গত পরশুদিন সাব্রুম বইমেলায় আয়োজন করা হয়েছিল কবি সম্মেলনের ৷ অনুষ্ঠান শুরুর আগে কবিদের নিয়ে বসেছিলাম আমাদের প্রিয় দাদা অশোক বসাকের দোকানে ৷ ইংরেজীতে ভাষান্তর করে তাঁর দোকানের নামে একটা মুন্ডমাল শব্দ সবাই মজা করে ব্যবহার করে ৷ ABCD অর্থাৎ অশোক বসাকের চায়ের দোকান ৷ আবার তাঁর দোকানের ল্যান্ড ফোন নম্বরও মজাদার সংখ্যার ৷ আমার বড়ো ছেলে রুশো এবং তার কিছু বিটকেল বন্ধু মিলে স্কুলে পড়ার সময় আমাদের ল্যান্ড ফোন থেকে অশোক জ্যেঠুর চারশো বিশ নম্বরে ফোন করে তাঁকে জ্বালাত ৷ আমাদের অশোকদাও বিষয়টা স্পোর্টিংলিই নিতেন ৷ জেনেছিলাম এরকম অনেক দুষ্টু ছেলেই এই মজাটা নিত ৷ তাঁকে খেপাতে না পারায় একসময় তারা রণে ভঙ্গ দেয় ৷ যাই হোক এই ছোট্টো মহকুমা শহরের ধমনীতে এই দোকানটা অক্সিজেন জুগিয়ে চলেছে ৷ ABCDকে সাব্রুমের কফি হাউস বা মিনি প্রেসক্লাবও বলা যেতে পারে ৷ আমরা টুকটাক লেখালেখি করি, অনেকেই লেখার রসদ এখান থেকেই পেয়ে যাই ৷ আড্ডা দিতে বসে হঠাৎ একটা সংবাদের ক্লু পেয়ে কোনো তরুণ সাংবাদিক বাইক নিয়ে ধাঁই কিরি কিরি বেরিয়ে গেলেন সংবাদশিকারে ৷ তাছাড়া তাঁর দোকানের রসগোল্লা বিখ্যাত ৷ যাঁরা একবার এর স্বাদ একবার পেয়েছেন তাঁকে বার বার টানবে এই রসগোল্লা ৷ কোথায় লাগে বাগবাজার! বাইরে থেকে যাঁরা কার্যকারণে সাব্রুমে এসে এ দোকানের রসগোল্লার স্বাদ নিয়েছেন তিনিই এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ৷ অনেক বিখ্যাত লোক অশোকদার রসগোল্লার প্রেমে মজেছেন ৷ তার রেকর্ড অশোকদার কাছে আছে ৷ ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডায়ও অশোকদা বিরক্ত হন না ৷ সামনের বারান্দায় একটা টেবিল আর চারটে চেয়ার বরাদ্দ রয়েছে আড্ডারুদের জন্যে ৷ দোকানের সামনে কদিন আগেও মাঝারি সাইজের একটা আমগাছ ছিল ৷ জাতীয় সড়কের কলেবর বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় গাছটা উন্নয়নের যূপকাষ্ঠে নিবেদিত হয়েছে ৷ ফলে বিকেলের দিকে দোকানটায় পশ্চিমের রোদের আক্রমণ ঘটে ৷ আড্ডাশিল্পীদের গায়ে যাতে রোদ না লাগে তার জন্যে ঢাউস এক সামিয়ানা কাম পর্দা তৈরি করেছেন ৷ বিকেলের দিকে সেটা ছাদের কোণ থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেন ৷ বোঝা যায় তিনি অন্তর থেকে সংস্কৃতিকে লালন করেন ৷ শুনেছি ছাত্রাবস্থায় তিনি ছিলেন স্কুলের এন সি সির ডাকসাইটে ট্রুপ কমান্ডার ৷ তখন এ মহকুমায় একমাত্র হাইস্কুলটি ছিল সাব্রুমেই ৷ কাজেই সে সময়ে তরুণদের লিডার ছিলেন তিনিই ৷
যে কথাটা বলছিলাম ৷ এদিন বিকেলবেলা আকাশটা গোমড়ামুখো থাকায় অনুষ্ঠানটা শুরু হতে দেরি হচ্ছিল ৷ মেলার মাঠে খোলা আকাশের নিচে বসাও যাচ্ছিল না ৷ অন্য মহকুমার কবিরা এসেছেন ৷ কোথায় নিয়ে বসাই ৷ এতোজনকে নিয়ে দাদার দোকানে বেশিক্ষণ বসে থাকাও ঠিক হবে না ৷ তাঁর ব্যবসার ক্ষতি হবে ৷ আমাদের ফিসফিস আলোচনা হলেও তাঁর কানে গেল ৷ এগিয়ে এসে বললেন, ছাদে চলে যাও ৷ উঠতে একটু কষ্ট হবে ৷ বলে তিনি নিজেই সবাইকে ছাদে পৌঁছে দিয়ে বসার চেয়ার পেতে দিয়ে তবে নিচে নামলেন ৷ এই হলেন আমাদের অশোকদা ৷ তাঁর দোকানের ছাদে প্রথমবার উঠে সাব্রুম শহরের মেঘমাখা আকাশটা দেখে ভাবছিলাম ব্যবসায়ী দাদা অশোক বসাকের হৃদয়টাও কী এমনই আর্দ্র!
Wednesday, May 10, 2017
অন্য অশোক
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment