জ্বালানি বনাম জ্বলুনি
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
নোয়াখালির একটা প্রবাদ আছে :
ক্ষুধা থাইকলে হুদা অ রচে
ভেঙ্গুলে কামড়াইলে বুইড়গা অ নাচে ৷
এর অর্থ, খিদের পেটে সব্জিহীন অন্নেও অরুচি হয় না ৷ আর ভিমরুলের কামড় খেলে বুড়োকেও নৃত্য করতে হয় ৷ আমারও সেই অবস্থা ৷গতকাল দুপুরবেলা আগরতলার বটতলা থেকে নাগেরজলা স্ট্যান্ডে আসছি হেঁটে ৷ জ্বালানির অভাবে সাব্রুমের দিকে গাড়ি কম আসছে আগরতলা থেকে ৷ পড়িমরি করে ছুটছি বাঁদিকের ফুটপাথ ধরে ৷ ওখানে ফলের দোকানের সারি ৷ তারই একটা দোকান মালিকের গামছার তাড়া খেয়ে উড়ে এসে আমার বাঁ হাতের কব্জির নীচের ফুলো অংশটাতে রাগ ঝাড়ল ৷ সঙ্গে সঙ্গে যেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলাম যেন ৷ বুঝে ওঠার আগেই কালাচাঁদ উড্ডীন হলেন আর এক ফল দোকানের দিকে ৷ ততক্ষণে কালার বিষে আমার অঙ্গ জরজর ৷ দেখলাম কোবরেজ বদ্দির অভাব নেই এই ভিড়ে ঠাসা শহরে ৷শুধু ট্রাফিক ছিল না এই ফুটপাথ দখলকারীদের তুলে দিতে ৷ একজন বললেন মধু লাগান ৷ একজন বললেন, একটা খেজুর লইয়া ডইল্লা দেন ৷ কালহা আমারে ঘাঁই দিছ্ল আমি খেজুর ডইল্লা দিছি অহনে ব্যথা নাই ৷ যে দোকানের সামনে এই ঘটনা সে ভাবলো, তার মাগ্ না একটা খেজুর গচ্চা যাবে ৷ সে মুহূর্তে হা রে রে রে করে উঠল, না না খেজুরে কুছতা অইত' না ৷ ওই পানের দোহানডাত্তে উট্টু চুন লইয়া লাগাইয়া দ্যান ৷ এই কথাগুলোর ফাঁকেই আরএকজন বদ্দি মোক্ষম ঔষধ খুঁজছে এদিক ওদিক তাকিয়ে ৷আরে রাহ' রাহ' উট্টু গুবর লাগাইয়া দিলে ব্যথা- ফুলা একদম কইম্মা যাইবো গ ৷ সে খুঁজছিল শহুরে বেওয়ারিশ ষাঁড়েদের গোবর ৷বলাবাহুল্য সে উপচিকীর্ষুও ব্যর্থ হয় ৷ অগত্যা আমি পান দোকানদারের থেকে একটু চুন নিয়ে লাগিয়ে কিছুটা স্বস্তি ৷ ক্ষতস্থানের রক্তের উপর চুনের পোঁচ লাগিয়ে ভাবছি, লালকে কেন ভয় রে ওভাই বলে গান গাইলেও সাদাও মোটেই ফেলনা নয় ৷ পশ্চিমবঙ্গীয় বন্ধুরা এটা ঠিক বুঝেছেন ৷ আসল কথায় আসছি ৷ দুদিন নিঃসঙ্গ ঘরে বসে অনুভব করছি প্রবাদের মাহাত্ম্য ৷ ঔষধপত্র, ইনজেকশান কিছুকেই তোয়াক্কা না করে এই বরষায় হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ........, না থাক, বুড়ো বয়সে আর কথা বাড়াচ্ছি না ৷ দয়া করে পাঠকবর্গ মন্তব্য করলে নাচ থামিয়ে একটু বিরতি নিতে পারব ৷
No comments:
Post a Comment