ফেনির ইলিশ ৷ ফেনি নদীর গলদা চিংড়ি ৷
বলবেন স্বপ্নের কথা ৷ ফেনি নদীতে একসময় ইলিশ এবং গলদা চিংড়ি অবাধে পাওয়া যেত ৷ ফেনি নদীর পাড়ে বসবাস করেন এমন আপনার প্রতিবেশী যে কোন বয়স্ক জনকে জিজ্ঞাসা করলেই সন্দেহমুক্ত হবেন ৷ অন্তত চুরাশি পঁচাশি সাল পর্যন্ত ফেনি নদীতে প্রচুর পরিমানে ইলিশ মাছ এবং গলদা চিংড়ি ( কাঁডা ইচা) পাওয়া যেত ৷ আমাদের এপারের তরুণ যুবকদের মধ্যে বলেন্দ্র চক্রবর্তী,কানাইলাল নাথ, হীরালাল নাথ, মানিক বসাক, কালাচাঁদ দে, কানাইলাল মজুমদার, মিলন মজুমদার, মিলন মালি, বিভীষণ বড়ুয়া ছোটোখিলের মনোরঞ্জন ভৌমিক, ছানালাল ভৌমিক, জাপান দে,মানিক মালাকার, দুলাল মালাকার, দীপেন আচার্জী, দ্বীপের পাশের পাড়া মজুমদারদের সব তরুণরা,কান্তি ভৌমিক এছাডা় আরো অনেকে রয়েছেন যাঁদের ফেনি নদীতে কাঁডা ইচা এবং ইলিশ ধরার অভিজ্ঞতাও রয়েছে ৷ ছোটোখিলের কালিপদ ভৌমিক তো ফেনি নদীর চরে বালির উপর দৌড়ে দৌড়ে একসময় জাতীয় স্তরে শ্রেষ্ঠ দৌড়বিদের পুরস্কারও নিয়ে আসে ৷ নদীতে যখন ইলিশ মাছ উজায় তখন জলের মধ্যে একটা রেখা তৈরি হয় ৷ সেই রেখা ধরে তীব্র গতিতে এগিয়ে আসা ইলিশ লক্ষ্য করে বালির উপর দৌড়ানো যে কী কষ্ট তাই কালিপদর দৌড় প্র্যাকটিসের সহায়ক হয়েছিল ৷ আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই কথাগুলো বলছি ৷ আমি জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারতামনা ৷ ইলিশ মাছ ধরা হত ছটকি, আধাছটকি জাল দিয়ে ৷ আমি ছিলাম ডুলা ধরন্যা ৷ জাল আলগানো আর ছুঁড়ে মারা আমার অসাধ্য ছিল ৷ তাদের জালে বড়ো বড়ো ঠ্যাংওয়ালা কাঁডা ইচা উঠে আসত ৷ বাজারেও তখন প্রচুর ইলিশ ও গলদাচিংড়ি পাওয়া যেত ৷ আটের দশকে আমার শ্বশুরবাড়িতে অনেকদিনই এখান থেকে ইলিশ মাছ আর গলদাচিংড়ি পাঠিয়েছি ৷ বাইরে থেকে যাঁরা এসে সাব্রুমে চাকরি করে গেছেন তাঁরা আজো স্মৃতিচারণ করেন ৷ একসময় প্রায় প্রতিদিন বাড়িতে ইলিশ মাছ রান্না ও খাওয়ার ফলে থালাবাসনেও ইলিশের গন্ধ লেগে থাকত কদিন ধরে ৷এমনটা যদি সাব্রুমে হয়ে থাকে তাহলে ফেনি নদীর অপর পাড়েও এই প্রাচুর্য ছিল অবশ্যই ৷ মাছ ধরার সুবাদে দুপারের যুবকরা তখন পাড়ে আড্ডাও জমাত ৷ আমাদের ছেলেরা বাংলাদেশের পেপার বাইন্ডেড রমনা বিড়ি এবং স্টার সিগারেট খুব পছন্দ করত ৷ তেমনি ওপারের যুবকদের পছন্দ ছিল পাতা বাঁধানো বিড়ি ৷ সেসব আজ ইতিহাস ৷ একসময় ফেনি নদীর উজানে আমলিঘাটের মেরুকুম পর্যন্ত জোয়ার আসত ৷ জোয়ারকে স্থানীয় লোকজন বলতেন 'সর' ৷ জোয়ারের জলে ভেসে আসত এইসব মাছের সাথে চিড়িং, বাইলা, বাটা, পাবদা, কালিবাউস, আইড় ইত্যাদি মাছ ৷ বর্ষাকালে প্রচুর বোয়াল মাছও পাওয়া যেত ৷ লৌহশলাকানির্মিত কোঁচ, ট্যাঁডা দিয়ে বোয়াল ধরা হত ৷ ছোটোখিলের জগদীশ ভৌমিক, যতীশ ভৌমিক ও ক্ষিতীশ ভৌমিক এরা তিনভাই এবং সুরেশ দাশ, ননী মজুমদার ট্যাঁডা চালনায় পারদর্শী ছিলেন ৷ মনুঘাটের কাছে কল্যাণনগরের শেষ প্রান্তে সাব্রুম মহকুমার আর একটি নদী মিলিত হয়েছে তার নাম মনু ৷ এই নামে ত্রিপুরায় আরো কয়েকটি নদী ও স্থান আছে ৷ সে অন্য কথা ৷ ফেনি বেয়ে মনু নদীতেও উঠে আসত ইলিশ ও গলদা চিংড়ি ৷ স্মৃতিকে নাড়া দিয়ে গেল খুব ৷
No comments:
Post a Comment