গণেশের বাহন ইঁদুর কেন ?
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
প্রশ্ন উঠতেই পারে এত এত প্রাণী থাকতে এই খুদে ইঁদুরকে কেন বিশাল বপু গণেশের বাহন করা হলো ? এ নিয়ে একটা পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে । দেবরাজ ইন্দ্রের সভায় ক্রঞ্চ নামে এক গন্ধর্ব ছিল । সে দেবসভায় গান পরিবেশন করে দেবতাদের মনোরঞ্জন করত । এভাবে সুখেই তার দিন চলছিল । একদিন সেই দেবসভায় বামদেব নামে এক মুনি এসে উপস্থিত হলেন । মুনি দেবসভায় উপস্থিত হয়েই দেবতাদের কাছে গান গাওয়ার বায়না ধরলেন । মুনি এমন নাছোড়বান্দা যে দেবতারা মুনিকে অনুমতি দিতে বাধ্য হলেন । মুনি অনুমতি পাওয়া মাত্র বেসুরো গলায় গান গাইতে আরম্ভ করলেন । মুনির এই উদ্ভট গান শুনে ক্রঞ্চ আর হাসি চেপে রাখতে পারল না । সে ফিক্ করে হেসে ফেলল । তার হাসি মুনির দৃষ্টিগোচর হল । উপহাস করার অপরাধে মুনি তাকে অভিশাপ দিলেন যে, সে মর্তে ইঁদুর হয়ে জন্মগ্রহণ করবে । ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবড়ে গিয়ে ক্রঞ্চ কান্নাকাটি শুরু করল । সে মুনির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল । কিন্তু মুনি তার অভিশাপ ফিরিয়ে নিলেন না । দেবতাদের অনুরোধে শেষে মুনি বললেন, গণেশ যদি তাকে তাঁর বাহন করে তবে সে ইঁদুর জন্ম থেকে মুক্তি লাভ করবে ।
ক্রঞ্চ ইঁদুর হয়ে মর্ত্যে একটি মাঠের মধ্যে তার বাসা বাঁধল । সেই মাঠের কাছেই ছিল পরাশর মুনির আশ্রম । ইঁদুর প্রতিদিন আশ্রমের ফসল নষ্ট করত ও নানা রকম ক্ষতিসাধন করত । ফলে মুনিরা ও আশ্রমবাসীরা তার উপর ভীষণ বিরক্ত হয় । তারা অতিষ্ঠ হয়ে দেবতা গণেশের শরণাপন্ন হন । দেবতা গণেশ পরাশর মুনির আশ্রমে এসে ইঁদুরকে পাকড়াও করার জন্য খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেন । একসময় ইঁদুর গণেশের হাতে ধরাও পড়ে । গণেশ যখন তাকে মেরে ফেলতে উদ্যত হন তখন ক্রঞ্চ গণেশের কাছে তার নিজের পরিচয় দেয় এবং পূর্ব অভিশাপের কথা জানায় । সে আরো জানায় যে, গণেশ যদি তাকে তাঁর বাহন করে নেন তাহলে সে মুক্তি পাবে । তখন গণেশ এই ইঁদুরকে তাঁর বাহন করে নেন । সেই থেকে গণেশের বাহন ইঁদুর ।
আজ আজ গণেশ চতুর্থী । সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রসঙ্গক্রমে গণেশের বাহন ইঁদুরের পৌরাণিক কাহিনিটি এখানে তুলে ধরলাম ।
No comments:
Post a Comment