করে ৷ তাঁরা পাশাপাশি বসতে চাইছেন ৷অথচ সুযোগ নেই ৷ বাচ্চা দুটো আমার সামনের সিটে দিদির কোলে ভাই বসল ৷ ভদ্রমহিলা আমার পাশের সিটে বসলেন ৷ কিছুদূর যাওয়ার পর সামনের সিটের বাচ্চার অস্বস্তি শুরু হল ৷ দিদি ডাকছে মাকে ৷ মা সামনের ভদ্রলোককে জানলার সিটটা বাচ্চাকে ছাড়ার জন্যে অনুরোধ করে ও দাদা, ও দাদা বলে ডাকছেন ৷কে শোনে কার কথা ৷ ভদ্রলোক মটকা মেরে ঘুমের ভান করে পড়ে রয়েছেন ৷মহিলাটি আমাকেও সাক্ষী করছেন, দেখছেন নি দাদা, অ্যাত ডাকতাছি ৷তাইনে শুনতাছে না ৷পুলাডা ত তাইনের গাঅ বমি কইরা দিব ৷ ইতোমধ্যে মেয়েটিরও অস্বস্তি শুরু হয়েছে ৷ ভদ্রমহিলা অসহায় বোধ করছেন ৷ আমি আমার সিট ছেড়ে উঠে বললাম, আপনি বাচ্চাদের এখানে নিয়ে আসুন ৷আমি ওদের সিটে বসছি ৷ ভদ্রমহিলা হাতে চাঁদ পেলেন ৷ আপনে যাইবেন নি দাদা? আমি বললাম, হ্যাঁ, আপনি ডাকুন তাদের ৷
পথে আর কোনো কথা হয় নি ৷ ছোটো ছোলেটা মাঝে জিজ্ঞেস করছিল, আঙ্কেল তোমার নামটা কী ৷ আমি কিছু বলিনি ৷ মাঝে ওকে খেপিয়ে দিচ্ছিলাম ৷ আজকে ভাইফোঁটা না ৷ দিদি কী দেবে জিজ্ঞেস কর ৷ বাকী রাস্তাটা ভাইবোনেতে খুনসুটি করছে দেখলাম ৷ ওরা উদয়পুর রাজারবাগ নামল ৷ ভদ্রমহিলা নামার সময় আমার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললেন, আইচ্চা যাই দাদা ৷ ওর মুখের ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভিব্যক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল ৷ আমি শুধু হেসে মাথা নাড়লাম ৷ পথে পাওয়া এই অচেনা বোন আজ আমায় যেভাবে দাদা বলে কৃতজ্ঞতা জানাল মনে হল তার অদৃশ্য হাত আমার কপালে ফোঁটা দিয়ে গেল ৷

No comments:

Post a Comment